১
আমার নাম নিয়ে এখনো আমার কাছে একটা গোলকধাঁধা কাজ করে। কী করে আমার নাম আদিত্য হল! এ নিয়ে আমার মাঝে বিস্ময়ের অন্ত নাই। আমি যেখানে জন্ম নিয়েছি, সেখানে ছিলোনা কোন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, ছিলোনা বিজলিবাতি। নিখাত একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। আধুনিক নাগরিক জীবন আমার কাছে কুজ্ঝটিকা বৈ অন্য কিছু ছিলোনা। আমি এখনো নিজেকে কুয়োরব্যাঙ ভাবতে সার্থকতা বোধ করি। তার মাঝে এমন একটা আধুনিক নাম আমার কী করে হল!
কুয়ারব্যাঙ নিজের আবাসস্থলকে বিশাল সমুদ্র মনে করে। কারণ সে কখনো সমুদ্র দেখেনি। বুদ্ধি হবার আগে বাবার মৃত্যুতে আমাদের কখনো শোনা হয়নি নাগরিক জীবনের গল্প। মায়ের কাছে শুনবো, মা-ও তো কখনো শহর দেখেননি! গ্রাম আমাদের কাছে আদর্শ হয়ে রইলো চিরকাল। গ্রামীণজীবনের সরলতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাসের মর্যাদায় এখনো পথে খুঁজি নিরন্তর।
যতদূর মনে পড়ে যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম তখন নিজের উদ্যোগে সম্ভত প্রথম শহরে আসি। আমি জন্ম থেকেই কিছুটা ভীতু প্রকৃতির। কারো সাথে নিজের থেকে পরিচিত হওয়া, আলাপ করা কল্পনার অতীত ছিল। নারী হলেতো কথায় নেই, হাজার মাইল দূরে থাকতাম।
একসময় বড়বড় শপিং মলগুলোতে যেতে ভয় পেতাম। কী করে দরদাম করতে হয় কিছুই জানা ছিলোনা। পঞ্চাশ টাকার জিনিস একশ টাকায় কেনার ইতিহাস আমার জীবনে কম নেই। জীবনের শিক্ষার বিশাল একটা অংশ নিজ উদ্যোগেই শিখে নেয়া। মা কখনো তাঁর আঁচল থেকে বেশি দূরে যেতে দিতেন না। মাধ্যমিক উচ্চমাধমিক তাই গ্রামের পাঠশালায় কেটেছে।
বড় কী হব? কী হলে ভালো হবে? কেউ কোনদিন বলে দেয়নি! সহপাঠীদের মধ্যেও কাউকে উচ্চ বিলাসী স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে দেখি নি। বরং বন্ধুরা আমাদের আদর্শ মনে করতো। ক্লাসে ফাস্ট সেকেন্ডের মধ্যেই রোল ছিল, কখনো তৃতীয় হয়েছিলাম কিনা মনে পড়েনা। হয়তো সঠিক নির্দেশনা পেলে এগিয়ে যেতে পারতাম বহুদূর।
মনে পড়ে যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়তাম, তখন একদিন দেখি প্রথম ক্লাসে এলেন ছয় ফুটের মত লম্বা, বেশ সুদর্শন এক যুবক। তিনি আমাদের বাংলা শিক্ষক। অনেক সুন্দর করে কথা বলতেন, অসাধারণ বাচনভঙ্গি। মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকতাম তাঁর দিকে। শুধু আমি নয়, পুরো ক্লাস। মেয়েদেরে কথাতো বলা বাহুল্য। এই প্রথম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। বলা যায় এটি আমার জীবনের প্রথম স্বপ্ন দেখা। যদি স্যারের মত শিক্ষক হতে পারতাম!
সে সময় অনুসারে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল খারাপ ছিলোনা। কলেজে কিছু নতুন বন্ধু পেলাম, নতুন গল্প পেলাম। তাও যে বেশ সমৃদ্ধ ছিল বলা চলেনা। কলেজের শিক্ষক হতে হলেতো বিশ্ববিদ্যালয় পাশ হতে হবে একথা ভালো ভাবেই বুঝে ছিলাম। তাই মায়ের কাছে এই প্রথম কোন আবদার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেব। মায়ের ইচ্ছা না থাকলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সেই দিন না করেন নি। আত্মীয় স্বজন উৎসাহের তুলনায় নিরুৎসাহিত করেছিল বেশি পরিমাণে। মায়ের হাতছাড়া হবার ভয়!
ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। পাশও করলাম। চাইলে ভালো বিষয় নিয়ে পড়া শুনা করতে পারতাম। ঐ যে কুয়োরব্যাঙ ছিলাম, বড় স্বপ্ন দেখতে শেখা হয়নি। বাংলাতেই ঠিকানা হল। আরেকটা গোপন কথা বলি, প্রেম করেনা এমন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে সেটি আমার কল্পনার অতীত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিভিন্ন যুগল দেখে সে বিশ্বাস আরও প্রকট হল। একদিন প্রথম ক্লাসের পর জানতে পারলাম ময়ুখ স্যার আজ ক্লাস নেবেন না। তাই একঘণ্টার একটা বিরতি পেয়ে গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি বেশি দিন হয়নি। বাইরে কোথায় যাবো ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে ক্লাসের সামনের করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছিলাম অলস সময় পার করতে। জারুলতলায় তলায় জোড়া জোড়ায় বসে আছে অনেক কপোত-কপোতী। ঠিক একটা জায়গায় গিয়ে চোখটা আটকে গেলো। অনতিদূরে হালকা গড়নের ছোটখাটো একটা মেয়ে একা বসে আছে। আশেপাশে কোন ছেলে চোখে পড়লনা। হয়তো ভাবলাম তার সঙ্গীটি আজ ভার্সিটিতে আসেনি। হঠাৎ পেছন থেকে শর্মিষ্ঠার এক মৃদু ধাক্কায় চৈতন্য ফিরে পেলাম। কীরে কাকে দেখছিস? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোন মেয়ের সাথে এই প্রথম কথা বলা। এতক্ষণ যাকে দেখছিস, চল পরিচয় করিয়ে দেবো তোর সাথে। ও আমাদের বন্ধু স্নিগ্ধা। শর্মিষ্ঠা এমনভাবে কথা বলছে, আমি যেন তার জনম জনমের পরিচিত! একই ক্লাসের বলে শর্মিষ্ঠা আমার নাম জানত। কিছু না বললেও মনে মনে ভাবলাম শহরের মানুষ মনে হয় এমনই হয়।
শর্মিষ্ঠার ঐ মেয়ের সাথে পরিচিত হবার অনুরোধ সেই দিন উপেক্ষা করতে পারিনি। ইচ্ছা অনিচ্ছার দোলাচলের মাঝে তার সাথে হাটতে শুরু করলাম। জানিস আদিত্য, স্নিগ্ধা কিন্তু একদম নিঃসঙ্গ। ও কলেজে একটা ছেলের সাথে প্রেম করতো। ছেলেটা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে থেকে কারো সাথে তেমন কথা বলে না। সবসময় এভাবে একা একা বসে থাকে। কথাটি শুনে সেদিন কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম তা ভাষায় রূপ দেয়া আমার পক্ষে সাধ্যের অতীত।
(চলবে)
loading...
loading...
মনে পড়েনা শেষ কবে আপনার কোন ধারাবাহিক পড়েছি।
চলুক প্রিয় স্যার। যাপিত জীবন হোক আর কল্পনার মেঘ হোক পড়বো ইনশাল্লাহ। শুভ সকাল। 
loading...
* প্রিয় প্রেরণাদাতা মুরুব্বী, কৃতজ্ঞতা অশেষ…
শুভরাত্রি।
loading...
সুন্দর শুরুবাদ প্রিয় কবি দা। সিরিজ লেখায় অনেক কিছু বিশদ উঠে আসে। প্লিজ কন্টিনিউ।
loading...
* প্রিয় কবি দি, এমন অনুপ্রেরণা পেলে বিশ্ব জয় করা যায়…
শুভরাত্রি।
loading...
আদিত্য, মানে সূর্যের সাথে শর্মিষ্ঠা'র প্রথম পরিচয়–
সিরিজ চলতে চলতে জানা হবে অনেক কিছু,
কথা হবে গল্পের সূত্রে
ভালোলাগা রইলো।
loading...
* অনেক অনেক ধন্যবাদ সুপ্রিয়…
শুভরাত্রি।
loading...
তন্দ্রাহীন অপেক্ষা করবো কবি হুসাইন ভাই।
loading...
* প্রিয় কবি দাদা, এমন অনুপ্রেরণা কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনন্তকাল…
শুভরাত্রি।
loading...