যাপিত জীবন দেশ বিদেশ -২

*** কোভিড ভ্যাক্সিন

গতকাল কোভিড ভেক্সিন নিতে গেলাম। আমি একটা ইভেন্টস এর সাথে মাঝে মাঝে কাজ করি। ইভেন্টস এর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ফ্রী ভ্যাক্সিন প্লাস চার ঘন্টার পেমেন্ট দেয়া হবে। যাই হোক গেলাম ভ্যাক্সিন নিতে। প্রথমে আমাদের বিশাল এক হলরুমে অনেকটা অডিটোরিয়ামের মতো সেখানে বসানো হলো। প্রতিটা রোতে চারজন করে বসা। কিছুক্ষণ পরে ডাকা হলো আমাদের চারজনকে।

কিউ তে অপেক্ষা করে আমাদের সবার সব ধরনের ইনফরমেশন নেয়া হলো। এরপর যেতে হলো আর একটা রুমে। সেখানে আর একজনের সাথে বৈঠক। যেমন আমাকে বলা হলো ৮ নাম্বারে যাও। সেখানে একজন বসে আছেন যিনি আমার সব ইনফরমেশন ঠিক আছে কিনা সেগুলা চেক করে পাঠানো হলো আর এক রুমে। এবার সময় হয়েছে ভ্যাকসিন নেবার।
নার্স মহিলা বললেন রিলাক্স। ভয় পেয়োনা।
ভয় পেলাম না। কাজ সারা হলে এরপর আর এক রুমে যেয়ে আরো অনেকের সাথে বসতে হলো। সেখানে প্রত্যেকে ২.৫ মিটার দূরত্বে বসে আছে। টিভির হালকা মিউজিকের শব্দ ছাড়া এতোগুলা মানুষের একটা শব্দও নাই। যেনো পিন পতন নিরবতা নেমেছে সেখানে। আধা ঘন্টা পরে সেখানে অবজার্ভ করছিলেন যে মহিলা উনি জিজ্ঞেস করলেন কোনো সমস্যা ফিল করছো না তো! আমি মাথা নাড়ালাম। এরপর উনি হাতের ব্যাজ কেটে নিলেন। এরপর দেখিয়ে দিলেন কিভাবে আমাকে আবার যেতে হবে।

একটা ভ্যাক্সিন নেয়া নিয়ে এতো কথার অবতারণা করলাম এই কারণে যে – দেশে এই ভ্যাক্সিন নিয়ে যে হুলস্থুল যাচ্ছে আবার ভ্যাকসিন নেয়ার পরে ছবি তোলার যে কাণ্ডকারখানা – এটা দেশের জন্য হয়তো নরমাল। এখানে সেটাই এবনরমাল। সবকিছু এতো সুশৃঙ্খল ভাবে বিন্যস্ত করা যে মানুষেরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে সিস্টেমের সাথে- বাংলাদেশের উশৃংখল অনিয়মের মানুষ অন্য দেশগুলাতে এসে খুব ভালো ভব্য হয়ে যায়। ভাবছি এটা কাদের দোষ! মানুষ নাকি দেশের সিস্টেমের দোষ!

ব্যাংক্সটাউন বাসস্ট্যান্ড
——————
দুপুর ২/৩ টা বাজে সব স্কুলের বাচ্চারা বাস স্ট্যান্ডগুলাতে ভির করে। স্কুলের বাচ্চাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় ব্যাংকসটাউন বাস স্ট্যান্ড। ভালো লাগে দেখতে। আমার কলিগ এক আফগানী ভদ্রলোক। আমাকে বললো, দেখছেন এই ছেলেমেয়েগুলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আমি তো নষ্ট হবার মতো কিছু দেখলাম না। জিজ্ঞেস করলাম – কেন একথা বললেন?
এই বয়সে বাচ্চারা সিগারেট খাচ্ছে।
আমি অবশ্য দেখেছি – পিচ্চি কিছু ছেলেমেয়ে একধরনের পাইপ টানছে।
ভদ্রলোক বললেন – জানিনা তোমাদের দেশে কি অবস্থা কিন্তু আমাদের দেশে কোনো মুরুব্বীর সামনে এরকম সিসা টানতে দেখলে কারো পারমিশন ছাড়াই সেই মুরুব্বি মারবেন এসব বাচ্চাদের।

আমি চুপ রইলাম। কেননা ভদ্রলোক যেভাবে অভিযোগে করছিলেন সেভাবে বাচ্চাদের দেখিনি শিশা টানতে। দুই একজনের বিষয় উদাহারণ হতে পারে না। ভাবছিলাম আফগানিস্তান ছেড়ে আসলেও মাথাটা এখনো সেখানেরই রয়ে গেছে বেচারার।
—–

পিচ্চি এক বাচ্চাকে (৯/১০ হবে বয়েস) দেখলাম মোবাইলে গেম খেলছে। কি কি যেনো পট পট করে বলছিলো। সব বোঝা যাচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম কি খেয়েছ?.
বললো – কিছু খাইনি। মা অবশ্য আমাকে ৫ ডলার দিয়েছে টিফিন করার জন্য। আমি খরচ করিনি। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাবা মা কি তোমাকে স্কুলে আনা নেয়া করেন! নো নো – আই এম লারনিং।
বাব্বাহ! এই টুকু পিচ্চির কথায় চমতকৃত হলাম।
––—

Mardigras day

আজ মার্ডিগ্রাস ডে। আজকের দিন গে আর লেসবিয়ানদের জন্য বিশেষ দিন। মুরপার্কে দলে দলে মানুষ যাচ্ছে ওদের প্রোগ্রাম দেখতে। ওদের পোশাক আশাক এমন ঝলমলে, মুখে গালে গলায় শরীরে চকচকে রঙ, গ্লিটার – এসব দেখে মনেই হয়েছে আজ বিশেষ দিন। স্পেশাল লাইট ট্রেনের ব্যবস্থা, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, পুলিশ সব মিলে সাজ সাজ রব। এক ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার। এতো মানুষ কোথায় যাচ্ছে? বললাম – আজ মার্ডিগ্রাস ডে। সবাই স্পেশাল ইভেন্টে যাচ্ছে।

প্রায় ছেলে স্কার্ট পড়েছে। এক ছেলের এতো সুন্দর লম্বা চুল, আবার এতে সে দিয়েছে গ্লিটার। ভাবছিলাম একটা মেয়েকে এই সাজে দারুন লাগতো। ছেলেরা যতই মেয়ের মতো সাজুক ওদের শক্ত পোক্ত ভাবটা যায় না।

পাকিস্তানিরা বেশির ভাগই কট্টরপন্থী। আমার পাকিস্তানি সুপারভাইজার বললো, আল্লাহ লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন সমকামের জন্য। এদেরও ধ্বংস করবে। তোমার কি মনে হয়?
আমি চুপ করে রইলাম।
মানুষ প্রকৃতির অংশ। তার ভেতরে তার যে স্বাভাবিক ইচ্ছে তা কিছুতেই আসলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। একটা ছেলের পরনে ফুলেল স্কার্ট ফুলে ফুলে উঠছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আসল এই মানুষটাই সে। প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় বাইরের মানুষ যা দেখছে সে তা নয়।
তবু মানুষের জয় হোক।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১০-০৩-২০২১ | ৭:৪০ |

    সতত ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসের যাপিত জীবনের যে সমকালীন চিত্রাবলী লিখায় তুলে এনেছেন তাতে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু নিশ্চয়ই রয়েছে। যিনি নেবেন তিনি নেবেন … যিনি নেবেন না … তিনি কখনই নেবেন না। কারণ আমরা বাঙালী। পরিশেষ আপনার মতো আমিও প্রত্যাশা করতে চাই … মানুষের জয় হোক।
    সালাম আপা। ভালো থাকবেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফয়জুল মহী : ১০-০৩-২০২১ | ১৪:২৫ |

    টিকা নিয়েছেন শুভ কামনা। পৃথিবী হোক শুভ্র শ্বেত। 

    GD Star Rating
    loading...