দেশ - বৈদেশ

এখানের (অস্ট্রেলিয়া) বাড়িগুলো দেখলে কেমন একটা শান্তি শান্তি ভাব হয়। অধিকাংশ বাড়িগুলো একতলা বা দুতলা এবং টালির ছাদ। ছোট ছোট গেট। আমার কাছে অনেকটা নির্জন গ্রামের মত লাগে। রাস্তাঘাট ক্লিন – গাড়িগুলো প্রতিটা বাড়ির সামনে দাঁড় করানো। গ্যারেজ থাকলেও যেহেতু এখানে সবারই গাড়ি থাকতেই হয় এবং ইজি বাহন রিক্সার মত কোনোকিছু সম্ভব না।

অভিবাসী হয়ে আসলে যে কাজগুলো প্রথম সেরে ফেলতে হয় এগুলো হল ইংলিশ কোর্স সেরে ফেলা টেক্স ফাইল করা এবং মেডিকেল টেস্ট সেরে ফেলা। এরপর আস্তে ধীরে জব অথবা ব্যবসা যাই করার করা যাবে। আজ ইংলিশ কোর্সে ( নেভিটাস) নিজেদের এন্ট্রি করতে গিয়ে ইরাকী এক মেয়ের সাথে পরিচয় হল। দেখতে অনেকটা বাংগালী মেয়েদের মতই কিন্তু বেশ লম্বা আর মিষ্টিমত মেয়েটার সাথে তার একবছরের শিশু। সেও নেভিটাসে ইংলিশ কোর্সে ভর্তি হতে এসেছে। ইরাক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বলে সে কিছুটা হতাশ। তার স্বামী ইরানের। ইরাকের ভাষা আরবী হলেও ইরানের ভাষা ফার্সী । আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কেন এখানে রেসিডেন্সি নিয়ে এসেছি।
আমি কিছু বলবো বলবো ভেবে চুপ রইলাম।
আমার মনে হলো আমরা মনে হয় ভাসমান হয়েই রইলাম। মানুষ তো আসলে অনিশ্চিত জীবনের দিকেই ফিরে। আজ ধানমন্ডি হলে কাল যে মায়ানমার কিংবা এমেরিকা থাকব না সে কে বলতে পারে!!


আজ শীত কম বলে ভাবলাম হাফ হাতা সোয়েটার পড়ে বের হই।
এখানে ২ থেকে ১২ /১৩ বা ২২ পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠানামা করে।
বাংলাদেশে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী হলে দেশের অর্ধেক মানুষই হয়তো মারা যেতো। যাই হোক ট্রেনে করে পাঞ্চবোল (যেখানে আমরা থাকি ) থেকে ব্যাঙ্কসটাউন গেলাম। শীত লাগছিলো না যে তা নয় কিন্তু ভাবলাম ব্যপার না। নেভিটাসের ক্যাম্পাসে ঢুকতেই শীত কম লাগলো। হিটার অথবা চারদিকে ব্লক বলে একটু হালকা উষ্ণ থাকে ক্যাম্পাস। কিন্তু ক্লাস রূমে বসতেই আফসোসে মরে গেলাম। কোট অথবা ভারী শীতের কাপড় না পড়ার দুঃখে মনে হলো আত্মহত্যা করি। আমাদের ম্যাডাম বললেন তোমার কি খারাপ লাগছে ? তুমি চাইলে বাইরে ঘুরে আসতে পারো।

ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে ঘুরতে লাগলাম। শীত বেশি লাগলে সমস্যা হলো ঘুম ও আসে বেশী। এখানে সব কিছু এত অরগেনাইজড। আভেন আছে। পানির হিটার আছে। তবে কেউ কোনো কিছু নোংড়া করতে পারবে না। যেহেতু বাংলাদেশের মত গরীব দেশের মত এত এত পিয়ন নাই যে সবাই নোংড়া করবে আর পিয়ন /চাপরাশি ক্লিন করে দেবে। অফিসার শিক্ষক সবাইকেই নিজের কাজ নিজেই করতে হয়।
অনেকগুলো ফাকা রুমের একটা রুম হলো প্রেয়ার রূম। ভাবলাম সেখানে বসি। ওমা ঢুকতেই দেখি সেখানে বিছানা পাতা। কম্বল আছে। কিছু জায়নামাজ বিছানো ফ্লোরে, পাশে একটা লম্বা টুলে কিছু হিজাব আর রেহালের উপর কোরান শরীফ। কম্বল গায়ে দিয়ে শুতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি বারটা বাজে। ততক্ষণে তাপমাত্রা কমলেও এতটা কমেনি। তবু চলে।

২ টা বাজার পরে বের হতেই দেখি রোদ বেড়েছে। কিনতু বাংলাদেশে শীতের দুপুরে এতোটা রোদ থাকে যে শীত পালায়। এখানে রোদের যেনো বা তেজই নাই। রোদ ও মৃদু। নেভিটাস ক্যাম্পাস থেকে একটু হাঁটলেই পার্ক। খেলার বড় মাঠ। আর সামনে ব্যাঙ্কসটাউন লাইব্রেরী। মাঠের মাঝে রোদ কিন্তু আশে পাশে এতো ছায়া ছায়া – দোকান বিল্ডিং এর ছায়া – গাছের ছায়া। তাতে শীত বেড়ে যায় আরো। শীতে অশান্তি লাগে। এতো শীত ভালো লাগে না। সূর্যের তেজ কেনো বাড়ে না এইটা গবেষনা করতেছি আসার পর থেকেই —


এই নদীর নামটা জানা হলো না। কিন্তু পুরো নদীর ধারটাকে বলে ‘ডলস পয়েন্ট’। এতোটাই বিস্তৃত এই নদীর ধার আর কত যে নীল তার পানি। স্রোত পুকুরের মত। দেখলেই মন কেমন করে। অথচ এত সুন্দর নদী এর নাম নেই – হয়তো আছে, আমি জানি না।
এই নদীটার একটা নাম দিলাম আমি মনে মনে।
পৃথিবীর সুন্দর দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার একটা বিশেষ স্থান রয়েছে। কিন্তু কেনো যেনো আমার এর পরিবেশ ফেইস আমার দেশের মতই লাগে। আহা আমার জলা নদী, আমার গ্রামের গাঙ, সরু রাস্তা আর ধু ধু ধান ক্ষেত – সেও তো খুব নীরব। জীবনানন্দের সময়ে আরো নির্জন ছিলো এই ধানক্ষেত নদী আর সরু পথ।

মাঝে মাঝে যখন একা হাঁটি, আনন্দে অথবা স্বাধীনতার আনন্দে আমার দৌড় দিতে ইচ্ছে করে। দেশে কি আমার স্বাধীনতা ছিল না ? ছিলো অবশ্যই। দেশেও তো পাল ছিড়ে ছুটে যাবার মত স্বাধীন ছিলাম। তবু এই দেশের পরিবেশ আমার শান্ত নিরিবিলি গ্রামের মতই লাগে। শুনশান নীরব রাস্তাঘাট, গাড়ি চলে যাবার হুশ হাশ শব্দ আর শান্ত নির্জন ঘরগুলো একতলা অথবা দুতলা। প্রচুর জমি -আর জমির অভাব নেই বলে শহরের বিল্ডিং গুলো উপরের দিকে মাথা তুলে না। এতে সুবিধা হলো আকাশ দেখা যায়।

আমার চোখ আকাশের দিকে চলে যায়, মসৃন নীরব ফুটপাত আর মাঝে মাঝে ফুটপাতের পাশের দোকানে প্রায়ই আরব নারী পুরুষের চলাফেরা বেশ লাগে – আরব নারী পুরুষ আসলেই ভীষন সুন্দর। মাখনের মত গায়ের রঙ, পর্যাপ্ত হাইট – মেয়েরা প্রায় পাঁচ ফিট পাঁচ /ছয় বা সাত আর ছেলেরা পাঁচ আট বা নয় বা তার চাইতে বেশী। মেয়েরা প্রায়ই মিডি টাইপের জামা, ফুল হাতা টি শার্ট টাইপ গেঞ্জি আর মাথায় হিজাব। চোখে ঘন কাজল আই শেডো সহ ধরনের কসমেটিক্সের ব্যবহার করবেই। ভালোই লাগে। এদের চোখ আরো সুন্দর। আমার সাথে নেভিটাসে মিয়ামি নামের এক লেবানিজ মেয়ে আছে। ওর ছাব্বিশ বছর বয়েস। তিন বাচ্চার মা সে। ওর চুল সোনালী আর কালোর মিশেল। গায়ের রঙ ভীষন সুন্দর। খুব ফ্যাশনেবল। আমি জিজ্ঞেস করলাম তিন বাচ্চা নিয়ে তুমি এতো মেনেজ করো কিভাবে ?
সে বলে – আরে আমি শুধু চোখই সাজাই। আর চুল গুলো কালার করেছি বলে চুলে হাত বোলালো । বুঝলাম সে আসলেই ভীষন সুন্দরী।

ছেলেরা প্রায়ই দাড়িসহ ভীষন সুপুরুষ। এখানে ওরা বেশ ভদ্র। আরব পুরুষদের দুর্দান্ত বদনাম আছে। জানিনা এখানের এরা এমন কিনা। মাঝে মাঝে দেশের জন্য মন কেমন করে। আমার মা বাবা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কলিগ সবার জন্যই মন কেমন করে। যে জব করতাম সে জবের জায়গাটার জন্যেও ভীষন মায়া লাগে।
তবু
‘আমার হারিয়ে যাবার মানা নেই। – সত্যিই মানা নেই –
কিন্তু মানুষের শিকড় থাকে গভীরে, অসীমের পানে ছেড়ে দিলেও সে তার মূলে ফিরে আসে। আমার শিকড় কোথায় ? আমাদের শিকর কোথায় !! সে মাটির গভীরে আরো গভীরে প্রোথিত –
আহা মাটি আমার সে সোনার চেয়েও খাঁটি —

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২২ টি মন্তব্য (লেখকের ১০টি) | ১০ জন মন্তব্যকারী

  1. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৪:২৩ |

    নামটাকে বোধ হয় শর্ট করে ফেলেছেন। আপনি আমি শব্দনীড়ের সেই পুরাতন সময় থেকে আছি। ছবি দেখেই চিনে ফেলেছি নাজমুন নাহার দিদি।

    অনেকদিন আপনার লেখা খুঁজেছি। একদম নাই। যদ্দুর মনে পড়ে আপনি খুবই নিয়মিত ছিলেন। যাক দেরিতে ফিরেছেন দেখে যারপরনাই আনন্দিত হলাম।

    প্রবাসের কথা গুলো পড়ে ভালো লাগলো। এটাকেই কিছুদিন নিয়মিত করুন। আমরা পড়তে চাই। জানতে চাই। অনেক ধন্যবাদ আপনার জন্য। নমস্কার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৯:৩৮ |

      ধন্যবাদ সৌমিত্র । নামে কি এসে যায় :D – 

      তবে আপনাদের সাথে আবার চলার ইচ্ছে রইলো । আশা করি নিয়মিত হবো । ভালো থাকবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৪:৩১ |

    শুভ কামনা জানাই————

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৯:৩৮ |

      ধন্যবাদ । আপনাকেও শুভকামনা জানালাম । ভালো থাকবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  3. মোঃ খালিদ উমর : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৪:৩১ |

    দেশ বিদেশের অদেখা কাহিনী পড়তে ভালই লাগে আপা। আশা করি এমনি করে লিখে আমাদের সাথে সাথেই থাকবেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৯:৪০ |

      খালিদ ভাই আশা রাখছি । যে কথা কম বলতে পারে তার হয়তো লেখনিটাই ভরসা । আমারো তাই । আশা করি সাথে থাকবেন । সুস্থ্য থাকবেন , ভালো থাকবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  4. জাহিদ অনিক : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৪:৩৬ |

     

    বাহ ! খুব সুন্দর লাগলো পড়তে। আপনি আপনার বিদেশে বসে লেখা ডায়েরী যেন আমাদের পড়তে দিয়েছেন। 

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৯:৪১ |

      অনেকটা সেরকমই । আগে আমরা ডায়েরী একাই লিখতাম একাই পড়তাম । এখন সবাই শেয়ার করি – হা হা 

      ভালো থাকবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  5. মিড ডে ডেজারট : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৪:৪৩ |

    নীল জলের নদিটার নাম জানার আগ্রহ রয়ে গেল।

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ১৯:৪১ |

      জেনে জানাবো নিশ্চয়ই । ভালো থাকবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  6. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ২৩-০৯-২০১৮ | ২০:৪২ |

    * স্বাগতম শব্দনীড়ে… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ২১:৩৬ |

      ধন্যবাদ দিলওয়ার ভাই । শুভকামনা জানবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  7. মুরুব্বী : ২৩-০৯-২০১৮ | ২১:৩৩ |

    সাদর অভিনন্দন আপা। দীর্ঘকাল পর আপনার লিখা।

    এমন নয় যে, আপনার লিখা এখনই আমার চোখে পড়েছে। আমি দেখেছি। আপনার সহ-ব্লগারদের অনুভূতি টুকুন জানবার অপেক্ষা করছিলাম। পরিশেষে যতিচিহ্ন সম্পাদনা করে পোস্টে হাজির। অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। আরও জানতে চাইবো। Smile সালাম।

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ২১:৩৮ |

      ধন্যবাদ মুরুব্বী । পুরনো জায়গারে কে ভুলে যায় ?

      সাথে থাকার জন্য আবারো ধন্যবাদ । সালাম জানবেন । ভালো থাকবেন । 

      GD Star Rating
      loading...
  8. রিয়া রিয়া : ২৩-০৯-২০১৮ | ২১:৫৭ |

    মুগ্ধ হয়ে পড়লাম দিদি ভাই। প্রণাম। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ২২:০৮ |

      ধন্যবাদ দিদি ভাই ।

      ভালো থেকো । 

      GD Star Rating
      loading...
  9. শাকিলা তুবা : ২৩-০৯-২০১৮ | ২২:০৯ |

    শুভেচ্ছা নিবেন আপা। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৩-০৯-২০১৮ | ২২:২১ |

      তোমাকেও শুভেচ্ছা তুবা । আশা করি ভালো আছো । 

      GD Star Rating
      loading...
      • শাকিলা তুবা : ২৩-০৯-২০১৮ | ২২:৩৭ |

        ভালো আছি। যেমন আগের মতো। দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। Frown

        GD Star Rating
        loading...
  10. ইলহাম : ২৩-০৯-২০১৮ | ২২:৫৩ |

     পাঞ্চবোল শহরের বর্ননা বেশ ভালো লাগলো!https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    শুভেচ্ছা ও শুভকামনা প্রিয় আপু!

    GD Star Rating
    loading...
    • নাজমুন : ২৪-০৯-২০১৮ | ৮:১৬ |

      ধন্যবাদ। আশা করি সাথে পাবো।আপনাকেও শুভেচ্ছা ।ভালো থাকবেন

      GD Star Rating
      loading...