রক্তসিথান। বইনের নতমুখ হুশিয়ার করে
এই মাটির খোয়াব শুভ নয়। কান
পাতি শুনি পিতৃপুরুষের জোরধ্বনি
এই মাটি তোর, এই তো মা- ভূমি।
এই নুড়িপথ, জঙলার ফুল বরকল ছায়া,
পানছড়ি দিঘিনালা, এই মেঘমাখা
পাহাড় কর্ণফুলির চকচকা মাছ
নিত্য করে ছল মোর সাথে।
মুই মারমা মুরং।
মুই চাকমা খিয়াং উসাই লুসাই
মোক চেনে কাসালং, হ্রদে হারা রাঙামাটি।
অরা কয়, এই মাটি জল সবুজ পাহাড় দিয়া
বহে হিংসার ঝরনাধারা।
পুঁথি লেখে, লেখে বদ- নাম।
কয়, মোর চোদ্দপুরুষ আদিম,
দেখে নাই কিছু সভ্যের সমান;
পড়ে নাই চসার-হোমার,
বোঝে নাই রাসেলের ভাবকথা।
ঈশ্বরের কানা চোখ পড়ে নাই মোর ‘পর।
মুই ক্ষুদ্র জাতি। ‘জুলু’দের খরা মাঠে, ক্যাঙারুর ঝাপে
বন্ধু আছে মোর হরিণ ঝলসা গোশে।
চেরোকি মোহক সাঁওতাল গারো অরা মোর ভাই,
জঙলার আদিম; খুন করে নাই
এক প্রাণ তবু হ্যানয় কি বাগদাদে।
দোষী মন পেঁচার দোসর
আন্ধারে আন্ধারে হাঁটে ‘জুম’ জমি দিয়া।
অরা বাতাসে বিষকুটনি
অরা পাখি খুনি
অরা বৃক্ষজল্লাদ।
এদ্দিন পর শিকা টানে ফের কার হাত,
ভাই কই যারে, জানি মাটির দোসর
তারও মুখে ফেনা তোলে বিষকথা।
ভালোবাসি মুই ঢাকঢোল
মাথার খবং, বক্ষে খাদি।
যদি গাল ভরে হাসি গোল হয়ে বসি
শুনি কবিতা রামমোহন, এত বদ-নাম ক্যানে
প্রাণ যদি মোর পানছড়ি
দিঘিনালা
কাসালং।
—————————————-
*** অরা বাতাসে বিষকুটনি/ অরা পাখি খুনি/ অরা বৃক্ষজল্লাদ’ পঙ্ক্তি কয়টি সলিমুল্লা খান অনুদিত ‘পেন্টি সারিকস্কি’র কবিতা থেকে নেয়া।
কৃতজ্ঞতায়ঃ ডঃ হুমায়ূন আজাদের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা’ এবং সলিমুল্লা খানের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সংগ্রামের গণতান্ত্রিক ও জাতীয় প্রকৃতি প্রসঙ্গে’ পড়ে লিখেছেন কবি শামস আল মমীন।
কাব্যগ্রন্থের নাম – মনোলগ।
loading...
loading...
কোন মন্তব্য নেই