‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বনাম সালমান রুশদি

a

স্যার সালমান রুশদি
পেশা- ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক
জাতীয়তা- যুক্তরাজ্য
লেখার ধরন- জাদুকরী, বাস্তবতা
বিষয়সমূহ- সমালোচনা, ভ্রমণ কাহিনী
প্রভাবিত হয়েছেন- গুন্টার গ্রাস, Gabriel García Márquez, , ভ্লাদিমির নবোকভ, জেমস জয়েস, জর্জ লুই বোর্গস, টমাস পিঞ্চন।

স্যার আহমেদ সালমান রুশদি ( দেবনগরী ভাষা: अहमद सलमान रश्दी ) ( জন্ম: ১৯শে জুন, ১৯৪৭) একজন ভারতীয়-বৃটিশ ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিডনাইট্‌স চিলড্রেন’-এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করনে। এই উপন্যাসটি বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তাঁর প্রথম দিককার উপন্যাসের অধিকাংশেরই কাহিনী বা পটভূমি রচিত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশকে ঘিরে। তাঁর লেখার ধরণকে “জাদুকরী বাস্তবতা” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি “স্যাটানিক ভার্সেস” রচনার মাধ্যমে র্ধমানুরাগী জনতার সাথে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে অন্যত্র সালমান রুশদি বলেছেন যে, “স্যাটানিক ভার্সেস” নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা হইচই হওয়াতে ভালো-মন্দ দুটোই হয়েছে। এতে অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে বইটি পড়ার জন্য, কিন্তু এই হইচই বড় রকমের বাঁধা এই উপন্যাসের শিল্পমূল্য বোঝার জন্য। “স্যাটানিক ভার্সেস” বুকার পুরস্কাররে জন্য চূড়ান্ত তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলেও পুরস্কার পায় নি, যদিও বছররে সেরা উপন্যাস হিসেবে ‘হোয়াইটব্রেড এওয়ার্ড’ পেয়েছিল এবং পশ্চিমা সমালোচকদের বানানো শতাব্দীর সেরা একশটি বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে কয়েকবার।

The Satanic Verses Affair1
The Satanic Verses (1988)

১৯৮৮ সালে ইরানের ফতোয়া জারির পর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলো যেমন নিষিদ্ধ করেছে স্যাটানিক ভার্সেস, নিন্দা জানিয়েছে সালমান রুশদির বিরূদ্ধে, তেমনি লেখক, বুদ্ধিজীবী সহ নানা ধরনের মুক্তচিন্তার মানুষেরা এই ফতোয়ার বিরূদ্ধে কথা বলেছেন, লেখকের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। এই ফতোয়ার জন্য সালমান রুশদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হিতোশি ইগারাশি, যিনি স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসটি জাপানিজ ভাষায় অনুবাদ করেন তাঁকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা হয় ১৯৯১ সালে। ইতালরি অনুবাদক ইতোরে ক্যাপ্রিওলোকে একই মাসে ছুরিকাঘাত করা হয়, যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। নরওয়ের প্রকাশক উইলিয়াম নাইগার্ড অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আততায়ীর গুলি থেকে। ১৯৮৯ সালে বৃটেনে যে ট্রেন-বোমা ফাটানো হয়, তা ছিল সালমান রুশদিকে উদ্দেশ্য করে হিজবুল্লাহ’র আক্রমণ। যদিও ১৯৯৮ সালে ইরানের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ খাতামী জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা যেমন ‘রুশদিকে হত্যার ফতোয়া সর্মথন করেন না তেমনি এটি রহিতও করেন না’, সুতরাং এটি আজও বহাল আছে। সালমান রুশদি ঈষৎ মুচকি হাসি হেসে বলেন যে, এখনও অনেকটা ‘ভ্যালন্টোইন’স ডে’র মতো ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে তাঁর কাছে বেনামে র্কাড আসে যাতে লেখা থাকে ‘আমরা এখনও ভুলি নি’। তিনি আরও বলেন এটা এখন সত্যিকারের ভয়-দেখানোর চেয়ে অনেকটা ‘রেটরিকের’ মতো হয়ে গেছে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার চেয়ে এটাকে অবজ্ঞা প্রর্দশন করলেই বরং সবার জন্য মঙ্গল হতো। মানুষের বিশ্বাস কেন এতো সহজে আহত হবে, ঠুনকো কাঁচের মতো ঝুরঝুরে হবে- যে ভিন্নমতকে খতমই করতে হবে, আমি আমার নিজের ভাষায় এভাবে বলি যে, ‘কারো যেমন ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, তেমনি কারো তো নাস্তিকানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, অনুভূতি তো সবারই সমান!’

বৃটিশ লেখক সালমান রুশদি (১৯শে জুন, ১৯৪৭) হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে পারেন। একযুগ আগে ভারত সরকার তাঁর এই বাড়িটি দখল করে নিয়েছিল। তবে ফেরার আগে এই বাড়ি বসবাস করার জন্য ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। তাঁর উকিল বিজয় শংকর দাস গত ১৯৯৭ এর নভেম্বরে এই রেষ্ট হাউজের পজেশন নেয়ার জন্য সোলানে গিয়েছিলেন। সোলান হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত একটি পার্বত্য এলাকা। সিমলা থেকে এর দূরত্ব তেমন বেশী নয়। মিঃ দাশ ইতিমধ্যেই টেলিফোন সংযোগ এবং বাসগৃহ সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভারতের সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা সহজে শেষ হয় না। তাই সিজ করা সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার আশায় রুশদি বেশ আনন্দ বোধ করছেন। তার প্রয়াতঃ পিতার নামে এই ”আনিস” ভিলা দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে অব্যবহৃত ছিলো। লেখালিখির জন্য রুশদি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি এখানেও না থাকলেও কিভাবে বাড়িটি রাখবেন তার প্ল্যান করেছেন।

”স্যাটানিক ভার্সেস” লিখার অপরাধে ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লা খোমেনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড জারি করে ফতোয়া দেন। সেই সময় থেকেই রুশদি ভারতে আসতে পারেন নি। তখন মুসলিমদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর ভারতে তার উপন্যাস নিষিদ্ধ করা হয়।
এখনও ভারতে তার আগমনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবার আশংকা রয়েছে। তবুও গত ১৭ বছর ধরে তিনি স্বদেশে ফিরে আসার জন্য লড়াই করে চলেছেন। ছয় বেডরুম বিশিষ্ট বাড়িটি বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের সরকারের অধীনে রয়েছে। একটি স্থানীয় সরকারি অফিস হিসাবে এর ব্যবহার হচ্ছে। এই বাড়িটি আবার রুশদি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিলো।
৬০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত সোলান শহরের অদূরে পাইন গাছের বনে ঢাকা ”আনিস” ভিলার সামনে রয়েছে পঁচিশ’শো গজের এক সুদীর্ঘ লন। ক্ষয়িষ্ণু পাথরের দালানের উপর ঢেউটিনের ছাদ, যা একসময়ে লাল রং করা হয়েছিলো। ছাদে রয়েছে চারটে ছোট গম্বুজ। সামনে এক প্রশস্ত বারান্দা। ভ্যালির বুকে এ এক সুন্দর ল্যান্ডমার্ক।

সোলানের ডিষ্ট্রিক্ট কালেক্টর এবং ”আনিস” ভিলার প্রতিবেশী বি,এস নায়ান্ত বলেন- যদি রুশদি এখানে থাকতে চান তাহলে তারা খুশি হবেন। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত আসার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা তাঁর সবধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবো। তার মতে ভিলার বর্তমান দাম তিন থেকে চার মিলিয়ন রূপী হবে।

রাজ্য কর্মকর্তারা ১৯৯০ সালে ”আনিস” ভিলার দখল নিয়েছিলেন। তাদের মতে ১৯৪৭ সালে দেশ পার্টিশনের সময় রুশদি পরিবার পাকিস্তানে চলে গেলে এই ভিলা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। কিন্তু মিঃ দাসের মতে- বৃটেনে স্থায়ী হবার আগে এই পরিবার ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান মুম্বাইতে বসবাস করে। তখন লোকাল এডুকেশন অথরিটির কাছে বার্ষিক ২০০০ রুপীর বিনিময়ে আনিস রুশদি বাড়িটি ভাড়া দেন। তিনি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে এই সম্পত্তি তিনি তার সন্তানকে লিখে দেন।
যদিও আদালত ১৯৯৭ এর জুলাই মাসে রুশদির অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু নানা টানাপোড়েনের কারণে এর দখল পেতে দেরী হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বকেয়া ভাড়া দাবি করছেন। আর রাজ্য সরকার প্লাম্বিং এর জন্য খরচ করা প্রায় ১,৫০,০০০ হাজার রুপী শোধ দেয়ার কথা বলেছেন। মিঃ দাস বলেন- রুশদি এখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এখানে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

satanicc

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মামুন : ১৮-০১-২০১৭ | ১৬:১৯ |

    অনেক কিছু জানা হলো।
    শুভেচ্ছা ভাইয়া।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...