নারী তুমি বিজয়িনী
সেই পাথর যুগের জীবিকা অন্বেষণে শিকার ও সংগ্রহ থেকে শুরু করে নব্যপ্রস্তর যুগে উৎপাদনের সূচনায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে নারীর সাহিত্যচর্চা, যোদ্ধা এবং রাজ্য বা সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনায়ও নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময়ও নারী পিছিয়ে ছিল না। আধুনিক যুগে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ, রাষ্ট্র পরিচালনা, মহাকাশ ভ্রমণ ও গবেষণা, সাহিত্যচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারী গৌরবের রেখা টেনে চলেছে। তবে এই অর্জন খুব সহজেই অর্জিত হয় নি। শত বাধা ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। যা এখনো বিদ্যমান। একজন নারীরও সমতার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার ও উন্নয়নে অংশীদারিত্বের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার যারাই পেয়েছেন তারাই আজ স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন।
শত বাধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিকে হার মানিয়ে অনেক নারীই ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরিত হয়ে আছেন। তাঁরা সমকালীন গণ্ডী ছাপিয়ে গিয়ে সমাজকে দেখিয়েছেন উন্নয়ন ও কল্যাণের পথ। নিজ দক্ষতা ও কর্মগুণে আমাদের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-
১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসেন। মুসলিম ভারতের তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজিয়াই একমাত্র নারী, যিনি দিল্লির সিংহাসনে প্রথম উপবেশন এবং রাজদন্ড ধারণ করে প্রবল প্রতাপে শাসন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিশ, যিনি দাস বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন।
ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর নারীবিদ্বেষী আমির-ওমরাহগণ সুলতান রাজিয়ার বিরোধিতা শুরু করেন। তাঁদের যুক্তি হল যে, ইলতুৎমিশের পুত্র থাকার কারনে কন্যা উত্তরাধিকারী হতে পারে না। এই রাজমহীয়সী ছিলেন বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ন, দয়াশীল, সুবিচারক, বিদ্যোৎসাহী, প্রজাবৎসল, সমরকুশল এবং রাজোচিত বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। শৈশব থেকেই রাজিয়া ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতি এবং পিতা সুলতান ইলতুৎমিশের শাসনকার্য লক্ষ করতেন। তিনি অস্ত্রচালনা, অশ্বারোহণ ও রাজনীতিতে ক্রমশ দক্ষ হয়ে উঠতে থাকেন। রাজিয়ার রাজোচিত গুণাবলি দেখে সুলতান ইলতুৎমিশ তাঁর পুত্রদের পরিবর্তে কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনিত করেন! সুলতান রাজিয়া দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন এবং বর্ম ও শিরস্ত্রাণ পরে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু রক্ষণশীল আমিরগণ সুলতান রাজিয়ার খোলামেলা রাজকীয় আচার-আচরণ মোটেই পছন্দ করতেন না। অতঃপর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে এক যুদ্ধে এই রাজমহীয়সী সুলতান রাজিয়ার মৃত্যু হয়!
ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজসংস্কারক এবং নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। রোকেয়া যে সামাজিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন, সেখানে মুসলমান মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও তিনি বড় ভাইয়ের নিকট ঘরেই গোপনে মোমবাতির আলোয় বাংলা ও ইংরেজি শিখেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পদে পদে গঞ্জনা সত্যেও তিনি জ্ঞানার্জনে অবিচল ছিলেন। তাঁর স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনেও রোকেয়াকে শিক্ষার্জন ও লেখালেখি করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে মেয়েদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিরূপ সমালোচনা ও নানাবিধ সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সে যুগের মুসলমান মেয়েদের শিক্ষালাভের অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত করেন।
রোকেয়ার সমগ্র সাহিত্যকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের কুসংস্কার ও অবরোধ প্রথার কুফল, নারীশিক্ষার পক্ষে তাঁর নিজস্ব মতামত, নারীদের প্রতি সামাজিক অবমাননা এবং নারীর অধিকার ও নারী জাগরণ সম্পর্কে তাঁর প্রাগ্রসর ধ্যানধারণা। শিক্ষা ব্যতীত নারীজাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয়, এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। সাহিত্যচর্চা, সংগঠন পরিচালনা ও শিক্ষাবিস্তার এই ত্রিমাত্রিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজ সংস্কারে এগিয়ে আসেন এবং স্থাপন করেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
একবিংশ শতকে এসে বাংলাদেশী প্রথম নারী পর্বতারোহী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে নিশাত মজুমদার। এরপরেই রয়েছে সেভেন সামিট বিজয়ী ও দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী পর্বতারোহী হিসেবে ওয়াসফিয়া নাজরীনের নাম। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যোগ দিতে কঙ্গো গিয়েছে বিমানবাহিনীর দুই নারী বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী।
নারীদের এই বিশ্ব জয়ের ভূমিকা যতটা আনন্দের ততটাই গৌরবের। দেশের জন্য নিজ মেধায় গতানুগতিক পেশার বাইরেও নারীরা চ্যালেঞ্জিং, সৃষ্টিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় সফলভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর কল্যাণে নারীর যে অর্ধেক অবদান তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে সব বাধা-বিপত্তিই যে মোকাবিলা করা সম্ভব, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার নারীরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছে। তবে নারীর এই মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে কতটুকু কাঠখড় পোড়াতে হয় এবং তার কতটুকু মূল্যায়ন করা হয় তা ভাববার বিষয়! উন্নয়ন ও কল্যাণে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব কোন ভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
loading...
loading...
খুবই সাবলীল ভাবে বর্ণনা করেছেন। এবং উপসংহারে সত্য উচ্চারণটিই উঠে এসেছে … নারীদের এই বিশ্ব জয়ের ভূমিকা যতটা আনন্দের ততটাই গৌরবের। দেশের জন্য নিজ মেধায় গতানুগতিক পেশার বাইরেও নারীরা চ্যালেঞ্জিং, সৃষ্টিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় সফলভাবে কাজ করছে।
পৃথিবীর কল্যাণে নারীর যে অর্ধেক অবদান তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে সব বাঁধা-বিপত্তিই যে মোকাবিলা করা সম্ভব, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার নারীরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছে। ___ সহমত। ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
ধন্যবাদ দাদা! সত্যকে চাপা দিয়ে রাখতে পারি নি দাদা।
loading...
এই পৃথিবীর যত বড় বড় বিজয় সবার পিছনেই রয়েছে কোন
নারীর অবদান।
loading...
বিজয় যেখানে সত্য নারীর অবদানও সত্য এবং অনস্বীকার্য। ধন্যবাদ দাদা!
loading...
অসাধারণ প্রবন্ধ। অভিনন্দন দাদা।
loading...
ধন্যবাদ দিদি! আপনার অনুপ্রেরণা লেখার স্পৃহা বাড়িয়ে তুলে বহুগুণ!
loading...
অতূল্য পোস্ট মৃধা ভাই। আমাদের ভারতবর্ষের সত্য ইতিহাস সমূহ উঠে এসেচে।
loading...
হুম তবে পৃথিবী জুড়েই এমনটা দেখা যায়। ধন্যবাদ ভাই।
loading...
নারী সমানভাবে সুযোগ পেলে সেও সমানভাবে অবদান রাখতে পারে তাদের মেধা সৃষ্টিশীলতা দিয়ে । আপনার প্রবন্ধ খুব ভালো লাগলো ।
loading...
ধন্যবাদ দিদি! শুভেচ্ছা নিবেন। নারীদের মেধার পরিচয় প্রকাশের জন্য সুযোগ আমাদেরই দিতে হবে।
loading...
চমৎকার তথ্যবহুল ঝরঝরে উপস্থাপনা।
loading...
ধন্যবাদ মি. জলদস্যু!
loading...
* অনেক সুন্দর সাবলীল উপস্থাপনা…


loading...
ধন্যবাদ ভাই!
loading...