অনেকদিন হলো ইচ্ছে করেই রাতের বেলায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বেশি বাইরে বের হই না। রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিই। তারপর একটা চা আর বিড়ি টানার জন্য বাইরে বের হই। রুম থেকে বের হয়ে মিনিট তিনেক হাঁটলেই হরেকৃষ্ণের মোড়। এই মোড়েই একটা ছোট্ট চায়ের দোকান আছে। বিবি স্টোর। বিবি স্টোরের মালিক ষাটোর্ধ রহমত মিয়ার সঙ্গে ইতোমধ্যেই আমার একটা অঘোষিত সম্পর্কের ভাব চলে এসেছে। সেখানেও যাওয়াটা বাদ দিয়েছি। যদিও বিষয়টা নিয়ে এখনো কারুর সঙ্গেই শেয়ার করতে পারিনি।
সত্যি বলতে অনেকটা ভয়েই এখন আর বাইরে বের হই না। কিন্তু ঘরের মধ্যেও নিরাপদ বোধ করছি না। রাত্রিকালিন উপদ্রপ আরও বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। ভাবছি কাউকে নিয়ে আসবো। কথাও বলে রেখেছি। কিন্তু সময়ের অভাবে যেতেও পারছি না। যাকে নিয়ে আসবো বলে মোটামুটি কথা পাক্কা হয়েছে তিনি সম্পর্কে আমার চাচা লাগেন। ভদ্রলোক আমার থেকেও অনেক বেশি সাহসী। ভূত তো দূরের কথা জ্বিনও তাঁর সামনে দাড়াতে পারে না। কথিত আছে যে, তিনি জ্বিনের সঙ্গেও কুস্তি লড়ে জিতে ছিলেন।
সেই চাচার সঙ্গে আলাপ ফাইনাল করার পর বেশ কয়েকটি দিন আমার ভালোই কাটলো। ভাবলাম, যাক অশরীরী আত্মারা তাহলে বুঝতে পারছে যে, সাহসী এক ব্যক্তি আসছে আমার বাসায়। কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল করে দিয়ে হঠাৎ এক রাতে তাদের আগমন ঘটলো।
রাতে সাধারণত এখন ঘুমাতে একটু দেরিই হয়। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে দিলেও ঘুমাতে ঘুমাতে এগারোটা / বারটা। সেদিন একটু ঘুম ভাব চলে এসেছিল। হঠাৎ টিনের চালের ওপর দড়াম করে কিছু একটা পড়লো বলে মনে হলো। আমি হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসি। পরপর বেশ কয়েকটি এমন শব্দ হলো। আমি টর্চলাইটি হাতে নিয়ে বাইরে বের হই মনের অজান্তেই।
যতোদূর মনে পড়ে টর্চ হাতে পুকুর ঘাট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। ওখানে যাওয়ার পরেই হঠাৎ করে টর্চলাইটি বন্ধ হয়ে যায়। জ্বলন্ত একটা লাইট এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বুকটা ধক্ করে ওঠে। শরীরের রোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসে। যা দেখি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারি না। দেখি, এই মধ্যে রাতে পুকুরের পানিতে প্রচন্ড ঢেউ। আর সেই ঢেউয়ের মধ্যে থেকে সফেদ পোশাকে এক ব্যক্তি ধীরে ধীরে বসা থেকে উঠে দাড়াচ্ছেন। লম্বা হতে হতে তিনি এতোটাই লম্বা হলেন যে, মনে হলো তিনি আকাশ ছুঁয়ে ফেলবেন। কিন্তু যখন তাঁর মুখের দিকে আমি তাকালাম নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আর কেউ নন, তিনি আমার সম্পর্কের সেই চাচা। যিনি আমার বাসায় আসবেন বলে কথা দিয়েছেন।
পরের দিন নিজেকে আবিষ্কার করি এক জুনিয়র কলিগের বাসায়। বিধ্বস্ত চেহারা। গায়ের জামাটায় কাদা পানি লেগে একাকার।
.
(..চলবে…
loading...
loading...
লিখনীতে অভিভূত হলাম।
loading...
অসামান্য এই জীবন কথা কাব্য। চলুক ধারাবাহিক কবি মোকসেদুল ইসলাম।
loading...