অশরীরীঃ না গল্প না প্রবন্ধ ৫

অনেকদিন আগে একটা গজারি লাঠি বানিয়ে রেখেছিলাম। বাসাটা ভাড়া নেওয়ার সময় অনেকে তখন বলেছিলেন আশেপাশে সাপ-টাপের দেখা মেলে, যেনো সাবধানে থাকি। আজ সেই লাঠিটা কাজে লাগতেছে। বিছানা থেকে উঠে সুইচ অন করতে গিয়ে দেখি বিদ্যুৎ নেই। মফস্বল এলাকায় এই একটা বড় সমস্যা। নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে না। যদি লোডশেডিং হয় তো বিদ্যুৎ আসার আর কোন খবর থাকে না।

আবার খাটের ওপর উঠে পড়ি। বালিশের নিচ থেকে টর্চলাইটটা খুঁজে নিই। দরজায় তখনও দুমদাম করে কেউ একজন শব্দ করেই যাচ্ছে। দরজার কাছে গিয়ে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখতে চেষ্টা করি। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না।

দরজাটা খুলতে গিয়েও কি করে একটু অপেক্ষা করি। দুমদাম আওয়াজটা আর নেই। মিনিট দুয়েক পর আবার খেয়াল করলাম দরজায় কেউ একজন আবার নক করতেছে। এবার আর জোড়ে নয়। আস্তে আস্তে! ঠকঠক করে! শাহাদাৎ কিংবা মধ্যমা আঙুল দিয়ে কেউ দরজায় টোকা দিচ্ছে।

আমি বুকে সাহস নিয়ে গলাটা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করি, কে? কেউ উত্তর দেয় না। বদ্ধ ঘরে শব্দটি প্রতিধ্বনি হয়ে আবার আমার কাছেই ফিরে আসে। আমার মনে হলো, বাইরে থেকে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করছে, ভিতরে কে? আমার দম বন্ধ হবার জোগাড়। হঠাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।

কিশোর বেলায় প্রায় প্রতি রাতেই ঘুম থেকে কান্না করে উঠতাম। সে কি জোরে জোরে কান্না! পাশের রুম থেকে বাবা- মা দুজনেই দৌড়ে আসতেন। জিজ্ঞেস করতেন কি হয়েছে? আমি তাদেরকে যা বলতাম তার মানে হল এই- স্বপ্নে দেখি ম্যাচের কাঠির মতোন চিকন একটা লোক ইয়াব্বড় একটা পাথর তুলে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে মারার জন্য আর আমি সেই পাথরের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য এদিক-সেদিক পড়ি মরি করে দৌড়াচ্ছি। তবে দৌড়াচ্ছি যে পথে সেই পথটাও ভালো না। সুই খাড়া করে বিছানো পথের প্রত্যেকটি জায়গায়। আমি দৌড়াচ্ছি আর পা বেয়ে রক্ত ঝরছে। বাবা আয়াতুল কুরসি পড়ে আমার শরীরে ফুঁ দিতেন। পানি পড়ে দিতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো বাবার ফূুঁ দেওয়া পানি পান করার পর সেই রাতে আর কোন স্বপ্ন দেখতাম না।

আজ অনেকদিন পর তাদের কথা মনে হলো। এমনিতেই বুকের ওপর ভয় ভর করে আছে। তার ওপর বিষণ্নতায় মন ছেঁয়ে গেল।

দরজাটা খুলে ফেলি। কেউ নেই। ভয়ে শরীর ছম ছম করে ওঠে। দৃষ্টি দূরে নিক্ষেপ করি। শুধু অন্ধকার। বাইরে দুটো ইদুঁর বোধহয় মারামারি করছে। তাদের চিকচিক শব্দে রাতের অন্ধকার খান খান হওয়ার যোগাড়।

টর্চলাইটের আলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মারতে থাকি। কিছুই চোখে পড়ে না।
পা বাড়াই বাড়ির বাইরে। আশেপাশে কাউকে খুঁজে না পেয়ে যখন বাসায় ফিরবো বলে মনস্থির করেছি ঠিক তখনই কানে আসে কে যেনো খুব মিহি সুরে বলছে- “বড় বাঁচা বেঁচে গেলিরে খোকা। তোর মা হয়তোবা কচুর পাতায় ভাত দিয়েছিল আমাদের কাউকে।” শব্দগুলো কানে আসতেই আমি ত্বরিতগতিতে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ি।

.
……চলবে….

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৯-০২-২০২১ | ১৮:৫৩ |

    আপনার এই জীবন নির্ভর শব্দ-সকল আমাকে মুগ্ধ করেছে প্রিয় কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...