কথা খুবই অল্প।
একটি ছোট বাচ্চাকে আজ যদি আপনি প্রশ্ন করেন, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? খুব সহজ এবং কমন কিছু উত্তর আসবে ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার/ পাইলট ইত্যাদি ইত্যাদি। হাইস্কুলের একটা বাচ্চাকে প্রশ্ন করুন, সে বলবে আমার অভিভাবক যা বলবে তাই হবো। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের একটা ছেলে/মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন বলবে আগে দেখি অনার্সে কোন বিষয় পাই, তারপর চিন্তা করা যাবে। অতঃপর অনার্স পড়ুয়া একটি ছাত্র/ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। সে কোন বিষয়ে পড়ছে তা বড় কথা নয় তার উত্তর হবে খুবই ডিপ্লোমেটিক। আগে তো অনার্স শেষ করি, তারপর মাষ্টার্স, তারপর না হয় চাকরির কথা ভাবা যাবে।
প্রথম কথা, আপনি অনার্স পড়ছেন, তবে এটা শেষ করে কেন মাষ্টার্স করবেন? যেটা অনার্স এরই সমমান। অর্থাৎ যারা অনার্স পড়েনি, শুধু ডিগ্রী (পাস) কোর্স করেছে তাদের জন্য এই মাষ্টার্স কোর্সটি রাখা হয়েছে, তারা যেন অনার্স এর সমমান হতে পারে। আর আপনি অনার্স শেষ করে আবারও আর একটি অনার্স সমমান এর ডিগ্রীর জন্য অনেক বড় বড় (সরি, দামী দামী) বেসরকারি ভার্সিটিতে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছেন!
দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমানে প্লে-গ্রুপ থেকে অনার্স পর্যন্ত পাশ করতে মোট ২০ বছর লেগে যায়। এই ২০ বছরেও আপনি ঠিক করতে পারেন না আপনি কি করবেন? কি হবেন? কি করতে চান? কি করা উচিত? কোন পেশায় যাবেন? কেন যাবেন?
এর প্রকৃষ্ট উদাহরন হলো বর্তমান আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রগুলি।
(১) আমার পরিচিত একজন সিএসই আজ সরকারী অফিসে ৩য় শ্রেণীর চাকরীতে আছেন।
(২) বাংলায় অনার্স ও মাষ্টার্স! করা একজন ব্যাংকে চাকরী করছেন।
(৩) মার্কেটিং বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স! করা একজন একটি এনজিওর ডোনেশন প্রোগ্রামে চাকরী করছেন।
(৪) সমাজ কল্যান বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স! করা একজন ঔষধ কোম্পানীর সেলস রিপ্রেজেন্টিভ।
(৫) রসায়ন বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স! করা ছেলেটা আজও যে কোন একটা চাকরীর জন্য শুধু আবেদন করেই যাচ্ছে।
(৬) রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স মাষ্টার্স! করা একটা ছেলে টেলিভিশনে ইংলিশ নিউজ প্রেজেন্টার।
আমরা এই ২০ বছর কেন পড়াশুনা করি? কোন উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাই? আমরা নিজেই জানি না। আমাদের এই সিস্টেম থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার। এ রকম বিশেষায়িত পড়াশুনাগুলি আমাদের বদলানো দরকার। নয়তো আমাদের ছাত্র/ছাত্রীদের সচেতন করা দরকার। তাদের চিন্তা, চেতনা, মনন, মানসিকতা ও ইচ্ছাগুলিকে বিবেচনায় এনে কে কি হতে চায় তা প্রত্যেক অভিভাবককে বুঝতে হবে। তারা কোন বিষয়টাতে বেশি মনোযোগী? কোন বিষয়টা পছন্দ করছে? সেদিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে।
আপনার স্বপ্ন আপনার ছেলে/মেয়েকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কিছু বানানোর সেটা কোন দোষের নয় আপনি আপনার বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকে সেভাবে, সেই মন মানসিকাতা নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন। অবচেতন মনে তাকে ভাবতে দিন তাকে আপনার ইচ্ছা পূরন করার সুযোগ করে দিন। নয়তো আপনি যেমন স্বপ্ন দেখতে জানেন এরকম স্বপ্নতো সেও দেখতে জানে। হয়তো আপনি স্বপ্ন দেখছেন আপনার সন্তান বড় কোন ব্যাংক কর্মকর্তা হবে। কিন্তু আপনার সন্তান স্বপ্ন দেখছে সে বড় হয়ে একজন ভালো খেলোয়াড় হবে। দু’জনের স্বপ্নের মধ্যে একটা দূরত্ব হয়ে গেল। ফলাফল আপনার সন্তান হয়তো কিছুই হলো না। এই জন্য দায়ী কে? আপনি হয়তো এক তরফা আপনার সন্তানকেই দায়ী করবেন। কিন্তু না আমি দোষটা কাউকেই দিব না। কারন স্বপ্ন দেখার অধিকার সবারই আছে। আপনার সন্তানকে ছোট থেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা দিন। ব্যাংক কর্মকর্তা হলে কি ধরনের সুবিধা সেগুলো তার সামনে তুলে ধরুন। তাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করুন। সে একদিন আপনার স্বপ্ন পূরণ করবেই। অন্যথায় আপনার সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে চেষ্টা করুন। সে তো আর খারপ কিছু চাইছে না। আমাদের দেশে অনেক খেলোয়ার আছে যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য খেলোয়াড়ের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। সাড়া বিশ্বকে তাদের খেলোয়াড়ী গুন দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন।
একবার চেষ্টা করেই দেখুন না। অন্তত একটা স্বপ্ন তো পূরণ হোক!
loading...
loading...
loading...
চেষ্টা করেছি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলতে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। তবে বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। অন্তত আমার দৃষ্টিতে।
loading...
আলোচ্য বিষয়বস্তুকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এবং সার্বিক ভাবেই সহমত জ্ঞাপন করছি। শব্দনীড়ে আপনাকে স্বাগতম মি মোফাক্কার। শব্দনীড়ে আপনার সহ-ব্লগারদের মন্তব্য দিয়ে উৎসাহিত করবেন। পরিশেষ নিরাপদে থাকুন। ধন্যবাদ।
loading...
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের সহযোগীতা পেলে সামনে এমন আরও অনেক বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।
ভাল থাকবেন।
loading...
সত্যি এ হিসাব আমিও মেলাতে পারিনি। প্রত্যেকেই নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরনের জন্য অন্যকে বেছে নেয়। যখন তা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া হয় তখন তা সত্যি দুঃখ জনক। আমরা এভাবে আমাদের প্রতিভাগুলো নষ্ট করে দিচ্ছি না'তো!!!!
ধন্যবাদ লেখককে।
loading...
আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি আসলে আমার দেখা চারপাশের লোকজন থেকে এবং নিজের জীবন থেকে যে শিক্ষা নিয়েছি তারই কিছু তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। হয়তো কেউ না কেউ আমার এই জীবন দর্শন থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পারবে এই আশাতেই লেখা শুরু করলাম।
ভাল থাকবেন।
loading...