ইসমাইল চাচা পুঁথি পাঠ শুরু করলেন,
“তারপর কিনা কাজ করিয়া তো হান্না,
আশি মন পেশাব করে বিবি সোনাভান্না”।
বন্ধু শফিকের মিরপুরের বাড়িতে পুঁথি পাঠ হচ্ছিল। গ্রাম থেকে আসা ওর ইসমাইল চাচা যখন তার কন্ঠে একটা ঝাঁকি মেরে পাঠ ধরলেন কী যে দারুণ একটা চমক অনুভব করলাম তা বলে বুঝাতে পারবোনা! এখন বুঝি, চমক দিয়ে এই শুরু করাটা সাহিত্যের কোন কোন শাখার জন্য একটা জরুরি অনুষঙ্গ। যদি কোনদিন আবার পুঁথিপাঠ শুনতে পাই তখন আমি উত্তর খুঁজবো, পুঁথি কী সাদামাটা আখ্যান?
আখ্যান কি? এটা সম্পর্কে আমি যা জানি বলা দরকার। তবে তার আগে অন্য একটা বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলি। এটা শফিকের বাড়িতে পুঁথিপাঠ উপভোগের বেশ পরের কথা। তখন টিফিন এবং অন্যান্য খরচের জন্য বড় ভাই আমাকে প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে দিতেন। সেখান থেকে দেড় দুই টাকা করে বাঁচিয়ে পঞ্চাশ ষাট টাকা জমলে তা দিয়ে নানান কিছু করতাম। ফুটপাথ থেকে সস্তায় বই কেনা এর অন্যতম। একটু বেশি টাকা জমলে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহনের মতো নভেল, মাঝে মধ্যে হূমায়ুন আহমেদ, এমনকি দিব্যি মনে আছে একদিন মিরপুরের ফুটপাথ থেকে ঈশপের গল্পের বইও কিনেছিলাম। ওসবে অন্যরকম আনন্দ পেতাম। তবে বলে নেই, ঈশপের গল্প পড়ে আমি হতাশ হয়েছিলাম। অল্প কয়েক লাইনের একেকটি গল্প; পুঁথি পাঠে যে চমক ইসমাইল চাচা দিয়েছিলেন তাও ঈশপে খুঁজে পাইনাই।
যাহোক, নিচের কয়েকটা বিষয়ের ওপর অল্প করে কিছু কথা বলে নিতে চাই-
ক) ইসমাইল চাচার পুঁথি পাঠে শুরুর চমক
খ) হূমায়ুন আহমেদ এবং
গ) ঈশপের গল্প।
উল্লেখিত বিষয়গুলি আমার এই লেখার পরের অংশে আসবে। দ্বিতীয় পর্বে ফোকাস থাকবেঃ অণুগল্প!
চমক দিয়ে শুরু করা এবং পাঠককে স্তব্ধ করে দিয়ে ঠিক সময়ে থামতে জানা সাহিত্যের অনেক শাখার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা সে কবিতা হোক, ছোটগল্প হোক; অণুগল্পের জন্য তো এটা অতি অবশ্যই প্রযোজ্য।
সাতকাহন কয়শ পাতার নভেল? মূল চরিত্রের নাম কী দীপাবলি? এসব কিছুই আর তেমন ভালো করে স্মরণে নেই। তবে নভেলটার আবছা আবছা স্বাদ মনে লেগে আছে। সম্পূর্ণ জীবনের ছবি আছে ওই সাতকাহনে। হূমায়ুন আহমেদেও সেই ছবি থাকে; কিন্তু যে কয়টি হূমায়ুন আহমেদ তখন পড়েছিলাম তাতে সাতকাহনের সেই “মনে লেগে থাকা স্বাদটা” আমি পাইনি। আমার মনে হয়েছে সাতকাহনে বানানো জগৎটা যেকোন পাঠকের নিজেকে হারিয়ে ফেলার জন্য পরিপূর্ণ একটা জগৎ।
সম্ভবত কমবেশি একশ পাতার কয়েকটা হূমায়ুন পড়েছিলাম আমি। ওপরে আমি তাই “হূমায়ুন আহমেদের নভেল” বলিনি; শুধু “হূমায়ুন আহমেদ” বলেছি। কারণ সাতকাহন যে একটা নভেল এটা নিশ্চিত হলেও হূমায়ুন আহমেদের সেই লেখাগুলি (আমি যেগুলি পড়েছিলাম; নাম মনে নেই) নভেল নাকি নভেলা আমি নিশ্চিত হতে পারিনাই; পারছিনা অথবা আমার সেই জ্ঞান নাই।
যাহোক, নভেল বা নভেলা আমার লেখার মূল বিষয় নয়। মূল লেখায় যেতে আমার একটু সময় লাগবে। কালকে? জানিনা! পরশু বা অন্য কোনদিনও হতে পারে।লেখার জন্য একটা ডিভাইস হাতে পেলে কালই হবে হয়ত।
এই ফাঁকে আখ্যান বা আখ্যানক সম্পর্কে একটু বলি। আখ্যান হলো গল্পের প্লট, কাহিনি বা বিষয়বস্তু। এটাকে কোনও একটি ঘটনার বা সম্পর্কযুক্ত একাধিক ঘটনার সমন্বিত বর্ণনা বলা যেতে পারে। এতে সাহিত্যের নানান মশলা যেমন এলাচ, জিরে, তেজপাতা, পাঁচফোঁড়ন মিশিয়েই তবে গল্প বা অণুগল্প করা যায়। সহজ করে বললে, আখ্যান হল ছোটগল্প এবং অণুগল্পের ইমিডিয়েট আগের রুপ।
ওপরে আমি ঈশপের গল্পের কথাও বলেছি। কয়েকশ বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে বেঁচে থাকা ছোট ছোট কাহিনি এই ইশপের গল্প। মুখে মুখে বেঁচে থাকা সাহিত্যের এই ভাগটাকে চূর্ণক বলে।
যেহেতু এই লেখার ফোকাস অণুগল্প; তাই চূর্ণক সম্পর্কে একটু বলে নিলাম। কারণ আধুনিক অণুগল্পের আদিরূপের সন্ধান পাওয়া যায় এই চূর্ণক-আখ্যানকের ভাজে ভাজে।
প্রশ্ন ওঠতেই পারে, অণুগল্প নিয়ে কেন মাতামাতি করছি? স্ট্রেইট-কাট উত্তর দেই, স্বল্পায়তনের সাধারণ আখ্যানকে ভুলে অণুগল্প ভেবে আমরা অহরহ ঠকি!
loading...
loading...
শুরু করে করেও শুরু হয়নি আজ। বোধকরি কেবল ভূমিকার শুরুবাদ পড়লাম। কিছু একটা করার আগে আগুপিছু কসরত সহ আনুসঙ্গিক বিষয়গুলোর আলোচনা সেরে নেয়া ভালো। এই পর্যালোচনায় পোস্ট চমৎকার হয়েছে মি. মিড ডে ডেজারট।
loading...
মূল লেখা নিয়ে জলদি ফিরে আসুন মিড দা। আজকের পর্ব প্রককথন হিসেবে পড়ে রাখলাম। শুভ সন্ধ্যা।
loading...
ভীষণ এক দূর্বার অপেক্ষা নিয়ে রইলাম ডেজারট ভাই। জলদি আসুন।
loading...
* শুভ কামনা নিরন্তর….
loading...