একঃ বোনের সাথে ফোনালাপ এবং TIA/স্ট্রোক
– ডান হাত পা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল। বোন ফোনে বললো
-কি হয়েছিল? আমি জানতে চাইলাম
-ডান পাশ খুব দুর্বল; বাম পাশ একদম স্বাভাবিক ছিল
-ডান পাশ কি অবশ হয়েছিল?
-হ্যাঁ, অনেকটা তাই। বোধ হারিয়ে ফেলেছিলাম। নাড়াতে সমস্যা হচ্ছিল
-মুখে কিছু?
-হ্যাঁ; কথা আটকে যাচ্ছিল।
-কতক্ষণ অবশ ভাব ছিল?
-কয়েক মিনিট
TIA (Transient Ischemic Attack); মিনি স্ট্রোক বলেন কেউ কেউ। কখনো কখনো এতো অল্প সময়ের জন্য হয় যে রোগী নিজেও তা বুঝতে পারেন না। সেক্ষেত্রে বুঝার উপায় হলো, কথা আটকে যাওয়া বা এক চোখে কম দৃষ্টির সাময়িক অভিজ্ঞতা হয়েছিল কিনা তা মনে করে দেখা।
TIA তে আক্রান্তের দিনই সব ঠিক হয়ে যায়। তবে সতর্ক করে যায় যে, বড় স্ট্রোক আসন্ন। তাই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
—————————
দুইঃ ঢাকাই ছবির নায়িকা-দিওয়ানা চিরকুমার এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারে হোমিও চিকিৎসা
ভদ্রলোক আমার অনেক সিনিয়র; কিন্তু বন্ধুর মতো। বাংলা সিনেমার এক নায়িকার জন্য ভীষণ দিওয়ানা ছিলেন এবং তার কারণে বিয়েই করলেন না। তার সাথে আড্ডায় সেদিন কথায় কথায় হোমিও চিকিৎসার কথা ওঠলো।
-আমি যখন দ্বিতীয় বর্ষে একদিন অধ্যাপক গোপালচন্দ্র ফিজিওলোজি পড়াতে পড়াতে কেন জানি বলেছিলেন, “হোমিও চিকিৎসাকে বিজ্ঞান এখনো স্বীকৃতি দেয়নি”। আমি বললাম।
-কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বিজ্ঞানীরা বলেছে, “হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত নয়”। এই কথাটা বলে চিরকুমার একটা সত্য ঘটনা বললেন।
“এক নিঃসন্তান দম্পতি এক মেয়েকে এডপ্ট করেছিল। মেয়েটাকে বড় করে বিয়েও দিয়েছিল। এক সময় মেয়েটা তার ব্রেস্টে শক্ত কিছু অনুভব করে। পালক বাবা হোমিও প্র্যাকটিস করতেন। তিনি টিউমারের চিকিৎসা দিতে লাগলেন। যখন বুঝলেন হোমিওতে কাজ হচ্ছেনা, মেয়েকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তাররা বললো, দেরি হয়ে গেছে। মেয়েটা বেশিদিন বাঁচেনি। মনের কষ্টে পিতাও”।
চিরকুমার কাহিনি বলা শেষ করলেন।
-জানা গেছে ব্রেস্ট ক্যানসারের দেরিতে চিকিৎসার মূল (৫০%) কারণ হলো হোমিও চিকিৎসায় লেগে থাকা। কিন্তু ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে এই ক্যান্সার ভালো হয়ে যায়। আমি বললাম।
-তাইলে কি এইক্ষেত্রে হোমিও চিকিৎসা একটা ইনডাইরেক্ট কিলার? নাকি হোমিও চিকিৎসক ইন্ডিভিজুয়াল এজন্য দায়ি? চিরকুমার প্রশ্ন করলেন।
-আমি নিশ্চিত নই। তবে হোমিও চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যাপক গোপালচন্দ্র যা বলেছিলেন এবং পত্রিকায় আপনি যা দেখেছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ । জবাবে বললাম।
—————————
তিনঃ বন্ধুদের সাথে আড্ডা এবং কিডনি ফেইলুরে ভেজাল হারবাল চিকিৎসার দায়
সপ্তাহ খানেক আগে আমার বাড়িতে ক’জন সহপাঠী বন্ধু এসেছিল। সবাই মেডিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের। ওদের মধ্যে তিনজন শিক্ষকতা করে, একজন মিলিটারি এবং একজন বিজ্ঞানী।
-তোর ভাই নাকি কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা বাদ দিয়ে চুপি চুপি হারবাল চিকিৎসা নিচ্ছিলেন?
এক বন্ধু আমাকে প্রশ্ন করলো।
-হ্যাঁ। ডিউটি স্টেশনে যাওয়ার আগে সিরাম ক্রিয়েটিনিন ২ এর কিছু বেশি দেখে গিয়েছিলাম। আমার কর্মস্থলে সেবার যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সময় মতো দেশে আসতে পারছিলাম না। অনিয়মের কথা শুনছিলাম এবং জোর দিয়ে বলেছিলাম, কোনভাবেই যেন হারবাল চিকিৎসা না নেন। কিন্তু হারবাল চিকিৎসকরা তো রোগীকে কনভিন্স করতে অনেক বেশি শক্তিশালী। সিরাম ক্রিয়েটিনিন খুব দ্রুত ৬ এবং তারপর ৮ হয়ে গেল। ডায়ালাইসিস চলছিল। দেশে এসে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য চেষ্টা করলাম। উনার সেই উপযোগিতা ছিলনা। মন খারাপ করে কর্মস্থলে ফিরে গেলাম। উনার শেষ দেখা আমি পাইনি।
জবাবে বললাম।
-আমার দূর সম্পর্কের এক আন্টি, বয়স কম বেশি চল্লিশ। সৌন্দর্য বাড়ানোর (সম্ভবত স্লিম হতে) জন্য হারবাল ওষুধ খাচ্ছিলেন। উনার অন্যকোন সমস্যা ছিলনা। হারবাল নিতে নিতে এক সময় উনার কিডনি ফেইল করল। কিছুদিন আগে মারা গেছেন। আমার গ্রামের বাড়ির সতের আঠার বছরের এক ছেলেরও একই হয়েছে। ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে বটে; তবে অবস্থা ভালো নয়।
এক শিক্ষক বন্ধু বললো।
-মানুষ জানে হারবাল ওষুধে কোন সাইড ইফেক্ট নাই। কিন্তু এসব ওষুধে লতাগুল্মের সাথে মারাত্মক ক্ষতিকর উপদান যোগ করা হয় এবং তা বদ অশিক্ষিত হারাবালিস্টরা গোপন রাখে।
বিজ্ঞানী বন্ধু যোগ করলো।
এসব দেখার কেউ নাই। তাই দেওয়ালে দেওয়ালে “কলিকাতা হারবাল”এর এমন আধিপত্য!
loading...
loading...
loading...
অশেষ ধন্যবাদ দিদি। আপনার আজকের লেখাটা মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি।
loading...
ধন্যবাদ মিড দা।
loading...
After launch Desert ভাই, দেশে যে হারে ম্যাজিক্যাল চিকিতসা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হিসেবে লেখাটা দারুন লাগল।
loading...
মিড ডে ডেজার্ট =After launch Desert ; দারুণ অনুবাদ করেছেন খালিদ উমর ভাই। খুব ভালো লেগেছে।
স্মরণ করে দেখুন আত্মীয়, বন্ধু এবং পরিচিতদের মধ্যে ক্যান্সার বা কিডনি ফেইলুরে ২০/৩০ বছর আগে কয়জন আক্রান্ত হত; এখন কয়জন? খাবারে ভয়ঙ্কর মাত্রায় প্রিজারভেটিভ, অপচিকৎসা, আমাদের লাইফ স্টাইল সবকিছু মিলে আমাদের শরীরকে আক্রান্ত করছে। কিডনি হাসপাতালে গেলে হারবাল অপচিকিৎসার মাত্রা জানতে পারবেন। ক্যান্সার হাসপাতালে গেলে কোন কোন রোগী হোমিও চিকিৎসার কারণে ইতোমধ্যে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটাও জানা যাবে।
ধন্যবাদ খালিদ উমর ভাই।
loading...
আমি আবার একটু বেশীই জানি কারণ আমার মা এবং বাবা দুইজনেই ক্যান্সারে ইন্তেকাল করেছেন। তবে তাদের জন্য কোন অপচিকিতসা করাইনি, উপযুক্ত চিকিতসা করিয়েছিলাম। আপনার নামের অনুবাদতা ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম আমিতো দারুন ভয়ে ছিলাম, কিজানি ভাইজান আবার কি ভেবে বসে! আসলে একটু fun করলাম আরকি। আশা করি কিছু মনে করবেননা।
loading...
নাম অনুবাদে খুব মজা পেয়েছিলাম খালিদ ভাই।
তাইলে আপনি নিশ্চয়ই খুব ভালো জানবেন। দিন যাবে আর নানান কারণে ক্যানসারের প্রিভিল্যান্স রেইট বেড়ে যাবে বলে আমি আশংকা করি।
আপনার বাবা মা জান্নাতবাসি হোন !
loading...
* অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে আপনার রচনায়। সচেতনতা প্রয়োজন।
শুভরাত্রি সুপ্রিয়।
loading...
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা ওগুলো। মন্তব্যের জন্য কবি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ !
loading...
লিখা এবং মি. খালিদ উমরকে দেয়া মন্তব্য পড়েই বুঝে গেছি লিখার গুরুত্ব। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মি. মিড ডে। শুভ সকাল।
loading...
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ মিঃ মুরুব্বী।
loading...
লেখাটি পড়লাম ডেজারট ভাই। ঔষধ মানেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে। কৃয়া বিকৃয়ার কাহিনীর মতো। কাজ হলে উসুল হিসেবে মাসুল তো গুনতেই হবে।
loading...