যা রোদ পড়েছে ! গামছা ভিজিয়ে মতিনুল মাথার ওপর চাপ দেয়। আসলে সে জাফলং দেখতে এসেছিল। যা শুনে এসেছিল সেসবের কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই। ঘোলা পানি আর আধাডুব পাথর ছাড়া। আর দশ জনের মতো প্রথম দিনই সে ফিরে যেতে পারতো। নিজের বলে তার তো কেউ নেই। কোন পিছুটানও নেই। এসেছেই যখন তাই দিন কয়েকের জন্য রয়ে গেছে। খাসিয়া পাড়াসহ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে। আর নদীর পাড়ে গিয়ে পাথর তোলা দেখে। সে চুক্তিতে এক বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে।
গামছাটা মতিনুল আবার ভিজিয়ে নেয়। পায়ের কাছে একটা পাতলা পাথর। ওটা হাতে নিয়ে সে নদীর পানির সমান্তরালে ছুড়ে মারে। কেমন ব্যাঙের মত লাফিয়ে লাফিয়ে পাথরটা অন্য একটা দেশ ছুঁয়ে দিল। এই দৃশ্যে মতিনুল আনন্দের বদলে কিছুটা বিষন্ন হল। সে ভাবলো, “চাইলে নিমিষেই অন্য একটা দেশ ছুঁয়ে দেয়া যায়। কিন্তু বুকের সাথে লেপ্টে থাকা মানুষকে হয়তো আমৃত্যু চেষ্টা করেও ছোঁয়া যায়না”।
অদূরে এক মধ্যবয়সী লোক পাথর ওঠাচ্ছে। আশে পাশে আরও অনেকে একই কাজ করছে। বিশ তিরিশ বছরের কিছু মহিলাও। মাঝে মধ্যে কিছু লোক এসে ওদেরকে কি যেন বলে যায়। পাইকার হবে হয়তো। তার মতো ভুলে কিছু পর্যটকও আসে। কিছুক্ষণ থেকে আফসোস করে চলে যায়। তাদের কেউ কেউ তখন জাফলং দেখার বদলে গায়ে কাপড় লেপ্টে থাকা মহিলাদেরকে দেখে।
তৃষ্ণায় মতিনুলের গলা শুকিয়ে গেছে। বোতলটা দেখল। বেশি জল বাকি নাই। তার জীবনের মতোই সম্ভবত। এক ঢোকে গলা ভিজিয়ে বোতলটা সে হাতের ডানে রাখল। তখনই ডান পাশ দিয়ে এক মহিলা যাচ্ছিল। দুদিন ধরে ঠিক এই সময় মহিলাটাকে সে এখান দিয়ে যেতে দেখে। মধ্যবয়স্ক লোকটার জন্য খাবার নিয়ে যায়।
মহিলাটার চেহারা বেশ মলিন। দেখলেই বুঝা যায়, প্রতারক দারিদ্র হিমোগ্লবিনের বদলে প্রতিদিন জাফলং এর ময়লা জল দিয়ে তাকে ভুল-বুঝ দেয়।
-আজ কি খাবার নিয়ে যাচ্ছেন?
মহিলা প্রথমে বুঝেনি যে তাকেই প্রশ্নটা করা হয়েছে। দুই কদম এগিয়ে যখনই বিষয়টা বুঝলো, ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিলো;
-ভাতের সাথে শাক ভর্তা। সাথে কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ।
মতিনুল জেনে নিয়েছে, মহিলার নাম সাহানা। স্বামী বাছিত মিয়া।
-ছেলে মেয়ে নাই?
-আছে। দূরে থাকে। খবর নেয়না
সাহানা জবাব দেয়।
“এটাই তো স্বাভাবিক। কে কার খবর নেয়”? মতিনুল স্বগোক্তি করে। পরক্ষণেই সে আবার ভাবে, “মানুষের জীবন নিজেই আসলে সুদখোর। ঠকানো ছাড়া হিসেবের খাতা মিলাতে পারেনা”।
আরো খুটিনাটি কিছু কথা বলে সাহানা চলে গেলো। তার শাড়ির নিচে পেটিকোট নেই। বাতাস শরীরের আপত্তিকর ভাজগুলো বিনা অনুমতিতে দেখিয়ে দিচ্ছিল।
ওরা অল্প দূরে। মতিনুল ওদের দুজনের সবকিছু স্পষ্ট দেখছে। বাছিত মিয়ার জমানো পাথর সবার চেয়ে কম। কিন্তু এতে সাহানার মন খারাপ হলনা। কারণ এটা নতুন কিছু না। কী আর করবে? শরীরে কুলায়না। বয়স হয়েছ। তার ওপর বাছিতের হার্টের একটা কপাট নাকি একটু ঢিলা। মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার বলেছিল। সেজন্যই নাকি বেশি হয়রান লাগে। কয়েক মিনিটের আলাপে মতিনুল এসব জেনেছে।
সাহানা খাবারেরে ডিব্বা খুলে আর একবার সে স্বামীর চোখের দিকে তাকায়; একবার কমবয়সী মহিলাদের দিকে। বাছিত মিয়া সাহানার কান্ড দেখে মিটমিটি হাসে। মতিনুল দেখছে, সাহানার রাগ হয়েছে। তার স্বামী আর কারো দিকে তাকাক নিশ্চয়ই সে এটা চায়না। কিন্তু রাগের নিচেই তো জল; মায়া। সাহানার আচরণে মতিনুল সেটা টের পায়।
ইতোমধ্যে মতিনুল ওদের একেবারে কাছে এসে বসেছে। সে দেখছে, জাফলং এর জলে ছিঁড়া আঁচল ভিজিয়ে সাহানা তার স্বামীর মুখ মুছে দেয় আর বলে,”এতো খাইটা অসুখ বাঁধাইয়োনা”। বাছিত কোন উত্তর দেয়না। এই কথার তো কোন উত্তর হয়না। সে চুপচাপ ভাতের সাথে শাকভর্তা মাখে। প্রথম নলাটা সে সাহানার মুখে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই সাহানা ছোট হতে হতে ষোড়শী হয়ে যায়। তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে জাফলং এর পাঁথরে গিয়ে মিশে। কিন্তু মুখজুড়ে তৃপ্তির হাসি। তার গালের টোলটাও হেসে ওঠে।
সাহানার টোলে বাছিত মিয়ার মুগ্ধতা দেখে মতিনুল মনে মনে বলে, বাছিতের পঞ্চাশ বছরের জীবনে দেখা এই জাফলং কী কোনদিন ওই টোলটার মতো সুন্দর ছিল?
loading...
loading...
মিষ্টি একটি অণুগল্প। আপনি তো চমৎকার লেখেন। তো কেন নিয়মিত লিখবেন না? বেশী বেশী করে লিখুন। আর শব্দনীড় সঞ্চালক দাদাকে বলবো আপনাকে যেন সরাসরি পোস্ট করার অনুমতি দিয়ে দেয়। স্বাগতম শব্দনীড় এ।
loading...
আমি "হঠাৎ-শখের" লেখক। কোন ব্লগে এটাই প্রথম লেখা। আপনার কমপ্লিমেন্ট আমাকে খুব আনন্দিত করেছে।
সুকবি, কৃতজ্ঞতা জানালাম।
loading...
ধন্যবাদ দাদা।
loading...
প্রথমত শব্দনীড় এ আপনাকে স্বাগতম। আমি লক্ষ্য করেছি আপনি লগিন করে অপেক্ষা করতেন। আমিও অপেক্ষা করতাম কখন আপনি কোন পোস্টে কি মন্তব্য করেন। এই পর্যন্ত আপনি অন্যের পোস্টে : ৩ টি মন্তব্য দিয়েছেন।
আপনার মতো এমন একটা নবীন সময় আমরাও পেরিয়ে এসেছি। দ্বিধা কাজ করেছে, সংশয় কাজ করেছে। ধীরে ধীরে নিজেকে এডজাস্ট করে নিয়েছি। আপনিও নিন।
অণুগল্পটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। নিয়মিত লিখুন। ধন্যবাদ এবং শুভ সকাল।
loading...
আপনার মন্তব্য আমার ভালো লেগেছে। অশেষ ধন্যবাদ।
শুভ সকাল !
loading...
এই দেখুন আজ শিখে গেলেন কিভাবে মন্তব্যের নিচে "জবাব দিন" বাটনে ক্লিক করে উত্তর লিখতে হয়। যেটা উপরের প্রথম মন্তব্যে হয়নি। এভাবেই আমার নিত্য দিন শিখি। অহরহ শিখি। নিজে ছোট এমন মানসিকতা রাখবেন না। যতটুকু পারবেন শেয়ার করবেন। তবেই না আমরা সতীর্থ হবো।
loading...
* অনেক সুন্দর হয়েছে অনুগল্প।
শুভরাত্রি।
loading...
অনেক ধন্যবাদ।
শুভরাত্রি!
loading...