প্রিয়তমা,
আকাশটা গতকাল সারাদিন কেঁদেছিল। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়াও বেগ বাড়িয়ে দিয়েছিল তার কান্নার। পরশু রাত যখন ঘুমোতে যাব দেখি হুহু করে কান্নার শুরু। রাতের ঘুমের আবহ কান্নার অশ্রুতে ভেজা ছিল। পানি চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে সুউচ্চ তরুগুলোর অমসৃণ দেহকে তৃপ্তকরে মাটিতে মিশে কাদার সৃষ্টি করেছিল। ছয়তলা, সাততলা বাড়ির দেয়ালগুলো শুষে নিচ্ছিল পানি। যখন তাদের তৃষিত উদরপূর্তি হয়েছে তখন ঢাল হয়ে বয়ে যেতে দিয়েছিল জলরাশিকে।
বাতায়ন, গ্রিল আর বারান্দায় শুকোনোর জন্য দেয়া পরিচ্ছদ ভিজে শিক্ত হয়েছিল। সেগুলো ব্যবহার উপযোগী হতে প্রয়োজন প্রভাকর এক দিন। ভাস্বর আকাশে উদিত হয়ে তার প্রভা ছড়ালে বৃষ্টিজলের কনিকাগুলো বেড়িয়ে যাবে পরিচ্ছদ থেকে। আকাশটি মেঘমুক্ত হওয়া আবশ্যক। তাহলে সেই পরিচ্ছদ যদি পরনে থাকে ছ্যাঁত ছ্যাঁত অনুভূত হবে না। স্বস্তিপূর্ণ অনুভূতি প্রকাশ হবে।
গতকাল সন্ধ্যেবেলা হঠাৎ জলঝরা বন্ধ হয়ে যায়।
আথিতিয়তা গ্রহণ করেছিলাম বড়বাবুর। তার আবাসনও বড়। সেই আবাসনের পাঁচতলার উত্তরাংশজুড়ে যে কক্ষটি তাতে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই আবাসনের কাছাকাছি অনেকগুলি উঁচু উঁচু গাছ। তবে হৃদ্যতা যেমন খাটো হয়ে গেছে কৃত্রিমতার কাছে। তেমনি কংক্রিটের দেয়ালের উচ্চতার কাছে হার মেনেছে উঁচু উঁচু গাছগুলো। উত্তরীয়া কক্ষের বারান্দায় দাঁড়ালে সব দৃষ্টিগোচর হয়।
কয়েকটি শাদা বক। ডানা ঝাপটিয়ে মেহগনি গাছের শীর্ষভাগে খুনসুটি করছে। কালো পানকৌড়ির ঝাক কোয়াক কোয়াক ডাকে মাতিয়ে তুলেছে গাছের উম্মুক্ত মেঝে। পুষ্ট মেহগনি ফলগুলো তাদের মেঝের সাজসজ্জা। ইলেক্ট্রিক তারের সারিগুলো বেশ নিচুদিকে।
অধরা,
কালো বা রঙিন নেকাবে তোমার সুদর্শিনী, সুশ্রী মুখটি ঢেকে রেখেছিলে। আমি কোনদিন যেমনটি পারিনি তা দেখে তৃপ্ত হতে। তেমনি আজকের এই সকালে লেখা আমার অব্যক্ত প্রেমাশক্ত পত্রখানিও তোমার হস্তগত হয়ে আমার হৃদাবেগের ব্যঞ্জনাময় কথাগুলো উম্মোচিত হয়ে তোমাকে রাগান্বিত বা ঈষৎ পুলকিত করবে না। পানকৌড়ির বাস এইসব গাছে। যদি তারা জলায় না নেমে ঢের পানির মধ্যে ডুব না দেয় তারা কী পাবে বলো তাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তু? আর তোমার মাঝে যদি আমি অবগাহন না করি, তোমাকে যদি দেখতে না পারি তাহলে আমিও গাছের মগডালে বসা কোনো পানকৌড়ি। পূর্ণিমারাতের জোসনায় স্নাত হওয়ার জন্য এক উম্মাদ যে আবদ্ধ কোনো দুর্গম পাহাড়ি এলাকার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। হাজার হাজারবার ফুটে থাকা ফুল যার গন্ধনেয়ার জন্য আসে না কোনো অলি।
নতুন চাঁদের হাসি,
এই, এটি সেই শহর। তোমার কত কাজ করার জন্য শহরের অলিগলি ছুটে বেরিয়েছি। তোমার দেখা পাওয়ার জন্য কঠিন বৃষ্টি, ঝাঁঝালো রোদ কিংবা কনকনে শীত উপেক্ষা করেছি অজস্রবার। বিপণীবিতান, ব্যাংক, কুরিয়ার, পশ্চিমপাড়া ঘুরেছি অষ্টপর। অতপর কৃষ্ণপক্ষ পেরিয়ে একফালি চাঁদ হয়ে যখন হাসলে তখন তুমি দূরান্তের কোনো একজনের আকাশের গায়ে হাসলে।
আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। না জানি কখন থামবে এই বৃষ্টি। বৃষ্টির থেকে আপন আমার কেউ নেই প্রিয়তমা।
ও হ্যাঁ, সর্বশেষ একটা কথা শোনো। আমি গতকাল দুপুরে ঝমঝম বৃষ্টিতে আমাদের শিরাজি ভবনের ছাদে এক পুষ্ট যুবকের সাথে একজনাকে ভিজতে দেখেছিলাম। সেটা কী তুমি ছিলে? কেননা, আমি কোনোদিন স্বপ্নেও তোমার মুখটি আবিষ্কার করতে পারিনি।
ইতি
উপেক্ষিত ও উবে যাওয়া প্রেমনিয়ে অপেক্ষমাণ
নিরব নকিব
প্যারা মেডিকেল, লক্ষ্ণীপুর, রাজশাহী।
১২.১০.২০১৮
loading...
loading...
অসাধারণ একটি লিখা পড়লাম। সচরাচর আপনার লিখা বিভিন্ন মাধ্যমে আমি পড়ে এসেছি। বলতে পারেন বিমুগ্ধ পাঠক হয়ে আছি। শব্দনীড়ে আজ আপনার অভিষেক হওয়ায় আমি অন্তত যারপরনাই আনন্দিত।
নিয়মিত পাশে থাকুন এই প্রত্যাশায় আপনাকে স্বাগতম জানালাম মি. মীম।
loading...
অসম্ভব দারুণ একটি লেখা পড়লাম মীম দা। শব্দনীড়ে সুস্বাগতম।
loading...
তুলনা করার মতো তেমন লিখা আজকাল খুব কমই পাবো। অসাধারণ এক চিঠি লিখনী। আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। স্বাগতম ভাই। নিয়মিত লিখবেন এই প্রত্যাশা থাকবে।
loading...