নক্ষত্রের গোধূলি-৩১

৪৪।
রাশেদ সাহেব জব সেন্টারের বিশ পাউন্ড পরিশোধ করে একটু খুশি মনে চলে এলো। এসেই মনিকে বললো চাকরি একটা পেয়েছি।
হায়রে রাশেদুল হাসান! তুমি জান না কি চাকরি তুমি পেয়েছ। জানলে এতো খুশি হতে পারতে না। সারাটা জীবন শুধু হুকুম দিয়েই এসেছ, তোমার হুকুম তামিল করার জন্য কত জন তোমার চারপাশে ছিলো, হুকুমের সাথে সাথে তা যাদুর মত হয়ে যেত। আজ যা করতে যাচ্ছ তার জন্য তুমি কখনো ভাবতেও পারনি। শুধু তুমি কেন তোমার পারিপার্শ্বিক কেওই কখনো ভাবতে পারেনি কোন দিন তুমি এই কাজ করবে। তোমার নিয়তি তোমার জন্য এই বরাদ্দ করে রেখেছে। রাশেদের মুখে চাকরি পেয়েছি শুনে হাল ভাঙ্গা মাঝি যেমন ঝড়ের তোড়ে কূল হারিয়ে ফেলে আবার ঝড় থামলে কূলের দিকে নৌকার গলুই ঘুড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে মনিও যেন তেমনি কূলের সন্ধান পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ফিরোজ বাইরে ছিলো। ফিরে এসে রাশেদের কাছে সব শুনল। মনিরা বললো-
-ভাই এবার আমার যাবার ব্যবস্থা ঠিক করে দেন।
ফিরোজ টেলিফোনে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনের অফিসে কথা বলে নভেম্বরের সাত তারিখে সকালে মনিরার যাবার দিন ঠিক করে নিলো।
কায়সার বেয়াইর সাথে ফোনে আলাপ হলো।
-আরে বেয়াই আমিও তো ওই ফ্লাইটে কনফার্ম করেছি।
-তাহলেতো ভালই হয়েছে।
আজ চার তারিখ, মনিরা যাচ্ছে সাত তারিখে। মাঝে আর মাত্র দুই দিন। এই দুই দিন ওরা আর কোথাও বের হয়নি। রাশেদ সাহেব যেতে চাইলেও মনিরা ধার করে আনা টাকা এ ভাবে খরচের ভয়ে এড়িয়ে গেলো। রাশেদকে বোঝাবার চেষ্টা করলো।
-তুমি বোঝ না কেন, এইতো শেষ নয় তুমি রোজগার কর তারপর এসে বেড়াতে পারব। তখন মনে আর কোন কাটা বিঁধবে না।
একথা শুনে রাশেদ সাহেব আর কিছু বলতে পারেনি, যুক্তি সঠিক। আর কী বলবে, বলার মত কিছু নেইও। এ দুই দিন ঘরে বসে গল্প সল্প করেই কাটিয়ে দিল।
মনিরা যাবার আগের রাতে ফিরোজ বললো
-ভাবীকে নিয়ে এয়ারপোর্টে আমি যাব শেফালি যেতে পারবে না ওর ক্লাস আছে। তুমিও লাগেজ নিয়ে এক সাথে বের হবে ওখান থেকে অক্সফোর্ডের কোচ আছে। তোমাদের নামিয়ে দিয়েই আমাকে চিজউইক আসতে হবে একটা কাজ আছে।
রাতে শোবার পর মনিরা বললো-
-তুমি একা একা কেমন করে থাকবে? তোমার ওষুধ পত্র কি মনে করে খাবে? তুমি অত উদাস হয়ে থেকো না লক্ষ্মী আমার, একটু সজাগ হবার চেষ্টা কর। তোমার তিনটা মেয়ে রয়েছে তাদের জন্য তোমাকে শক্ত হতে হবে। যখন খারাপ লাগবে এখানে চলে আসবে। ক’দিন পর পর ফোন করবে না হলে আমি পাগল হয়ে যাব।

আস্তে আস্তে রাশেদের কাছে আরও কাছে এসে রাশেদের বুকে মাথা রেখে নির্জীবের মত পরে রইলো। কণ্ঠ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। রাশেদের বুকে কেমন একটা উষ্ণ ভাব অনুভূত হলো, আবার এরকম, আবার। ক্রমেই এই অনুভূতির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এদিকে মনিরার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
হাতের স্পর্শে দেখলো মনিরার চোখের নোনা জল পরে তার বুক ভিজে গেছে। শীতের পোষাক গায়ে বলে এতক্ষণ বুঝতে পারেনি। তবুও রাশেদ সাহেব তার মনিকে কিছু বলতে পারেনি। মনি কাঁদছে, কাঁদুক। এতে যদি একটু হালকা হতে পারে তাতেই মঙ্গল। কান্না থামিয়ে দিলে বোঝা আরও বেশি ভারী হতে পারে এই ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। রাশেদ সাহেবের ভিতরে একটু দুঃখ, একটা চাপা অভিমানের উদয় হলো। যে মনিকে ছাড়া রাশেদ অচল সেই মনি এই রাত পোহালেই তাকে একা বনবাসে রেখে চলে যাবে। কি যেন বলতে চাইল কিন্তু মুখ দিয়ে সামান্য একটু শব্দের মত বের হলো কিন্তু সেটা কোন কথার মত না।
রাশেদ আবার মনির মাথা বুকে চেপে চুপ করে রইলো। মনিরা কাঁদছেই। সারা জীবনের জমে থাকা মনির চোখের নোনা পানি রাশেদের বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে।
হোক, মনি কেঁদে কেঁদে হালকা হোক। ওর দুঃখ গুলি নোনা জলে ধুয়ে যাক। মনিকে যে শক্ত হতে হবে দেশে ওদের মেয়েরা আছে তাদেরকে মায়ের স্নেহ দিতে হবে বাবার স্নেহ দিতে হবে, মানুষ করতে হবে। রাশেদ সাহেব আবার কি যেন বলতে চাইলো কিন্তু এবারও সেই একই অবস্থা, মুখ দিয়ে কথা বের হলো না।
কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর রাশেদ ডাকলো-
-মনি!
-হু!
-কাঁদছ কেন?
-তোমাকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি যে ভোলা মনের মানুষ থাকবে কি করে তারপর আবার ডায়াবেটিসের রুগী। কে তোমাকে দেখবে, আর কেই বা তোমার খাবার পথ্য যোগার করে দিবে?
-না মনি, তুমি শুধু দোয়া করবে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কোন চিন্তা করবে না দেখবে রাতের পরেই দিন আসে। এক দিন দেখবে আমাদের এই দিন থাকবে না। তখন সবাই মিলে একত্রে থাকবো। আবার সেই আগের মত সব হবে। এখানে তোমার আসার ব্যবস্থা করে নিলাম যখন ইচ্ছা হবে চলে আসবে। আমি এখান থেকে টাকা পাঠাব তুমি মেয়েদের নিয়ে চলবে।
-সারা জীবন ভরে দেখে আসছি নিজের জন্য কিছু ভাবতে পারনি, নিজের কিছু করতেও পার না তাই তো ভাবনা তুমি একা থাকবে কি ভাবে?
-না মনি, সে জন্য ভাবনার কিছু নেই। প্রকৃতি মানুষকে অনেক কিছু দেয়, তার মধ্যে অনেক কিছুই থাকে। আমিও তেমনি করে শক্তি পেয়ে যাব, এ তো প্রকৃতির বিধান। এতো আমরা চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবো না। কাজেই এ জন্য তোমার ভাবনার কিছু নেই, চিন্তারও কিছু নেই। এখন একটু ঘুমাবার চেষ্টা কর, ভোরে উঠেই লম্বা জার্নি শুরু হবে। একা যেতে পারবে তো?
-পারতে যে হবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. রিয়া রিয়া : ২৫-১১-২০১৯ | ২১:৩৯ |

    শুভেচ্ছা কবি খালিদ দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ২৬-১১-২০১৯ | ১৯:০৯ |

      বুঝিলামনা দিদি উপন্যাস পড়ছেন আবার কবি বলছেন!

      ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ২৫-১১-২০১৯ | ২১:৪০ |

    * নক্ষত্রের গোধূলি-৩১https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ২৬-১১-২০১৯ | ১৯:১০ |

      ক্লান্ত হয়ে পরেছেন বন্ধু?

      ক্লান্তি আমার ক্ষমা করিবেন। 

      GD Star Rating
      loading...
  3. মুরুব্বী : ২৮-১১-২০১৯ | ১১:২৫ |

    শুভেচ্ছা প্রিয় বন্ধু।

    GD Star Rating
    loading...