নক্ষত্রের গোধূলি-২৬

৩৮।
ওরা চলে যাবার পর রাশেদ আর মনিরা টিউব স্টেশনে নেমে দেখে একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি ওতে উঠে বসল। ট্রেন ছাড়ার আগ পর্যন্ত চতুর্দিকে মানুষের চলা ফেরার ভাব দেখছিলো। ওই আগের মত কারো কোন দিকে তাকাবার সময় নেই, সবাই ছুটছে। তাই দেখে মনিরা বললো-
-এরা উন্নতি করবে না কেন, সবাই কি ভাবে ছুটছে!
কয়েক মিনিটের মধ্যে স্টার্টফোর্ড স্টেশনে নেমে আবার সেন্ট্রাল লাইনের ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে খুঁজে বের করে ওখানে এসে দাঁড়াল। প্ল্যাটফর্মের উপরে মনিটরে দেখাচ্ছে সেন্ট্রাল লাইনের ট্রেন আট মিনিট পরে আসবে।

এখানেও মানুষ আর মানুষ গিজ গিজ করছে কিন্তু সবাই দৌড়ের মত ছুটছে। একই দৃশ্য। ট্রেনের জন্য যারা দাঁড়িয়ে বা বেঞ্চে বসে আছে তাদের প্রায় সবার হাতে পড়ার মত কিছু পড়ছে আবার কেও তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে চুমু খাচ্ছে। রাশেদ সাহেব মনিরাকে ইশারা করে এমন একটা দৃশ্য দেখাল। মনিরার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,
-এসব আবার কি?।
-আহা, তুমি লজ্জা পাচ্ছ কেন? তোমাকে কি কেও, এপর্যন্ত বলেই থেমে গেলো। এরা এসবে কিছু মনে করে না। দেখ কে কাকে দেখছে, কেও ওদের দেখছে? দেখবে না। এটাই এদেশের রীতি। মনে করে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কেও কাউকে জোর করে কিছু করতে গেলেই বিপত্তি। আমরা আপন মনে নিজেদের মাঝে সুখে আছি তাতে কার কি, এমন একটা ব্যাপার। তোমার কেও নেই তুমি দেখবে না। তোমার ইচ্ছা হলে তুমি তোমার মানুষের সাথে কর কেও নিষেধ করবে না। বুঝলে মনি বিবি? এই হচ্ছে সভ্যতা। তা তোমার কি একটুও ইচ্ছা হচ্ছে না, আমি কি তোমার এতোই না পছন্দের?
-অসভ্য বলে মনিরা একটা গাল দিল।
-কে, আমি না ওরা?
-ওরা হবে কেন, তুমি।
-যে দেশে যে রীতি, দেশের কোন স্টেশনে দাঁড়িয়ে কি তোমাকে কখনো বলেছি? ওই দেখ এই শীতের মধ্যে মেয়েটা কেমন শর্ট স্কার্ট পরে আছে আমি কি তোমাকে অমন পোষাক পরতে বলেছি? শুধু—।
বলে সত্যিই রাশেদ সাহেব মনিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো এখন তুমি চিৎকার করলেই পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। তখন তুমি বাসায় যাবে কার সাথে? কী, ভাবছ পুলিশ আসবে কি ভাবে? ওই দেখ কতগুলি ক্যামেরা। এই ক্যামেরা দিয়ে এখানে কে কি করছে সব কন্ট্রোল রুমে বসে দেখছে। কাজেই তুমি চিৎকার করার সাথে সাথেই দেখবে পুলিশ এসে হাজির। বিশ্বাস না হয় পরীক্ষা করেই দেখ, একবার একটু চিৎকার করেই দেখ কি হয়।
-ছাড়ত, কি যে পাগলামি করছ, তোমার পাগলামি আর গেলো না। ওরা যা করছে করুক, তাই বলে তুমিও কি তাই করবে নাকি?
এমন সময় বেরসিক ট্রেনটা গড় গড় করে এসে আস্তে করে সামনে দাঁড়ালো। রাশেদ সাহেব মনিরাকে ছেড়ে হাত ধরে ট্রেনে উঠে পড়লো। সিট খালি ছিলো। বসে আবার ওই কথার সূত্র ধরে বললো-
-বিলাতে এসেছ আর বিলাতি রীতি মানবে না এটা কেমন কথা বুঝলাম না।
-একটু থামবে নাকি বকবক করবে? আর কোন কথা শুনতে চাই না।
-আচ্ছা ম্যাডাম, চুপ করলাম।
কিছুক্ষণ একটু থেমে থেকে আবার বললো
-তাহলে তখন পুলিশ ডাকলে না কেন?
-এবারে মনিরা আর চুপ থাকতে পারল না, হেসে ফেলল।
-তুমি আসলেই পাগল।
-আর আমাকে পাগল করেছে কে? তুমিই তো পাগল বানিয়েছ। এখন পাগলের পাগলামি সামলাবে না? নাকি কোন মেম সাহেবের সাহায্য নিতে হবে?
-আবার কথা, বলেছি না একটু চুপ কর।
বলতে বলতেই ট্রেন ইস্ট একটন স্টেশনে এসে দাঁড়াল। ছোট্ট স্টেশন, মনিরার হাত ধরতে গিয়েও ছেড়ে দিল,
-ম্যাডামের মনটা কি ঠাণ্ডা হয়েছে? বলেই আবার হাত ধরে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে সোজা ফিরোজের বাসায়।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ১৯-১১-২০১৯ | ২৩:৪২ |

    * ধারাবাহিকভাবে এপর্বটিও পড়ে নিলাম।

    শুভরাত্রি। 

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ২৩-১১-২০১৯ | ২০:১৯ |

      খুবই ভাল কাজ করছেন বন্ধু!

      GD Star Rating
      loading...
  2. নিতাই বাবু : ২০-১১-২০১৯ | ১৩:২৬ |

    ভালো লাগতে শুরু করেছে। তাই পড়ে যাচ্ছি। চলুক পর্ব! সাথে আছি।   

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ২৩-১১-২০১৯ | ২০:২১ |

      যত এগুবেন ততই ভাল লাগার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে মনে হয়। ধন্যবাদ!

      GD Star Rating
      loading...