৩০।
আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফিরোজ এসে ওকে খুঁজে পেয়ে বললো তাড়াতাড়ি চলো যেখানে গাড়ি রেখে এসেছি ওখানে বেশিক্ষণ রাখা যায় না। তাড়াতাড়ি করে একটা ট্রলি এনে ফিরোজ সহ মালপত্র উঠিয়ে বাইরে এসে দেখে ফিরোজের গাড়ির ড্রাইভিং সিটে ওর স্ত্রী বসে আছে। ওদের দেখে নেমে এলো। এর আগে ফিরোজের স্ত্রীর সাথে দেখা হয়নি। দ্রুত পরিচয় পর্ব সেরে মাল গুলি গাড়ির পিছনে রেখে গাড়িতে উঠে বসার সাথে সাথেই ফিরোজের স্ত্রী শেফালি, চিটাগাং এর মেয়ে লিভারপুলে জন্ম এবং বেড়ে উঠা, গাড়ি স্টার্ট দিল। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে এই সামান্য একটু হেঁটে গাড়িতে আসতেই মনিরা শীতে কেঁপে উঠলো।
-ভাবী হিটার বাড়িয়ে দেন।
-হ্যাঁ ভাই দিচ্ছি। একটু রসিকতা করে বললো কি ভাবী আগুনের কাছে বসেও শীত লাগছে?
রাশেদ নিজের কোট খুলে মনির গায়ে জড়িয়ে দিল। একটু পরেই গাড়ি গরম হলে মনি একটু স্বস্তি পেল। ফিরোজ আর রাশেদ সাহেবের হাসি তামাশা আর ওদের দুজনের আন্তরিকতা দেখে মনি অবাক হলো। এতো ঘনিষ্ঠ বন্ধু এরা! হিথরো এলাকা ছাড়িয়ে এসে গাড়ি মটর ওয়ে ধরে ওদের বাড়ির দিকে চলছে। ভাবী গাড়িও চালাচ্ছে আবার ফাঁকে ফাঁকে কথাও বলছে। মনিরা ওদের এই সব কাণ্ড দেখে একটু নিশ্চিন্ত হয়েছে, মুখে হাসির আলো দেখা যাচ্ছে। প্রায় ঘণ্টা খানিক ড্রাইভ করে রাত আটটার দিকে ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।
ফিরোজের নিজের বাড়ি। বাড়িতে মা, বোন, বোন জামাই আর ওদের দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে ফিরোজের সংসার। মালপত্র নামিয়ে ভাবী দোতলায় ওদের জন্য বরাদ্দ করা ঘরে রেখে এসে বসার ঘরে বসল।
ফিরোজের মা বললো তোমাদের বড় মেয়ে ফোন করেছিলো। তোমরা পৌঁছেছ কি না জানতে চেয়েছিলো, ওদের একটা ফোন করে জানিয়ে দাও, চিন্তায় আছে।
ফিরোজ উঠে গিয়ে লাইন ধরে দিল।
মনি কথা বললো, হ্যাঁ মা আমরা এই মাত্র পৌঁছলাম। তোমার চাচা চাচী দুজনেই গিয়েছিলো, তোমরা কেমন আছ? আচ্ছা সাবধানে থেক, রাখি তাহলে।
বাড়ির সবার সাথে আলাপ পরিচয় হবার পর শেফালি ভাবী বললো-
-ভাবী কাপড় বদলে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নেন, আমার মনে হয় গোসল করলেই ভাল হবে। আপনার রুমের পাশেই বাথরুম। লম্বা জার্নি করে এসেছেন আজ আর বেশি কথা না, খেয়ে দেয়ে রেস্ট করেন কাল কথা হবে
শেফালির আন্তরিকতা দেখে মনিরা একটু অবাক হলো। লন্ডনের মত শহরে যেখানে সব কিছু মাপা এমনকি মুখের হাসিটাও। মনিরা এ কয়দিন জেনে এসেছে সম্পূর্ণ অনিশ্চিতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে সেখানে প্রথম দেখাতেই এমন আপন করে নেয়াতে মনিরার কাছে অবাক লাগারই কথা।
ভাবীর কথা শুনে ওরা দুই জনেই উঠে গেলো। মনিরা বললো সে গোসল করবে।
-করে ফেল ভাল লাগবে, আমি হাত মুখ ধুয়ে নিলেই হবে।
সুটকেস খুলে মনিরা কাপড় বের করে গোসল করে এলো। রাশেদ সাহেব হাতমুখ ধুয়ে এসে বললো-
-ফিরোজের জন্য কাসুন্দি, ঝিটকার পিঁয়াজ আর ওগুলি এনেছি ওগুলি বের কর।
মনিরা ভাবল তাহলে ও আগে থেকে জানতো এখানে আসবে। আমাকে তো শুধু বলেছিলো ফিরোজকে মেইল পাঠাবে, তা ওর এত ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথচ এতদিন কিছু জানতে পারিনি, আমাকে তো কোনদিন কিছু বলে নি। শুধু বলেছে ফিরোজের বাড়ি উঠবে সে ফিরোজের সাথে যে ওর এত ঘনিষ্টতা তা কিছুই বলেনি। যাক ওদের বন্ধুত্বের ভাব দেখে মনটা বেশ প্রফুল্ল হলো। ভাবতে ভাবতে সব কিছু বের করে একটা ব্যাগে ভরে নিচে নেমে এলো।
শব্দ পেয়ে ভাবী ডেকে বললো-
-ভাবী এদিকে কিচেনে আসুন খাবার রেডি।
মনি এগিয়ে কিচেনে গিয়ে ভাবীর সামনে ব্যাগটা নামিয়ে দিয়ে বললো-
-এই যে ভাবী আপনার ভাই তার বন্ধুর জন্য এনেছে।
-ওতে কি পিঁয়াজ আছে?
-হ্যাঁ।
-আমি জানি পিঁয়াজ থাকতে হবে।
-কেও এলেই তার আর কিছু না, শুধু এই পিঁয়াজ আনতে বলবেই। যাক, ভাবী গোসল করেছেন মনে হচ্ছে!
-হ্যাঁ ভাবী, গোসল করে ফেললাম।
-ভাল করেছেন। কি, এখন শীত লাগছে?
-না বেশ তো ভালই লাগছে।
-নেন এবার খেয়ে দেয়ে শুয়ে পরুন।
-শুনলাম আপনি এদেশে জন্মেছেন, এদেশে বড় হয়েছেন অথচ এত সুন্দর বাংলা বলেন আমার কাছে অবাক লাগছে।
-ওমা, কি বলেন! এদেশে জন্মেছি বলে কি আমরা বাঙ্গালি না?
-আপনাকে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।
ভাবী অনেক কিছু রান্না করেছে। বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাব, চিকেন গ্রীল। খেতে বসে ফিরোজের মা মনিকে বললো-
-রাশেদের বাড়ি তো শুনলাম আমাদের পাশেই তা তোমার বাবার বাড়ি কোথায়?
-ওখানেই। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, -আপনাদের বাড়ির পাশেই! আপনার বাড়ি কোথায়?
ফিরোজের মা তার বাবার বাড়ির ঠিকানা বলতেই মনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠল,
-ও! আপনি কাসেম চাচার বোন? এই ব্যাপার! অথচ দেখেন আমাকে এতো দিন কিচ্ছু বলেনি, তাহলে তো আপনি আমাদের ফুফু হন। আমাদের গ্রাম গালা আর আমার বাবার নাম আঃ সোবহান, আপনি আমার বাবাকে চিনতে পেরেছেন?
-তুমি তাহলে সোবহানের মেয়ে!
-হ্যাঁ। আর আমি ভাবছিলাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় থাকবো কি করবো কত কি ভেবে আমি অস্থির ছিলাম এ কয় দিন।
ফিরোজ এলো একটু পরে, এসে পিঁয়াজ দেখেই বললো, -কি রাশেদ, পিঁয়াজ এনেছ তাহলে?
loading...
loading...
* সবাই বুলবুলকে নিয়ে ব্যস্ত হয়তো!
সে সুযোগে পড়ে নিলুম:
নক্ষত্রের গোধূলি-১৮
loading...
যাক, ভাগ্য ভাল যে বুলিতে ধান খেছে বলে সমস্যা হয়নি!
loading...
পর্বটি পড়লাম বন্ধু খালিদ উমর। শুভ সকাল।
loading...
ইহাই নক্ষত্রের গোধূলি। ধন্যবাদ বন্ধু।
loading...
সংলাপময় আজকের পর্ব। সালাম খালিদ ভাই।
loading...
ধন্যবাদ। রাশেদ সাহেব মাত্র বিলাত পৌছলেন।
loading...
বাহ্। উপন্যাসটির প্রচ্ছদও অসাধারণ হয়েছিলো।
loading...
loading...