নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৯

১৯।
সিনেমা আর কতক্ষণ চলতো জানিনা, কোচ ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ডে এসে থেমে গেলো। কোচের সুপারভাইজার শেখানো তোতা পাখির মত মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে ভ্রমণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজধানী ঢাকা

শহরে এসে তাদের যাত্রা পথের সমাপ্তি ঘোষণা করলো। যাত্রীরা সবাই একে একে নেমে গেলো রাশেদ সাহেবও তার ব্যাগটা খুঁজে নিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে কোচ থেকে নেমে গাবতলি গামী একটা লোকাল বাসে কল্যাণপুর নেমে ভোর হবার বেশ অনেক আগে রিকশা না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে তার বাবার তৈরি বাড়িতে যেখানে তাকে তার স্ত্রী সহ সন্তানদের আশ্রয় দিয়েছে, যেখানে তার মনি সহ তিন মেয়ে রয়েছে সেই বাড়ির সামনে এসে দেখলো এখনও কেও ওঠেনি।
কলিং বেলের সুইচ টিপে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতেই কলাপসিবল গেটের ফাঁকে মনির সদ্য ঘুম ভাঙ্গা হাসিতে উজ্জ্বল মুখটা দেখতে পেলেন। চাবি নিয়ে এসে গেটটি খুলে দিলে রাশেদ সাহেব ভিতরে ঢুকতেই মনিরা রাশেদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরল, যেন কত যুগ ধরে সঞ্চিত কত বিরহের অবসান হয়ে মহা মিলন হলো।
-কি করছ? চলো ভিতরে যেয়ে নিই, মানুষে দেখবে তো!
-দেখুক।
-এই তো মাত্র দুই রাত আর এক দিন গেছে এর মধ্যেই এতো!
-হু, আমার মনে হচ্ছে কতকাল তোমাকে দেখি না, কেমন আছ তুমি?
-কাল সন্ধ্যায় না কথা হলো, ভালো না হলে রাত জেগে এলাম কি করে? তুমি, তোমার মেয়েরা কেমন আছ?
-সবাই ভালো, চলো তুমি কাপড় বদলে নাও আমি গোসলের পানি গরম দিয়ে আসছি, তারপরে তুমি গোসল কর আর আমি নাশতা বানাই।

২০।
চিটাগাং থেকে ফিরে আসার পর কি করবেন ভেবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না। এমন সময় একদিন ছোট ভাই বললো-
-দাদা, আপনি যদি লন্ডন যেতে চান তাহলে চলে যান। আজ মেঝ ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে, আপনি ওখানে যেতে চাইলে যেতে বলেছেন। তবে কথা হচ্ছে উনি যে শহরে থাকে সেখানে থাকতে পারবেন না এবং যাবার ভাড়া আপনাকে ব্যবস্থা করতে হবে। আর আমি বলছি যদি যান তাহলে অন্তত চার বছর থাকবেন এমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। এখন ভেবে দেখেন কি করবেন, চার বছর কিন্তু একেবারে কম না। যাওয়া হলে এখানে এখন যেমন রেখে যাবেন এসে তেমন পাবেন না। হয়ত এসে দেখবেন আপনার অবর্তমানেই মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে, ছোট মেয়ে স্কুল কলেজ সেরে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে বা আরও কত পরিবর্তন হতে পারে যা এখন ভাবা যাচ্ছে না। এর আগে যেমন গিয়েছিলাম এবার কিন্তু তেমন নয়। যদিও একবার ভিসা পেলে পরের বার ভিসার জন্য সমস্যা হয় না। ভেবে দেখেন কি করবেন।
মনি পাশেই বসে ছিলো। রাশেদ সাহেব মনির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
মনি বললো-
-তাই কর, অনেকেই এমন কত প্রয়োজনে কত কি করছে কত জায়গায় যাচ্ছে, চেষ্টা তো কম করা হলো না।
-যেতে বলছ কিন্তু যাবার ভাড়ার টাকা পাব কোথায়?
-সে দেখা যাবে, তুমি মত দিলেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে তাহলে ভাড়ার টাকা জোগাড় করে নিই পরে ভিসার জন্য এপ্লাই করি, এটাই তাহলে ফাইনাল।

রাতে শুয়ে মনিরাকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে একা একা এভাবে চারটা বৎসর মনিকে না দেখে থাকবো কি করে আর মনিই বা থাকবে কি করে, সিদ্ধান্ত তো নিয়ে ফেললাম!
সিদ্ধান্ত নেয়া আর তা বাস্তবায়ন করা এক নয়। তাদের বিয়ে হয়েছে আজ ছাব্বিশ বছর, বিয়ের পর থেকে বিগত ছাব্বিশ বত্সরের নানা স্মৃতি ভেসে এলো মাথায়। ঘরে তিন মেয়ে, মেয়েদের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যাতায়াত। তাদের পোষাক আসাক, চিকিৎসা, বই পত্র কত কি! মেয়েদের হাতে কোন রকম দশটা টাকা দিয়ে বলা যায় না যে বাসে করে ঝুলে গিয়ে ক্লাস করে এসো, ঢাকা শহরে বাসে চেপে মেয়েদের স্কুল কলেজে যাতায়াত ভাবাই যায় না।
দেশের জন্য, দশের জন্য বড় কিছু করার স্বপ্ন তার ধুলায় মিলিয়ে কোথায় চলে গেছে এখন বাঁচবে কি করে এই চিন্তায় অস্থির। শেষ পর্যন্ত ভাবল অনেকেই তো নানা রকম অপরাধ করে জেলে বা হাজতে বাস করছে, তাদেরও তো দিন চলে যাচ্ছে, না হয় সে ভেবে নিবে সেও এমন কোন অপরাধ করেছে যার শাস্তি হিসেবে তাকে অজ্ঞাত বাসে বা নির্বাসনে যেতে হবে, সে তো এমনই অপরাধ করেছে।

ওই তো, তার সহকর্মী নির্বাহী প্রকৌশলী শফিক সাহেবের কি হলো? আহা বেচারা নির্দোষী সহজ সরল মানুষটা! অফিস থেকে ট্রেনিং এর জন্য বাইরে পাঠাল আর ফিরে আসতে না আসতেই তেল চুরির অপরাধে চাকরিটাই চলে গেলো। তারও তার মেয়েদের বয়সী তিন মেয়ে। মেয়েগুলোর দিকে তাকান যায় না। বিভাগীয় চূড়ান্ত নির্দেশের প্রেক্ষিতে তা মকুফের আবেদন নাকচ হবার পর শফিক সাহেব আদালতে মামলা করলো, আপীল করলো কোন লাভ হলো না।
তার স্টোর কিপার পঁয়ত্রিশ লিটার তেলের ইন্ডেন্ট বানিয়ে শফিক সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে সেটাকে তিন শত পঁয়ত্রিশ করে তেল উঠিয়ে বিক্রি করে দিত। যে জাহাজ ডকে রয়েছে তার নামে ভুয়া ইন্ডেন্টে শফিক সাহেবের স্বাক্ষর জাল করে দশ হাজার লিটার ডিজেল উঠিয়ে বিক্রি করে দিত এই ভাবে নানা ফন্দি ফিকির করে টাকা কামিয়ে এক দিনেই তিনটা হিনো বাস কিনে রাস্তায় চালু করে দিয়েছে তার আয় দিয়েই সে চলছে, তারও চাকরি গেছে, কিন্তু সে তো বাসের আয় দিয়ে চলে যাবে।
শফিক সাহেবের যে সে উপায় নেই! সে তো চুরি করেনি বা চুরির ভাগও পায় নি। ওহ! কি কষ্টে যে তার দিন যাচ্ছে সে না দেখলে বোঝার উপায় নেই! মেয়েদের মামা বাড়ি থেকে কিছু দেয়, চাচারা কিছু দেয় এই দিয়েই মেয়েদের লেখাপড়া চলছে। কোন ভাবে দিন যাচ্ছে।
[চলবে]

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১০ টি মন্তব্য (লেখকের ৫টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. সুমন আহমেদ : ০২-১১-২০১৯ | ১৮:৪৪ |

    পর্ব ছোট হওয়ায় ভালো হয়েছে খালিদ ভাই। পড়তে সুবিধা হলো। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০২-১১-২০১৯ | ২০:৩২ |

    ওহোহো। আজকে তো প্রথম পরীক্ষার আগেই দ্বিতীয় পরীক্ষা দিয়ে ফেললাম। মানে এই পর্ব পড়ার আগেই দিনের দ্বিতীয় প্রকাশনায় প্রথম মন্তব্য চলে গেছে। কী পাঠক আমি !! Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ০২-১১-২০১৯ | ২২:১৬ |

      ভাবনার কিছু নাই, ভাল ছাত্ররা এমনই হয়।

      GD Star Rating
      loading...
  3. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ০২-১১-২০১৯ | ২১:২৪ |

    * পর্বে পর্বে আমরাও এগিয়ে চলছি… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ০২-১১-২০১৯ | ২২:১৭ |

      লেফট রাইট, এটেনশন! ফরোয়ার্ড মার্চ!

      GD Star Rating
      loading...
  4. সাজিয়া আফরিন : ০২-১১-২০১৯ | ২১:৩৯ |

    জীবন থেকে গল্পের উপন্যস রূপ পড়লাম ভাই। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  5. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ০২-১১-২০১৯ | ২১:৪৩ |

    * প্রিয় লেখক, সাথেই আছি…. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...