গাবতলি টু মহাখালী

Human_hauler

দুইজন, দুইজন মহাখালী, মহাখালী। ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট মহাখালী। এই যে একটু চাপেন বইতে দেন, আরে একটু ভিতরে যান না! প্যাসেঞ্জার উঠতে দেন, আরও দুইজন উঠবো। উঠেন ভাই উঠেন, সামনে যান। হ, কইলামতো ডাইরেক্ট, দশ টাকা। সামনে বাড়ান ওস্তাদ।

গাবতলি মহাখালী রুটে গত দুই তিন বছরের নিত্য দৃশ্য। জিনসের ছেড়া একটা প্যান্ট পরনে, গায়ে ময়লা এবং উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা হাফ সার্ট, সার্টটা যে কি রঙের তা বোঝা যাচ্ছে না। সারা গায়ে গতরে নোংরা তেল কালি ধুলা মাখা লম্বাটে চেহারা, মাথায় কোঁকড়ানো ঝাঁকরা চুল কতদিন তেল সাবানের ছোঁয়া নেই কে জানে! ১৪/১৫ বছরের ছেলেটা এই কথা গুলি বলে লাফ দিয়ে গাবতলি থেকে মহাখালী চলাচলকারী টেম্পোর পিছনে পা দানিতে পা রাখল। এক হাতে টেম্পোর পিছনের একটা রড ধরা আর এক হাতে টাকা।

ছেলেটা কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেট এর পূর্ব পাশের একটা বস্তিতে মায়ের সাথে থাকে। দুই ভাই দুই বোন। ওরা সবাই ছোট। বাবাকে যতদিন দেখেছে সে স্মৃতি কোন মধুর স্মৃতি নয়। মায়ের সাথে সারাক্ষণ ক্যাচ ক্যাচ মারামারি লেগেই থাকত। রাতে তাহের মৌলবির গ্যারেজে রিকশা রেখে কালা শেখ এর আড্ডায় গাজা টেনে বাড়ি ফিরে এসেই ‘ওই খানকি মাগি ভাত দে’! এই সংলাপ ছাড়া বাবার মুখে অন্তত ওই সময় আর কোন কথা শোনেনি। এমনিতেই মা বেশ নিরীহ গোছের চুপচাপ থাকা মানুষ। এই নিরীহ মানুষটা প্রতিদিন নিয়মিত মার খেতে খেতে এখন আর নিরীহ নেই। পরিস্থিতি তাকে কিছুটা উগ্র হতে বাধ্য করেছে। কতদিন চুপ থেকে এমন মার খাওয়া যায়? গত চৌদ্দ পনের বছর ধরে এই চলে আসছে। আর কত? একবারতো পাড়া পড়শিরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। মাথায়, মুখে এবং হাতে ব্যান্ডেজ করে আধা মরা মাকে ফিরিয়ে এনেছিল। জামালও কাঁদতে কাঁদতে ওদের সাথে গিয়েছিল। একবার ডাইরিয়া হয়ে মা সারাদিনে বার চৌদ্দ বার পায়খানা আর বমি করে করে নেতিয়ে বিছানায় পড়েছিল। বিছানা আর কি! ওই ছেড়া কাঁথায় মুখ গুজে পরে থাকা। প্রতিদিনের মতই গাজার নেশায় বুদ হয়ে এসে ভাত চাইল কিন্তু মার কোন সারা শব্দ না পেয়ে ঘরে ঢুকে মাকে ওই অবস্থায় দেখেই যেন তার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। কষে এক লাথি দিয়ে বলল
কিরে খানকি ভাত চাই হুনস না?
কোন রকম মিনমিন করে মা বলেছিল, হুনছি!
হুনছস তে নবাবজাদীর মত হুইয়া রইছস কেন? ওঠ!
বলেই চুলের মুঠি ধরে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে আসছিল। তখন বার বছরের জামাল পাশেই দাঁড়ান ছিল। মায়ের এই অবস্থা দেখে নিজেকে সামাল দিতে না পেরে পাশে রাখা পাশের বাসার ভাঙ্গা চেয়ারের এক টুকরা কাঠ উঠিয়ে ওই হারামজাদা করস কি? বলেই মেরেছিল বাবার মাথায়।
ওরে বাবারে আমারে মাইরা ফলাইলরে, বলেই এক চিৎকার দিয়ে বাবা জলিল হাওলাদার পড়ে গিয়েছিল
চিৎকার শুনে বস্তির লোকজন ছুটে এসে ভিন্ন চিত্র দেখে হতভম্ব হয়ে থমকে গিয়েছিল। জামালকে জিজ্ঞেস করল
কি হইছেরে?
বলেই কয়েকজন জলিল হাওলাদারের মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হল আবার কয়েকজন বিশেষ করে মহিলারা জামালের মা আর জামালকে ঘিরে ধরল
দিছি আইজকা, জন্মের সাধ মিটাইয়া দিছি হারামজাদারে!
কথাটা বলেই সকলকে শুনিয়ে বলল।
আপনেরা হুনেন, আইজ থিকা আমি আর বাবার লগে থাকুম না। আমি মায়েরে আর ভাই বইনগো নিয়া চইলা যামু
কনে যাবি?
আইজ রাইতে রহিম দাদার বাড়ি থাইকা কাইল একটা বাসা ভাড়া নিমু
বস্তির মালিক রহিম শেখ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সবার পিছনে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। তার নাম শুনে সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল
তুই যে আমার হেনে যাবি পরে তর বাপের লগে হাঙ্গামা করব কেরা?
কোন হাঙ্গামা করন লাগব না দাদা, আপনে আমাগো এই রাইতটা খালি জাগা দেন আমরা কাইলই অন্য কুন হানে চইলা যামু
নারে ভাই আমি কি কামে তগো এই ঝামেলায় জরামু?
দাদা, আপনে কি রোজকার কিসসা হুনেন না? রোজ আমাগো এইনে কি অয় জানেন না? আপনের মইধ্যে কি একটুও মায়া দয়া নাই? একটা রাইতের জইন্যে জাগা দিবেন না?
এতটুক ছেলের মুখে এই কথা শুনে রহিম সেখ কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে রইল। প্রতিবেশীরাও দুই একজনে অনুরোধ করল এই হাবিয়া দোজগের মইদ্ধ্যে থাহার চাইতে না থাহাই ভাল। চাচা আপনে ওগো একটু জাগা দেন জালাইল্য কিছু কইলে দিবেন লাত্থি। বাজার আনবি না, চাইল কিনবি না খালি খাওন দেও! খাওয়ান আহে কইত্থিকা? গাঞ্জা টাইনা আইলেই খাওয়ান পাওয়া যায়? সারাডা দিন বেডির অবস্থা কাহিল আর এর মইদ্ধ্যেই মাইর! অহন পোলা বড় হইছে! বুঝ অহন, কেমন ঠ্যালা। শয়তানের হাড্ডি কুনহানকার!
রহিম শেখ বলল
তোমরা যহন কইতেছ তাইলেতো জাগা দেওন লাগবই, আইচ্ছা জামাইল্য চল তর মায়েরে নিয়া চল আমাগো বারান্দায় থাকবি। আয় আমি তর দাদিরে কইগা।
রহিম শেখ চলে গেল আর তার পিছনে জামাল তার মাকে উঠিয়ে ধরে ভিড়ের মধ্যে থাকা ছোট ভাই বোনদের নিয়ে তার পিছনে পিছনে চলল।
নুর বানু ছেলেকে আঁকড়ে ধরে মিনমিন করে জিজ্ঞেস করল
ও পুত তুই যে আইলি খাবি কি? থাকবি কনে? ঘর ভাড়া দিবি কেমনে?
মা যে কি কও! মনে অয় আমরা রোজ গোস পোলাও খাই আর এহন কিছু পামু না! তুমি চিন্তা কইর না মা, খালেক ওস্তাদ হের টেম্পোতে আমারে কাম দিব কইছে।
টেম্পোর কাম করবি! কি কাম?
হেলপারের কাম
তুই পারবি?
কি যে কও মা
হেই কবে থিকা আমি ওস্তাদের লগে যাই না? তুমি যে আমারে বিচরাইয়া পাওনা আমি কই যাই জান?
কই যাস?
ওইতো, ওস্তাদের লগে যাইতাম। কেমনে কি করে তাই দেখতাম। অহন আমি সব পারি। প্যাসেঞ্জার ডাহা, ভাড়া উঠান তারপরে ওস্তাদরে সিগন্যাল দেওয়া, সব পারি ওস্তাদ কইছে।

রহিম শেখের বারান্দায় সেদিনের মত রাত কাটিয়ে সকালে পাশেই একটা ঘর খালি পেয়ে ওতেই উঠে যেতে চাইল কিন্তু দাদি কিছুতেই যেতে দিতে চাইল না।
আহারে এই অসুইখ্যা মাইয়াডা কই যাইব? যাওনের কাম নাই তরা আমাগো বারান্দার ওই ধারে যে ঘরডা আছে ওই হানে থাক কুন ট্যাহা পয়সা দেওন লাগব না।
সেদিন থেকেই রহিম শেখের টিনের বারান্দার সাথের ঘরে জামাল তার মা এবং ভাই বোনদের নিয়ে থাকা শুরু করল। নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল বেলা সূর্য ওঠার আগে এক মুঠ পান্তা খেয়ে মায়ের আচলে মুখ মুছে বের হয়, রাত দশটা এগারটা বাজলে দুই হাতে বাজার নিয়ে ফিরে আসে। চাউল, ডাল, ডিম, সবজি বা কোনদিন অত রাতে যদি বাজারে থাকে তাহলে একটু গুঁড়া মাছ। দুপুরে ওস্তাদের সাথে বাইরেই খেয়ে নেয়। একদিন রাতে খাবার সময় মা বলল
রুশনীর মা হাউজিঙে সাহেবগো বাড়ি কাম করে, তিন বেলা খাওন দেয় আবার দুই হাজার টাকা মাইনা দেয়, আমারে কইছে করুমনি? আমি তর লগে কথা কইয়া তারপরে কমু কইছি। তুই কি কস?
বলেই ছেলের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
না মা তোমার শরীরের যে অবস্থা তাতে কাম করন লাগব না, আমাগো আর কিছু লাগব না।
মাস গেলে অত গুলা ট্যাহা কি কম? তুই না করস কেন?
না মা, তুমার কামের বেটি হওনের দরকার নাই। আমরা কি তুমারে কোনদিন মায়ের মত কইরা পাইছি কও? তুমি অগো দেখবা, রাইন্ধা বাইরা খাওয়াইবা এইতেই আমাগো হইব। তুমি আমাগো মা হইয়াই থাকো।
এমনে কয় দিন চলব? তুই একলা কত করবি?
এইতো মা ফরিদ আর একটু বড় হইলেই ওরে কোন এক জাগায় লাগাইয়া দিমু
মা অবাক হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েই রইল। কি ভেবে আর কথা বাড়াল না।
খালেক মিয়া জামালের সব ইতিহাস জানে বলে ওকে বেশ একটু আদর যত্ন করে। কোন ভুল বা বোকামি নীরবে সহ্য করে নেয়, সামান্য একটু বকাঝকা দিয়েই শেষ করে ফেলে। দেখতে দেখতে দুই তিন বছর কেটে গেল। নুর বানুর সংসার ভালই চলছে। ওদিকে জামালও ভাল হেলপার হয়ে উঠেছে। এখন মাঝে মাঝেই টেম্পো নিয়ে এদিক ওদিক সরিয়ে রাখতে পারে। টেম্পো রেখে ওস্তাদ খেতে বসেছে তো এমন সময়ে কোন গাড়ি এসে হর্ন দিলে খালেক মিয়া বলে যা তো জামাল গাড়িটা একটু সামনে আগাইয়া রাইখা আয়।
সব ভালর কি শেষ থাকে? কিছু কিছু ভাল ক্ষণিকের জন্য জ্বলে উঠে আবার নিভে যায়। বিশেষ করে এমন হত দরিদ্রের ভাল কি কোনদিন স্থায়ী হয়, সুখের হয়? সব ভাল গুলা যে শুধু ভালর পাশেই থাকতে চায়! সুখ গুলা শুধু সুখের পাশে সুখীর পাশেই থাকতে চায়। গোলাপ যেমন ফুলদানি ছাড়া আস্তা কুড়ে মানায় না তেমনি অভাগার দিকেও সুখ কখনও ফিরে তাকায় না।

মাঝ রাত থেকেই বৃষ্টি। বস্তির পাশে পানি জমে গেছে। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর ভীষণ আলসেমিতে পেয়ে বসল। উঠতে ইচ্ছা করছে না। মা ডাকল কিন্তু জামালের কোন সারা নেই। মা এসে গায়ে হাত দিয়ে দেখল জ্বর টর হয়েছে কি না। আবার ডাকল কিরে মানিক উঠবি না? কত বেলা হইল তর ওস্তাদ গাড়ি নিয়া বইয়া রইছে। ওঠ। পেটের তাগিদে, ক্ষুধার তাগিদে জামালকে উঠতেই হবে। ওস্তাদের গাড়ি কি আর বইসা থাকব? ও না গেলে ওস্তাদ বোরহানরে ডাইকা নিয়া যাইব। তার মানে আইজ আর খাওয়ানের জন্যে কিছু নিয়া আইতে পারব না। এ কথা মনে আসার সাথে সাথে লাফ দিয়ে উঠে পরল।
মা আমি গেলাম
ওস্তাদের বাড়ি এসে দেখে ওস্তাদ গাড়ি বের করে ফেলেছে।
কিরে নবাবজাদা আইজ এত দেরি করলি?
জামাল কিছু বলল না, চুপ করে থাকাই নিরাপদ। গালাগালি যাই করুক রাইতে ফেরার সময় হাতে দুইশ টাকা গুজে দেয়। কোনদিন দুই একটা ট্রিপ বেশি হলে বা রাস্তায় একটু বেশি ভিড় হলে আরও একশ টাকা দিয়ে দেয়। মন ভাল থাকলে কোনদিন গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাজারে গেলে ওকেও সাথে নিয়ে যায়। নিজের বাজার করে ওখান থেকে ওকেও কিছু দিয়ে দেয়। সেদিনও একটা পাঙ্গাশ মাছ আর কিছু বেগুন কিনে দিয়েছিল। ওস্তাদের সাথে বেয়াদবি করতে নেই। যা বলে বলুক। দোষতো সে নিজেই করেছে! এজন্যে একটু বকাবকি শুনতে পারবে না? বাবা যেমনে মাকে মারত তেমন করে মারে না। মারলেই বা কি করত? তাওতো সইতে হতো! কোন কথা না বলে চুপচাপ একটা কন্টেইনারে গাড়ির জন্য পানি ভরে সিটের নিচে রেখে ন্যাকরা দিয়ে গাড়িটা মুছে বলল
চলেন ওস্তাদ।
মহাখালী, মহাখালী। ওঠেন ফার্স্ট ট্রিপ, ওঠেন। আর একজন। শ্যামলী, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী আর একজন। ওস্তাদ ডাকল। কাছে এসে জানালা দিয়ে ওস্তাদের দিকে তাকাল।
কিরে সীট ভরছে?
না ওস্তাদ একটা খালি আছে
ডাক দে
ডাইরেক্ট মহাখালী, মহাখালী, শ্যামলী, জাহাঙ্গীর গেট একজন একজন
এই আমাকে রাওয়া ক্লাবের সামনে ব্রিজের এ পাড়ে নামিয়ে দিবে।
আচ্ছা দিমুনে।
সীট ভরে গেল। টেম্পোর ছাদে দুইটা টোকা দিয়ে, আগে বাড়ান ওস্তাদ।

শ্যামলী পার হয়ে ডাইনে পঙ্গু হাসপাতাল রেখে রোকেয়া সরণি দিয়ে এসে এয়ারপোর্ট রোডে পরল। সামনে জাহাঙ্গীর গেট। একটু জ্যামে গাড়ি দাঁড়াল। দেন ভাই আপনেগো ভাড়াডা দিয়া দেন।
মহিলা মাথা নিচু করে বলল এই সামনে নামব
হ হ মনে আছে নামাইয়া দিমুনে, ভাড়াডা দেন
জ্যাম ছুটে গেল। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে।
রাওয়া ক্লাবের সামনে এসে ছাদে এক টোকা দিয়ে বলল ওস্তাদ বায়ে রাখেন মহিলা নামব
আস্তে করে টেম্পো বায়ে চেপে থেমে গেল। মহিলা যাত্রী নামল কিন্তু তার ভাড়া এখনও দেয়নি। নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাতের পার্স খুলে টাকা বের করতে বেশ একটু দেরি হলো আর এই ফাকে সকাল বেলা ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা সম্ভব না বলে ওস্তাদ একটু একটু করে ডাইনে চেপে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সে মনে করেছে জামাল উঠে পড়েছে। জামাল ভাড়া নিয়ে দৌড়ে টেম্পোর কাছে চলে এসেছে হ্যান্ডেল ধরে লাফ দেয়ার আগেই, পিছন থেকে একটা ল্যান্ড রোভার এসে ধাক্কা দিল। সঙ্গে সঙ্গে সামনে ছিটকে পড়ে গেল, হাতের টাকাগুলা বাতাসে ছড়িয়ে গেল সেই সাথে শুধু একটা চিৎকারের শব্দ হলো। এই সাত সকালে এমন ব্যস্ত রাস্তায় কে কার খবর রাখে! ল্যান্ড রোভারটা যে গতিতে আসছিল সেই গতিতেই চট করে ডাইনে চেপে খালেকের টেম্পোর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। খালেক জানতেও পারল না এই গাড়িটা কি করে গেল তার জামালের কি হয়েছে? জামাল পড়ে যাবার পরেই ল্যান্ড রোভারের পিছনে যে কার আসছিল সে এগিয়ে এসে সামনের রাস্তায় মানুষ পড়ে রয়েছে দেখে কড়া ব্রেক করল। ব্রেকের শব্দে বাম পাড়ে ব্রিজের নিচে দাঁড়ান কয়েকজন পথচারী দৌড়ে কাছে এসে দুই একজন জামালকে রাস্তার পাশে ফুটপাথে এনে দেখে নাক মুখ কান দিয়ে রক্ত ঝরছে, হৃৎপিণ্ডে কোন স্পন্দন নেই আর বাকিরা ওই গাড়ির নিরীহ ড্রাইভারকে বের করে মারপিট শুরু করল। হঠাৎ এই জটলা দেখে রাস্তার ওপাড়ে মোটর বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সার্জেন্ট এসে এম্বুলেন্স খবর দিল এবং যে গাড়িটা মানুষ দেখে মানবিক কারণে দাঁড়িয়েছিলো তার নামে মামলা ঠুকে দিল। জামাল কোন ভিআইপি নয় বলে তার খবর সংবাদ পত্রেও এলো না বা কেও জানতেও পারল না। ওদিকে খালেক মিয়া স্ট্যান্ডে গাড়ি থামিয়ে জামালকে খুঁজে না পেয়ে অবাক হলো। কি ব্যাপার? এইতো, ব্রিজের ওপাশে প্যাসেঞ্জার নামাল! গেল কোথায়? তবে কি ওখান থেকে গাড়িতে উঠতে পারেনি? ভেবে পিছনে এগিয়ে এসে দেখে যেখানে ও শেষবার থেমেছিল তার পাশে জটলা এবং পুলিশের গাড়ি থেমে আছে। ভয়ে ভয়ে কাছে এসে দেখে জামালের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। রাস্তায় চলাচল এবং রাস্তায় কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে চট করে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের হেলপার পরিচয় না দিয়ে বলল এরে আমি চিনি আমার বাসার লগেই এগো বাসা, এর নাম জামাল।
বিঃদ্রঃ- বাসে কিংবা রিকশায় কিংবা যেখানে ভাড়ার বিনিময়ে কোথাও যেতে হয় সেখানে ভাড়া দেয়ার জন্য আগে থেকেই ভাড়ার টাকাটা বের করে রাখুন যেন ভাড়া নেয়ার জন্য এমন করে কোন জামালকে প্রাণ দিতে না হয়!

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৭ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. ফকির আবদুল মালেক : ২১-০৩-২০১৭ | ৭:৫৪ |

    আাহা!

    বড়ই করুন এক চিত্র তুলে ধরেছেন। বড় হৃদয় বিদারক।

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ২১-০৩-২০১৭ | ১৭:১১ |

      হৃদয় বিদারক হলেও এমনটা আজকাল চারিদিকেই ঘটছে।

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ২১-০৩-২০১৭ | ৮:৫৬ |

    মর্মন্তুদ কাহিনী। অচেনা মনে হলো না বন্ধু।
    এমন ঘটনা আমাদেরই আশেপাশে অহরহ ঘটছে। Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • মোঃ খালিদ উমর : ২১-০৩-২০১৭ | ১৭:১১ |

      তবুও কারও কিছু দেখার নেই, নেই কোন প্রতিকারের ইচ্ছা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Frown.gif.gif

      GD Star Rating
      loading...
  3. আনু আনোয়ার : ২১-০৩-২০১৭ | ১০:১৯ |

    নৈমিত্তিক চিত্র। লেখকের লেখায় অসামান্য দরদ ফুটে উঠেছে।
    অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

    GD Star Rating
    loading...
  4. সমছু মিয়া : ২২-০৩-২০১৭ | ২১:৩৬ |

    বাংলাদেশের চিরাচরিত ঘটনা সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন।

    GD Star Rating
    loading...