শরতের ঝরা ফুলের গল্প

শরতের ঝরা ফুলের গল্প
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আগমনে আমরা শিউলির কথা বলি। খ্যাতিতে, সৌরভে এই ফুলের তুলনা মেলা ভার। হয়তো এ জন্যই শিউলি নিয়ে রচিত হয়েছে কত গাথা, কবিতা, গান, আখ্যান, রূপকথা। অসাধারণ কয়েকটি রূপকথার গল্প আছে এই ফুল নিয়ে।

রূপকথার এই গল্প এক রাজকন্যাকে নিয়ে। অসাধারণ তার রূপলাবণ্য। সে ভালোবাসে উজ্জ্বল দীপ্তিমান সূর্যকে। সূর্যের প্রেমে রাজকন্যা মাতোয়ারা। কিন্তু এমন প্রণয়িনীকে ত্যাগ করল সূর্য। বঞ্চিত-লাঞ্ছিত রাজকন্যা অপমানে আত্মহত্যা করল।

রাজকন্যার চিতার ছাই থেকে একদিন জন্ম নিল একটি গাছ। ছোট আকারের ওই গাছের শাখায় শাখায় ফুটল অপরূপ অসংখ্য ফুল। যেন রাজকন্যারই প্রতিরূপ। আর তার হৃদয়ের সব সৌন্দর্য উদ্ভাসিত হলো এই ফুলের বর্ণে-গন্ধে-লাবণ্যে। কিন্তু ফুটল রাতের আঁধারে, সবার অগোচরে। কারণ সূর্যের প্রতি তার প্রবল অভিমান আর ঘৃণা। ভোরে সূর্য পুবাকাশে দেখা দিতে না দিতেই সে ঝরে পড়ল। লজ্জা আর অভিমানে মুখ লুকাল মা ধরণীর কোলে। এই আমাদের শরতের শিউলি।

ইট-পাথরের এই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শিউলির দেখা মেলা ভার। অনেকে অবশ্য ভবনের ছাদে বা বারান্দায় শিউলি ফুলের গাছ লাগান। তাতে ফুলও ফোটে। কিন্তু প্রকৃতি যেন সেভাবে ধরা দেয় না। আর বিশ্বকবির লেখনীতে যে শিউলি বনের চিত্র উঠে এসেছে, তেমন শিউলি বনের দেখা আজ আর মেলে না। তবে গ্রামাঞ্চলে শিউলির অস্তিত্ব বেশ শেকড় ছড়িয়েই আছে। অনেক বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের পাশে জানালার ধারে দেখা যায় শিউলি গাছ। শারদ-সন্ধ্যায় স্বর্গীয় মৌতাত নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় শিউলি ফুল। আর ভোরের আলো ফোটার আগেই তা ঝরে পড়ে।

কমলা রঙের বোঁটায় তুষারধবল মাখনের মতো নরম পাপড়িময় এই ফুল শরতের সকালে ছড়িয়ে থাকে গাছের তলায়। তখন কেউ কেউ কুড়িয়ে নেয় মালা গাঁথার জন্য। নিশিপুষ্প বলে এর প্রকৃত রূপের ঐশ্বর্য আমরা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি না। তবে গন্ধে মাতোয়ারা হই।

চঞ্চল কিশোরী শিউলি ফুল কুড়িয়ে জামার কোঁচড়ে নিয়ে ছুট দিচ্ছে। শিউলিগাছের নিচে বসে নূপুর পায়ে পুষ্পপ্রেমী গৃহবধূ একটি একটি করে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছেন। এ দৃশ্য সিনেমায় নয়, শরতে এই বাংলায় আজও দেখা যায়।

শরতের মাঝামাঝিতে পৌঁছে এখন সর্বত্র দেখা মিলছে শিউলির। শারদীয় দুর্গাপূজার অঞ্জলিতে শরতের শিউলি যে থাকতেই হবে। শিউলি এ উপমহাদেশেরই নিজস্ব উদ্ভিদ। আদি নিবাস মধ্য ও উত্তর ভারত। শিউলি ফুল শেফালি ও পারিজাতাকা নামেও পরিচিত। পারিজাতাকা বলি, শিউলি বলি আর শেফালি বলি- এই ফুল আসলে রাতের রাণী।

এই ফুলের রঙ সাদা। আর ফুলের বোঁটা নলের মতো জাফরান রঙের। বীজ থেকে এর চারা গজায়। শিউলির গুণের শেষ নেই। এর পাতা জ্বর ও বাতের ব্যথার জন্য উপকারী। পাতা কৃমিনাশক।

বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গবিদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় সবখানে এ গাছ জন্মে। বাগানের শোভার জন্যও এটা আদর্শ ফুল। অল্প জায়গায়, দেয়ালের পাশে, উঠানের কোণে, বেড়ার পাশে এক চিলতে জায়গায় অনায়াসে বেড়ে ওঠে। শিউলি মাঝারি আকারের গাছ। ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত বড় হতে দেখা যায়। মোটামুটি অনেক দিন বাঁচে। তবে গাছের গোড়ায় জল জমলে মরে যায়।’ শীত ও বসন্তে পাতা ঝরে যায়। তখন হতশ্রী হয়ে পড়ে শিউলি গাছ।

শরৎ এই ফুল ফোটার প্রকৃত ঋতু। শরৎরাত্রি শিউলির গন্ধে ভরে ওঠে চারদিক। আর সকালে গাছতলায় ঝরে পড়ে বিষাদের শুভ্র শেফালি।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৫-০৯-২০২০ | ১৭:১১ |

    শিউলি এ উপমহাদেশেরই নিজস্ব উদ্ভিদ। আদি নিবাস মধ্য ও উত্তর ভারত। শিউলি ফুল শেফালি ও পারিজাতাকা নামেও পরিচিত। পারিজাতাকা বলি, শিউলি বলি আর শেফালি বলি- এই ফুল আসলে রাতের রাণী। ___ তথ্য গুলোন মনে গেঁথে নিলাম কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. নিতাই বাবু : ২৫-০৯-২০২০ | ১৯:৩৩ |

    শিউলি ফুল নিয়ে তথ্যবহুল লেখনী পড়ে অনেককিছু জানা হলো। শুভেচ্ছা জানবেন শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।

    GD Star Rating
    loading...
  3. রিয়া রিয়া : ২৬-০৯-২০২০ | ১০:১৭ |

    সুন্দর পোস্ট। Yes

    GD Star Rating
    loading...