ভাদুর গল্প বিশ্বাস করতে বড়ো সাধ হয়। কেউ বলে- ভাদু শোকে আত্মঘাতী হয়েছে নদীর জলে। কেউ বলে, আকাশ থেকে মাটিতে নেমেছিল ভাদু, আবার ফিরে গেছে আকাশেই। কেউ আবার বলে ভাদু ভেসে গেছে নদীর কান্নার সঙ্গে। সেই থেকে ভাদুর গান ভাসতে ভাসতে ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম বাংলায়।
যদিও, বীরভূমে গেলে দেখা যাবে ভদ্রাবতী নাকি পুরুলিয়ার নন, হেতমপুরের রাজকন্যে। বর্দ্ধমানের রাজপুত্রকে মন দিয়েছিল সে। ইলামবাজারের কাছে চৌপারির শালবনে ডাকাতরা যখন মেরে ফেলল রাজুপুত্রকে, তখন তাঁর সঙ্গেই সহমরণে গেছিল ভদ্রাবতী। সেই যন্ত্রণার ইতিহাসই নাকি বোনা ভাদু গানে।
ভাদু গানের আসর আমার গীতিকবিতা (ষষ্ঠ পর্ব)
কথা – আঞ্চলিক সুর – অপ্রচলিত
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
তুরা আয় আয় আয়,
ভাদু পুজব্য আয়,
ভাদুর গলায় গেন্ধা ফুলের মালা দিবি আয়।
আয় আদুরী আয় কাজুরী ভাদুপূজা করব্য আয়,
গেন্ধা ফুলের মালা গাঁথে পরাব্যঅ ভাদুর গলায়।
তুরা আয় আয় আয়,
ভাদু পুজব্য আয়,
ভাদুর গলায় গেন্ধা ফুলের মালা দিবি আয়।
বাড়ির নামু গয়ল্যা পোখর ধারে ধারে কলাগাছ,
আমার ভাদু খায় না খাড়ি খেতে দিব পোনামাছ।
তুরা আয় আয় আয়,
ভাদু পুজব্য আয়,
ভাদুর গলায় গেন্ধা ফুলের মালা দিবি আয়।
আঁচিলে পাঁচিলে কত পোরুলের ফুল ফুটেছ্যা,
পোরুল ভাজা খেতে মজা জিভে জল আসিছ্যা।
তুরা আয় আয় আয়,
ভাদু পুজব্য আয়,
ভাদুর গলায় গেন্ধা ফুলের মালা দিবি আয়।
গুড় বাতাসা ফুল বাতাসা ভাদুকে দিব কলাপাকা,
চিড়া গুড় আর দুধের চাঁছি কুলুঙ্গিতে আছে রাখা।
তুরা আয় আয় আয়,
ভাদু পুজব্য আয়,
ভাদুর গলায় গেন্ধা ফুলের মালা দিবি আয়।
loading...
loading...
ভাদু গানের আসরে গীতিকবিতার ষষ্ঠ পর্ব শেয়ার করায় ধন্যবাদ প্রিয় কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।
loading...
ভাদু পুজো প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে জাঁকজমক সহকারে অনুষ্ঠিত হয়।যদিও এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে প্রায় এক মাস আগে থেকেই।ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই গ্রামের বাড়ির একটি নির্দিষ্ট স্থানে ভাদুর পিঁড়ি বা চৌকি স্থাপন করে।প্রতিদিন স্নান করে এসে বাড়িয়ে সকল মেয়েরা ভাদু পিঁড়িতে ফুল দিয়ে ,ধুপ জ্বালিয়ে ভাদুর উদ্দেশ্যে প্রনাম করে এবং ভাদু গান গেয়ে চলে আরাধনা।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন। শারদ-শুভেচ্ছা জানাই প্রিয়কবিকে। জয়গুরু!
loading...
শব্দনীড় ব্লগে ভাদ্র মাসে ভাদু গানের আসর জমেছে খুব! সত্যি কবি দাদা, আপনার লেখা পড়ে ভাদু গানের বিস্তারিত জেনে খুবই ভালো লাগছে। আশা করি পরের পর্বও পড়ে উপভোগ করবো।
loading...
ভাদ্রমাসে ভাদুর জন্ম ও মৃত্যু। তাই সারামাস ধরে ভাদুর আরাধনা করা হয়। আমাদের ভাদুমণি, রাজকুমারী ভদ্রাবতী। ছোট্ট একরত্তি এক আঞ্চলিক দেবী যিনি আসেন আদিবাসী অধ্যুষিত পূর্বেকার জঙ্গলমহল আর মানভূমের ঘরে ঘরে। বলতে গেলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম জেলার কিছু অংশে আর মানভূম ঘেঁষা বর্ধমানের কিছু জায়গায়। ভাদু দেবীর কাহিনী রূপকথার মতো।
শোনা কথা, ভাদুর গল্প, কাহিনী। মানভূমের ঘরে ঘরে শোনা যায় ভাদুর দুঃখের কাহিনি। তাই তো সেই দুঃখে দুঃখী হয়ে মেয়েরা আরাধনা করে ভদ্রাবতী নামে মানভূমের পঞ্চকোট রাজার সেই পালিতা কন্যাকে যিনি রাজকন্যা ভদ্রাবতী, আবার দেবী হয়ে ভাদু নামে পূজিতা হন ঘরে ঘরে। এ যেন ভাদুর দুঃখের বারমাস্যা যা লোককথা হয়ে প্রচারিত হয় মেয়েদের গানে গানে।
ভাদু তুমায় আনব্য মা গ পুজব সব্বাই আজিকে
রাখব তুমায় যতন কইর্যেন মাণিক হঁইয়ে থাকব্যে বুকে
সোনার বাঁউটি দিব ভাদু যায়ো না’ক কুথাকে
আমার ঘরে থাক মা গ গড় করি মা তুমাকে…
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন। শারদ-শুভেচ্ছা জানাই প্রিয়কবিকে। জয়গুরু!
loading...
Very good post
loading...
বর্তমানে ভাদুর প্রতিমা বা মূর্তি নিয়ে আসা হয়। কোন কোন মূর্তির কোলে থাকে কৃষ্ণের ছোট একটি মুর্তি। কখনও বা রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি। এই ভাদুকে কেন্দ্র করে চলে গান, নাচ। গানগুলি মূখ্যতঃ প্রেমের গান, বিবাহের গান, দুঃখের বারমাস্যাও আছে যা ভাদুর কাছে মনের কথা ব্যক্ত করেন মেয়েরা, কুমারীরা। একদা রাজকন্যা ভদ্রাবতীও যে কুমারী! আছে প্রেমিকের জন্য, প্রেমের জন্য আত্মোৎসর্গের কথাও। ভাদু, ভদ্রাবতীর জীবনদানও তো প্রেমের জন্যই! হয়ত সে কারণেই ভাদু প্রতিমায় কোলে থাকে কৃষ্ণের বা রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি, যা চিরন্তন প্রেমের প্রতীক।
আজ ভাদু-পুজার দিনে তাঁর উদ্দেশে বলি—
ভাদুমণি দুখ পাঁইয়েছ্যে বেথা তাকে দিও না
ভাদু বিটি বড় দুখী, তুমরা কিছু বইল্য না……
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন। শারদ-শুভেচ্ছা জানাই প্রিয়কবিকে। জয়গুরু!
loading...