স্বাধীন ভারত স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) অষ্টম পর্ব

পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম…… স্বাধীন ভারত
স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) অষ্টম পর্ব

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন যে ইংরেজ নারী
ফ্রেডা বেদী: একজন ইংরেজ নারীর জীবনকাহিনী

ফ্রেডা বেদীর জীবনটা বেশ বৈচিত্র্যময়। জন্ম ইংল্যান্ডের ছোট্ট এক শহরে। প্রেমে পড়ে তিনি চলে যান ভারতে। সেখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে। তার জীবনীকার অ্যান্ড্রু হোয়াইটহেড বলছেন সেই চমৎকার কাহিনী।

“কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যা বর্ণ বা সংস্কারের চেয়ে গভীর। ভালবাসা হচ্ছে তেমনি একটি বিষয়।”- এই কথাগুলো ফ্রেডা বেদীর, একজন ইংরেজ নারী। ইংল্যান্ডের তৎকালীন সমাজব্যবস্থার সমস্ত কুসংস্কারকে পায়ে দলে যিনি বিয়ে করেছিলেন একজন ভারতীয় শিখকে, এবং একজন মা ও স্ত্রীর ভূমিকা সম্পর্কে ভারতীয় সমাজে যেসব প্রচলিত ধ্যানধারণা ছিল তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন।

পাঞ্জাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ যাতে ভণ্ডুল করতে না পারেন, সেজন্য বিপিএল-কে মরুভূমির মধ্যে এক জেলখানায় কয়েদ করে রাখা হয়েছিল। ফ্রেডাও নিজের মাতৃভূমি বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তৈরি হচ্ছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতার দাবিতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করলেন ফ্রেডা তাতে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন।

তিনি তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি ডেরা বাবা নানকে গিয়ে ঘোষণা করেন যে “ভারত যতদিন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত না হবে ততদিন তিনি সব ভারতীয়কে বলবেন বিশ্বযুদ্ধে সামিল না হতে।”

এটা একটা উস্কানিমূলক বক্তব্য যার জন্য শাস্তির বিধান ছিল। কিন্তু একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর পক্ষ থেকে এই ঘোষণা আসার পর তাকে নিয়ে কী করা হবে কর্তৃপক্ষ তা বুঝতে পারছিল না। তাই তারা সেখানে একজন ইংরেজ পুলিশ অফিসারকে পাঠায়।

ফ্রেডা বেদীকে আটক করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়। তারপরের কথোপকথন ছিল এরকম:

“কাজটা আপনার জন্য যেমন সুখকর না, আমার জন্যও না,” ম্যাজিস্ট্রেট বিড়বিড় করে বললেন।

“এটা নিয়ে ভাববেন না। আমার মোটেই খারাপ লাগছে না।”
“ইংরেজ নারী হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধে আপনি পেতে পারেন, সেটা কি আপনি চান?”

“আপনি আমাকে একজন ভারতীয় নারী হিসেবেই দেখবেন। আমি তাতেই খুশি হবো।”
এরপর ম্যাজিস্ট্রেট ফ্রেডাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু জেলের জীবন খুব একটা কঠিন ছিল না। জেলে যেসব নারী কয়েদি ছিল, যারা ফৌজদারি অপরাধের জন্য দণ্ড ভোগ করছিলে, তারাই ফ্রেডার বেশির ভাগ কাজ করে দিত।

“ভারত ছিল আমার ভবিতব্য,” বলছেন ফ্রেডা। একজন ইংরেজ নারী হয়ে ভারতের স্বাধীনতা দাবি করে কারাগারে গিয়ে বিখ্যাত হওয়াও তার ভবিতব্যই ছিল।

বেদী দম্পতির রাজনৈতিক খ্যাতি ভারতের স্বাধীনতার পরও বজায় ছিল। স্বাধীনতার পর তারা কাশ্মীরে চলে যান এবং কাশ্মীরী জাতীয়তাবাদীদের সাথে মিলে গড়ে তোলেন বামপন্থী নারী মিলিশিয়া গ্রুপ।

উনিশশো পঞ্চাশ সালে ফ্রেডা বেদীর জীবনে একটা বড় পরিবর্তন আসে। বার্মায় জাতিসংঘের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্মের সাথে পরিচিত হন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।

উনিশশো উনষাট সালে চীনা নিষ্পেষণের শিকার হয়ে যখন হাজার হাজার তিব্বতি তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন, তখন ফ্রেডা ঐ শরণার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
এক সময় তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তিনি তার সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব শেষ করেছেন। (তার তিন সন্তানের একজন হলেন চিত্র তারকা কবির বেদী।)

তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের সাথে তিনি এতটাই মিশে যান যে তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর শপথ নেন। তার বয়স যখন ষাটের কোঠায় তখন তিনি বৌদ্ধ ধর্মের বাণী প্রচারের জন্য সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ান। কিন্তু তিনি কখনই আর কোন পশ্চিমা দেশে গিয়ে থাকেন নি।

“একজন নারী এবং একজন স্ত্রী হিসেবে আমি বিকশিত হয়েছি ভারতের মাটিতে,” তিনি বলেছিলেন। রুপার্ট ব্রুকের কবিতা উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেছিলেন, “তবে আমি সেই একমুঠো ধুলো যাকে জন্ম দিয়েছে, আকার দিয়েছে এবং জ্ঞান দিয়েছে ইংল্যান্ড। যদিও আমি ভারতীয় জীবনধারা গ্রহণ করেছি, আমার স্বামী-সন্তানরাও ভারতীয়, তবুও আমি মনে করি না আমি এবং আমার নতুন দেশের মধ্যে কোন ধরনের বাধা রয়েছে কিংবা কোন পার্থক্য রয়েছে।”

সারা জীবন ধরে ফ্রেডা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, কিংবা লিঙ্গের বাধা অতিক্রম করে এসেছেন। প্রচলিত নিয়মের ওপর তিনি কুঠারাঘাত করেছেন। প্রচলিত চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন।

পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম…… স্বাধীন ভারত
স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) অষ্টম পর্ব

কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভারতবর্ষ আমার জন্মভূমি ভারত আমার মহান দেশ,
ভারতবর্ষ হয়েছে স্বাধীন ঘুচলো পরাধীনতার ক্লেশ।
অগ্নিশিশু সুভাষচন্দ্র বোস নেতাজী নামে খ্যাত যিনি,
আজাদ বাহিনী গঠন করে ভারত শৌর্য্য দেখান তিনি।

ত্যাগী বীর চিত্তরঞ্জন দাশ, জাতিরজনক মহাত্মাগান্ধীজী,
স্বাধীনতার তরে সকলেই জীবন দিতে হলেন রাজি।
বিনয় বাদল দিনেশ আর স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম,
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেলেন দেশের স্বাধীনতার জয়গান।

অনেক রক্ত ও অনেক অশ্রু ঝরেছে ভারতের মাটিতে,
সংগ্রামীদের রক্ত ঝরেছে মিশেছে গঙ্গার নদীতে।
ভারতবর্ষ হয়েছে স্বাধীন আমরা তো নই পরাধীন,
স্মরণ করি আজকে তাদের শোধ করতে সেই রক্তঋণ।

ভারতবর্ষ আমার স্বর্গভূমি ভারত আমার দেশ মহান,
সোনার ভারত গড়তে হবে রাখতে হবে দেশের মান।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৫-০৮-২০২০ | ২০:০৪ |

    ভারতবাসীর প্রত্যয় অটুট থাকুক। স্বাধীনতার দিবসে জানাই অকৃত্রিম ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফয়জুল মহী : ১৫-০৮-২০২০ | ২০:১৭ |

     বুদ্ধিদীপ্ত কলমে সৃষ্টিশীল লেখনী । 

    GD Star Rating
    loading...
  3. নিতাই বাবু : ১৬-০৮-২০২০ | ১০:৩২ |

    ইংরেজ নারী ফ্রেডা বেদী সম্পর্কে জানা হলো। 

    যা আগে জানা ছিলো না। জানতে চাই আরও অনেককিছু। চলুক লেখা। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ভারতবাসীর জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা অটুট থাকবে। শুভকামনা থাকলো।            

    GD Star Rating
    loading...
  4. মাসুদুর রহমান (শাওন) : ১৬-০৮-২০২০ | ১৪:১৮ |

    অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার পোস্ট পড়ে……..

    GD Star Rating
    loading...