রাখী বন্ধন (ধর্মীয় ও বিবিধ কবিতা)

রাখীবন্ধন পৌরাণিক তথ্য
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কৃষ্ণ ও দ্রৌপদী
মহাভারতে আছে, একটি যুদ্ধের কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। এতে কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে যান। দ্রৌপদী তাঁর অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে ঘোষণা করেন এবং দ্রৌপদীকে এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বহু বছর পরে, পাশাখেলায় কৌরবরা দ্রৌপদীকে অপমান করে তাঁর বস্ত্রহরণ করতে গেলে কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করে সেই প্রতিদান দেন। এইভাবেই রাখীবন্ধনের প্রচলন হয়।

বলিরাজা ও লক্ষ্মী
অন্য একটি গল্পে রয়েছে, দৈত্যরাজা বলি ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ ছেড়ে বলির রাজ্য রক্ষা করতে চলে এসেছিলেন। বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে বলিরাজের কাছে আসেন। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামী ফিরে আসেন, ততদিন যেন বলি তাঁকে আশ্রয় দেন। বলিরাজা ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন। শ্রাবণ পূর্ণিমা উৎসবে লক্ষ্মী বলিরাজার হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। বলিরাজা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষ্মী আত্মপরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। বলিরাজা বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন। সেই থেকে শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিটি বোনেরা রাখীবন্ধন হিসেবে পালন করে।

সন্তোষী মা
বলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র জয় সন্তোষী মা-এ (১৯৭৫) রক্ষাবন্ধন সংক্রান্ত একটি গল্প বলা হয়েছে। রাখীবন্ধনের দিন গণেশের বোন গণেশের হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। এতে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের হিংসে হয়। তাদের কোনো বোন ছিল না। তারা বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গণেশ তখন তাঁর দুই ছেলের সন্তোষ বিধানের জন্য দিব্য আগুন থেকে একটি কন্যার জন্ম দেন। এই দেবী হলেন গণেশের মেয়ে সন্তোষী মা। সন্তোষী মা শুভ ও লাভের হাতে রাখী বেঁধে দেন।

রাখীপূর্ণিমা ভারতের একটি উৎসব। এই উৎসব ভাই ও বোনের মধ্যে প্রীতিবন্ধনের উৎসব। হিন্দু, জৈন ও শিখরা এই উৎসব পালন করে। এই দিন দিদি বা বোনেরা তাদের ভাই বা দাদার হাতে রাখী নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়। এই রাখীটি ভাই বা দাদার প্রতি দিদি বা বোনের ভালবাসা ও ভাইয়ের মঙ্গলকামনা এবং দিদি বা বোনকে আজীবন রক্ষা করার ভাই বা দাদার শপথের প্রতীক। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয় চিতোরের বিধবা রাণী কর্ণবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সাহায্য প্রার্থনা করে একটি রাখী পাঠিয়েছিলেন। এর পর থেকে এই উৎসবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

রাখী বন্ধনের পূণ্য পবিত্র দিবসে বাংলা কবিতা আসরের সকল কবিগণকে জানাই শুভ রাখী বন্ধনের শুভেচ্ছা। করোনা আবহে বন্দী দশায় ঘরে ঘরে সকলেই রাখী উত্সব পালন করুন। সকলেই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন । শুভকামনা রইলো। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

রাখী বন্ধন (ধর্মীয় ও বিবিধ কবিতা)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

রাখী বন্ধনের পবিত্র দিবসে
সবে মিলি পরস্পরে,
প্রীতির বাঁধনে আজি শুভদিনে
উত্সব প্রতি ঘরে।

ধান্য দূর্বা লয়ে অতি সযতনে
ভগিনীরা দীপ জ্বালে,
ভ্রাতার হস্তেতে বেঁধে দেয় রাখী
চন্দনের ফোঁটা ভালে।

সুমিষ্টান্ন কত ফলমূল যত
রাখে বিবিধ প্রকার,
ভ্রাতাগণ সবে ভগিনীরে দেয়
নানাবিধ উপহার।

বন্দী দশা আজি তবু ঘরে ঘরে
রাখী বন্ধনের দিনে।
করোনা আবহে অশ্রু জল বহে
ভগিনীরা রাখী কিনে।

বর্ষে বর্ষে আসে পবিত্র দিবস
কত হাসি কলরব,
প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনেতে
হয় রাখী উত্সব।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ০৪-০৮-২০২০ | ১:১৩ |

     মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । মুগ্ধ হলাম লেখায়

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০৪-০৮-২০২০ | ১৮:৪৭ |

    করোনা আবহে বন্দী দশায় ঘরে ঘরে সকলেই রাখী উত্সব পালন করুন। সকলের পাশাপাশি আপনিও ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভেচ্ছা কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. সাইদুর রহমান১ : ০৪-০৮-২০২০ | ২২:৫২ |

    একসাথে দু’টো অসাধারণ জিনিস দেখলাম। পৌরণিক ব্যাখা ও কাব্য। এগিয়ে যান সাহিত্যিক।

    GD Star Rating
    loading...