বিশ্বত্রাস করোনা ! পৃথিবী জেলখানা।
যাত্রাদলের অবক্ষয় (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
এ বছর রথযাত্রা চলে গেল, কিন্তু খবরকাগজে দেখা গেল না ‘বিশেষ’ একটা জিনিস। অথচ, সে এক দিন ছিল, যখন রথের তারিখে কাগজ হয়ে উঠত বিশাল মোটা। মূল কাগজ যদি ১৬ পাতার, সঙ্গে ক্রোড়পত্রটি ২৪ পাতার! ঢাউস ঢাউস ফুল-পেজ অ্যাড। সে সব জুড়ে নায়ক-নায়িকাদের পমেটম-মাখা মুখ। কাজলটানা চোখ। সে সব দিনে রথযাত্রা উপলক্ষে চিৎপুর হয়ে উঠত যেন জগদ্ধাত্রী পুজোর চন্দননগর। অলিতে-গলিতে মন্ডা-মেঠাইয়ের গন্ধ। অপেরার গদিতে গদিতে অধিকারীরা ধোপদুরস্ত হয়ে বসে। অসম, ত্রিপুরা কিংবা এ রাজ্যের জেলাগুলি থেকে আসবেন কত লোক। যাত্রাপালার বায়না করতে। এ বার রথের দিনে চিৎপুর দেখল না ভিড়ভাট্টা। দেখল না উৎসবের আমেজ। ১৯৭০-’৮০-র দশকের সঙ্গে এই পরিবেশের কোনও তুলনাই হয় না। কেন? নয়নতারা অপেরার মালিক প্রশান্ত গোস্বামী বললেন, ‘মিছিমিছি কেন তুলনা টানছেন? তখন কি ডজন ডজন টিভি চ্যানেল ছিল? শয়ে শয়ে সিরিয়াল ছিল? রিয়েলিটি শো ছিল? দাদাগিরি, দিদিগিরি হাবিজাবি ছিল? কার ঘরে টিভি নেই বলুন তো? কে দেখতে পায় না সুইচ অন করলেই রণবীর কপুর কিংবা ক্যাটরিনা কাইফকে? বিনোদনের হাজারও পসরা নিয়ে টেলিভিশন যখন হাজির সুন্দরবনেও, তখন আর কে দেখবে যাত্রা? আসলে কি জানেন, বোকাবাক্সের পরদার চ্যালেঞ্জকে কী ভাবে রোখা যাবে, তা চিৎপুর বুঝে উঠতে পারল না।’
প্রশান্তর অভিযোগ পুরোপুরি মানেন না নটরাজ অপেরার হিরো ত্রিদিব ঘোষ। ‘চ্যালেঞ্জে কুপোকাত কি শুধু যাত্রা? চিৎপুরের পাশের পাড়া হাতিবাগানের কী হাল? রঙ্গনা কিংবা সারকারিনার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আপনার মনে হবে ওগুলো যেন পোড়ো বাড়ি। অথচ এক সময় বৃহস্পতি, শনি কিংবা রবিবার বিকেলবেলা ও সব হলের সামনেটা শালি-জামাইবাবুদের কলতানিতে মুখর হয়ে উঠত। আজ শালি আছে, জামাইবাবুও আছে, নেই রাসবিহারী সরকারের ‘সম্রাট ও সুন্দরী’। নেই মিস শেফালির নাচ। যাত্রাও সংকটে পড়েছে একাধিক কারণে। ভাল কাহিনি নেই, ভাল পরিচালক নেই, ভাল অভিনেতা নেই। খেয়াল করে দেখুন, সবই আছে সিনেমা, সিরিয়ালে।
বিনোদন মানে রসায়ন, রান্না। যাত্রা এখন মালমশলার অনটনে পড়ে বিস্বাদ রান্না হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কী বলব মশাই, যাত্রাপালায় গান এখন একটা হাস্যকর উপাদান। পুরনো দিনে এক একটা পালায় থাকত বিশ-বাইশটা গান। সেগুলো লেখা হত শুধু যাত্রার জন্যই। গাওয়াও হত কাহিনির খাতিরে। আর এখন যাত্রার জন্যে আলাদা গান লেখার বদলে অনেক সময়েই থাকে সুপারহিট হিন্দি অথবা বাংলা সিনেমার মারকাটারি গান। তো সে সব গাইবে কে? নাহ্, পুরনো দিনের মত নায়ক-নায়িকা নয়। ডায়ালগের মাঝখানে হঠাৎ বাজবে টেপরেকর্ডার। চলবে গান। নায়ক-নায়িকা শুধু ঠোঁট নাড়বেন। বুঝুন অবস্থা! ধার করা অক্সিজেনে কত দিন বাঁচা যায়?’
ত্রিদিবের কথা হয়তো ঠিক। সত্তরের দশকে রমরমিয়ে বিক্রি হত সুপারহিট যাত্রাপালার এলপি রেকর্ড। এখন যাত্রার বাজার নেই বলে বেরোয় না তার সিডি। অথচ ‘সোনাইদিঘি’ কিংবা ‘নটী বিনোদিনী’র এলপি এক সময় বিক্রি হত ‘শোলে’র এলপি-র পাশাপাশি, পাল্লা দিয়ে।
loading...
loading...
নিয়মিত এই পর্বের অংশ বিশেষ পড়লাম কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। চলুক।
loading...
সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন ।
loading...
সবকিছুর মতো বিনোদনেও এসেছে নানা পরিবর্তন। সিনেমা হল বিলুপ্তপ্রায়। হাতের মুঠোফোনে চলে এসেছে পৃথিবী।
এমনই সময় টিকে থাকা অনেকটা চ্যালেঞ্জই বটে।
তবু কেউ কেউ পারেন।
ভালো থাকবেন।
loading...