যাত্রাপালার আসর- প্রথম পর্ব

যাত্রাপালার আসর- প্রথম পর্ব
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনার কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

নামটা কি চেনা চেনা। হয়তো বা। কেন না এই রকম চণ্ডী তলা দিয়ে নাম তো আর ও আছে কি না। যাইহোক এই চণ্ডী তলা বসুধা মৌজা য় ; থানা- কাঁকসা ; প: বর্ধমান। এখানে দেবী চণ্ডী – রূপাইচণ্ডী। তন্ত্রমতে তাঁর পূজা। নিত্যপূজা ছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তি তে তাঁর বার্ষিকী বিশেষ পূজা অনুষ্ঠান।

বৈশাখের ৩ তারিখ থেকে কলকাতার যাত্রাদল এর পালাগান। এলাকার মানুষ সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। এই যাত্রা দেখার জন্যে।চারদিক থেকে মানুষজন ছুটে আসেন।কমপক্ষে দু তিন হাজার মানুষ। চারদিকে মানুষ আর মানুষ।রূপাই দহের পাড়ে ; ঝোপের ধারে।এমন কি গাছের উপরে ও। তখন তো ঘন জংগল। বড় বড় অর্জুনগাছ। পলাশের ঝোপ।আরো কত গাছপালা। এই এখানের যাত্রা পালাগানের আসর বসছে- সে তো অনেকদিন থেকে ই।

প্রায় একশ বছর হতে চলল। কে না এসেছেন এখানে? নামী কোন না দল। প্রায় সবাই। রথী – মহারথী সব যাত্রা অভিনেতা অভিনেত্রী রা। কত বড় বড় সব নাম।ছোট ফণী ; বড় ভোলা; ছোট ভোলা; পান্না চক্রবর্তী ; গুরুপদ ঘোষ; দ্বিজু ভাওয়াল;শেখর গাঙ্গুলী; জ্যোৎস্না দত্ত; গুরুদাস ধাড়া; রাখাল সিংহ;নির্মল মুখার্জী ইত্যাদি ইত্যাদি সব নাম।

পৌরাণিক পালা ই বেশী হত। পরে এল সামাজিক পালাগান।ঐতিহাসিক পালা ও হয়েছে অনেক।
প্রাচীন তম সত্যম্বর অপেরা র বাঁধা আসর। অত মানুষ। পেট্রোম্যাক্স; হ্যাজাক এর আলো।তখন মাইক নাই। খোলা গলা য় গান। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ এর মতো শুনেছে- দেখেছে।। রাত এগারো টায় শুরু হয়ে সেই ভোর রাত। সারা রাতের আনন্দ অনুষ্ঠান। এলাকার এই ঐতিহ্য এখন ও বেঁচে আছে।
তবে সেই যাত্রা আর নেই।সব দিক দিয়েই তার মান নেমে গেছে।

পৌরাণিক যাত্রাপালা- রাজা হরিশ্চন্দ্র।
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনার কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পৌরাণিক যাত্রাপালা রাজা হরিশচন্দ্র এর কাহিনী দর্শকদের মন কাড়ে। অযোধ্যার রাজা হরিশ্চন্দ্র সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন। তপোবনে ঋষি বিশ্বামিত্রের ত্রিবিদ্যাযজ্ঞে বিঘ্ন ঘটানোর দায়ে রাজা হরিশচন্দ্রকে ক্ষতিপূরণবাবদ বিশ্বামিত্রকে রাজ্য দান করতে হয়। স্ত্রী শৈব্যা পুত্র রোহিতাশ্বকে নিয়ে একবস্ত্রে রাজ্য ছেড়ে কাশীবাসী হন। এরপর ঋষি বিশ্বামিত্র দানের দক্ষিণা চাইলে রাজা তাঁর স্ত্রীকে সাধারণ ব্রাহ্মণের কাছে এবং নিজেকে চণ্ডালের নিকট বিক্রি করে ঋষির ঋণ পরিশোধ করেন। ওই ব্রাহ্মণের গৃহে রাণী শৈব্যা ও পুত্র রোহিত লাঞ্জনা-গঞ্জনা সহ্য করে জীবন ধারণ করতে থাকে। একদা রাজকুমার রোহিত সাপের দংশনে প্রাণ হারায়। মৃত পুত্রকে নিয়ে রাণী শৈব্যা চণ্ডালের কাজ করা রাজা হরিশ্চন্দ্রের শ্মশানে নিয়ে যান। সেখানে পুত্রকে চিতায় তুলতেই ঋষি বিশ্বামিত্র হাজির হয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ঋষিত্ববলে মৃত রোহিতের জীবনদান করেন এবং হরিশ্চন্দ্রকে রাজ্যপাট বুঝিয়ে দেন। দানের মহিমায় উদ্ভাসিত হরিশ্চন্দ্র পুনরায় রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ১৮-০১-২০২০ | ১৭:০৬ |

    শ্রুতিমধুর ও সুখপাঠ্য লেখাটা। পাঠক প্রিয় হোক।♥♥।

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৯-০১-২০২০ | ২৩:০৫ |

      সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।
      সাথে থাকুন, জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ১৮-০১-২০২০ | ১৮:১৯ |

    যাত্রাপালা থেকে আমাদের আগ্রহ বা মন কবেই যেন উঠে গেছে। কোথাও আর তেমন ভাবে এই শিল্প নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয় না। বাংলা ব্লগগুলোতেও কেমন জানি এর চলন টেকসই হয় নাই এখনও।

    সাহিত্য, লোকজ উৎসব সংগ্রাহক হিসেবে সম্ভবত আপনি অন্যতম সেরা হবেন মি. লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। অভিনন্দন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৯-০১-২০২০ | ২৩:০৯ |

      যাত্রা বাংলাদেশের এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় লোকনাট্য ধারা। ধর্মীয় বা অন্য কোনো উৎসবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার যে রীতি সেখান থেকেই যাত্রা শব্দের উৎপত্তি । উচ্চ শব্দ, চড়া আলো, অতি নাটকীয় ভাবভঙ্গি ও দৈত্যাকার মঞ্চে উপস্থাপন- যাত্রার মূল বৈশিষ্ট্য। বাংলার কৃষক, তাঁতি, জেলে, কামার, কুমার রাতের পর রাত জেগে যাত্রার কাহিনী, অভিনয়, গানের মাধ্যমে লোকজ নীতিবোধ, শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব নিয়ে যাত্রা দেখেছে। ষোড়শ শতকে অভিনয় কলা হিসেবে যাত্রার উদ্ভব হলেও এর বিকাশ শুরু হয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। একবিংশ শতকের গোড়ার দিকেই নানাকারণে যাত্রা শিল্পের অগ্রগতি থমকে যায়।

      সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম। সাথে থাকবেন প্রত্যাাশা করি।
      জয়গুরু।

      GD Star Rating
      loading...