পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান দশম পর্ব

পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান
দশম পর্ব।

তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা আর সম্পাদকীয় কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার বাড়িতে বাড়িতে যে কতকাল ধরে টুসু পরব হয়ে আসছে, মকর সংক্রান্তির দিন মেলা বসে আসছে পরকুল, পরেশনাথ, কেচন্দা, লক্ষীসাগর, বীরপাট ও সুইসা ও মানবাজার কাশীপুর, হুড়া, ঝালদা, বলরামপুর, তালতলায়, তার খবর আমরা ক জনই বা রাখি। আমাদের দৌড় তো ওই সৌখিন বইমেলা বা পৌষমেলা অবধি।

যখন আমরা পাঁজি পুঁথি দেখে আমাদের চেনা দেব দেবীর পুজো করি, তখন ভয়ে হোক আর ভক্তিতে হোক আমাদের থাকে একশো ভাগ নিয়ম-নিষ্ঠা , আর চেষ্টা করি সেই হাজার হাজার বছর আগে রচিত বেদে যে মন্ত্র বলা আছে তা যেন যথাবিহিত উচ্চারিত হয়। যে মানুষ টি ভক্তি ভরে পূজায় অংশ নিচ্ছে তার কাছে সে মন্ত্র বোধ্যই হোক আর অবোধ্যই হোক , তার সঙ্গে আমাদের আজকের জীবনের যোগ থাক অথবা নাই থাক।

কিন্তু এই যে টুসু পুজোর গান , এখানে ওরা নির্ভয়ে আজকের জীবনের সুখ দুঃখের কথা শোনান তাদের আরাধ্য দেবীর কাছে।
আমাদের বোধহয় নতুন করে ভাবা দরকার কারা বেশি আধুনিক আমরা না ওরা !

এই মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা জীবনের দর্শন , এই সরলতায় সমৃদ্ধ গান , যা শুনে বার বার মনে হয় –
…সে গানে বিদ্ধ বুক রক্তে অশ্রু ছল ছল
এ যদি আমার দেশ না হয় তো কার দেশ বল ?

আর ভাবতে ভালো লাগে আর কেও না হোক রবীন্দ্রনাথ স্বীকৃতি দিয়েছেন
এই আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির এই ‘নিম্ন- অংশ’টিকে – ‘গাছের শিকড়টা যেমন মাটির সঙ্গে জড়িত এবং তাহার অগ্রভাগ আকাশের দিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছে, তেমনি সর্বত্রই সাহিত্যের নিম্ন-অংশ স্বদেশের মাটির মধ্যেই অনেক পরিমাণে জড়িত হইয়া ঢাকা থাকে; তাহা বিশেষরূপে সংকীর্ণরূপে দেশীয়, স্থানীয়। তাহা কেবল দেশের জনসাধারণেরই উপভোগ্য ও আয়ত্তগম্য, সেখানে বাহিরের লোক প্রবেশের অধিকার পায় না। সাহিত্যের যে অংশ সার্বভৌমিক তাহা এই প্রাদেশিক নিম্নস্তরের থাক্‌’টার উপরে দাঁড়াইয়া আছে। ’

আচ্ছা, এই যে ওদের আরাধ্য দেবী কে ঘিরে, চলমান জীবন থেকে উপকরণ নিয়ে নির্বিশেষ মানুষদের গান বাঁধার উৎসব, আর সেই সুযোগে আরো একটু সবাই মিলে বেঁধে বেঁধে থাকার চেষ্টা, এমন উৎসব আমাদের, মানে যারা তথাকথিত ‘উচ্চ বর্গ’র মানুষ, তাদের নেই কেন ? বোধহয় আমরা সেই অকৃত্রিম সরলতা টুকু হারিয়ে এসেছি কৃত্রিম সভ্যতার রাজপথ দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে।
তথ্য সহায়তায়: অবসর পত্রিকা

টুসু কে, পৌষ মাসের সংক্রান্তির দিন বিদায় দিতে হবে, এক মাস ধরে সে ঘরে ছিল। তার সঙ্গে মনের প্রাণের কথা হয়েছে, তাই তাকে বিদায় বেলার মালা খানি, গান দিয়েই পরিয়ে দেওয়া –

আমার টুসু ধনে
বিদায় দিব কেমনে
মাসাবধি টুসুধন কে
পুজ্যাছি যতনে।
শাঁখা সাড়ি সিঁদুর দিলাম
আলতা দিলাম চরণে।
মনে দুঃখু হয় বড়
ফিরে যেতে ভবনে
দয়া কইরে আসবে আবার
থাকে যেন মনে
ভুইলনা ভুইলনা টুসু
আসবে আমার সনে।

টুসু গান বা কবিতা হয়তো অনেক পরিশীলিত। ছন্দের বাঁধুনি অনেক মজবুত , গান অনেক সুরেলা। তবে ভাবনায় এই টুসুর গানেরই সমগোত্রীয়। সেই একই আবেদন – পুনরাগমনায়চ-স্থাপিতাসী জলে ময়া।

তথ্যসহায়তায়: আনন্দবাজার পত্রিকা

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১০ টি মন্তব্য (লেখকের ৫টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০২-০১-২০২০ | ১৬:৫৫ |

    শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং অনেক শুভেচ্ছা কবি মি.  লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ০২-০১-২০২০ | ১৭:৩৬ |

      আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভ নববর্ষ-2020
      শুভ নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      শুভকামনা রইলো। জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  2. সুমন আহমেদ : ০২-০১-২০২০ | ১৯:২৭ |

    এই মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা জীবনের দর্শন, এই সরলতায় সমৃদ্ধ গান, যা শুনে বার বার মনে হয় –
    … সে গানে বিদ্ধ বুক রক্তে অশ্রু ছল ছল
    এ যদি আমার দেশ না হয় তো কার দেশ বল ?

    চমৎকার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ০৩-০১-২০২০ | ১১:১৩ |

      আজ আঘন সাঁকরাইত,মানভূমের সবথেক্যে বড় পরব টুসুর আনুষ্ঠানিক সূচনা। মাঈ মসি পিসি কাকী খুড়ী দিদি বহিনেরা সব সিনান কইরে মাটির সরায় গুঁড়ি,সিঁদূর,কাজল লেপ্যে, বাঁদুফুল, ধান- দুব্বা, গেঁদাফুল, সরষ্যা ফুল, কাঁইচ বীচ, গোবর ঢেলা রাখ্যে কুলুঙ্গিতে নাহল্যে ফুলপিঁঢ়ার কাছে সের-পাই,ধান, গোবর, কাঁইচ বীচ তুপ্যে 'টুসু পাতা'বেক। গটা পোষমাস জুইড়ে …. টুসুর পূজা হবেক।   আঞ্চলিক লোকভাষায় লেখা হলো। এটাই আমাদের দেশজ ভাষা-সংস্কৃতি।

      সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম কবিবর।
      আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  3. সাজিয়া আফরিন : ০৩-০১-২০২০ | ২১:২৪ |

    পড়লাম। ধন্যবাদ আপনাকে। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ০৮-০১-২০২০ | ১২:০৫ |

      মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি।
      আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকবেন। জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০৩-০১-২০২০ | ২১:৩৪ |

    ভালোবাসায় থাকুন কবি ভাণ্ডারী দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ০৮-০১-২০২০ | ১২:০৫ |

      মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকবেন। জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  5. রিয়া রিয়া : ০৩-০১-২০২০ | ২২:০৮ |

    অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ০৮-০১-২০২০ | ১২:০৬ |

       মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকবেন। জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...