মা লক্ষ্মীর মর্ত্যে আগমন (পৌরানিক নাটক)

মা লক্ষ্মীর মর্ত্যে আগমন
(পৌরাণিক নাটক)

রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
=================

চরিত্রলিপি

শ্রীবিষ্ণু- বৈকুণ্ঠাধিপতি
কমলা- ঐ ভার্যা
নারদ- ঐ ভক্ত ও গায়ক

জনৈক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণের স্ত্রী, রতন কাঠুরিয়া ও কাঠুরিয়ার স্ত্রী, জনৈক বণিক
এবং গ্রামবাসীগণ ইত্যাদি।

প্রথম অংক প্রথম দৃশ্য
[বৈকুণ্ঠলোক]

মঞ্চের চতুর্ভিতে ঘূর্ণায়মান বিভিন্ন রকমের আলোকপাত।
মিউজিকে যাত্রার সূচনার সুর।

[গীতকণ্ঠে নারদের প্রবেশ। হাতে বীণা, অন্য হাতে ঠুংরি কর্তাল]

নারদ: নারায়ণ…… নারায়ণ
কোথা তুমি নারায়ণ?
কোন ঠাঁই প্রভু তব দেখা মিলে
কোথা পাব তব দরশন।
নারায়ণ…… নারায়ণ
[পূর্ব – গীতাংশ]
পাপী তাপী উদ্ধারে,
আসিয়াছ বারে বারে
ওগো প্রভু শ্রী মধুসূদন।
নারায়ণ…… নারায়ণ
কোন ঠাঁই প্রভু তব দেখা মিলে
কোথা পাব তব দরশন।

[ বৈকুণ্ঠাধিপতি শ্রী বিষ্ণুর আবির্ভাব]

নারদ: প্রণমি চরণে প্রভু!

শ্রীবিষ্ণু: বত্স নারদ! কিবা অভিপ্রায় তব?

নারদ: দেবপূজা ত্যজি মর্ত্যবাসী ব্যাভিচারে রত।
ক্ষুধায় কাতর মর্ত্যবাসী,
নাহি পায় ক্ষুধার অন্ন।
পরিত্রাহি রবে করিছে চিত্কার।

শ্রীবিষ্ণু: ধৈর্য ধর নারদ! আছে প্রতিকার
অনাচারে রত সদা মর্ত্যের মানব।
দেব-অর্চনায় নাহি মন। সুরাসক্ত ব্রাহ্মণ
ছাড়ি পূজার্চনা কুকর্মে রত সদা।

নারদ: কি হবে প্রভু?
পেতে পরিত্রাণ ত্রাণতরে কি হবে উপায়?

শ্রীবিষ্ণু: কেন চিন্তা কর অকারণ?
অবশ্য পাবে তারা পরিত্রাণ। যদি করে
কমলার পূজা। মর্ত্যে হবে প্রচলন লক্ষ্মীর পূজা।
কমলা কমলা—

[কমলার আবির্ভাব। হাতে প্রস্ফুটিত শতদল]

কমলা: আদেশ করুন প্রভু। হে প্রাণাধিক।
কহ প্রভু, ডাক কি কারণ?
কি সে বারতা?

নারদ: মা তুমি চঞ্চলা মন ।
সর্বদা ঘোরো ভবন হতে ভবন ।।
তাই মর্ত্যবাসী কষ্ট কত পায় ।
দেখি তাহা কেমনে মম প্রানে সয় ।।
অন্নাভাবে লোকে কত কষ্ট ভোগে ।
মরিতেছে অনাহারে কৃশকায় রোগে ।।

কমলা: হতেছে সংশয়। মর্ত্যবাসী সবে
দেবপূজা কেন নাহি করে।

নারদ: ধর্মাধর্ম লোকে সবে ত্যাগ করি দেয় ।
স্ত্রী কন্যা বিক্রি করে ক্ষুধার জ্বালায় ।।
দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে জীবগন ।
দয়া করে মাগো তুমি করো নিবারন ।।
এই দুর্দশা দেখি প্রাণে নাহি সয় ।
করো নিবারন মাগো হইয়া সদয় ।।

কমলা: বিশ্বমাতা আমি দেবী বিষ্ণুজায়া ।।
যে যেমন করে সে তেমন পায় ।
সে দোষে কর্মফল, করে হায় হায় ।।
মহামায়ার স্বরূপে নারী সত্যবচন ।
মর্ত্যবাসী না মানে এই কথন ।।
সদাচার কুল শীল দিয়া বিসর্জন ।
ঘরের লক্ষ্মীকে করে সদা বর্জন ।।
এমন মনুষ্যজাতি মহাপাপ করে ।
কর্ম দোষে লক্ষ্মী ত্যাজে তাহারে ।।
নারীর পরম গতি স্বামী ভিন্ন কেবা ।
ভুলেও না করে নারী পতি পদসেবা ।।

শ্রীবিষ্ণু: কমলা! অনাচারে রত মর্ত্যবাসী। নাহি পূজে
দেব দেবী। পূজার্চনা ছাড়ি কুকর্মে রত সব
পূজারী ব্রাহ্মণ। তাই-

কমলা: তাই-
শ্রীবিষ্ণু: যেতে হবে কমলা তোমায় মর্ত্যে। তব পূজা
সারা মর্ত্যবাসী করুক ভক্তিভরে। যদি পারে
তুষিতে তোমায়। পাবে পরিত্রাণ নতুবা-

নারদ: সৃষ্টি যাবে রসাতলে। সংহার সংহার প্রভু।
করহ উপায়।

শ্রীবিষ্ণু: নারদ! যাহ তুমি কমলা সহিতে।
মর্ত্যধামে হউক কমলার পূজা।
[প্রস্থান]

নারদ: তথাস্তু। এসো মাতা যাই মর্ত্যভূমে।

কমলা: তাই হোক নারদ। চল ত্বরা করি।
রক্ষিতে প্রভুর আদেশ যাই মর্ত্যলোকে।

[পূর্ব- গীতাংশ]

নারদ: নারায়ণ…… নারায়ণ
কোথা তুমি নারায়ণ?
কোন ঠাঁই প্রভু তব দেখা মিলে
কোথা পাব তব দরশন।
নারায়ণ…… নারায়ণ

[গীত কণ্ঠে কমলা সহ প্রস্থান]

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৮টি) | ৭ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৬-১০-২০১৯ | ১১:৩৫ |

    অসাধারণ আপনার সৃষ্টিকলা। অভিনন্দন কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৬-১০-২০১৯ | ১৪:৩১ |

       

      আপনার শুভাশীর্বাদে দৃশ্য পর্বে নাটকের আংশিক ও  আঙ্গিক প্রকাশ দেওয়ার আশা রাখি।
      সর্বতোভাবে সহযোগিতা কাম্য। সু-পরামর্শ দিলে বাধিত হবো। জয়গুরু!
      আপনার স্নেহধন্য কবি ও নাট্যকার।

      GD Star Rating
      loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৬-১০-২০১৯ | ১৯:৩১ |

    প্রতিদিন আপনার পোস্টের সাথে দেখা হয় সত্য; পোস্টগুলো এতোটাই স্বতন্ত্রের যে কখনও ক্লান্তি আসে না। ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif 

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৭-১০-২০১৯ | ১৪:৫০ |

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন এটা প্রত্যাশা কবি।
      দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় দৃশ্য প্রকাশ দিয়েছি পাঠের অনুরোধ রইল।
      জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  3. সাজিয়া আফরিন : ১৬-১০-২০১৯ | ১৯:৩৭ |

     বৈকুণ্ঠলোকের প্রথম অংক প্রথম দৃশ্য। চলুক ভাণ্ডারী দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif
     

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৭-১০-২০১৯ | ১৪:৫২ |

      চলবে তবে নিয়মিত নয়।
      আজ প্রকাশ দিতে পারার জন্য সময় চাইছি।

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন এটা প্রত্যাশা কবি।
      দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় দৃশ্য প্রকাশ দিয়েছি পাঠের অনুরোধ রইল।
      ​​​​​​​জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  4. সুমন আহমেদ : ১৬-১০-২০১৯ | ১৯:৫৮ |

    নিয়মিত হলে পড়বো কবি। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৭-১০-২০১৯ | ১৪:৫৩ |

      চলবে তবে নিয়মিত নয়।
      পরবর্তী প্রকাশ দেওয়ার জন্য সময় চাইছি।

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন এটা প্রত্যাশা কবি।
      দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় দৃশ্য প্রকাশ দিয়েছি পাঠের অনুরোধ রইল।
      জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  5. রিয়া রিয়া : ১৬-১০-২০১৯ | ২০:২৭ |

    অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৭-১০-২০১৯ | ১৪:৫৪ |

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন এটা প্রত্যাশা কবি।
      দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় দৃশ্য প্রকাশ দিয়েছি পাঠের অনুরোধ রইল।
      জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  6. আবু সাঈদ আহমেদ : ১৬-১০-২০১৯ | ২০:৩৬ |

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৭-১০-২০১৯ | ১৪:৫৪ |

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন এটা প্রত্যাশা কবি।
      দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় দৃশ্য প্রকাশ দিয়েছি পাঠের অনুরোধ রইল।
      জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  7. নিতাই বাবু : ১৬-১০-২০১৯ | ২৩:৩২ |

    লক্ষ্মী পূজার মন্ত্র ; Chants For Goddess Laxmi

    উমা চলে যাবার পর খুব মন খারাপ। কিন্তু মন খারাপের সময় কই, তার ঠিক চার দিন পরই তো মা লক্ষ্মী আসেন আমাদের ঘরে। তাকে নিয়েই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। আপনার বাড়িতেও নিশ্চয়ই হচ্ছে এবার? কিন্তু যারা এবছর প্রথমবার লক্ষ্মীর ঘট পাতছেন, তারা কি পূজার নিয়মবিধি সঠিক ভাবে জানেন? না জেনে থাকলে আজকের লেখা পড়ুন। যে দেবতার পূজা করবেন সেই দেবতার পরিচয় সম্পর্কে আগে জেনে নিতে হয়। লক্ষ্মীকে আমরা টাকা পয়সার দেবী হিসেবে জানি, আসলে লক্ষ্মীর পরিচয় শুধু ঐ টুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। লক্ষ্মী শুধু ধনই দান করেন না, তিনি জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও দান করেন। এক কথায় লক্ষ্মীপূজা করলে, মানুষ সার্বিক ভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হয়।

    স্বামী প্রমেয়ানন্দ বলেছেন, ‘কেবল টাকা-কড়িই ধন নয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকা-কড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া। যাঁরা সাধক তাঁরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মুক্তিধন লাভের জন্য।’ লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন? কেউ কেউ বলেন, এটি বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের পরিবর্তিত রূপ। মা লক্ষ্মী আসলে তাঁর স্বামীর বাহনটিই ব্যবহার করেন। কিন্তু এই রূপ পেঁচার কেন? লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। তাই কথায় বলে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। তাছাড়া ধনসম্পত্তি, সে টাকা-কড়ি হোক বা সাধন ধনই হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়। রাতে সবাই যখন ঘুমায়, তখন পেঁচা জেগে থাকে। পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়। চলুন জেনে নি বেশ কিছু নিয়ম যা আমাদের মা লক্ষী পুজোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। 

    নিয়মাবলী 

    লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যে করে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়। লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসন-কোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে চলে যান। যার যে প্রতিমায় পূজা করার নিয়ম সে সেই নিয়মেই পূজা করবেন। পূজার পূর্বে পূজাস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন। পূজাস্থানে লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকবেন। ঘটের পাশে একটি লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন। পূজার সময় অন্য মনস্ক হবেন না। মনকে লক্ষ্মীতে স্থির রাখবেন।

    মা লক্ষী দেবীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য 

    মা লক্ষ্মীর চারটি হাত। ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ— হিন্দুশাস্ত্রে এই চার হাতের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবেই। যাঁরা মনে করেন মা লক্ষ্মী শুধুমাত্র ধনের দেবী, তাঁরা সম্ভবত দেবীর এই ব্যাখ্যা সম্পর্কে অবহিত নন। সমুদ্রমন্থন থেকে উদ্ভব মা লক্ষ্মীর। কিন্তু সবার আগে জানা প্রয়োজন তিনি কে? কীভাবে আবির্ভূত হলেন তিনি। এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। কখনও বলা হয় তিনি ছিলেন ঋষি ভৃগুর সন্তান এবং সমুদ্রমন্থনে তাঁর পুনর্জন্ম হয়। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, তিনি সমুদ্রদেব বরুণের কন্যা। মা লক্ষ্মীরও আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। একটি পৌরাণিক গল্পে বলা হয়েছে, ব্রহ্মার সাত সন্তান, সপ্তঋষির মধ্যে ৬জনই দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে দৈবজ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন মহর্ষি ভৃগু। মানবশরীরের ক্ষুধা নিবারণ কীভাবে ঘটে, সেই খোঁজে তিনি বেরিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত উত্তরটি পান সমু্দ্রদেব বরুণের কাছে। মহর্ষি ভৃগু তার পরেই উপলব্ধি করেন যে মগজের বা মননের পুষ্টিলাভ যেমন হয় দেবী সরস্বতীর আরাধনায় তেমনই নশ্বর শরীরের পুষ্টির জন্য মা লক্ষ্মীর আবাহন ও পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মা লক্ষ্মীকে শুধুমাত্র ধনদেবী হিসেবে দেখলে তাঁর মহিমার সম্পূর্ণটা দেখা হয় না। তাঁর আশীর্বাদ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, গৃহস্থের সার্বিক কল্যাণের জন্য। আর এই দুয়ের জন্যই প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু সেই অর্থ পাওয়ার পরে মানুষ তার প্রয়োগ কীভাবে করছে, সেদিকে তাঁর কড়া নজর। অপচয় বা অন্যায় প্রয়োগ তিনি সইতে পারেন না, তাই তিনি চঞ্চলা।

    পুজোর আগে কিছু সাধারণ নিয়ম

    সাধারণত কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে সারারাত জেগে থাকার বিধি আছে। এই পূজার সঙ্গে কৃষকদের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই শোনা যায় সারারাত জেগে তারা ওইদিন শস্য পাহাড়া দেয়। সঙ্গে মার কাছে আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া হয়। আবার অনেকে মনে করেন, লক্ষ্মী দেবী চঞ্চলা তাই সারারাত জেগে তাকে পাহাড়া দেওয়া হয়, যাতে তিনি পালিয়ে না যান। এই কথা মা ঠাকুমাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়।লক্ষ্মীদেবী ধনসম্পদ তাকেই দেন যে তার পুরো মর্যাদা দেয়। যে সেই ধনসম্পদ সমাজের কল্যাণে কাজে লাগায়। তাই লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা অত্যন্ত শুদ্ধ মনে করতে হয়। মা লক্ষ্মী অল্পেই খুশী হন। তাই এই পূজায় খুব একটা বাহুল্য নেই। যে যার সাধ্যমত পূজা করে। তবে পূজার আগে পূজার স্থান একদম পরিষ্কার করে নিন। তারপর সুন্দর করে আলপনা দিয়ে দিন। প্রতি ঘরের দরজায়, পূজার স্থানে লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন। সেইদিন আলপনা মুছবেন না। তারপর পূজার জায়গা সুন্দর করে ফুলদিয়ে সাজিয়ে, ধূপ, ধুনো, প্রদীপ জালিয়ে দিতে হয়।

    পুজো শুরু করার নিয়ম 

    সব আয়োজন পূর্ণ এবার পূজা শুরু। শুরুর আগে গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিন নিজের ও সকলের মাথায় ও পূজার স্থানে। তারপর নারায়ণকে মনে মনে স্মরণ করে পূজা শুরু করুন। পূজার স্থানে একটি তামার পাত্রে জল রাখুন। এই জল সূর্য দেবতাকে অর্পণ করার জন্য। তিনি সকল শক্তির উৎস। তাকে ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার। তাই তাকে জল দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তামার পাত্রে জল ঢালতে ঢালতেই সূর্যদেবতাকে স্মরণ করুন। এরপর ঘট স্থাপনের পালা। মাটির একটি গোল ডেলা মত করে নিন, সমান করে নিন। তার ওপর ঘট বসান। এবং ঘটের সামনে একটু ধান ছড়িয়ে দিন। ঘটে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকুন সিঁদুর দিয়ে। ঘটের ওপর আমের পাতা রাখুন। পাতার সংখ্যা যেন বিজোড় হয়। আর পাতার ওপর তেল ও সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন। ঘটে গঙ্গাজল দিয়ে তার ওপর আমের পাতা রাখুন। পাতার ওপর একটা হরিতকী, ফুল, দুব্বো, সব দিয়ে ঘট সাজান।

    মা লক্ষী দেবীর আহবান 

    ঘট স্থাপনের পর মাকে প্রণাম করার পালা। ধ্যান মন্ত্রে মা কে প্রণাম করুন। লক্ষ্মী পাঁচালীর বইয়ে এই মন্ত্র পাবেন। এই বই যেকোনো দশকর্মার দোকানে পেয়ে যাবেন। তবে এই মন্ত্র উচ্চারন একটু শক্ত। তাই যদি সঠিক উচ্চারন করতে না পারেন তাহলে মাকে মনে মনে স্মরণ করে প্রণাম জানাবেন। মাকে প্রণাম করে এবার আহবান জানান। আহবান মন্ত্রও বইয়ে দেওয়া থাকে। না জানলে মাকে মনে মনে আহবান জানান। হাত নমস্কার করে চোখ বন্ধ করে, বলুন এসো মা আমার গৃহে প্রবেশ কর। আমার গৃহে অধিষ্ঠান কর। আমার এই সামান্য আয়োজন, নৈবিদ্য গ্রহণ কর মা। এইভাবে মাকে আহবান জানাবেন। মা আপনার ঘরে প্রবেশ করছেন তাই মায়ের পা ধুয়ে দিন। মায়ের আঁকা পায়ে জলের ছিটা দিন। তারপর ঘটে আতপচাল, দুব্বো, ফুল ও চন্দন দিন। এরপর একে একে দেবীকে সব অর্পণ করুন। ফল,মিষ্টি যা কিছু আয়োজন করেছেন। তারপর ধূপ ধুনো দিন। অর্পণ করার পর এবার পুষ্পাঞ্জলি। হাতে ফুল নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র তিনবার উচ্চারন করুন। তারপর দেবীর বাহনকে ফুল দিন। এবং নারায়নকে স্মরণ করে ঘটে ফুল দিন। ও দেবতা ইন্দ্র ও কুবেরকে স্মরণ করে ঘটে ফুল দিন। তারপর দেবীকে প্রণাম করুন। এরপর সবশেষে লক্ষ্মীদেবীর পাঁচালী পড়ে পূজা শেষ করুন। তবে কয়েকটি কথা মাথায় রাখবেন। লক্ষ্মীদেবীর পূজায় কাঁসর ঘণ্টা এসব বাজাবেন না। এগুলিতে দেবী অসন্তুষ্ট হন। শুধু শাঁখ বাজান আর দেবীর ঘটে তুলসীপাতা দেবেন না। আর দেবেন না লোহার বাসন। ব্যাস এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে শুদ্ধ মনে শুরু করে দিন পূজা। হোকনা আয়োজন সামান্য শুধু মন শুদ্ধ থাকলেই দেবী আসবেন ঘরে। 

    মা লক্ষী দেবীর প্রচলিত কিছু আচার অনুষ্ঠানের ধরণ ও পন্থা 

    প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল।

    • দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয় বাসস্থানে।
    • বলা হয় সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসি বৃক্ষে আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী দেবী তুলসি হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসি বৃক্ষ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী।
    • ধারাবাহিকভাবে ১২ দিন ধরে সম্পূর্ণ ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।
    • একটি বাঁশের বাঁশিকে সিল্কের কাপড়ে মুড়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রাখলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন কারণ বাঁশি হল বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। তাই মা লক্ষ্মীরও অতি প্রিয়।
    • শুধুমাত্র পুজোর দিনে নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা হয় তবে ভাল। প্রতিদিন না পারলে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এবং মা লক্ষ্মীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই।
    • যিনি প্রতি শুক্রবার পরমান্ন বা মিষ্ট অন্ন দিয়ে গোসেবা করেন তাঁর প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী।
    • প্রতি শুক্রবার পদ্মমূল থেকে তৈরি নয়টি সলতে দিয়ে একটি মাটির প্রদীপ মা লক্ষ্মীর পট বা প্রতিমার সামনে জ্বাললে তা গৃহে প্রাচুর্যের সমাহার ঘটায়।  
    • এছাড়া টানা ৩০ দিন ধরে মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে নিষ্ঠাভরে শ্রী সুক্ত পাঠ করলে বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী। শ্রী সুক্ত হল ১৫টি ভার্সের একটি সম্মেলন।
    • প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে দু’টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে তা মঙ্গল। এর সঙ্গে পদ্ম, নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে প্রসন্ন হন দেবী।
    • ঠাকুরঘরে বা ঠাকুরের সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ গৃহের কল্যাণের জন্য।

    লক্ষী পুজোর যা কিছু করা নিষিদ্ধ 

    লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যে করে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়।

    শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর স্তোত্র

    লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।
    স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।
    বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।
    ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।

    শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র

    ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
    পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
    গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষি তাম্।
    রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

    শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর স্তোত্রম্

    ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
    যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
    ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
    পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।

    দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
    স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।

    বিশেষ দ্রষ্টব্য:- অবশ্যই তিন বার পাঠ করতে হবে

    শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

    নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
    যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।

    শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র

    ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
    সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী..

    GD Star Rating
    loading...
    • লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী : ১৭-১০-২০১৯ | ১৪:৫৬ |

      সুবিশাল আয়োজন। পাঠে মুগ্ধ ও অভিভূত হলাম।
      সাথে থাকবেন এটা প্রত্যাশা কবি।
      দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় দৃশ্য প্রকাশ দিয়েছি পাঠের অনুরোধ রইল।
      জয়গুরু!

      GD Star Rating
      loading...
  8. নিতাই বাবু : ১৬-১০-২০১৯ | ২৩:৪৩ |

    অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল শ্রদ্ধের কবি দাদা।  

    GD Star Rating
    loading...