যা দেবী সর্বভূতেষু… মহিষাসুরমর্দ্দিনী
মহালয়া স্তোত্রম্ – চতুর্থ পর্ব।
সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।
সতী যৌবনে পদার্পণ করলে, মহাদেবের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। কিন্তু মহাদেব দক্ষকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন না করায় ইনি ক্রমে ক্রমে মহাদেবের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেন। বিবাহের এক বৎসর পর, দক্ষ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞে দক্ষ মহাদেব ও সতী কাউকেই নিমন্ত্রণ করলেন না। সতী নারদের মুখে এই যজ্ঞের কথা জানতে পেরে অযাচিতভাবে যজ্ঞে যাবার উদ্যোগ নেন। মহাদেব এই যাত্রায় সতীকে বাধা দেন। এতে সতী ক্রুদ্ধ হয়ে– তাঁর মহামায়ার দশটি রূপ প্রদর্শন করে মহাদেবকে বিভ্রান্ত করেন। এর দশটি রূপ ছিল– কালী, তারা, রাজ-রাজেশ্বরী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামূখী, মাতঙ্গী ও মহালক্ষ্মী। মহাদেব শেষ পর্যন্ত সতীকে দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে যাবার অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু যজ্ঞস্থলে দক্ষ মহাদেবের নিন্দা করলে– সতী পতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। সতীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ক্রুদ্ধ মহাদেব নিজের জটা ছিন্ন করলে, বীরভদ্র জন্মলাভ করেন। পরে বীরভদ্র দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করে মুণ্ডুচ্ছেদ করেন।
এরপর মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন। এর ফলে সৃষ্টি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হলে, বিষ্ণু তাঁর চক্র দিয়ে সতীদেহকে একান্নভাগে বিভক্ত করে দেন। এই ৫১টি খণ্ড ভারতের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়। ফলে পতিত প্রতিটি খণ্ড থেকে এক একটি মহাপীঠ উৎপন্ন হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিটি মহাপীঠকে পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচনা করেন।
কালিকা পুরাণের মতে– ব্রহ্মা, বিষ্ণু শনি যোগবলে সতীর দেহে ঢুকে এই দেহকে বিভাজিত করেন। এই বিভাজিত অংশগুলির মধ্যে– দেবীকূটে পদযুগল, ঊড্ডীয়ানে উরুযুগল, কামপর্বতে যোনিমণ্ডল, এর পূর্বভাগে নাভিমণ্ডল, জলন্ধরে সুবর্ণহার শোভিত স্তনযুগল, পূর্ণগিরিতে স্কন্ধ ও গ্রীবা এবং কামরূপের শেষভাগে মস্তক। সতীর অন্যান্য দেহাংশ খণ্ড খণ্ড করে দেবতারা আকাশগঙ্গায় নিয়ে যান। [৪০-৪৬। অষ্টাদশোহধ্যায়, কালিকাপুরাণ]
পার্বতী রূপ : দুর্গার একপর্ণিকা, অপর্ণা, উমা, গৌরী নামপ্রাপ্তি
দেহত্যাগের পর সতী মহাদেবের পত্নী হওয়ার কামনায় হিমালয়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এরপর যথাসময়ে ইনি হিমালয়ের ঔরসে মেনকার গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন। হিমালয় পর্বতের কন্যা বলে ইনি পার্বতী নামে অভিহিত হন। অচলের (পর্বতের) কন্যা বলেই তাঁর অপর নাম অচলকন্যা। একই অর্থে এঁর অপরাপর নাম– অগত্মাজা, অচলনন্দিনী, অদ্রিজা, অদ্রিতনয়া, অদ্রিনন্দিনী।
পূর্বজন্মে ইনি দক্ষের কন্যা ছিলেন। তখন তাঁর নাম ছিল সতী এবং তাঁর স্বামী ছিলেন শিব বা মহাদেব। এই জন্মে ইনি মহাদেবকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার জন্য তপস্যা শুরু করেন। তপস্যার জন্য এই সময় মহাদেব হিমালয়ে এলে, পার্বতী মহাদেবের পূজা আরম্ভ করেন।মহাদেব এই সময় ধ্যানে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, পার্বতীর এই পূজাকে উপলদ্ধি করতে পারলেন না। এদিকে তারকাসুর দেবতা ও মানবকুলের উপর অত্যাচার শুরু করলে, সকলে মিলে এর প্রতিকারের জন্য ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মা তাদের জানলেন যে, একমাত্র মহাদেবের পুত্র এই অসুরকে হত্যা করতে পারবেন। সে কারণে, মহাদেবের সাথে পার্বতীর বিবাহ হওয়া প্রয়োজন। ব্রহ্মার ভবিষ্যৎ-বাণী অনুসারে দেবতারা মহাদেবের ধ্যানভঙ্গের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন এবং প্রেমের দেবতা মদনদেবকে মহাদেবের কাছে পাঠালেন। কামদেব কামবাণ নিক্ষেপ করে মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ করলে, মহাদেবের তৃতীয় নয়নের তেজ দ্বারা ইনি ভষ্মীভূত হন। এরপর মহাদেব আরাধনার জন্য অনত্র্য চলে যান। এরপর গভীর দুঃখে পার্বতী কাতর হয়ে পড়লে নারদ এসে পার্বতীকে জানালেন যে,তপস্যার দ্বারা মহাদেবের পূজা করলেই ইনি তাঁকে লাভ করবেন।
এরপর মহাদেবকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার জন্য পার্বতী কঠোর তপস্যা শুরু করেন। গ্রীষ্মের কঠোর উত্তাপ ও শীতকালের প্রচণ্ড শীতকে বরণ করে আত্মপীড়নের মধ্যে এই সাধনা অব্যাহত রাখেন। তপস্যাকালে ইনি খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেন। একসময় তিনি শুধুমাত্র গাছের পাতা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতে থাকেন। এই কারণে, পার্বতী একপর্ণিকা নামে অভিহিত হন। এরপরও পার্বতী মহাদেবকে স্বামী হিসাবে পেলেন না। এরপর ইনি গলিতপত্র পর্যন্ত গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত করলেন। তখন ইনি অপর্ণা নামে পরিচিতি লাভ করেন।এই কঠোর তপস্যা দেখে তাঁর মা মেনকা বলেছিলেন- উ (হে পার্বতী) মা (না, তপস্যা কোরো না)। সেই থেকে ইনি উমা নামে পরিচিত হন।
পরে তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে পার্বতীর কাছে উপস্থিত হয়ে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। পার্বতী বৃদ্ধকে স্নান করে এসে আহার গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন। বৃদ্ধবেশী মহাদেব গঙ্গায় স্নান করতে গেলে একটি মকর (পৌরাণিক মৎস্য বা কুমির) আক্রমণ করে। বৃদ্ধ উমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে– পার্বতী বৃদ্ধকে রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হন। এই সময় মহাদেব তাঁর স্বমূর্তি ধারণ করে পার্বতীর হাত ধরেন। পার্বতী বিষয়টি তাঁর পিতা হিমালয়কে জানালে– হিমালয় পার্বতীকে মহাদেবের হাতে সমর্পণ করেন। তপস্যার দ্বারা ইনি মহাদেবকে প্রসন্ন করেন বলে– এঁর অপর নাম গৌরী।
বিবাহের পর এঁরা হিমালয়ের কৈলাশ, মন্দর প্রভৃতি পর্বতে আমোদ-প্রমোদে রত ছিলেন। একবার অন্ধক নামক অসুর এখানে উপস্থিত হলে– মহাদেব শূলের আঘাতে অন্ধককে হত্যা করেন। মহাদেবের তৃতীয় নয়নের উৎপত্তি নিয়ে একটি গল্প আছে। পার্বতী একবার পরিহাস ছলে শিবের দুই চোখ হাত দিয়ে আবৃত করলে– সমগ্র চরাচর অন্ধকার হয়ে যায়। জগতকে আলোকিত করার জন্য তাঁর তৃতীয় নয়নের উদ্ভব ঘটে। এই তৃতীয় নয়নের জ্যোতিতে হিমালয় ধ্বংস হয়ে গেলে– পার্বতীর অনুরোধে তা আবার পুনস্থাপিত হয়। তবে এটি প্রক্ষিপ্ত কাহিনী বলেই মনে হয়। কারণ– পার্বতীর সাথে শিবের বিবাহের পূর্বেই তাঁর তৃতীয় নয়নের তেজে কামদেব ভস্মীভূত হন।
শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
সমাপ্তি পর্ব- পূর্ব প্রকাশিত পূজোর আগমনী কবিতা
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আজি এ শারদ প্রাতে প্রভাত হাওয়া মাতে
পূবের আকাশ হয় লাল,
গগনে উঠেছে রবি হেরি অপরূপ ছবি
আসে নব সোনালী সকাল।
শরতের রং লাগে হৃদয়ে পুলক জাগে
কেঁপে উঠে আমলকী বন,
প্রভাতে রবির কর ছড়ায় ভুবন পর
মেতে উঠে দেহ আর মন ।
গাঁয়ের পথের বাঁকে সবুজ তরুর শাখে
পাখি সব সুরে গীত গায়,
অজয়ের নদীচরে সোনালী রোদ্দুর ঝরে
নৌকায় মাঝিরা বৈঠা বায়।
প্রভাত সময় কালে শিউলির ডালে ডালে
শিউলি ফুটেছে রাশি রাশি,
শরতের নীলাকাশে শঙ্খচিল যায় ভেসে
উড়ে যায় সাদা মেঘ ভাসি।
ঢাকীরা ঢাক বাজায় আনন্দেতে নাচে গায়
শরতের সোনা রোদ ঝরে,
শরতের আগমনে ফুল ফোটে বনে বনে
আনন্দে হৃদয় ওঠে ভরে।
পূজো পূজো গন্ধ ভাসে মার পাশে উমা আসে
ঘোটকে মায়ের আগমন।
শুধু পাঁচ দিন তরে মা আসিছে ধরা পরে
পুলকেতে ভরে ওঠে মন।
loading...
loading...
আজি এ শারদ প্রাতে প্রভাত হাওয়া মাতে
পূবের আকাশ হয় লাল,
গগনে উঠেছে রবি হেরি অপরূপ ছবি
আসে নব সোনালী সকাল।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন।
শারদ শুভেচ্ছা রইল। জয়গুরু!
loading...
আলোচ্য বিষয়ের অনেক কিছু জানা ছিলো না। প্রকাশ করে ভালো করেছেন। শুভেচ্ছা নিন কবি দাদা।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন।
শারদ শুভেচ্ছা রইল কবি বোন। জয়গুরু!
loading...
সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। আমি ভীষণ আগ্রহ নিয়ে পড়ে চলেছি।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন।
শারদ শুভেচ্ছা রইল কবি। জয়গুরু!
loading...
কবিতার পাশাপাশি মায়ের আলোচনা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। প্রণাম দাদা।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন।
শারদ শুভেচ্ছা রইল কবিবোন। জয়গুরু!
loading...
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন।
শারদ শুভেচ্ছা রইল কবিবর। জয়গুরু!
loading...
মহালয়া স্তোত্রম্। মুগ্ধপাঠ।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকুন।
শারদ শুভেচ্ছা রইল কবিবোন। জয়গুরু!
loading...
মায়ের আলোচনা খুবই ভালো হয়েছে শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। শারদীয় শুভেচ্ছা রইল।
loading...