যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৬
বিশ শতকের প্রথম থেকেই যাত্রাগান বা যাত্রাপালা পুরুলিয়ায় তার পাকা আসন তৈরি করে নেয়। এক কালে প্রায় প্রতিটি বর্ধিষ্ণু গ্রামে ও শহরের পাড়ায়-পাড়ায় উৎসাহী যাত্রামোদীদের যাত্রাদল (পার্টি) ছিল, ছেলেরা গোঁফ কামিয়ে মেয়ের অভিনয় করত। পৌরাণিক নাটক করার জন্য তাদের ঝলমলে পোশাক ছিল (বলা হত কাটা পোশাক— কেন এমন নামকরণ জানা যায়নি), ছিল মাথায় পরার নানা আকারের ছেলেদের ও মেয়েদের চুল, ছিল মুকুট ও তরবারি। মেক-আপ নিজেরাই বা গ্রামের কেউ করতেন, গোঁফ আঁকা হত ভুষো কালি দিয়ে। কোনও কোনও গ্রামে আবার পালায় সুর করার জন্য সারা বছর সবেতন সুরকার থাকতেন।
এক সময় বছরে নানা উৎসবে (পরবে) যাত্রাগান অনুষ্ঠিত হত। কোনও উঁচু মঞ্চ ছিল না। শ্রোতা-অভিনেতারা একই স্তরে থাকতেন। আলো বলতে, হ্যাজ়াকের আলো। অভিনয় চলাকালীন শ্রোতাদের বিরক্তি উৎপাদন করে সেগুলিতে পাম্প দেওয়া হত। তবুও শ্রোতারা সেই যাত্রা প্রাণভরে উপভোগ করতেন। অশেষ তাঁদের ধৈর্য, যাত্রার প্রতি অসীম তাঁদের ভালবাসা। শোনা যায় ‘মান্ধাতা’ নামে এক যাত্রাপালা সারারাত ধরে অভিনীত হয়ে সকালের সূর্যোদয়ে শেষ হত।
যাত্রাপালার প্রস্তুতিপর্বটাও ছিল অদ্ভুত। মহড়া শুরু হত রাতের খাওয়ার পরে। চলত রাত ২টো পর্যন্ত। সকাল থেকে যে-যার নিজের কাজে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা অবশ্য পাল্টে গিয়েছে। প্রথম দিকে রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কথা নিয়ে রচিত হত যাত্রাপালাগুলি। অর্থাৎ, পৌরাণিক যাত্রাপালা অভিনীত হত। স্থানীয় ভাবে পালাগান লিখিত হত বলে জানা নেই। হয়ে থাকলেও তা খুব সীমিত পরিসরে ও একান্ত নিজেদের প্রয়োজনে। এ রকম কোন পাণ্ডুলিপির সন্ধান এখনও পর্যন্ত অমিল। কলকাতা থেকে প্রকাশিত যাত্রাপালা দিয়েই কাজ চলত।
সেই অঙ্গনটিতে একচেটিয়া রাজত্ব করতেন শ্রীকৃষ্ণ, কংস, রাম, রাবণ ও কৌরব-পাণ্ডবদের দল-সহ হনুমান। শেষোক্ত জনের ‘হুপহাপ’ শব্দে আসর মাতানোর কথা মুখেমুখে প্রচারিত হত। এই অবস্থাটা চালু ছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
পঞ্চাশের দশকে এল ‘সোনাই দিঘি’ ও ‘হিটলার’। বলা যায়, যাত্রাপালায় এক রকম বিপ্লব নিয়ে এল নট্ট কোম্পানির ‘সোনাই দিঘি’ ও তরুণ অপেরার ‘হিটলার’। যাত্রাপালার ভোল পাল্টে দিল ওই দু’টি প্রযোজনা। পুরুলিয়ার যাত্রাদলগুলিও পিছিয়ে থাকল না। ইতিহাসভিত্তিক যাত্রাপালা শুরু হল। যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে ও সমসময়কে বুঝে নিতে এক সময় সামাজিক যাত্রাপালা আসন পেতে বসল। বহিরাগত মহিলা শিল্পী নিয়ে আসা হল, উঁচু পাটাতনের মঞ্চ তৈরি হল, দু’দিক দিয়ে মঞ্চে আসা-যাওয়ার দু’টি ঢালু পথ তৈরি হল, ‘স্পটলাইট’, ‘স্ট্রোব লাইট’-এর ব্যবহার শুরু হল। কিন্তু এতে আয়ের থেকে ব্যয় বেড়ে গেল।
বহিরঙ্গে পরিবর্তন আনার চড়া মাসুল দলগুলিকে গুণতে হল। অধিকাংশ গ্রামের নিজস্ব গৌরবসূর্য অস্তমিত হল। পেশাদার দলের যাত্রাও আর পুরুলিয়াতে তেমন ভাবে আয়োজিত হয় না।
এখন কিছু জায়গায় জেলার যাত্রাদলগুলি অনেক লড়াই করে টিঁকে রয়েছে। বছরে বড়জোর এক বার তারা যাত্রা করতে পারে। দুর্গাপুজোর সময় বা তার এদিক-ওদিকে। কিন্তু তাতেও নিজেদের যাত্রাপ্রীতিকে টিকিয়ে রাখতে তাদের যে কী হারে অনুদানের নামে চাঁদা দিতে হয়, পুজোর কেনাকাটা কম করতে হয়, পুরনো জুতো তাপ্পি মেরে আর একটা বছর পার করে দিতে হয়, তা আমরা জানতে পারি না।
তবে আশার কথা এই, তাদের এই সুবিন্যস্ত প্রযোজনাগুলি শ্রোতাঠাসা আঙিনায় অভিনীত হয় এই যুগের সর্বব্যাপী দূরদর্শন এবং ইন্টারনেট, ‘ইউটিউব’-এর প্রচণ্ড অভিঘাত সত্ত্বেও। পুরুলিয়ার নিজস্ব যাত্রা এখনও বেঁচে রয়েছে।
আশার কথা, জেলার সাঁওতাল সম্প্রদায় তাঁদের নিজের ভাষায় চিরাচরিত আঙ্গিকে যাত্রাপালা করা শুরু করেছেন। নিজেদের সম্প্রদায়ে এঁদের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। হয়তো এদের হাতেই হয়ত যাত্রার ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৬
অচল পয়সা
সামাজিক যাত্রাপালা
অচল পয়সার যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
অচল পয়সার কেয়া (বেলা সরকার)ও দিব্যেন্দু (দেবগোপাল ব্যানার্জী)কে যাত্রা পালায় নাটকীয় ভঙ্গিমায় দেখি –
(অচল পয়সা যাত্রাপালার সংলাপ)
দিব্যেন্দু : এসো কেয়া, ধর আমার হাত।
কেয়া : উপায় নেই ডাক্তার। তুমি আলোর হাত বাড়ালে কি হবে আমি যে এখন কালো রাত।
দিব্যেন্দু : রাত্রি শেষে আমি সূর্য এনে দেব।
কেয়া : আকাশ যে অন্ধকারে ঢাকা।
দিব্যেন্দু (দেবগোপাল) যাবার সময় বলে যায় – সে সারাজীবন কেয়ার পথ চেয়ে অপেক্ষা করে থাকবে।
কেয়া ডুকরে কেঁদে ওঠেন, বলেন দিব্যেন্দুকে তিনি ভালোবাসতেন। নরপিশাচ বাবা তাঁকে জের করে চাঁদু মাস্টারের ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায় – আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয়না কেয়ার ভেতর মহলের দ্বন্দ্ব। তাঁর বেদনা-আর্তি-আর্তধিক্কারপ্রকাশে তখন আর কেয়া একা আক্রান্ত হয় না সমাজের এরকম অনেক কেয়ারা এর অংশীদার হয়ে ওঠে। বেলার উদ্ধৃতি দিয়ে বলছি – ‘অচল পয়সা-র কেয়ার সাফল্যই আমাকে যাত্রাজগতে বেলা সরকার গড়ে তুলেছে।’
তাঁর এই প্রতিষ্ঠার মূলে মাখনলাল নট্ট, পালাকার – নির্দেশক ভৈরব গাঙ্গুলী, সত্যপ্রকাশ দত্তের ভূমিকা অনেকখানি জুড়ে আছে। অভিনয়ের সুবাদে তরুন রায় (ধনঞ্জয় বৈরাগী), মহেন্দ্র গুপ্ত, অরুন দাশগুপ্ত, শেখর গাঙ্গুলীকে নির্দেশক ও অভিনেতা হিসেবে যেমন পেয়েছেন তেমন উপলব্ধি করেছেন এঁরা কী অনায়াসে একজন অভিনয় শিল্পীর ওপর সঠিক গুরুত্ব আরোপ করেন। মহড়া চলাকালীন এঁদের কাজের নানা অভিজ্ঞতার সঞ্চয় আর নিরলস চর্চা তাঁকে সমসাময়িক অনেক অভিনেত্রীদের পেছনে ফেলে সাফল্যের শীর্ষে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
প্রায় এক দশক কাজ করার পর নট্ট কোম্পানি ছেড়ে ১৯৮৪ তে বেলা সরকার ও দেবগোপাল ব্যানার্জী জনতা অপেরায় যুক্ত হন। এখানে অভিনীত পালাগুলি ‘এক পয়সার মা’ চরিত্র – কাজল, (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য [বড়], ‘কান্না আমার জীবন সাথী’ অভিনয়ে ও নির্দেশনায় – বেলা সরকার, (মনোতোষ চক্রবর্তী, সুরকার – স্বপন পাকাড়াশী) ১৯৭৫ ‘সম্রাট নন্দিনী (পালাকার/নির্দেশক – সমীর মজুমদার), ১৯৮৬ ‘মেয়ে নয় মনসা (পালাকার /নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য[বড়]), ‘রাজবাড়ীর রাধা’ চরিত্র – রাধা (পালাকার/নির্দেশক – অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য[বড়])। আবার দল পালটে এলেন অগ্রগামীতে।
২৭ মে ১৯৭৮ তারিখে আজকাল -এ প্রকাশ – “চলচ্চিত্রের মতো যাত্রার জগতে স্মরণীয় জুটি খুব কম। তবু এর মধ্যেই যে কটি জুটি দর্শকের হৃদয়াসনে স্থায়ী আসন পেতে নিয়েছে তাদের মধ্যে বেলা সরকার – দেবগোপাল জুটি উল্লেখযোগ্য। প্রায় দশ বছর ধরে বেলা সরকার – দেবগোপাল জুটির অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তা হাজার হাজার দর্শককে টেনে এনেছে পালা দেখতে। যে কোন পালায় যে কোন ধরণের অভিনয়ে এই জুটি তুলনাহীন – তা সে রোমান্টিক অভিনয়ই হোক আর ঐতিহাসিক বা সামাজিক চরিত্রই হোক। এই জুটির উপস্থিতি মানেই জনপ্রিয়তা, লক্ষ লক্ষ মানুষের পদধূলিতে জমজমাটি পালার আসর।… উজ্জ্বল এই দুই অভিনেতা অভিনেত্রী জুটি এবার দল বদল করে জনতা অপেরা থেকে অগ্রগামী দলে এসেছেন।” এখানে ১৯৮৭-‘৮৮ -তে ‘দু টুকরো মা’ চরিত্র – শান্তি, (পালাকার – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য [বড় ]), ‘পূজীরিণী প্রমিলা’ -র নাম ভূমিকায়, (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী,সুরকার – রামকুমার চট্টোপাধ্যায়) এবং ১৯৮৯ -তে ‘ঘরে ঘরে দুর্গা’ চরিত্র – শ্যামা, (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য [বড় ]), ঘরেঘরে দুর্গায়(শ্যামা) -য় বেলা সরকারের অসাধারণ অভিনয় নতুন মাত্রা তো দিয়েইছে এবং টিমওয়ার্ক প্রশংসার দাবি রাখে। ‘দু টুকরো মা’ পালায় পুরুষশাসিত সমাজে নারীর বঞ্চনার কথাই উঠে এসেছে। পালার নায়িকা শান্তি (বেলা সরকার) এ কাহিনীর প্রাণপ্রতিমা। অভিনয়ে নাচে গানে অভিব্যক্তিতে একাই বেলা সরকার চরিত্রকে অনবদ্য ভঙ্গিমায় মঞ্চায়িত করেছেন।
১৯৯০ -তে দল বদল করে নিউ অপ্সরা অপেরাতে বেলা একাই এলেন। এই দলে চিত্রাভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী অভিনয় করার জন্য প্রথম যোগ দেন। তাই শুরু থেকে নিউ অপ্সরা বিখ্যাত বলা যায়। এই দলে ‘স্বামী হত্যার দায়ে’ অসহায়া গৃহবধূ হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – রামকুমার চট্টোপাধ্যায়)। ‘পাপিনী প্রিয়তমা’ -র পালাকার – সত্যপ্রকাশ দত্ত, দুটি পাবার মুখ্য ভূমিকায় – বেলা সরকার। ১৯৯১ -তে এলেন লোকশিল্পতে। এখানে ‘বাবুরা সিন্দুরের দাম অনেক’ চরিত্র – গোলাপ সুন্দরী (পালাকার – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, নির্দেশক – অমিতাভ ঘোষ, সুরকার – জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়)। পালার বিষয়, এক সময়ের পেশাদার মঞ্চ কাঁপানো গোলাপ সুন্দরী নামে এক বিখ্যাত অভিনেত্রীর করুন পরিণতি এবং তার জন্য যে বা যারা দায়ী তাদের মুখোশ খুলে দেওয়ার কাহিনী। এই অভিনেত্রীর ভূমিকা তাঁর স্মরণীয় অভিনয় ভোলবার নয়। অন্য পালাটি ‘ওগো মাটির ঘরে মা আসছে’ (পালাকার – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, নির্দেশক – অমিতাভ ঘোষ, সুরকার – চন্দন ধর), ১৯৯২ ‘সে দুলে পাড়ার দুর্গা বটে’ মুখ্য চরিত্রে বেলা, (পালাকার/নির্দেশক – শৈলেশ গুহ নিয়োগী, সুরকার – রঘুনাথ দাস)। ১৯৯৩- ‘শাঁখা দিয়ে কিনলাম’ চরিত্র – দুর্গা, ও ‘দেবী সুলতানা’র মুখ্য চরিত্রে, (পালাকার/নির্দেশক – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, সুরকার – পঞ্চানন মিত্র)। ১৯৪৪ – যোগ দিলেন দি নিউ অগ্রগামীতে। এখানে ‘আজ প্রতিমার চক্ষুদান’ পালায় অভিনয় করেন(পালাকার/নির্দেশক – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, সুরকার – পঞ্চানন মিত্র)। বেলা ‘আজ প্রতিমার চক্ষুদান’ পালায় অভিনয় করেন এক দুঃখী মেয়ের চরিত্রে। মেয়েটি এক কথায় জীবনে কিছুই পেল না। স্বামীর ভালোবাসা, স্বামীর সঙ্গে ঘর করা থেকে বঞ্চিত যে নারী, সে মৃত্যুর আগে নিজের চোখ জোড়া স্বামীকে দান করার মহান অঙ্গীকার করে যায়। প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর বিস্ময় সৃষ্টিকারী অভিনয় চমৎকৃত দরে দর্শকদের।
১৯৮৫ -তে মুক্তধারা-র পালা ‘জবাব চাই জজ সাহেব’, (পালাকার/নির্দেশক – লমীর মজুমদার, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য); ১৯৯৬ তে শিল্পী বন্দনায় ‘লক্ষীর আজ অগ্নিপরীক্ষা’ (পালাকার/নির্দেশক – সুনীল চৌধুরী), ১৯৯৭ -এ আনন্দ বাসরে ‘বাংলার বাঘিনী’ এই পালার বিষয়বস্তু হল অত্যাচারিতা এক গ্রাম্যবধূর অন্যায়ের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কাহিনি (পালাকার – মনোতোষ চক্রবর্তী, নির্দেশক – সলিল চট্টোপাধ্যায়, সুরকার – স্বপন পাকড়াশী)। এরপর নবরঞ্জন অপেরায় ‘সিংহগড়ের রাজবাবু’র প্রদান ভূমিকায় বেলা, (সম্পাদনা ও নির্দেশনা – তপনকুমার) রাজদূত অপেরার সেলাই করা ভারত মা ও লুঠেরা সুলতানা (পালাকার – রঞ্জিত চ্যাটার্জি, সুরকার – রঞ্জন ভট্টাচার্য) পালাদুটির অভিনয় ও নির্দেশনা – বেলা সরকার।
২০০৭ -এ দি চন্দ্রলোক অপেরায় – আমি কোলকাতার রসগোল্লা, ২০০৮-এ আর্য অপেরার – মা নেই যার কেউ নেই তার প্রভৃতি পালায় সঙ্গে পেয়েছেন দেবগোপাল ব্যানার্জী, অসীমকুমার, তরুনকুমার(যাত্রা), দীপেন চ্যাটার্জি, উজ্জ্বল সেনগুপ্ত, চাঁদু চক্রবর্তী, অনাদি চক্রবর্তী, বীণা দাশগুপ্ত, ললিতা চৌধুরী অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। এইসব পালায় তাঁর নানা বৈচিত্রময় চরিত্রের সাবলীল অহিনয় এবং বলিষ্ঠ প্রকাশভঙ্গি দর্শক মহলে বিশেষভাবে আজও সমাদৃত। দৃশ্যে নাট্যঘটনার আনন্দে তাঁকে বিশিষ্ট করে রাখবে আমাদের যাত্রাভিনয়ের ইতিহাস। ওর মতো লড়াকু, হার না মানা অভিনেত্রী খুব কমই দেখা যায়। যাত্রাভিনয়ে অন্যমাত্রা যোগ করলেন। বলা যায় তাঁর গোটা জীবন এক বৈচিত্রের সম্ভার, গবেষণা নেই, যোগ্য মূল্যায়ন নেই, নেই প্রামাণ্য তথ্য ভান্ডার।
যাত্রার পাশাপাশি অন্যান্য মাধ্যমেও তিনি অভিনয় করেছেন। অমিতাভ দাশগুপ্তের অপরাজিতা ছাড়াও যদুবংশ ও পুত্রবধূ ছবিতে কাজ করেছেন। কলকাতা দূরদর্শন সম্প্রচারিত প্রথম নাটক ‘পাখির চোখ’ -এ অভিনয় করেন। রয়েছে ‘জয়তী ও পনপ্রথা’ বেতার নাটকের অভিনয়।
সরকারি বেসরকারি শতাধিক পুরস্কারে সম্মানিত। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এবং ভারতের অন্যান্য প্রদেশে অভিনয় করেছেন। দিল্লীর আইফ্লেক্স হলে ১৮টি ভাষার নাট্য উৎসবে ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। তাঁর সমৃদ্ধ কন্ঠের অভিনয়শৈলী ধরা আছে বেশ কিছু যাত্রাপালার লং প্লেয়িং রেকর্ডে ক্যাসেটে। যাত্রার অভিনয় করবেন কখনও ভাবেবনি। ভয়ও পেতেন, কারণ যাত্রার আসরে দশ বারো হাজার দর্শকের সামনে অভিনয়, নাচ, গান, আসরের শেষ দর্শকটিকে শোনাতে ও দেখাতে হবে – এ এক ভীষণ কঠিন ব্যাপার যাত্রার শিল্পীদের ক্ষেত্রে। আসলে তিনি টোটালই থিয়েটারের মানুষ। তাই যাত্রার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা – এই সংকোচ, ভয় তাঁকে উৎকন্ঠার মধ্যে ফেলেছিল। কারণ থিয়েটার আর যাত্রা আলাদা মাধ্যম। পরে যাত্রায় নিজেকে মানিয়ে নিতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। বেলা দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন অকৃপণভাবে। নিজস্ব অভিনয় স্টাইলে হযে উঠলেন পালা অভিনেত্রী বেলা সরকার।
loading...
loading...
পড়লাম মি. ভাণ্ডারী। আপনার পোস্ট সংশ্লিষ্টদের জ্ঞানার্জনে কাজে আসুক সেটাই কাম্য। ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
দর্শকদের এখন ভীষণ অভাব। ক্লাবগুলি থেকেও আর সেরকম ডাক পায় না। টিকিট কেটে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ত। এখন বুকিং সংস্থার মালিকরা এই কারবার গুটিয়ে ফেলতে চাইছেন। চটকদারি বিজ্ঞাপন দিয়েও দর্শক টানা যাচ্ছে না। নতুন প্রজন্ম আধুনিক গান, নাচের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। বুকিং কেন্দ্রের মালিক অবিনাশ সাই বলেন, বছরের মধ্যে দু-তিনটে যাত্রার বুকিং হচ্ছে না। সংসারে অভাব চলে। কেউ দেখতে চায় না অভিনয়। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে যাত্রাশিল্পের জৌলুস। সিনেমায় ভিড় বেশি।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ কবি।
loading...
পুজোর পরেই খোলা মাঠে টিন ঘিরে যাত্রার মঞ্চ তৈরি হত। বিকেল থেকে রাস্তায় লোকের ভিড় বাড়তে থাকত। সন্ধে নামতেই টিকিট কাউন্টারে ভিড়। সামনে বসার তাগিদে আগেভাগে যাত্রার আসরে ঢুকে পড়তেন দর্শকরা। বসে জমিয়ে গল্প, খাওয়াদাওয়া চলত। ধীরে ধীরে যাত্রা আসার ভরে উঠত। লোকের কোলাহল, বাদামভাজা নিয়ে হকারে হাঁক। এক সময় এক একে করে নিভে আসত আসরের আলো। থেমে যেত কোলাহল। শুরু হত যাত্রাপালা।
সুন্দর মন্তব্যে উচ্চ প্রশংসা কবি। সাথে থাকবেন।
জয়গুরু!
loading...
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা।
loading...
প্রায় প্রতিটি বর্ধিষ্ণু গ্রামে ও শহরের পাড়ায়-পাড়ায় উৎসাহী যাত্রামোদীদের যাত্রাদল (পার্টি) ছিল, ছেলেরা গোঁফ কামিয়ে মেয়ের অভিনয় করত। পৌরাণিক নাটক করার জন্য তাদের ঝলমলে পোশাক ছিল (বলা হত কাটা পোশাক— কেন এমন নামকরণ জানা যায়নি), ছিল মাথায় পরার নানা আকারের ছেলেদের ও মেয়েদের চুল, ছিল মুকুট ও তরবারি। মেক-আপ নিজেরাই বা গ্রামের কেউ করতেন, গোঁফ আঁকা হত ভুষো কালি দিয়ে। কোনও কোনও গ্রামে আবার পালায় সুর করার জন্য সারা বছর সবেতন সুরকার থাকতেন।
সাথে থাকবেন। আন্তরিক অভিনন্দন।
জয়গুরু!
loading...
ভালো আলোচনা।
loading...
আগে গ্রামের রাস্তা দিয়ে শীতের মরশুমে রিকশার পেছনে ঝুলত রঙিন যাত্রাপালার পোস্টার। পেছনে ছুটত গাঁয়ের আদুল গায়ের কচিকাঁচারা। রিকশা প্রচার করতে করতে ক্রমে গ্রামের ভেতরে ঢুকে যেতে। রাস্তায় উড়ে বেড়াত লিফলেট। ঘোমটা টেনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতেন নববধূরাও। এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। অশ্রুসজল সামাজিক যাত্রাপালা নিয়ে মাইকে ঘোষণা আর শোনা যায় না।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
জয়গুরু!
loading...
পড়লাম।
loading...
এখন কিছু জায়গায় জেলার যাত্রাদলগুলি অনেক লড়াই করে টিঁকে রয়েছে। বছরে বড়জোর এক বার তারা যাত্রা করতে পারে। দুর্গাপুজোর সময় বা তার এদিক-ওদিকে। কিন্তু তাতেও নিজেদের যাত্রাপ্রীতিকে টিকিয়ে রাখতে তাদের যে কী হারে অনুদানের নামে চাঁদা দিতে হয়, পুজোর কেনাকাটা কম করতে হয়, পুরনো জুতো তাপ্পি মেরে আর একটা বছর পার করে দিতে হয়, তা আমরা জানতে পারি না।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
জয়গুরু!
loading...
বেলা সরকারের অভিনয় জীবন সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানলাম । চমৎকার পোস্ট ।
loading...
বেলা সরকার অভিনয় করেন এক দুঃখী মেয়ের চরিত্রে। যাত্রাপালার নাম “আজ প্রতিমা চক্ষুদান”। মেয়েটি এক কথায় জীবনে কিছুই পেল না। স্বামীর ভালোবাসা, স্বামীর সঙ্গে ঘর করা থেকে বঞ্চিত যে নারী, সে মৃত্যুর আগে নিজের চোখ জোড়া স্বামীকে দান করার মহান অঙ্গীকার করে যায়। প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর বিস্ময় সৃষ্টিকারী অভিনয় চমৎকৃত করে দর্শকদের।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
জয়গুরু!
loading...