আজ তিন মাস ধরে ক্লাব ঘরে নিয়মিত চলছে নতুন যাত্রাপালার মহড়া। যাত্রাপালার নাম ‘সিঁদুর দিয়ে কেনা ভালবাসা’।
প্রথম অঙ্ক প্রথম দৃশ্য। দৃশ্যের শুরুতে হ্যারিকেন হাতে একটা ছায়ামূর্তি কোনও রকমে টাল সামলে ধীরে ধীরে মঞ্চে প্রবেশ করে।
বাড়িতে ঢোকা মাত্রই কেউ চিৎকার করে বলল, ‘‘এই সিঁদুরের মূল্য তুমি কী বুঝবে বিধুবাবু?’’
নেপথ্যে মিউজিকে ভেসে আসে করুণ গীতি- এ জীবনে ভালবাসা পেলাম না।
বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাথরচুড়। প্রায় বহু বছর ধরে এই গ্রামে দুর্গাপুজো হচ্ছে। দুর্গাপূজায় যাত্রাপালা শুরু হবে। চলবে তিন দিন। শেষ দিনে বাউলগান। সারা গ্রামে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। পুজোর অন্যতম চমক যাত্রাপালা। পৌরানিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক যাত্রা পালা। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ এটাই। গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই চার দিনের জন্য।
গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে কারো কারো প্রস্তাব ছিল, কলকাতার দল এনে পালা নামানোর। বাধা দিয়েছিলাম আমি। আমি বললাম-গ্রামের লোকেদেরই পালাতে নামাতে হবে। সব খরচ ষোলআনা পূজা কমিটি বহন করবেন। গ্রামের তিনটি পাড়া। তিন পাড়ায় তিনটি যাত্রা দল। শেষের দিনে বাউল গান। বাউল গান পরিবেশন করবেন স্থানীয় শিল্পী সজল মণ্ডল।
রথের দিন থেকে শুরু হয় মহড়া। পাড়ার লোকেরাই সেখানে অভিনেতা। তবে ‘ফিমেল আর্টিস্ট’ আনা হয় বাইরে থেকে। মঞ্চ থেকে মেক আপ আর্টিস্ট সব খরচই বহন করেন যোলআনা পূজা কমিটি।
দিকে দিকে সাড়া জাগানো কোলকাতার স্বনামধন্য অপেরার যাত্রাপালার বুকিং চলছে। যাত্রাপালার পোস্টার নজরে পড়ে। পালার নাম- ‘স্বাধীন দেশের পরাধীন ভালবাসা’। তারা মা অপেরার পালা ‘স্বামীর চিতা জ্বলছে, ভাঙা গড়া নাট্য নিকেতনের বাজি ‘সিঁন্দুর আছে স্বামী নেই’। কোথাও বা বায়না করা আছে যাত্রাদল। যাত্রাপালার নাম ‘বৌ হয়েছে রঙের বিবি’ । সেই সব পোস্টার গুলি সেঁটে দেওয়া হতো মন্দিরের দেওয়ালে, অথবা রাস্তার চৌমাথায় বড়ো বটগাছের কাণ্ডের উপর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা থাকত। কূয়ো তলার চার পাশে নীচের স্থানও ফাঁকা থাকতো না।
কখনো বা অটো রিক্সায় মাইকের চোঙা টাঙিয়ে অ্যানাউন্সমেন্ট করা হতো আগামী…. তারিখে কোলকাতার দ্বিগ্বিজয়ী অপেরার সাড়া জাগানো পালা মঞ্চস্থ হতে চলেছে। টিকিটের হার চেয়ার (স্পেশাল) ১০ টাকা, চেয়ার ৫ টাকা, জমিন-২ টাকা। বলা বাহুল্য ঐ বিজ্ঞাপন প্রচারের গাড়িতে সিজিন টিকিটও পাওয়া যেত। সিজিন টিকিট মানে ঐ টিকিটে একজনের তিনদিনই যাত্রা দেখার ও শোনার প্রবেশ অবাধ।
সেদিন আর নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে টিকিটের হারও বেড়েছে কিন্তু দর্শকের হার কমে গেছে। চ্যারিটি শো যাত্রার প্যাণ্ডেলে তেমন আর ভিড় হয় না। অথচ এমন একদিন গেছে যে সময় যাত্রা পরিচালনা কমিটি টিকিট দিতে পারে নি। দর্শকের দাবী অনুযায়ী প্যাণ্ডেলের প্রবেশ পথ ভেঙে দিতে হয়েছে। পুরানো দিনের কথা স্মরণে এলে মনটা আজও কেঁদে ওঠে। চলে গেছে সুমধুর সেই দিনগুলি…….
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৩
গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি
‘গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি’ যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
রহস্যের জাল ছিঁড়ে দুষ্টের দমনে রণংদেহী মূর্তিতে আসরে হাজির সিঁদুর চৌধুরি। নিশিগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ এই কন্যা। এ সমাজের মীরজাফরদের চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর গুঁড়িয়ে দিতে, লোভ-লালসা-কামনার চোরা পাচার করতে, ওসি সিঁদুর চৌধুরি
অবিচল। একরোখা।
সিঁদুরকে ঘিরেই আকাশবাণী যাত্রা সংস্থার টানটান উত্তেজনা দম আঁটা পরিস্থিতির পালা ‘গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি।’ রচনা-নির্দেশনায় মঞ্জিল বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম-ভূমিকায় চম্পা হালদার। চম্পার তুখোড় অভিনয়—শরীরী ভাষা ইতিপূর্বেই আমজনতার সাবাশি প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। মঞ্জিলের লেখা পালার সংলাপ বিবেকের দরজায় করা নাড়ে।
ওসি সিঁদুর চৌধুরি বন্ধ করে দেয় মহাবীর পালের বেআইনি অস্ত্রপাচার কারবার। এই পুলিস আধিকারিক অন্যায়ের সঙ্গে আপসে নারাজ। তাই তিনি রাজি হয়েছেন স্বেচ্ছায় ছুটির দিন আর রবিবারও ডিউটি করতে। বেশ চলছিল। কিন্তু বিধি হলো বাম।
আর তাই নিজের আশীর্বাদের ‘শুভদিনে’ তিনি ধর্ষিতা হলেন নিজগৃহে। মহাবীর পালের পেটোয়া লোক গুর্নজ শঙ্কর ইজ্জত লুটে স্তব্ধ করে দিল—সিঁদুর নামক দুরন্ত এক্সপ্রেস-এর দৌড়।
লজ্জায় অপমানে কুঁকড়ে গিয়ে ওই দুঁদে অফিসার সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছাড়ার।
সেই কবে জন্মদাত্রী মা’কে অসময়ে অকালে হারিয়ে, সৎমায়ের আদর স্নেহে বড় হয়েছে। বাবার কারখানায় তালা ঝুলে যাওয়ার সময় সেই ধরেছিল সংসারের হাল। খরচ জুগিয়েছে ছোট ছোট ভাইবোনেদের রোজদিন-প্রতিদিনের। নিয়তির অদ্ভুত লীলায় আজ সে অসতী কলঙ্কিনী। ঘৃণার পাত্রী। কালবৈশাখী ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় তার সাজানো বাগান।
তাহলে কী চলতেই থাকবে মহাবীরের দাদাগিরির বাহুবলী কাজকারবার। ক্লাইম্যাক্সে কি ফিনিক্স পাখির মতো ভস্মশয্যা ছেড়ে জাগ্রত হবেন, অন্ধকারে চলে যাওয়া সিঁদুর ম্যাডাম। মঞ্জিল দারুণভাবে চম্পা হালদারকে মাথায় রেখেই সাজিয়েছেন সামাজিক পালা ‘গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি’। আকাশবাণী যাত্রা সংস্থার আর কে ঘোষ-এর নিরলস তত্ত্বাবধানে এবং নায়িকা চম্পা হালদারের নিত্যনতুন দৃশ্য পরিকল্পনা—এই পালা চলতি মরসুমে ঘেরা গোধূলির মধ্যে অন্যতম। পল মুখোপাধ্যায় রয়েছেন কালো চরিত্রে।
এই বছরেও পল জার্সি বদল করেননি। অভিনয়ে সমান-সমান টক্কর নিচ্ছেন পল মুখোপাধ্যায় নায়িকা চম্পা হালদারের সঙ্গে। দশটি গানে সমৃদ্ধ এই পালার সুরকার স্বপন পাকড়াশী। নৃত্য-নির্দেশনা পার্থসারথি। রয়েছেন অন্যান্য চরিত্রে অরুণ মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিকা, অরিজিৎ লাহিড়ী, অষ্টাদশী পিয়াসা, রাকেশ পণ্ডিত, কুমার সৌরভ, নন্দদুলাল পাল, পুতুল নস্কর, রাগ জিঙ্গল, মানস চট্টোপাধ্যায়। আলো-ধ্বনি এস সরগম।
loading...
loading...
* শুভ কামনা সবসময়….
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
আপনার পোস্টের কথা এবং কাহিনী সংক্ষেপ পড়ছি ঠিকই তবে বোঝার চাইতে বিস্মৃতি থেকে তুলে আনা স্মৃতিপটই এখানে আমার মতো পাঠকদের মাথায় বেশী কাজ করছে। অভিনন্দন কবি।
loading...
যাত্রাপালার আজ আর নামডাক নেই। যাত্রাপালা হারিয়ে গেছে।
যাত্রাপালার আলোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ কেউ পড়ে না।
আপনি পাঠ করেছেন এতেই আমি ধন্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
একটি প্রেক্ষাপট আর কাহিনী সংক্ষেপ এই দুইয়ের সমন্বয়ে আপনার সত্যই সুন্দর।
loading...
ধন্যবাদ কবিবন্ধু। সাথেই থাকুন। শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
দৃশ্য গুলোন শুধু পড়েই চলেছি প্রিয় কবি ভাণ্ডারী দা।
loading...
যাত্রাপালা আজ আর তেমন দেখা যায় না। যাত্রাপালা হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছেন অভিনেতারা। হারিয়ে গেছে সেই মিউজিকের সুর।
যাত্রাপালার আলোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ কেউ পড়ে না।
আপনি পাঠ করেছেন এতেই আমি ধন্য।
ধন্যবাদ কবিবন্ধু। সাথেই থাকুন। শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
মুগ্ধ মনে পড়ছি প্রিয় কবি দা।
loading...
যাত্রাপালা আজ আর তেমন দেখা যায় না। যাত্রাপালা হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছেন অভিনেতারা। হারিয়ে গেছে সেই মিউজিকের সুর।
কোলকাতার নামী অপেরা যাত্রাপালা এখন তেমন প্রচার দেখি না।
নেই সেই বিজ্ঞাপনের ঝলক।
ধন্যবাদ কবিবোন। সাথেই থাকুন। শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
চমৎকার বিষয়বস্তু ! উপস্থাপন নান্দনিক।
loading...
কোলকাতার নামী অপেরা যাত্রাপালা এখন তেমন প্রচার দেখি না।
নেই সেই বিজ্ঞাপনের ঝলক।
যাত্রাপালা আজ আর তেমন দেখা যায় না। যাত্রাপালা হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছেন অভিনেতারা। হারিয়ে গেছে সেই মিউজিকের সুর।
ধন্যবাদ প্রিয়কবি। সাথেই থাকুন। শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
পড়লাম।
loading...
কোলকাতার নামী অপেরা যাত্রাপালা এখন তেমন প্রচার দেখি না।
নেই সেই বিজ্ঞাপনের ঝলক। যাত্রাপালা আজ আর তেমন দেখা যায় না।
যাত্রাপালা হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছেন অভিনেতারা। নেই তেমন অভিনেতৃবৃন্দ।
নেই তেমন আলোকসজ্জা।
হারিয়ে গেছে সেই মিউজিকের সুর।
ধন্যবাদ প্রিয় কবিদিদি। সাথেই থাকুন। শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...