সরস্বতী পূজার্চনা

সরস্বতী পূজার্চনা

আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। সরস্বতী বিদ্যার ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পরিচিত। সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্রবসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এ জন্য তাকে বীণাপাণি বলা হয়।

সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিক কালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। বর্ধমান মহারাজার পূজায় বিশেষ সমারোহের আয়োজন করা হয়। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ এই পূজার বিসর্জন দেখতে আসত। পূজা উপলক্ষে দুই ঘণ্টা আতসবাজিও পোড়ানো হত।

আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যথা: অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ। পূজার জন্য বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচারর অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার পূর্বে কুল ভক্ষণ করেন না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষিদ্ধ। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার (দোয়াত-কলম), পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে। এই দিন ছোটোদের হাতেখড়ি দিয়ে পাঠ্যজীবন শুরু হয়।পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের দল বেঁধে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়।

আসুন, আজ আমরা সকলেই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বানী-বন্দনায় মেতে উঠি। বানী বন্দনায় মেতে উঠুক আমাদের বাংলা কবিতার আসর। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। দেবীর আরাধনায় আমাদের সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত হোক সুর ও সংগীতের গীতবিতান। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

সরস্বতী পূজার্চনা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বসন্ত পঞ্চমী তিথি পূণ্য শুভক্ষণে,
বানী বন্দনায় রত ছাত্র-ছাত্রীগণে।
মাঘ মাস শুক্লপক্ষ আসে বিধিমতে,
বাগদেবী বীণাপানি পূজিতা জগতে।

বিদ্যালয় সুশোভিত মণ্ডপ প্রাঙ্গনে,
পুরোহিত করে পূজা বসিয়া আসনে।
সুগন্ধি চন্দন, ধূপ, ঘৃত, মধু আর,
ধান্য, দূর্বা, গঙ্গাজল, যত উপাচার।

পবিত্র মঙ্গলঘটে শোভে আম্র-শাখা,
পুষ্পমালা চারিভিতে আলপনা আঁকা।
পূজাপাঠ, হোমযজ্ঞ হলে সমাপন,
পুষ্পাঞ্জলি দেয় সবে হয়ে শুদ্ধ মন।

পূজাশেষে সব করে প্রসাদ ভক্ষণ,
কবিতা লিখেন কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৩-০২-২০১৯ | ১২:৪৮ |

    পবিত্র মঙ্গলঘটে শোভে আম্র-শাখা,
    পুষ্পমালা চারিভিতে আলপনা আঁকা।
    পূজাপাঠ, হোমযজ্ঞ হলে সমাপন,
    পুষ্পাঞ্জলি দেয় সবে হয়ে শুদ্ধ মন।

    পূজাশেষে সব করে প্রসাদ ভক্ষণ,
    কবিতা লিখেন কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ। ___ অতঃপর …
    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৩-০২-২০১৯ | ১৩:৪৫ |

    সুখ বা দুঃখের বৃষ্টির শব্দ গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে মৃত্তিকার বুকে,
    ভালোবাসা হয়তো এমই হয়।

    সুন্দর একটি বচন। অভিনন্দন কবি দাদা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

     

    GD Star Rating
    loading...
  3. রিয়া রিয়া : ১৩-০২-২০১৯ | ২০:২০ |

    বসন্ত পঞ্চমী তিথি পূণ্য শুভক্ষণে,
    বানী বন্দনায় রত ছাত্র-ছাত্রীগণে।
    মাঘ মাস শুক্লপক্ষ আসে বিধিমতে,
    বাগদেবী বীণাপানি পূজিতা জগতে।

    দারুণ সুন্দর হয়েছে কবি দা। ভাল লাগলো। Smile

    GD Star Rating
    loading...