চিঠি- ২

যারা এখনো চিঠি পড়তে ভালোবাসেন আজকের লেখা তাদের জন্য।

প্রিয় আমার

গাঢ় চৈত্রের দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিম ধরা ডাকে ক্লান্ত ভাতঘুম চোখে। দরজার কলিং বাজলো, এই সময়টায় সাধারণত কেউ আসে না, ইচ্ছা অনিচ্ছার দোলাচলে দরজা খুলে দাঁড়াতেই ডাকপিয়ন ধরিয়ে দিলো খামে ভরা তোমার চিঠি। এক অজানা শিহরণে ছুঁয়ে গেলো কিছু ভালোলাগা, ভালোবাসা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম অদ্ভুত সুন্দর তোমার গোটাগোটা হাতে লেখা আমার ঠিকানাটার দিকে।

খাম খুলে তাড়াহুড়া করে সবাই যে ভাবে সব চিঠি পড়ে আমি তেমন করে কোন দিন তোমার চিঠি পড়িনি, আজো পড়বো না; হয়তো কোন ‍দিনই পড়বো না, এটা নিয়ে তোমার লেখা দশটি চিঠি হলো, প্রথম চিঠিটা বাদে আর কোন চিঠি কোন দিন খুলে পড়িনি মানে পড়া হয়নি। নিশ্চয়ই তোমার প্রশ্ন জাগছে কেন- কি কারন ! সত্যি করে বলি আমি তোমার চিঠি পড়লে নিজেকে গুছিয়ে গুটিয়ে রাখতে পারতাম না, কেউ না জানুক আমি জানি কি অসাধারন তোমার চিঠির উপস্থাপনা, কি মায়াবী করে তুমি লিখতে পারো।

আমি জানি আমার প্রতি তুমি কোনদিন কোন অভিযোগের অঙ্গুল তুলবে না, তুলবে না কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর তুলেই বা কি হবে আমি তো ফিরে যেতে পারবো না সেই অমর্ত্য মৃত চুম্বনে; যেখানে সব স্বপ্নের সমাধি পেরিয়ে সব শব গুলো বসে থাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিঙ্গনে নিজেকে নিবিষ্ট করতে।

তুমি হয়তো জানো শুধুমাত্র ছোট একটা জ্বলন্ত দিয়াশলাই কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া যায় তাবত পৃথিবীর সুখে গড়া সংসার; জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষয় অবক্ষয়ের মাঝে হৃদয় পোড়ার ঘ্রাণ ক’জনেই বা খোঁজে?

আমাদের জীবনের জলপ্রপাতে যে স্ফটিক জল দেখতে পাই, ভুল করে সেই কবিতার ব্যাখ্যা নিজের দিকে দাঁড় করিয়ে কবিকে ভালোবাসা যায় কিন্তু পাখির নীড় ঝড়ো বাতাসের বিপরিতে কতটা অসহায় তা যুগল পাখি মাত্রই জানে। আমার প্রজাপতির জীবনে কারো হাতের তালুতে ঝুলেও বা কতদিন বাঁচতে পারবো!

আমি জানি শত বিপদ মোকাবেলা করেও তুমি তোমার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে, আমাকে পেতে তোমার এই বিনিদ্র যন্ত্রণার অভ্যন্তরে সহিষ্ণু প্রেম আমি গভীর ভাবে অনুভব করি অথচ চোখ মেলে তাকাতে পারি না, হাতকে প্রসারিত করতে পারি না, মুখে হাসি নিয়ে তোমার দিকে ছুটে যেতে পারি না।

প্রিয়তম আমার; যে ভালোবাসার ছোঁয়ায় তুমি আমাকে রাঙিয়ে দিয়েছিলে, যে ভালোবাসার আলিঙ্গনে শীতল হিমালয় থেকে জলধারা বয়েছিলো, যে উষ্ণ চুম্বনে জীবনের পরিপূর্ণ স্বাধ নিয়ে আমি দূর থেকে দূরে হারিয়ে যাচ্ছি, সেই ধরা ছোঁয়ার বাইরের ভালোবাসায় তোমাকে যা দিতে পেরেছি তা কোন দিন আর কাউকে দেয়া হবে না।

তুমি অপেক্ষার প্রহর গুলো দীর্ঘ করো না
তুমি আশার করতলে চোখে জল এনো না
তুমি নীরব ভাষার আহবানে খুঁজো না আমায়
যে পথ চলেছে অামার সন্ধ্যা তারার পথে
সেখানে নিরব বিষণ্নতায় আমি প্রহর গুনি
অনাহুতা জীবনের।

ভালো থেকো নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

আমি
…………..

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ১৭-০৯-২০২০ | ১২:২৫ |

     অপূর্ব লিখেছেন 
     

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ১৭-০৯-২০২০ | ১২:২৬ |

    ভালো থেকো নিজের মত করে
    এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

    চিঠি সংলাপ হচ্ছে আমাদের এক জীবনের নস্টালজিয়া বা সুখস্মৃতি। বর্তমান প্রজন্ম কতটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে সে অনুভূতি, আমি সেটা জানি না, তবে চিঠিতে মনের ভাব আর ভাষাকে যতটা আন্তরিকতার সাথে উপস্থাপন করা যায়, আজকালকার শিল্প সাহিত্যে সেটা কখনও সম্ভব নয় বলে মনে করি। চিঠির তুলনা কেবল চিঠিই হতে পারে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...