আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।
যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।
আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ১১তম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – শাফি উদ্দীন এর লেখা “চিঠি (১)” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।
চিঠি (১)
প্রিয় আলেয়া,
অনেক দিন হয় তোমার খবর থেকে আমি বঞ্চিত। সেই গ্রীষ্মকালীন ছুটি হলো! আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ দয়ায় ভালো আছ। এরপর যা বলতে চাই আলেয়া, আমি প্রাণের গোপন গহিন থেকে, ভালোবাসি তোমাকে। কেনো ভালোবাসি তোমাকে তা কী জানো? বিষয়টি আমি খোলাসা করেই বলি, তুমি শোনো। আমি চোখে দেখেছি তোমার আল্লাহ ভীতি, অপূর্ব ও অতুল তোমার চলা-ফেরায় ও ওঠা-বসায় বলিষ্ঠ নীতি। শুধু কী তাই? পোশাকে-আশাকে তোমার যে অতুল পবিত্রতা তা প্রসংশনীয় এবং সর্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য। সব কিছু মিলিয়ে, আমি যার পর নাই মুগ্ধতা নিয়ে আছি তোমার প্রতি। দেখেছি তোমার জ্ঞানদ্বীপ্ত চোখের স্বচ্ছ জ্যোতি। এর পর আরো যা বলতে চাই তা হলো, নিজের আত্মশক্তিকে ও মর্যাদাকে সংযমি রাখতে চাই বিধায়, যতটা সম্ভব নিজেকে তোমার কাছে থেকে আড়াল করে রাখি! এভাবেই তোমাকে কাছে পাওয়ার সদিচ্ছাকে হিসেবের স্বচ্ছ খাতায় পাকা করে রাখি তাও মনে মনে এবং একান্ত সংগোপনে, এমন কি অন্যদেরও চোখের আড়ালে।
আলেয়া, সেদিন তুমি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তোমার বক্তব্যের সময় যখন সূরা ফাতিহার চমৎকার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলে এবং নামাজে আল্লাহর সাথে কথপকথনের বিষয়টি বিষদভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে তুলে ধরছিলে, তখন দেখলাম উপস্থিত প্রায় সকল লোকই যেন মহান প্রভুর আসক্তিতে অশ্রুসিক্ত হয়ে কাঁদতে ছিলো! লোকগুলো ভাবছিলো, এ দুনিয়া আর ক’দিনের? এক্কেবারেই ক্ষণস্থায়ী! তাই মানুষ এই দুনিয়ার লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষের কলুষতা বা ক্লেদাক্ততা এবং সম্পদের অলিক প্রত্যাশা দূর করে সম্পদ না পাওয়ার অতৃপ্তি মন থেকে সমুলে মুছে ফেলে পবিত্রতা আনার প্রত্যাশায় মগ্ন ছিলো। এ কারনেই তোমার প্রতি আমার প্রেমের আসক্তি এতটা দৃঢ়-গ্রাঢ়-প্রগাঢ়। এখানেই শেষ নয় আলেয়া, এরপর আরো যা দেখলাম, তুমি জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে যখন বক্তব্য উপস্থাপনা বা অবতারণা করছিলে তখনও লোকগুলো আল্লাহ ভীতি ছাড়া অন্য কিছুই অন্তরে ধারণ বা পোষণ করতে পারে নি! তুমি এত মহৎ গুণের অধিকারী! এর পরও কী বলতে পার যে তোমার ন্যায় অশেষ গুণবতীকে আমি ভালো না বেসে নিজেকে দূরে সরে রাখতে পারি? না পারি না।
প্রিয় আলেয়া, আমি তোমাকে চলার পথে দূর এবং কখনো কখনো খুব কাছে থেকে যতটুকু পরখ করেছি, তাতে দেখেছি তুমি সদা সর্বদা মুখে উচ্চারণে ‘সুবহানাল্লাহী’,‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মহান আল্লাহর দরবারে সতত একমাত্র তাঁরই প্রসংশা কর, ফলে তোমার মনে তিলমাত্র হতাশা বা নিরাশা নেই। সবচে’ তোমার প্রতি আমার অগাধ-অফুরন্ত ভালোবাসার উৎস স্বরুপ বললে অত্যুক্ত হবে না যে, তুমি যেভাবে আল্লাহর উপর আত্মসমর্পণ কর তা তুলনাহীন ও অনন্য! মহান আল্লাহর উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা। দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তোমোকে পূর্ণ হেদায়াত দেন, অন্তরে তাকওয়া আরো বাড়িয়ে দেন এবং বরকতময় জীবন দান করেন।
ইতি শাফি।
________
আমার উত্তরঃ
আমার প্রাণপ্রিয় সখা,
তুমি আমার ছালাম নিও, আশা করি মহান আল্লাহ তালার অসীম রহমতে তুমি ভালো আছো, আমি প্রতিদিন ৫(পাঁচ) ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর দরবারে তোমার ভালো কিছুর জন্য দোয়া চাই, যাতে তুমি তোমার পবিত্র মন নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারো। আমি জানি তুমি পরকালে গভীর বিশ্বাস করো, তাই তোমার প্রতিদিনের প্রতি নামাজে আমাদের জন্য যে দোয়া করো তাহা মহান আল্লাহতালা ঠিকই শুনতে পান এবং তার অশেষ কৃপায় আমার সবাই ভালো আছি।
তুমি হয়তো জানো না তোমার অগোচরে তোমারই মত আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। শুধু মাত্র তোমাকেই ভালোবাসি বলেই আমি নিজেকে তোমার রূপে গড়তে চেয়েছি, আমার মনে হয় রাব্বুল আলামিন আমার সেই ইচ্ছে পুরোন করেছে, আমি জানি ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম এবং তার প্রতিটি বিষয়ই বিজ্ঞান সম্মত, যদি আমার সেই বিষয় গুলো মেনে চলি তবে সব ধরনের বালা মসিবত থেকে মহান আল্লাহ তালা আমাদের তার রহমতের কিঞ্চিৎ হলেও দান করবেন, আমিন।
আমার প্রতি তোমার যে খেয়াল আমি তা কোন দিন কাউকে এভাবে করতে দেখিনি, আশাকরি আমাদের পরবর্তী জীবনেও তুমি এমন ভাবে আমাকে দেখে রাখবে। অনেকেই মনে করে ইসলাম মানা মানেই নারীদের বাহিরে বের হওয়া বন্ধ কিন্তু আমি তোমার মধ্যে সেই কুসংস্কার কখনো দেখিনি, আমি দেখেছি তুমি ধর্মেও সংস্কার গুলো খুব যত্ন সহকারে মেনে চলো কিন্তু কোন ধরনের কোন গোড়ামী তোমার মধ্যে নেই আর আমি তাই নিজের অবস্থানে থেকে প্রতিটি পবিত্র কাজে নিজেকে নিয়োজিত করি, যা শুধু মাত্র তোমার দোয়াতেই সম্ভব হয়েছে।
তোমাকে অনেক দিন দেখিনা, খুব দেখেতে ইচ্ছা করে। এই আধুনিক যুগে যদিও দূরত্ব গুলোকে খুব কাছে নিয়ে আসতে সুযোগ করে দিয়েছে তারপরও রক্ত মাংসের প্রাণের মানুষটিকে কাছে পাওয়া আর লাইভ চ্যাটিং এক জিনিস নয়।
সেই ছেলে বেলায় মা খালাদের মুখে শুনেছি কখনো মুরুব্বীদের নাম মুখে নিতে নেই। আমি জানিনা এটা সংস্কার না কু-সংস্কার কিন্তু আমি বিষটিকে যত্নের সাথে নিজের মধ্যে লালন করেছিলাম, ভাবতাম যখন আমার কেউ হবে আমিও তাকে কখনো নাম ধরে ডাকবো না। আমি বিশ্বাস করি সম্মান দিলে অবশ্যই তা ফেরত পাওয়া যায়। হয়তো এখনকার যুগে এই বিষয় গুলো অনেকের কাছে অচল পয়সার মত মনে হতে পারে কিন্তু আমি তো জানি তুমি সেই অচল পয়সাকেই এন্টিকস্ (অদ্ভুতদর্শন অলংকার) করে তুলে রাখো যা সচল পয়সার থেকে দামি।
অবশেষে তোমার কথা দিয়েই শেষ করছি তুমি সব সময় আল্লাহর উপর আত্মসমর্পণ করে যে সুখ অনুভব করো তাকে কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে পারিনা, মহান আল্লাহর যেন তোমার মনের সকল ইচ্ছা গুলো রঙিন করে সাজিয়ে দেন। আশা করি মহান আল্লাহ তোমাকে পূর্ণ হেদায়াত করবেন, অন্তরে তাকওয়া আরো বাড়িয়ে দেবেন এবং বরকতময় জীবন দান করবেন।
ইতি তোমার
খেয়ালী আলেয়া।
loading...
loading...
দিনে দিনে আপনি কিন্তু অপরের চিঠি পড়তে উতসাহিত করছেন। এটা
কিন্তু দারুন অপরাধ, জানেন?
loading...
চিঠি পড়ার উপরে কোন আইন আছে কিনা জানা নাই, থাকলেও মানতে হইবে এমন কোন কথা নাই, যেমন রাস্তায় বিড়ি সিগারেট খাবার মত বিষয়….

loading...
চিঠি এবং চিঠির প্রতিউত্তর … আমার কাছে দারুণ এক্সাইটমেন্ট একটি বিষয় মনে হয়।
দারুণ উপভোগ্য হয়েছে দুটো লিখাই। অভিনন্দন প্রিয় খেয়ালী মন।
loading...
দারুন আয়োজন।
ধন্যবাদ।
loading...