আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।
যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।
আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৮ম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – আনু আনোয়ার এর লেখা “শূণ্য বিষণ্ণ” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।
শূণ্য বিষণ্ণ চিঠি।
বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।
‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
গত কালের সন্ধ্যাটা আমার কিছুতেই কাটছিল না। কোন সন্ধ্যাই আমার কাটে না। প্রতিটি সন্ধ্যার গোধূলি বেলা আমার কাছে কেমন এক অজানা অক্ষরের বেদনা নিয়ে হাজির হয়। রাস্তার সোডিয়াম বাতির সাথে সাথে যখন সমস্ত বাড়ি ঘর আর বহুতল বিপনিবিতান গুলো রঙ-বেরঙের আলোয় ঝলমল করে উঠে আর শহরের কাক গুলো যখন কা কা করতে করতে দলবেঁধে ঘরে ফিরে আমার শুধু মনে হয় আমার কোথাও যাবার নেই। এতো আলো এত কথার ঝনাৎকারের মাঝে আমি দূর দিগন্তে দাঁড়িয়ে বৃক্ষ এক। কোন আড্ডা কিংবা রেস্তোঁরায় যাই না। একা একা এদিক সেদিক হেঁটে হেঁটে আর কাটছিল না সময়গুলো। কাল সন্ধ্যার পরেই তাই ট্রেনে চেপে বসলাম। সারারাত আমার একটুও ঘুম হয় নি। পাশের যাত্রীটি মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে আমার গায়ের উপর এসে পড়ছিল। সারারাত নির্ঘুম আমি যেন একটু ক্লান্ত হইনি। বরং বিশ্বাস কর, বহুদিন পর আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। আমার মত নিতান্ত নির্জীব ঘরমুখো একটা জীবের পক্ষে এ যেন এক বিরাট ঘটনা। মনে আছে একবার তুমি আমাকে বলেছিলে,’’ তুমি কি কোন দিন আমাকে দেখতে আসবে!” আমার মত উদাসীন উজবুকের পক্ষে এ যে অভাবনীয় সে তুমিও টের পেয়েছিলে। অথচ দেখ সেই উজবুকই গতকাল সারারাত না ঘুমিয়ে তোমার দেশে হাজির হয়েছে। আমরা যখন ক্লাস শেষে একসাথে বাসায় ফিরতাম তুমি অনবরত কথা বলতে। তোমার এত গল্প ছিল আর এত সুন্দর তোমার বলা আমি কেবল শুনেই যেতাম। তাছাড়া এমনিতেই কথা বলি কম। গুছিয়ে কথা বলা শিখিনি কোন দিন। তাই তোমার কথাগুলো আমার কাছে যেন পুষ্প হয়ে ফুটত।
কাল যখন আর কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না, চেপে বসেছি মেইল ট্রেনে। মনে হচ্ছিল একদিন, শুধু এক সন্ধ্যায় যদি মুখোমুখি বসি। দরকার নেই নদীর ধার, কাশবন। দিগন্ত জোড়া কোন মাঠ, বটবৃক্ষ এসবও দরকার নেই কিছুতেই। শুধু একসন্ধ্যা, মুখোমুখি কোথাও। ফুটপাত, টং দোকান, আটপৌরে যেকোন জায়গায়।
সমস্ত বন বাদাড়, ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে সকাল বেলা নেমে সোজা তোমার ঠিকানায়। এসে দেখি আমার প্যারাডাইস লস্ট। তুমি নেই আর আগের ঠিকানায়।
আমার উত্তরঃ
সন্ধ্যা শেষে সবাই যখন ঘরে;
আঁধার কালোয় ভুবন গেছে ছেয়ে,
একাকি চাঁদ একলা পথিক খোঁজে
পথের পথিক রাতের রাতার সাথী;
সবাই কি আর ভিন্ন জগত বোঝে:
একলা জগত একলা মানুষ
একলা চলা গাঁয়
একলা রাতে চাঁদের আলোয়
নিবির হতে চায়।
প্রিয় আমার,
কেউই একই ঠিকানায় কখনো থাকে না, প্রয়োজনে কিংবা প্রয়োজন ছাড়াও মানুষ ঠিকানা বদল কারে, ভুল ঠিকানায় কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় চলে যায় তার দ্বায় কার. পথিকের পথের না আটপৌড়ে শাড়ি চুড়ির।
স্বাধীনতার অপর নাম গন্ডির মধ্যে অবাধ চলাফেরা, মন চাইলেই তুমি সময় বদলের জন্য ঝুলে যেতে পারো আপ কিংবা ডাউন ট্রেনে, ভাবতে পারো স্বাভাবিকতার বাইরে ফুটপাতে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি সেই সৌভাগ্য কিন্তু সবার হয় না; এই দিক দিয়েও কিন্তু তুমি খুব ভাগ্যবান।
সেই গানটা মনে পরে পরে গেল
আমি আগের ঠিকানায় আছি সময় করে এসো এক দিন দুজনে কিছুক্ষণ বসি মুখোমুখি… শুনেছো কি না শুনলে শুনে দেখ ভালো লাগবে। গানের কথাটা এই জন্য বলছি গানটি একটি স্বপ্ন মনে হয় আমার কাছে ; যা হবার নয় তাই নিয়ে স্বপ্ন…
আমি পার্বতী নই আর তুমি দেবদাস; তবে আমি দেবদাসী হয়ে দেবতার খোঁজে আজো আমি ডালাতে ফুল তুলে মন্দিরে মন্দিরে হেঁটে চলি খালি পায়ে; শক্ত বা নরম মাটি কিংবা পাথর আমার অনুভূতিতে যে আঘাত করে তার চেয়ে অনেক আঘাত পাই পিছন ফিরে তাকালে সময় কিংবা তোমার স্মৃতি রেখায়। গুছিয়ে কথা না পারার জন্য যেটুকু কথা কম বলতে সেই সময়ের না বলা কথার ওজন গুলো আজো বয়ে চলি পথ থেকে পথে।
তোমার মত আমারও সব সন্ধ্যাই কাটে নির্মল একা এক প্রার্থনার ঘরে তোমার মতই আমারো প্রতিটি সন্ধ্যার গোধূলি বেলা কেমন এক অজানা অক্ষরের বেদনা নিয়ে হাজির হয়, পার্থক্য শুধু তুমি খোলা আকাশে আর আমি মৃত্যু নিয়ে জেগে উঠি বন্ধীশালায়।
তোমাকে জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতার কিছু লাইনি লিখে শেষ করছি….
”আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়,
দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল
কুয়াশার; কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মতো যেন হায়
তারা সব; আমরা দেখেছি যারা অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল
জোনাকিতে ভ’রে গেছে; যে-মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ–কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে; ”
______________________________
ভালো থেকো
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়
খেয়ালী।
loading...
loading...
চিঠি পড়লাম উত্তর পড়লাম! একাকীত্বের মূর্ছনা!
loading...
জোনাকিতে ভ’রে গেছে; যে-মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ–কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
___ কবিতার অংশ বিশেষও কখনও কখনও একটি চিঠির প্রত্যুত্তরকে অসাধারণ করে তুলতে পারে। জানামতে দুজনেই ভালে লিখেন। উত্তর প্রতি-উত্তরকে লড়াই না বলে সৌহার্দ্যের প্রতীক বলতে পারি। আমি বলি। ইউনিক আইডিয়া।
অভিনন্দন মি. আনু আনোয়ার এবং মি. খেয়ালী মন।
loading...
“আমি পার্বতী নই আর তুমি দেবদাস; তবে আমি দেবদাসী হয়ে দেবতার খোঁজে আজো আমি ডালাতে ফুল তুলে মন্দিরে মন্দিরে হেঁটে চলি খালি পায়ে;”
“আমি আগের ঠিকানায় আছি সময় করে এসো একদিন দুজনে কিছুক্ষণ বসি মুখোমুখি…”
উদাস পথিকের গন্তব্য তো পাওয়া গেল! শুভেচ্ছা রইলো সতত।
loading...
আবার আসিও তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়;
পঁচিশ বছর পরে ।‘
এই ব’লে ফিরে আমি আসিলাম ঘরে;
তারপর, কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে- মাঠে মরে গেল, ইঁদুর – পেঁচারা
জ্যোৎস্নায় ধানক্ষেত খুঁজে
এল-গেল ! – চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বাঁয়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত- কেউ !- রহিলাম জেগে
আমি একা- নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশ,
তার চেয়ে আগে চ’লে আসে
যদিও সময়,-
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয় !-
তারপর- একদিন
আবার হলদে তৃণ
ভ’রে আছে মাঠে –
পাতায় , শুকনো ডাঁটে
ভাসিছে কুয়াশা
দিকে- দিকে, – চড়ুয়ের ভাঙা বাসা
শিশিরে গিয়েছে ভিজে, – পথের উপর
পাখির ডিমের খোলা , ঠাণ্ডা – কড়কড় !
শসাফুল , – দু-একটা নষ্ট শাদা শসা,-
মাকড়ের ছেঁড়া জাল, – শুকনো মাকড়সা
লতায়- পাতায়;-
ফুটফুটে জ্যোৎস্নারাতে পথ চেনা যায়;
দেখা যায় কয়েকটা তারা
হিম আকাশের গায়,- ইঁদুর – পেঁচারা
ঘুরে যায় মাঠে – মাঠে , ক্ষুদ খেয়ে ওদের পিপাসা আজো মেটে,
পঁচিশ বছর তবু গেছে কবে কেটে ! [জীবনানন্দ]
প্রতিউত্তর পেয়ে মুগ্ধ হয়েছি। মনে হল সার্থক হয়েছে আমার লেখাটি। কাব্যরসে ভরপুর এমন প্রতিউত্তর পেতে কার না ভাল লাগে!
অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই।
loading...