কিছুদিন আগে এক স্মরণসভায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস দেশের সংস্কৃতির দূরবস্থা নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন। তিনি বলেন, “একটা জাতির পরিচয় প্রকাশ পায় তার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। আমরা সবাই সংস্কৃতি নিয়ে চিল্লাচিল্লি করি, অথচ সংস্কৃতির উন্নয়নে আমাদের কোনই মাথা ব্যথা নেই। জাতীয় বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য এক শতাংশ বরাদ্দ পায় সংস্কৃতি খাত! এই ন্যূনতম বাজেট দিয়েই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং এর উন্নয়ন সাধন করতে হয়।
এই যখন অবস্থা তখন দেশ যে গোড়ামী আর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে ক্রমান্বয়ে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এবারো আমাদের জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ মাত্র দশমিক শূন্য এক শতাংশের (০.০১) মতো।
এবার শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে, মোট ৬৭,৯৪৪ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে এর পরেই খরচ করতে হবে সুদ পরিশোধে, এর পরিমাণ প্রায় ৫১,৩৪০ হাজার কোটি টাকা। এর পরেই আছে অন্যান্য বিবিধ খাত ৪২,০৫৬ হাজার কোটি টাকা, এই অন্যান্য খাত থেকেই বরাদ্দ দেয়া হয় সংস্কৃতির জন্য। অর্থাৎ সংস্কৃতি খাতে টাকার হিসাবে বরাদ্দ হলো মাত্র ৪২১ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে গত বছরের চেয়েও কম বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪১৭ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিলো মাত্র ৪২৫ কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন বাজেটে কমেছে চার কোটি টাকা।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা বাজেট প্রস্তাবে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ অর্থের মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ১৯৩ কোটি টাকা।
নতুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিত বলেন, ‘দেশজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করছে। সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চাকে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাসহ সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ ধারা আগামীতেও আমরা অব্যাহত রাখব।
বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য উপরোক্ত কথা গুলো শুধুই সান্ত্বনার, সে কথা সহজেই বুঝা যায়। এখানে বলে রাখা দরকার সরকার শিক্ষা খাতে যে বিপুল পরিমানে বরাদ্দ দিয়েছেন তার একটা বিশাল অংশ মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয়। যা কিনা আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে যায় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে সংস্কৃতি খাতে মাত্র দশমিক শুন্য এক শতাংশের নীচে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে এই সংস্কৃতিকে রুখতে মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে ব্যয় করছেন প্রায় দশ শতাংশের মতো। আহা কি সংস্কৃতি প্রেমী সরকার এবং তার অর্থমন্ত্রী।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের, এক অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। সেই বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক কুপমুণ্ডকতার আধার হয়েছে। সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ভরে গেছে। আরবীয় সংস্কৃতিতে সয়লাব বাংলাদেশের প্রতিটি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এমনভাবে জেকে বসেছে যে মানুষ এখন আর বাংলাদেশের টিভি, গান, নাটক বা চলচিত্র দেখছে না।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলে ভয়াবহতা বুঝানো যাবে না। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন হয়েছে “ছেড়ে দে নৌকা, আমি যাবো মদিনা”। এর পরে আর কোন কথা থাকতে পারে বলে মনে করি না।
বরঞ্চ এদেশের মা বোনেরা বাধ্য হয়ে নানা জটিলতায় ভরা, নানা ভ্রান্ত চিন্তাধারায় তৈরী ভারতীয় সিরিয়াল, সিনেমা বা গানের অনুষ্ঠানে আসক্ত হচ্ছে।
আমাদের সাংস্কৃতিক মান আজ সবচেয়ে নিন্ম পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। যে দেশে সংস্কৃতির জন্য জাতীয় বাজেটে দশমিক দশমিক এক শতাংশ সে দেশের সাংস্কৃতিক মান শুন্যের কোঠায় আসাটাই স্বাভাবিক। সস্তা ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আর আজগুবি যৌন সুরসুরি মার্কা, রূপবান মার্কা রঙ্গীন নাটক চলচ্চিত্র ছাড়া নির্মাতাদের কাছ থেকে আর কিই বা আশা করতে পারা যায়?
loading...
loading...
'আমাদের সাংস্কৃতিক মান আজ সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। যে দেশে সংস্কৃতির জন্য জাতীয় বাজেটে দশমিক দশমিক এক শতাংশ সে দেশের সাংস্কৃতিক মান শুন্যের কোঠায় আসাটাই স্বাভাবিক।'
সংশ্লিষ্ট মণ্ত্রণালয় এবং গুরুভার যাদের উপর ন্যস্ত রয়েছে; বিষয়টি তাদের বিশেষ ভাবে ভাবা এবং করণীয় কি সেটা বের করা দরকার। এখানেই দায়িত্ব শেষ নয়; প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়াও তাদের কর্তব্য।
loading...
অনেক ধন্যবাদ রিয়া রিয়া। আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাকে আরো সহযোগিতা করছে এবং করবে।
loading...
“একটা জাতির পরিচয় প্রকাশ পায় তার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। আমরা সবাই সংস্কৃতি নিয়ে চিল্লাচিল্লি করি, অথচ সংস্কৃতির উন্নয়নে আমাদের কোনই মাথা ব্যথা নেই। জাতীয় বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য এক শতাংশ বরাদ্দ পায় সংস্কৃতি খাত! এই ন্যূনতম বাজেট দিয়েই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং এর উন্নয়ন সাধন করতে হয়।" ___ মূল বাজেটের এই ক্ষুদ্র অংশকে প্রহসন মনে করি। দুঃখজনক।
loading...
প্রিয় মুরুব্বী, অনেক ভালো লাগা। আমরা সংস্কৃতি নিয়ে চিল্লাইতে পারি, এর জন্য অনেক অনেক কথা বলতে পারি কিন্তু কাজের বেলায় ফাকা। সংস্কৃতির বিকাশ হলে তো শুধুমাত্র মিথ্যা দিয়ে রাজনীতি হবে না।
loading...
সত্য বলেছেন মি. কাজী রশিদ।
loading...
সত্য বলেছেন মি. কাজী রাশেদ।
loading...
যৌক্তিক আলোচনা।
loading...
অপ্রতুল বাজেট।
loading...
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রতি বছরই প্রহসনের সামিল। দুঃখজনক।
loading...
* যে কোন দেশের সংস্কৃতির মাঝে সে দেশের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে।
বাজেটে এমন অপ্রতুলতা সত্যিই দুঃখজনক…
loading...
এই যতসামান্য বাজেট না রাখলেও একরকম ভালো হতো। করেছে বা বরাদ্দ দিয়েছে শুধু লোক দেখানো। এ থেকে বোঝা যায় যে, বর্তমান ডিজিটাল সরকার সাংস্কৃতিক প্রিয় নয়।
loading...
প্রয়োজনীয় একটি বিষয় তুলে ধরেছেন
loading...