ঋতুস্রাব এবং আমাদের মস্তিষ্ক

মেয়েটির পিরিয়ডের আজ দ্বিতীয় দিন। তার আজকে পায়ে হাঁটার মতো শক্তি নেই, তার ঊরুগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। মেয়েটি পেটের ব্যথা ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে এবং সেই যন্ত্রণায় মেয়েটি কাঁদছে। মেয়েটি দাঁতের উপরে দাঁত দিয়ে প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করে আছে। ফার্মেসি ভর্তি মানুষগুলোর নিথর চোখের মাঝেও গতকাল মেয়েটি যখন সাহস করে ফার্মেসিতে গিয়ে প্যাডের নাম ফিসফিস করে বলছিল, দোকানদার তাকে একটা কালো ব্যাগে প্যাডটি এমনভাবে মুড়িয়ে দিল যেন মেয়েটি এমন কোন কিছু চেয়েছে যা নিষিদ্ধ এবং তা সমাজ বা রাস্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এবং মেয়েটিকে সেই প্যাড লুকিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অথচ দেদারসে বিড়ি সিগারেট মাদক প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

আজ মেয়েটির সমস্ত শরীরে নেশার মতো করে ব্যথা আঁকড়ে ধরে আছে। এমনকি মেয়েটি আজ তার অফিসে চেয়ারে দু’দন্ড স্থির বসে থাকতে পারেনি।

প্রতি মাসের এই পাঁচ দিনের রুটিনে মেয়েটি কখনো ছুটি নেননি শুয়ে থাকেননি। আজকে তার সহকর্মীরা তার দিকে আঁড় চোখে তাকিয়ে আছে, এবং মাঝে মাঝে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, অন্যদের সাথে কথা বলে কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই গল্প তোলে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গতকালের অসমাপ্ত কাজের জন্য মেয়েটিকে যাচ্ছে তাই বলে তিরস্কার করে অথচ মেয়েটি তার সকল কাজেই পারদর্শী কিন্তু গতকাল থেকে সে পিরিয়ডের ব্যাথায় কাতর।

গতকালের অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করে টেবিলে দিতে বলেন অথচ মেয়েটির গত পঁচিশ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা বেমালুম ভুলে যায়। মেয়েটিকে ধমকের সুরে বলে দিলো কাজটা দ্রুত শেষ করার জন্য। মেয়েটির মুখের ফ্যাকাশে, ক্লান্তি আর শরীরের অলসতা-দুর্বলতা চলতেই থাকে। কয়েক দিনের মধ্যে মেয়েটি কোন কাজে মন বসাতে পারেনি। মেয়েটি তার কেবিন ছেড়ে উঠতে পারেনি তার মনে ক্রমশ অস্বস্তির একটা ঢেউ উঠেছিল।
না এটা অন্য কোন উদ্বেগ ছিল না তার পোশাকের পেছনে কোনো ‘দাগ’ ছিলনা উঠতে বসতে মেয়েটি স্বস্তিতেই ছিল কারন আটটি প্যাড যে সে আশি টাকায় কিনেছে। সে এই ভেবে অস্বস্তিতে ছিল যে এখন পর্যন্ত তার পেছনে সেই নোংরা চোখগুলো পড়েছিল এবং কানাকানি করছিল আর হাসছিল।

ওহে পুরুষ! সেই মেয়েটি কি করে তোমার ভাবনায় ? পুরুষগুলো বেমালুম ভুলে যায় তার মায়ের, বোনেরও প্রতিমাসে পিরিয়ড হয় এবং তারাও অসহ্য রকম যন্ত্রণা সহ্য করে। পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক ঘটনাই জানিয়ে দেয় আমাদের মন মানসিকতা কোন পর্যায়ে আছে।

মাসিকের ব্যথা থেকে মেয়েটি শিক্ষা নেয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তাই তাকে নিয়ে হাসবেন না যখন সে এই যন্ত্রণার দ্বারা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থায় থাকে কারণ এই ঋতুস্রাবেই কারনেই ‘ভ্রুণ’ তৈরির মাঠ তৈরি হয়।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
ঋতুস্রাব এবং আমাদের মস্তিষ্ক, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২২-০৫-২০২২ | ২১:২৭ |

    মাসিকের ব্যথা থেকে মেয়েরা শিক্ষা নেয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। কটাক্ষ অথবা বক্র দৃষ্টি থেকে আমাদের নিজেকে সতর্ক সচেতন থাকা উচিৎ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. বোরহানুল ইসলাম লিটন : ২৩-০৫-২০২২ | ৬:১৭ |

    নারীদের সম্মান দেয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য

    কারণ এই নারীর মা, ভগনী, মেয়ে বা স্ত্রী!

    আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...