কবিতায় নতুন ধারাঃ স্বপ্ন নয় বাস্তবতা

আমার কাছে কবিতার চেয়ে লাবণ্যময় তেমন কিছুই নেই। আমি সুদীর্ঘ দিন যাবত কবিতার সাথে আছি। কবিতা আমাকে হাসায়…. কবিতা আমাকে কাঁদায়… কবিতা আমাকে সজীবতা দেয়, প্রাণের পরশ দেয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, এখন কবিতার আগের সেই জৌলুশ আর নেই। পাঠক কবিতা পড়েন না, পড়তে চান না। কেন পড়েন না…. এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন! এর কারণ হল, কিছু কবি আধুনিকতার নাম করে কবিতার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। তারা শব্দের জোড়াতালি দিয়ে এমন সব কবিতা লিখেন, যার পাঠোদ্ধার বা মর্ম হয়ত কবি নিজেই জানেন না! আর পাঠক কীভাবে এই কবিতা পড়ে আনন্দ লাভ করবেন? তারচেয়ে বরং কবিতা না পড়াই অনেক অনেক ভালো। এটাই হলো বাস্তবতা। এই যখন অবস্থা তখন প্রিয়কবি ফাহিম ফিরোজ কবিতাকে ভিন্নতর কিছু প্রচেষ্টা করছেন। কবিতাকে আবার সম্মানিত পাঠকের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এই চেষ্টার নাম হল, নতুন ধারা।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, প্রাণের ভাষা। এই ভাষায় আমরা কথা বলি, ভাব প্রকাশ করি। এই ভাষাতেই আমাদের হাসি, আমাদের কান্না, আমাদের সাহিত্য সাধনা। তাই আমরা অত্যন্ত গৌরব এবং অহংকারের সাথে বলি, বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। কারণ এই ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি। আর আমাদের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের অধিক পুরানো। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসের পেছনে প্রভাব বিস্তার করে আছে সংস্কৃত, উর্দু, ফার্সি, পুর্তগীজ, আরবি এবং ইংরেজি অনেক শব্দমালা।

সরাসরি অথবা পারিভাষিক ভাবে এই শব্দ কে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এমনকি এখনও চলছে। মূলত একটি ভাষায় অন্য একটি ভাষার শব্দের এই আত্মীকরণ রোধ করা একটি কঠিন কাজ। ফলশ্রুতিতে চেতনে হোক কিংবা অবচেতনে হোক আমরা তাদের উপস্থিতি মেনে নিয়েছি অথবা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। আলোচনার স্বার্থেই এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছি। অন্যথায় নতুন ধারার আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকবে বলে আমার ধারণা।

জী… আমরা কবিতায় নতুন ধারার কথা বলছি। কবিতায় নতুন ধারা নিঃসন্দেহে একটি আধুনিক চেতনার নাম। একটি বিপ্লবের নাম। স্বাদে, গন্ধে ভরপুর অপূর্ব একটি ব্যঞ্জনার নাম। আর যার হাত ধরে নতুন ধারার সাহিত্য, নতুন ধারার কবিতা আজ কোনো স্বপ্ন নয়; নিতান্ত বাস্তবতা… তিনি হলেন সাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টির সার্থক রূপকার প্রিয়কবি ফাহিম ফিরোজ।

যার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নতুন ধারার কবিতা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। নতুন ধারার কবিতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রোগ্রাম করার কথা ভাবছেন। আমরাও বিশ্বাস করি, নতুন ধারার কবিতা নিয়ে যতবেশি সম্ভব আলোচনা হবে, গঠন মূলক সমালোচনা হবে… নতুন ধারাও ততো বেশি সমৃদ্ধ এবং বিকশিত হবে। মূলতঃ নতুন ধারার কবিতার কাঠামোতে থাকবে শিথিলতা বা শৈথিল্য।

এবার আসা যাক, নতুন ধারার কবিতার ইশতেহার প্রসংগে। যে কোনো বিষয়ের সফলতার জন্য দরকার একটি রোড ম্যাপ। যথার্থ নির্দেশনা। নতুন ধারার সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা তার সারথিদের জন্য ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। বলা দরকার যে, বাংলা সাহিত্য জগতে এটাই প্রথম ইশতেহার। এই ইশতেহারে তিনি বলেছেন, “করোনায় যেভাবে বিশ্ব আজ দলিত-মথিত, দ্রুত পরিবর্তিত, মৃত্যু, আর্তনাদ, শোক, একাকিত্ব, সন্দেহ, খাদ্যাভাব, অর্থ সংকট, বেকারত্ব, জন্মহীনতা– অতীত বিশ্বে কখনো এমন ভয়ংকর চিত্রের মুখোমুখি হয়নি মনুষ্য সমাজ। কবে এই অতিমারীর মুন্ড কাটা যাইবো, কেউ নিশ্চিত কইতে পারেনা। চারদিকে জীবাণু হাতিয়ারের ঈংগিত। বিশ্ব জুড়ে লেখককুল তাদের সৃষ্টিতে অতিমারীজনিত বিষয়াদি অগ্রাধিকার দেবেন এডাই সত্য। আধুনিক বিশ্বের মৃত্যু ঘইটছে। নতুন বিশ্ব এখন প্রসারিত। সমস্ত কিছুই দ্রুত আদল বদলাচ্ছে। আধুনিকের মতো অভেদ্য কাব্য নয় এখন, কিঞ্চিত সহজবোধ্য, কবিতার কোনো অংশ কণা লইয়া দীঘল ভাবনার অবসর কম রৈবে। নন্দন তত্ত্ব অনেকাংশে শক্তি হারাবে। শিল্প, ছন্দ, অছন্দ রৈবে। উপমা, রূপকল্পে কাঠিন্য নয়, সহজ স্বাভাবিক রুপ রৈবে বা না থাইকলেও ক্ষতি নাই। কাব্য গঠনে শিথিলতা রৈবে।

যাহা আধুনিকে আছিলোনা। মানুষ মৃত্যু আতংকে কম বেশি ধর্মমুখী হবে। আধুনিকরা যাহা নিষিদ্ধ কৈরছিলো। আস্তিক – নাস্তিক রৈবে। পরিহার্য্য রাজনৈতিক কোন্দল। প্রকৃতি, বিয়ং (রহস্যময়তা), কল্পনা, অলৌকিকতা জরুরি। নতুন শব্দ খেইল, ভোগবিমুখতা, নির্জনতা থাকবে। অসাম্যতার মৃত্যু ঘটিবে। নয়া পৃথিবীর এগিয়ে যাবে প্রগতির চাকা ছুঁয়ে, সবুজ ও মৃত্তিকার মেলবন্ধনে। শুধু ইতিহাস ঐতিহ্য নয়,এবার পুরাকীর্তি গণ্য হবে অধিক। পুরাকীর্তি না থাইকলে সে ইতিহাস মিথ্যাময়।

অথচ আধুনিকতায় ইতিহাসকই কম হৈলেও গুরুত্ব দেয়া হৈছিলো। ১. আত্মীয় আর সম্পর্ক বাচক শব্দের নাম সহ প্রয়োগ অপরিহার্য। ২. জরুরি প্রমিত ভাষার লগে লোকাল ভাষার কোমল মিশ্রণ। এদুটো বৈশিষ্ট্য নতুন পৃথিবীর নতুন ধারায় কবিতায় অনস্বীকার্য। যাহা আধুনিকে দূরের কথা, হাজার বছরের অধিক জীর্ণ বাংলা কবিতায়ও ছিলো না। প্রথমটি কারো কবিতায় থাইকলেও তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। কিন্তু নতুন ধারার কবিতায় সবার জন্য তা পিনাবদ্ধ। বহুরৈখিকতা আবশ্যক। আধুনিকের মতো শুধু মৌল নয়, গৌনদের কথাও কইবে। সমাজ কাঠামো নির্মাণে তাহাদের প্রভূত অবদান। ভালোবাসা, কাম, নারীর সৌন্দর্য ও ক্ষমতায়ন বৈধ। নতুন পৃথিবীতে সব কিছুই নবীকরণ। আধুনিকতার লগে যার দোস্তী ভাব নাই। করোনাকালীন সৃষ্ট সাহিত্যই বিশ্বে ‘নতুন ধারা’। এটা করোনাকালে ধুমকেতুর মত হঠাৎ, দৈবিক সৃষ্টি। কোনো বিবর্তন নয়। বিবর্তন ঘটে ধীরে। জয়তু নতুন ধারা।”

প্রিয় পাঠক, সত্যি কথা বলতে কী, ইশতিহারটি মনোযোগ দিয়ে কয়েকবার পাঠ করুন। আশাকরি তাহলে আপনি নিজেই নতুন ধারার সাহিত্য সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পেয়ে যাবেন। মূলত নতুন ধারা হলো প্রাণ খুলে লেখার একটি ফ্ল্যাটফরম। চাষীরা যেমন মনের সমস্ত মাধুরি মিশিয়ে খেতে-খামারে যেমন খুশি চাষ করে থাকেন, আপনিও আমাদের নতুন ধারার সাহিত্যে যেমন খুশি মজা নিতে নিতে লিখতে পারবেন। স্বাধীন ভাবে শব্দ চয়নের অবারিত সুযোগ পাবেন।

প্রিয়বন্ধুরা, এবার আসুন নতুন ধারার কবিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে চেষ্টা করি। নতুন ধারার মানে নতুন আনন্দ, চিন্তা-চেতনা, ভালো লাগা, মন্দলাগা এককথায় আমাদের নিত্যদিনের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা থেকে শুরু করে সবধরণের সমস্যা একটি আনন্দঘন ভিন্ন মাত্রার কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করা।

বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলাভাষী কবি এবং লেখকগণকে এই ধারায় ঐক্যবদ্ধ করাই ত আমাদের লক্ষ্য। এই ধারার কবিতার গঠন হবে সংক্ষিপ্ত, রস হবে প্রগাঢ়। যাতে কবিগণ থাকবে স্বাধীন। ইচ্ছেমতো প্রমিত শব্দের সাথে হারিয়ে যেতে থাকা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার করতে পারবেন। আর পাঠকও সম্পূর্ণ কবিতা পড়ে রস আস্বাদন করতে পারবেন। এতে অহেতুক শব্দের বাড়াবাড়ি নেই। কঠিন কোনো বাক্য বিন্যাস নেই। কবিতার অর্থ বুঝতে পাঠককে গলদঘর্ম হতে হবে না। ডিকশনারি ঘাটতে হবে না। কবির ভালোবাসা ও বিশ্বাসে কবিতা চারাগাছ এর মতো বড় হবে। আসুন এই কথাগুলো মাথায় রেখে আমরা নতুন ধারায় কবিতা লিখি।

সম্মানিত পাঠক, এবার আসুন, নতুন ধারার কিছু কবিতার উদাহরণ দেয়া যাক। তাতে করে আপনারা নতুন ধারার কবিতা সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন।

পঞ্চাশ বছর।। চাষা হাবিব

তখনও ধ্রুবাবর্ত জীয়ন কূপে
ঢালছিল বিবস্ত্র জল;
উড়তে উড়তে উড়নচণ্ডী দেহখান কইতে থাকে
হামার বাড়িত আছিলো বড় বড় মোটকা ভর্তি চাল;
আজ সেই চালে মায়ার চাদর বালিশ চাপাকল
উত্তেজনা আর পঞ্চাশ বছরের পুরান একরত্তি
ছিপছিপে বংশাল শাল। এখনো ঢালে ধ্রুবজল
হামরা হাপসাই যাই;
দমের ভিতর শালখানি গন্ধছড়ায়
দাদার বিড়ির গন্ধ–তামুক–খুঁইনি
পঞ্চাশ বছরের পুরান একরত্তি ছিপছিপে শাল।।

ক্ষুধা/ কবির আহাম্মদ রুমী

ক্ষুধা এক অন্ধকার ভাষা—–
যতিচিহ্ন উপড়ে ফেলা খটখটে নিষিদ্ধ নির্দয় কবিতা।
হাড্ডিতে করোটিতে বাজে রে বাজে
তবলার বোল; ক্ষুধা আদিম আন্ধার – যা–
মাইনসের মাথা নুয়ে দ্যায়- ইশ্বরের কাছে–
একদা মিছিল, পিকেটিং, লিফলেট বিলি পাঁচিলে চিকামারার গনগনে উত্তেজনার ফাঁকেও–
গম্ভীর রাইতে
মুখোমুখি হতাম– আমি ও রাত্রি!

.
ভিকটিম/ রেশম লতা

ভিকটিম, হোগলাপাতা!
গাছ সামলান জরুরি ছাদ থেইকে!
এপার ওপার এক সূতার দুই মাথা
গুরুত্বরা সাঁকো
নড়ে আর লাফায়
মুদি দোকানের সদাই বান্ধনের গেরান শুঁইকেই
খালুর শুক্রবার অতিবাহিত।
বেবাকতের অজানা নাওরন্দী খালের কাহিনী।

বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ / উৎপলেন্দু পাল

বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ
কোথাও কি আগুন লেগেছে ?

একফালি বারান্দায় বেশ শান্তি আছিল
সকালে রইদ পড়তো সন্ধ‍্যায় শিশিরের রেশ
দুই পা ছড়াইয়া বসলে ক্লান্তি শেষের তন্দ্রা
ভাজা বাদামের খোসা ছাড়ানোর আওয়াজ

হাচুইন‍্যার মা’য় গৈঠা দিত দেওয়াল জুইড়া
প্রভা বামনি গোবরের ছিটা ভোর রাইতে
হারুণ মুনসির আজানের সুর বাতাসের গায়
মেরি মাসী মোম জ্বালাইতো ক্রুশের তলায়

কাদের জানি রাইতের আন্ধারে ফিসফাস
দাবার বোর্ডে মাথা চুলকায় গম্ভীর মুখ
কাদের পোষাকে যেন গোপন রক্তের দাগ
অচেনা নিঃশ্বাস জুড়ে শুধু বারুদের ঘ্রাণ

ভাবসাবের কালাজ্বর / নটরাজ অধিকারী
.
গাঁওয়ের ভিতরে ঢুইকা গেছে শহুরের স্বভাব।
অতি গোপনে মিয়া ভাই আর মিয়া ভাই নাই
সে অহন ব্রাদার হইছে। চাচি-খালাম্মা অহন
আন্টি হইয়া ঘুইরা বেড়ায়, রোদচশমা চোখে
পরে সবকিছু রঙিলা দ্যাখে। কালাজ্বর যখন
ঝাপ্টাইয়া ধরে ভাবসাব, আধুনিকতা হারায়।
.
মইত্যা দাদার লাল গরুটা, বিকালকে জাবর
কাটে ; সইন্ধ্যা ল্যাদায়। রাইত বিরাইতে বসে –
হুক্কা টানে উত্তর পাড়ার মইজ্যা কাকু, কাশে ;
বাতাসে কালাজ্বর ভেঙে ভেঙে বিহান আসে।
.
হলুদ ফিতার উপর বসে উদাস রোদ পোহায়
করিমন পাগলীর চুলে ভাবসাবের কালাজ্বর।
.
লতা কাহিনী/ উত্তম কুমার দাস

ফোড়ন ওঠার ঝাঁজ দেইখ্যা লতা মুচকি হাসে…..
পরানের পোলার জিভের স্বাদ গ্যাছে…
তাই লতা আজ সাধ বদল করব…..
স্বাদ থেকে সাধ… জিভ থাইক্কা একদম মনে।

শিউলি পর্ব/ আবুল খায়ের বুলবুল

যতই কওনা কেন ভালো আছো তুমি
কেমনে কইমু কিভাবে আছো?
তা কিন্তু জানি, সালেহা নানীও তা বলে
কথাটা আসলে এইডা নয়
তুমি বুদ্ধির প‍্যাঁচ মাইরা সব সময় কথা কও
এইডা আশৈশবেও তোমাকে জানতাম।
দুখের বানে ভাইসা গেলেও তুমি বলতে
সুখের ফোয়ারায় গোছল করে আসছো।
আসলে কি তুমি আইজও সেই অভ‍্যাসটা ছাড়োনি?

সইত‍্যের উপর মিথ‍্যা দিয়ে সুন্দর কিছু অয় না
মিথ‍্যার মইধ‍্যে কখনও সত‍্যকে মিশাইও না,
তাতে জীবনের সৌন্দর্য ক্ষয়ে ক্ষয়ে ম্লান হয়ে যায়।
ও ফুল ও নিষাদ/মুকুল ম্রিয়মাণ
ও ফুল ও নিষাদ,
হরহামেশা জাগিয়ে তুলছো লালিত মেলানিন;
বিপন্ন বালিহাঁসের মিথুন দৃশ্য থেকে
দূরে সরে যাচ্ছে গায়েরী প্রেমিক।
আর আমার গল্পটাও জমজমাট!
গাঁ-গামালের রেশমী মেয়ে রেশমা
এহোন তোমাগোর মন কাইড়া লয়,
শোনো সুদর্শন ছোকরা হাচা কইতাছি-
একদিন আমারও মন কাইড়া নিছিলো-
সে ঘোলাটে চোখের বরকন্দাজ,
ঢুইকা পড়ছিলো এই বুকের জিরাতে

নতুন ধারায় লেখা কী অসাধারণ সব কবিতা। অযথা শব্দ চয়ন যেমন নেই, তেমনি প্রতিটি শব্দ মেদহীন। বাংলা ভাষার প্রমিত শব্দাবলীর সাথে আঞ্চলিক শব্দের কী অসাধারণ মেলবন্ধন। কবিতাগুলো পাঠক করলেই বুঝা যায়, ইহা কবিদের প্রাণের পরশ দিয়ে লেখা। উপমা, অলংকার, অনুপ্রাস এবং রুপকের নামে কবিতাকে দূর্বোধ্য করে তোলা হয়নি। একেবারেই সহজ-সরল এবং সকল শ্রেণির পাঠকের বোধগম্যর সীমার মধ্যে। এই ধরণের কবিতা নিঃসন্দেহে পাঠককে বেঁধে রাখবে বলে আমার গভীর বিশ্বাস।

তাই আমরা বলছি, নতুন ধারা কবিতার জগতে একটি বিপ্লব। দূর্বোধ্যতা এবং কাঠিন্যের জন্য যে পাঠক কবিতা পড়তে ভুলে গেছেন, কবিতার বই পড়তে ভুলে গেছেন…. আমার দৃঢ় বিশ্বাস নতুন ধারার কবিতা আবার সেই পাঠককে ফিরিয়ে আনবে। আর আমরাও ফিরে পাব কবিতার হারানো ঐতিহ্য। জয়তু নতুন ধারা।।

শেষ করছি নতুন ধারায় লেখা আমার একটি কবিতা দিয়ে—-

সুবাসিত আতর// জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
———————
রাইত পোহালেই যে কবিতার প্রসব অইত জ্বর
সে-ই অহন আজিব আন্ধার রাইতের ঘর!
সখিনা তবুও রোজ রাইতে চিল্লাইতে চিল্লাইতে
কয়-” সবাই তরা সব্বাই সুখ নিবার চাস
দুঃখগুলো কেন আমার বাড়িত পড়ে রয়!

জানস, হামারও অনেক অনেক সুখ আছে
এই যেমনঃ দাঁত ব্যথার সুখ
মেরুদণ্ডের হাড্ডি ক্ষয়ে যাওয়ার সুখ
রোজ রাইতে একলা একলা থাকবার সুখ!

হুন, তবুও আমার কোনো দুখ নেই…
একদিন পাহাড় ছিলাম আর অহন পাথর
তোরা চোখ-মুখে মাইখ্যা নে সুবাসিত আতর!

আমরা গভীর ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন ধারার মাধ্যমে কবিতার পালাবদল হবে। নিত্য-নতুন ভাবধারা, রহস্যময় আবেদন এবং আঞ্চলিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন ধারার কবিতা অবশ্যই পাঠক ফিরিয়ে আনবে এবং কবিতা ফিরে হারানো জৌলুশ এবং প্রাণের স্পন্দন।
————————–

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
কবিতায় নতুন ধারাঃ স্বপ্ন নয় বাস্তবতা, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৫-০৫-২০২৩ | ১২:৪৯ |

    আমরা গভীর ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন ধারার মাধ্যমে কবিতার পালাবদল হবে। নিত্য-নতুন ভাবধারা, রহস্যময় আবেদন এবং আঞ্চলিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন ধারার কবিতা অবশ্যই পাঠক ফিরিয়ে আনবে এবং কবিতা ফিরে হারানো জৌলুশ এবং প্রাণের স্পন্দন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...