আরশি কদম আলীর ছোট মেয়ে। তিনজনের মধ্যে তৃতীয়। বয়স মাত্র পাঁচ বছর। বলা চলে একটি সুবাসিত ফুলের কুঁড়ি। মুখে গুটিকয়েক দাঁত উঁকি দিয়েছে। সেই দাঁত মেলে যখন হাসে তখন কদমের ঘর আলোকিত হয়ে উঠে। আর যখন কাঁদে তখন আষাঢ়ে বৃষ্টির মতো আঁধার নেমে আসে। আরশির মুখে কাবুলিওয়ালার মিনির মতোন অনর্গল কথার খৈ ফুটে। সে ভুতেদের জ্যান্ত ছবি আঁকতে পারে। পুতুলের বিয়েতে কান্নাকাটিও করতে পারে। এভাবেই কদমের কুঁড়েঘরে রোদ-বৃষ্টির খেলা চলে। ওর হাসি, অভিমানী কান্না, হাঁটা-চলা, কথা বলা সবকিছুতে এতো আলো যে, কদম মেঝেতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দিয়ে উড়তে থাকে। মেঘের সাথে কিছুক্ষণ ভাসার পর আরশির আকস্মিক ডাকে মাটিতে ফিরে আসে।
রোজকার মতো আজও আরশি আর কদম একসাথে ঘুমিয়েছে। এই ঘুম যেমন-তেমন ঘুম নয়। রীতিমতো বারো-তেরো হাত লম্বা ঘুম। এই ঘুমের আবার কয়েকটি বিশেষ স্টাইল আছে। এই যেমনঃ প্রথমেই আরশি কদমের বুকের উপর বুক রেখে শুইতে হবে। অতঃপর যতক্ষণ না আরশি ঘুমের রাজ্যে বেড়াতে না যায়, ততক্ষণ চলতে থাকবে কদমের গল্প বলা। অবশ্য এখানেই শেষ নয়, গল্পের বাঁকে বাঁকে চলতে থাকে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন। আর এসব প্রশ্নও যেন-তেন প্রশ্ন নয়। ধারালো তলোয়ারের মতো সুতীক্ষ্ম সেসব প্রশ্ন। কোনোরকম গড়-পরতা উত্তর দেওয়ার জো নেই। তাহলে জরিমানাসহ এর মাসুল গোনতে হয়।
ঘুম ভাঙতেই কদম বুঝতে পারে, সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। একটি বিশেষ অবস্থা নিজের অজান্তেই অতিক্রম করে চলেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই রহস্যের জাল ছিঁড়ে যায়। কদম বুঝতে পারে, তার দুই কানের ভেতর দুটি মিহি আঙুল ঢুকানো আছে। চোখ না মেলেই বুঝতে পারল এ এ নিশ্চয়ই আরশি কাজ। আরও বুঝতে পারল নিশ্চয়ই এর কোনো জবরদস্ত কারণ আছে। কারণ আরশি উদ্দেশ্যহীন কোনো কিছু করে না। কদম কিছুক্ষণ চুপচাপ অপেক্ষা করল। আরশি একইভাবে দুই কানে দুই আঙুল ঢুকিয়ে কদমের মাথার পাশে বসে আছে। অবশেষে আরশির ধৈর্যের কছে কদম আলী পরাজিত হল। জিজ্ঞেস করল, আমার কানে আঙুল ঢুকিয়েছ কেন মা?
আরশি বলল, মাম্মা সেলাই মেশিন চালাচ্ছে তো। তাই অনেক শব্দ হচ্ছে। তোমার যাতে ঘুৃৃম ভেঙে না যায়, এজন্য আমি তোমার কানে আঙুল ঢুকিয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছি বাবা। বাবা, আমি কি ভালো কাজ করিনি?
আরশির কথা শুনে কদম খুব খুশি হল। এইটুকু মেয়ের এতোটা সুতীক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি! দেখে তার বুক সাত আকাশের সমান বড় হয়ে গেলো আর কেবলই হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর নাম মনে হতে লাগল। কদম আলী আরশির প্রশ্নের কোন জবাব দিল না আরশিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
loading...
loading...
loading...
দারুণ গল্প! শুভ বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
loading...