আগামী বছরের সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তা এখন টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের ছোট-বড় সকল রাষ্ট্র এ বিষয়ে সোচ্চার এবং শংকিত। আর শংকিত হওয়াটাই একান্ত স্বাভাবিক। কেননা মারাত্মক খাদ্য সংকট মানেই দুর্ভিক্ষ। আর দুর্ভিক্ষ মানেই কোটি কোটি প্রাণহানি। কেবল মানুষ নয়; প্রাণ যাবে অসংখ্য গৃহপালিত গবাদি পশু-পাখির। তাই আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এবং এ থেকে উত্তোরণের বিষয়ে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই যথার্থ সময়।
সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, বিশ্ব ‘মন্দার দ্বারপ্রান্তে’। বিশেষ করে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো এই মন্দায় অধিকতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আঙ্কটাডও এক প্রতিবেদনে বলেছে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি, সুদের হার বাড়ানোসহ নানা কারণ বিশ্বকে একটি বৈশ্বিক মন্দা ও স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাছাড়া আই এম এফ এবং বিশ্বব্যাংকও একই আশংকার তথ্য জানিয়েছে।
যদিও খাদ্য সংকটের বড় কারণ হিসাবে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড-১৯, পৃথিবী জুড়ে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে মজুতদারী, কালোবাজারি, দুর্নীতি, অপচয়, সুষম বণ্টনের অভাব এবং সরবরাহ চেইন সঠিকভাবে কাজ না করাও কম দায়ী নয়। সর্বোপরি খাদ্য সচেতনতার চরম অভাব তো আছেই! এসবের ফলশ্রুতিতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংগঠন এবং খাদ্য বিশেষজ্ঞগণ আগামী বছর বিশ্ব জুড়ে একটি চরম খাদ্য সংকটের আশংকা প্রকাশ করছেন। আমরাও মনে করি এই আশংকা অমূলক নয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতোন স্বল্প আয়তন অথচ অধিক জনসংখ্যার দেশে আগাম সচেতনতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। যদিও গত বছরের তুলনায় চার ধাপ এগিয়েছে, তারপরও রাজনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার (৭৯) চেয়ে একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যানটিও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাহীতার চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আবারো অনুরোধ করছি কোন খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সারাবিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি,তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ বক্তৃতার এই চম্বুক অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী।
আর তাই দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কৃষি ঋণ বিতরণ, গবেষণায় অগ্রাধিকার ও প্রণোদনা দেওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথেই ছিলাম আমরা। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞাই এখন খাদ্য নিরাপত্তা প্রধান হুমকি। এই হুমকি মোকাবিলায় আমাদেরকে মিতব্যায়ী হতে হবে। রাষ্ট্র যন্ত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত — সকল পর্যায়ে প্রকৃত সাশ্রয়ী মনোভাবাপন্ন হতে হবে। দুর্নীতি, অর্থপাচার, অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ এবং আপদকালীন সময়ে এর সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করতে হবে। কারো একার পক্ষে এই খাদ্য সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়।
প্রয়োজন সকলের সার্বিক সচেতনতা, যথাযথ কর্মপরিকল্পনা এবং স্বদেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ সততা এবং নিরপেক্ষতার সাথে তার বাস্তবায়ন। তবেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশ রক্ষা পাবে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে।
loading...
loading...
প্রয়োজন সকলের সার্বিক সচেতনতা, যথাযথ কর্মপরিকল্পনা এবং স্বদেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ সততা এবং নিরপেক্ষতার সাথে তার বাস্তবায়ন। তবেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশ রক্ষা পাবে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে।
loading...