কাজল সাহেবের ঘুম আসছে না। অহেতুক মন খারাপ। মাঝে মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে থাকে। অথচ বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ বলেছেন প্রকৃতিতে কোনো কারণ ছাড়া কিছুই হয় না। কাজল সাহেব ভাবছেন, তাহলে উনার এই মন খারাপের কারণ কি?
কেউ একজন ফিস ফিস করে বললো, তোমার মন খারাপ হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, তোমার কাছে মেসেজ আসছে কিন্তু তুমি তা ধরতে পারছো না।
ঘরে লাইট অফ করা আছে। বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালাবেন কি না বুঝতে পারছেন না। একটু ভয় ভয় লাগছে। কাজল সাহেব একটু রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন, কে ফিস ফিস করে কথা বলে?
আবার সেই ফিস ফিসঃ আমি ডুডুভব ভ্রল্ল।
কাজল সাহেব বললেন, “তোমরা ডুডুভন’রা কি পেয়েছো? তোমরা কি আমাকে জ্বালাতন করেই যাবে? কিছুদিন পর পর তোমরা এসে কি সব আজব আজব কথা বলো?”
ডুডুভন ভ্রল্লঃ আপনি ঠিকই ধরেছেন।
কাজল সাহেবঃ কি ঠিক ধরেছি?
ডুডুভন ভ্রল্লঃ আপনার কাছে আমি একটি ম্যাসেজ নিয়ে এসেছি এই জন্য আপনার মন খারাপ।
– কি ম্যাসেজ?
– মিলিট্যান্ট হামলা হবে
– কি? মিলিট্যান্ট আবার কি?
-মিলিট্যান্ট হলো এক্সট্রিমিস্ট
– এর মানে কি?
– এই যুগে কেউ ডিকশনারি তেমন ঘাঁটে না, গুগোল ট্রান্সলেটে যান মানে পেয়ে যাবেন
– যাইহোক, সেই মিলিট্যন্ট বা এক্সট্রিমিস্ট হামলা কেন হবে?
– এটা ওদের এমন একটা স্ট্র্যাটেজি যখন কোনো ভাবে মানুষকে, জনগণকে, দেশকে বিব্রত করতে পারে না তখন এই স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে।
-কিন্তু এরা কারা?
– এরা বেশ কিছুদিন আগে গুজব সন্ত্রাস করেছিলো – জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলেছিলো একটি সেতুতে অগণিত মানুষের মাথা লাগবে তাই ভয়ে কেউ ওই সেতুর কাছে যেতো না।
– আচ্ছা!
– ওই স্ট্রাটেজি যখন বিফলে গেলো তখন জার্নাল সন্ত্রাস করেছিলো
-সেটা কেমন?
-একটি গণমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়েছিলো যেন দেশের প্রধান এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। দেশের প্রধানকে খুশি রেখে একটি বাহিনীর প্রধানের নামে মিথ্যাচার করেছিলো
-কিন্তু ওরা এমন করছে কেন?
– দেশের শাসনভার নেয়ার জন্য
– ও, আর কি করেছে?
– কিছুদিন আগে উনারা ঘরে থেকে মাঠে নামিয়েছিলো একটি ধর্মীয় দলকে যারা ধর্মকে ব্যাবহার করে তান্ডব চালায়।
– কি তান্ডব করেছিলো?
-তারা অগ্নি সন্ত্রাস, ভাংচুর সন্ত্রাস ইত্যাদি করে সরকার পতন করে নিজেরা এবং যারা ঘরে থেকে ওদের মাঠে নামিয়েছিলো তারা মিলে দেশের শাসনভার নেয়ার চেষ্টা করেছিলো।
– ও, বুঝতে পেরেছি
– কিন্তু সেটাতেও যখন সফল হলো না এখন তাই মিলিট্যান্ট হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে
– ও, এই মিলিট্যান্ট মানে কি যেন?
– এক্সট্রিমিস্ট
– ও হ্যাঁ এটার অর্থ খুঁজতে আবার গুগোল ট্রান্সলেটে যেতে হবে
– ওরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু শক্তিশালী বোমা তৈরি করেছে
– হোয়াট? টার্গেট কারা?
– টার্গেট দেশের প্রধান, সেখানে সফল না হলে সাধারণ মানুষকে রক্তাক্ত করে দেশের প্রধানকে বিব্রত করবে
– এতো রক্তপাত ঘটাবে কি করে?
– কেন আপনাদের দেশে এর আগেও তো সিরিজ বোমা হামলা হয়েছিলো
– সিরিজ বোমা হামলা করবে তাহলে গোয়েন্দা বিভাগ কি করছে?
– তারা বিষয়টা একটু আধটু আঁচ করতে পেরেছে কিন্তু শিওর হতে পারছে না কারণ ওই এক্সট্রিমিস্টদের আস্তানা অনেক গোপনে আছে
– কোথায় আস্তানা আপনি বলুন তো ডুডুভন ভ্রল্ল
– কি করে বলবো? মোবাইল ট্র্যাক করে বা অন্যান্ন ডিভাইস ট্র্যাক করে তাদের আস্তানা লোকেট করতে যে সময় লাগে সেই সময় পর্যন্ত তারা এক স্থানে থাকে না
– ট্র্যাক করতে কতো সময় লাগে?
– মিনিমাম ২২ মিনিট কিন্তু তারা ২১ মিনিটের বেশি কোথাও থাকে না
কাজল সাহেব বললেন, শুনুন ডুডুভন, আপনার এইসব গাল গল্প কবি সাহিত্যিকদের কাছে গিয়ে বলুন তাহলে উনারা খুব সুন্দর প্লট পাবে এবং এডভেঞ্চার এবং ডিটেক্টিভ কাহিনী লিখে ফেলবে, আমাকে এই রাত দুপুরে অহেতুক ডিস্টার্ব করতে আসবেন না।
কাজল সাহেব বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আর ওই ফিস ফিস শব্দ শুনতে পেলো না। এখন কাজল সাহেবের অহেতুক মন খারাপ ভালো হয়ে গেছে। বরং হাসি আসছে – এই ডুডুভন যে কবে থেকে কাজল সাহেবের কাছে আসা বন্ধ করবে সেটাই ভাবছে। না কি কোনো সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে সব খুলে বলবে তা বুঝতে পারছে না।
আবার ফিস ফিস শব্দঃ সাইক্রিয়াটিস্ট আপনার সমাধান করতে পারবে না। কি ভেবেছেন? আপনাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুমিয়ে রাখবে আর ডুডুভন আসতে পারবে না? ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে এখন ঘুমান। আমি আবার সময় মতো আসবো।
loading...
loading...
নিরীক্ষামূলক ব্যতিক্রম উপন্যাস আলাপন নামে আপনার একটি গ্রন্থ রয়েছে।
আমার বিশেষ ইচ্ছে আছে পুরো লিখাটি পড়বো। এই পর্বের জন্য শুভেচ্ছা রইলো।
loading...