আজ আমার বয়স আশি
যে বি এম ডাব্লিউতে এখন যাচ্ছি; সেটা আমারি কেনা
যে বহুতল ভবনের পাশ দিয়ে এখন যাচ্ছি; সেটা আমারি ফ্যাক্টরি
আজ আমার বয়স আশি
আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি
আমার স্ত্রী মারা গেছে আজ দশ বছর
আমার দুই সন্তান আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আজ নতুন ঠিকানায়
যেতে রাজি নই তবু যেতে হচ্ছে
শরীর যে দুর্বল শক্তি হারাচ্ছে!
এক ঘন্টা পর আমাকে নামিয়ে দিলো “শেষ জীবন” এ
ঠিকই ধরেছেন; “শেষ জীবন” একটি বৃদ্ধাশ্রমের নাম।
একটি রুমে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম
তারপর আমার সন্তান এসে নিয়ে গেলো একটি রুমে
বললো, বিছানার চাদরটা বেশ পরিষ্কার না?
আমি চুপ করে থাকলাম
তারপর বললো, “বাবা আমি আসি – এখানে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না”
আমি চুপ করে থাকলাম
আমার সন্তান আবার বললো, রুমটা বেশ পরিপাটি আর বিছানার চাদর বেশ পরিষ্কার
যাওয়ার সময় আমি শুধু বললাম,জন্মের পর তোর নষ্ট করা ছোটো কাঁথা – বিছানার চাদর আমিই পরিষ্কার করতাম।
এর দু দিন পর, দুপুরের খাবার খেয়ে মনটা আনচান করে উঠলো
আমি রুম থেকে বেরিয়ে দোতালা থেকে নিচের বাগান দেখছিলাম
“তুমি রফিক না?” – একটি ভারি মহিলা কণ্ঠ
আমি বললাম, হ্যাঁ কিন্তু আপনি?
বেল্কুনি থেকে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি মালিহা
মালিহা? মানে বগুড়ার মালিহা?
তারপর কিছুক্ষণ নিরবে কেটে গেলো
আমিই নিরবতা ভাঙলাম, বলেছিলাম না? আমরা একসাথে থাকবো?
মালিহার চোখে এক বিদ্যুৎ ঝিলিক এসে চলে গেল, বললো – আমাকে বিয়ে করলে না কেন?
আকাশে বিজুলি চমকালে বৃষ্টি নামে; মালিহার চোখে জল
আমি বললাম, কাঁদছ কেন?
তুমি এতো বড় শিল্পপতি হয়েও……
থাক না সেসব কথা, বাকিটা জীবন তো একসাথেই আমরা কাটাতে পারি
কিন্তু আমিতো চেয়েছিলাম তুমি আমার যৌবনের অংশ হও – চেয়েছিলাম আমাদের সংসার হোক – আজ যে আমি সত্তর!
একজন পুরুষের কাছ থেকে একজন নারীর জৈবিক চাহিদা এবং সংসার ছাড়া আর কিছু প্রত্যাশা থাকে কি?
মালিহা বললো, থাকে – এক স্বর্গীয় ভালোবাসা যা সংসার জীবনের মতো ক্ষয়িষ্ণু নয় – যা গোলাপের মতো পবিত্র – খাওয়া যায় না অথচ তার সৌন্দর্য তার সুঘ্রাণ কেউ হারাতে চায় না।
loading...
loading...
‘এক স্বর্গীয় ভালোবাসা যা সংসার জীবনের মতো ক্ষয়িষ্ণু নয় – যা গোলাপের মতো পবিত্র – খাওয়া যায় না অথচ তার সৌন্দর্য তার সুঘ্রাণ কেউ হারাতে চায় না।’ ___ মুগ্ধপাঠ।
loading...
তার সুঘ্রাণ কেউ হারাতে চায় না। সত্যি, না।
loading...