আজ হতে ঠিক একশত বছর আগে
শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের
ঘর আলোকিত করে
তুমি এসেছিলে এই বাংলায়
মধুমতী নদীর তীরে
গোপালগঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায়।
উনিশ্য তেত্রিশ সালে বিয়ে আর
বিয়াল্লিশ সালে ম্যাট্রিকুলেশন,
তেতাল্লিশ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিমলীগের কাউন্সিলর
আর ছিচল্লিশ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক-
ঠিক তখোনি কুখ্যাত “ক্যালকাটা কিলিং” সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু;
তুমি জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে
রক্ষা করেছিলে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের,
কে জানতো তখন, তুমিই হবে বাঙালি জাঁতির পিতা।
উনিশ্য সাতচল্লিশে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি
তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য
সোহরাওর্দীর সাথে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলে তুমি,
আটচল্লিশ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি এবং
ওই বছরই “রাষ্ট্রভাষা উর্দুকে মেনে নিতে হবে” – খাজা নাজিমুদ্দিনের
এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তৈরি করেছিলে “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”-
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় তোমাকে গ্রেফতার করা হয়-
আটচল্লিশ সালেই “ছাত্রলীগ” এবং ঊনপঞ্চাশ সালে “আওয়ামীলীগ” প্রতিষ্ঠা করেছিলে।
উনিশ্য বাহান্ন সালে আবার খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণা ” একমাত্র উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা”
২১ ফেব্রুয়ারীর ওই দিনে তুমি ছিলে জেলে বন্দি কিন্তু তোমার তৈরি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি নিয়ে একশ চুয়াল্লিশ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে
মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলিতে রফিক বরকত সালাম’রা শহীদ হলে
জেলের ভেতরেই আমরণ অনশন শুরু করেছিলে,
অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারীতে মুক্তি পেয়েই চীনের শান্তি সম্মেলনে গিয়ে বাংলায় বক্তৃতা
দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে গিয়েছিলে বৈশ্বিক অঙ্গনে।
উনিশ্য চুয়ান্ন সালে পুর্ব পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সংখ্যা গরিষ্ট আসন
পেলেও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান প্রহসনের “ভারত স্বাধীনতা আইন” প্রয়োগ করে
যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে বাঙালি জাতিকে করেছিলো বঞ্চিত।
উনিশ্য ছাপ্পান্ন সালে মাত্র নয় মাস পর মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়েছিলে
বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য।
উনিশ্য আটান্ন সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে
সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে তোমাকে একের পর এক
মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে ১৪ মাস পর মুক্তি দিয়ে সেদিনই আবার
জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করেছিলো।
উনিশ্য একষট্টি সালে “স্বাধীন বাংলা বিল্পবী পরিষদ”
বাষট্টি সালে “জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট” এবং
চৌষট্টি সালে “কম্বাইন্ড অপজিশণ পার্টি” গঠন করেছিলে।
উনিশ্য ছিষট্টি সালে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে
পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের শেকড়ে
করেছিলে কুঠারাঘাত।
আটষট্টি সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ” রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব” দায়ের করে আইয়ুব সরকার।
উনসত্তর সালে দেশব্যপী টানা গণআন্দোলনের মুখে
আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
একই বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তোমাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করে,
ওই বছরেই তুমি পুর্ব পাকিস্তানের নাম দিয়েছিলে “বাংলাদেশ”।
উনিশ্য সত্তর সালের সাধারণ নির্বাচনে তুমি আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকা বেছে নিয়েছিলে
মাত্র দুটি আসন বাদে সব আসনেই তুমি জিতেছিলে,
কিন্তু উনিশ্য একাত্তর সালে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে
পহেলা মার্চে ইয়াহিয়া অনিদৃষ্ট কালের জন্য অধিবেশন বন্ধ করে দেয়।
মার্চ হয়ে ওঠে উত্তাল, সর্বস্তরের বাঙালি রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে,
অতঃপর এলো সেই সাতই মার্চ, রেসকোর্সের ময়দান পরিণত হলো জনসমুদ্রে,
পৃথিবী কেঁপে উঠলো তোমার বজ্র কণ্ঠের আওয়াজেঃ
“আর যদি একটা গুলি চলে-
আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়-
তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো-
প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তলো-
তোমাদের যা কিছু আছে-
তাই নিয়ে-
শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে”
বিশ্বের হাজার কোটি কর্ণকুহরে পৌঁছেছিলো তোমার প্রদীপ্ত কন্ঠঃ
“তেইশ বছরের করুণ ইতিহাস-
বাংলার অত্যচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস
তেইশ বছরের ইতিহাস-
মুমুর্ষ নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস
বাংলার ইতিহাস-
এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস”
সাত কোটি বাঙালির মনে জাগ্রত হয়েছিলো দুর্বার অদম্য সাহসী শক্তি
সেই সাহসী শক্তি পরিণত হয়ে হয়েছিলো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার এক প্রলংকারী মহাশক্তি
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজিত হলো মুক্তিবাহিনীর কাছে
জেগে উঠলো স্বাধীন বাংলার নতুন সূর্য
তৈরি হলো স্বাধীন বাংলা, বাঙালি জাতি এবং জাতীয়তা
সেই থেকে তুমি আছো, তুমি থাকবে চিরকাল হে বাঙালি জাতির পিতা।
loading...
loading...
অপূর্ব কথা মালা।
loading...
তুমি থাকবে চিরকাল হে বাঙালি জাতির পিতা। লিখাটি অর্থ্যাৎ সত্য এই ইতিহাসকে আমার মানসচক্ষে খুব বেশী সংক্ষিপ্ত মনে হয় নি, বরং আজকের প্রজন্মের মাথায় নেয়ার জন্য বেশ পরিষ্কার করেই এসেছে। ইতিহাস অস্বীকার করার জো নেই।
loading...