সামাজিক সোসাইটি
– আচ্ছা! আপনি এই হুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে আমার কাছে এসে অযথা হাজির হন কেন বলবেন?
– ভাই, আমিতো এর আগেও বলেছি, আমি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া আপনার কাছে আসি না।
– হুম, তো এবার কী সমস্যা নিয়ে এসেছেন দ্রুত বলে চলে যান।
– দ্রুত চলে যাবো? আপনি কি আজ বেশি ব্যস্ত?
– নাহ।
– তাহলে?
– আজ মন ভালো নেই।
– কেন?
– জানি না, মাঝে মধ্যে কোনও কারণ ছাড়াই অহেতুক মন খারাপ হয়ে যায়।
-ও
– শুনুন, এই প্রকৃতিতে কোনও কারণ ছাড়া কিছু ঘটে না।
– ও
– ও ও করছেন কেন, আমার মন কেন খারাপ হয়েছে এটা আমি না জানলেও এর পেছনে নিশ্চিত কোনও কারণ আছে।
– কী কারণ?
– আরে! সেটাইতো মাঝে মধ্যে ধরতে পারি না, অহেতুক মন খারাপ হয়ে যায়।
– আমি একটি বিষয়ে জানতে এসেছি।
– কী বিষয়?
– স্রোতের বিপরীতে চলা কি ঠিক?
– সব সময় নয় তবে কিছু কিছু সময় স্রোতের বিপরীতে চলা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না।
– তারমানে স্রোতের বিপরীতে চলা আপনি সমর্থন করেন?
– কেন নয়?
– আজ পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞজন বা দার্শনিক কি স্রোতের বিপরীতে চলার কথা বলেছেন?
– হ্যাঁ, বলেছেন।
– কে সেই দার্শনিক?
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
– কী বলেছেন?
– সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনে “একলা চলো রে”।
-উনার মতো এতো বড় মাপের কবি এই ভুল কথাটি কেন বললেন?
– উনি ভুল বলেন নি।
– তাহলে আমাকে বুঝানতো! কোন ক্ষেত্রে একলা চলবো?
– ধরুন আপনার ছেলে-মেয়ে সহ পরিবারে মোট সদস্য ১২ জন।
– আচ্ছা!
– এর মধ্যে আপনার ছেলে-মেয়ে ৭ জন।
-আচ্ছা!
– ৭ জনের মধ্যে ৫ জন ছেলে আর ২ জন মেয়ে।
– তারপর?
– আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনার পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
– কী করে?
– এক ছেলে মাস্টার্স পাশ করে ঘুরে ফিরে আর খায়, চাকুরীর চেষ্টা করে না।
– তো?
– আরেক ছেলে মাদকাশক্ত হয়ে গেছে, রাত ৩টায় বাসায় ফেরে।
-আচ্ছা!
– আরেক ছেলে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে, এলাকায় ভদ্র সমাজের মানুষদের ডিস্টার্ব করে।
– আচ্ছা!
– আর ২ জন স্কুলে পড়ে কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করে, সারাদিন স্টার জলসা, জি বাংলা নিয়ে পড়ে থাকে অথবা ব্লু হোয়েল বা পাবজি গেম খেলায় ব্যস্ত থাকে।
– ওহ! এমন হলেতো সমস্যা!
– এই ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের স্বার্থে আপনাকে স্রতের বিপরীতে একলা চলতে হবে।
– সেটা কেমন?
– আপনার বাসার দরজা সন্ধ্যা ৬ টায় বন্ধ করে দিতে হবে, ওই মাদকাসক্ত ছেলেটা রাত ৩ টায় এসে যতই হাউখাউ করুক দরজা খোলা যাবে না।
– কিন্তু আমার স্ত্রীতো দরজা খুলে দেবে।
– আপনার স্ত্রীর প্যানপ্যানানি শোনা যাবে না, আপনি আছেন স্রোতের বিপরীতে এবং কঠোর থাকতে হবে, দরজার চাবি আপনার কাছে থাকবে।
– কিন্তু এতে যদি ওই চেলেটি দড়জা বন্ধ পেয়ে রাতভর নেশায় মত্ত হয়?
– তাহলে ফোর্স এনে এ্যাম্বুলেন্সে করে রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারে পাঠিয়ে দিতে হবে।
-ও
– আর যেটা মাস্টার্স পাশ করে শুধু খায় দায় আর ঘুরে ফেরে ওকে বাসা থেকে বের করে দিতে হবে।
– কী বলেন? তাহলে থাকবে কোথায়? খাবে কী?
– দু চার দিন কিছু বন্ধু বান্ধবের বাসায় থাকতে চাইবে কিন্তু দু দিন পর বন্ধুরাই ওকে আর রাখবে না।
– তাহলে?
– রাস্তায় ঘুরবে আর পেটে ক্ষিদে পেলেই টাকার প্রয়োজন অনুভব করবে।
– কিন্তু হঠাৎ করে টাকা পাবে কোথায়?
– সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না, প্রয়োজনে রিক্সা চালাবে।
– কী বলেন? মাস্টার্স পাশ করে রিক্সা চালাবে?
– হ্যাঁ, রিক্সা চালাবে, মটর সাইকেল চালাতে জানলে পাঠাও চালাবে আর গাড়ি চালাতে জানলে উবার চালাবে।
– তারপর?
– এগুলো চালাতে গিয়ে যখন মানুষের গাল মন্দ শুনবে তখন টনক নড়বে এবং এগুলো্র পাশাপাশি কী করে ভালো চাকুরী পাওয়া যায় সে দিকে মন দিবে।
– কিন্তু যদি আমার সাথে সম্পর্ক চিন্ন করে?
– করুক! মানুষের লাত্থি গুতা খেয়ে পৃথিবী কী তা যখন চিনতে শিখবে তখন আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও পারে।
– কিন্তু……
– কোনও কিন্তু নেই, ওই সময়েই তার ভেতরে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার জিদ তৈরী হবে এবং জীবনে যেদিন প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন সে বুঝবে আপনি ভালো কাজ করেছিলেন।
– ও
– আর যে ছেলেটা সন্ত্রাসী তাকে পুলিশে দিতে হবে।
– বলেন কী? তাহলেতো কোর্টে চালান করে দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেবে।
– জেলে পাঠানোর জন্যইতো পুলিশে দিতে হবে।
– তাতে কী ভালো হয়ে যাবে?
– জ্ঞান বুদ্ধি থাকলে ভালো হয়ে যাবে।
– কিন্তু যদি জেল থেকে বেরিয়ে আরও বড় সন্ত্রাসী হয়ে যায়?
– তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির ব্যাবস্থা আছে।
– ও মাই গড! বলেন কী ভাই? আমি যাই আজ, মনে হয় আসলেই আপনার মন খারাপ আছে আজ।
– না, আপনি যেতে পারবেন না।
– কেন?
– আমার কাছে কেউ কোনও সমস্যা নিয়ে আসলে তার পুরোপুরি উত্তর না দিয়ে আমি যেতে দেই না।
– ভাই, জেলে না পাঠিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়?
-ভালো হবে না।
– কেন?
– ওই সন্ত্রাসী ছেলেকে যদি ১২ লাখ টাকা খরচ করে ইউরোপ বা এমেরিকায় পাঠান তাহলে সে যা ইনকাম করবে সব বার এ গিয়ে শেষ করে দেবে।
– তাই নাকি?
– দশ বছর পর দশ কোটি টাকা নিয়ে দেশে না ফিরে হয়তো দেখবেন ওই দেশের সরকার অপরাধের কারণে জেল খাটিয়ে শুণ্য হাতে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে।
– ও
– আর যে দুটা টিভি আর গেমস নিয়ে পড়ে থাকে তার জন্য প্রথমে টিভি বিক্রি করে দিবেন এবং তারপর মোবাইল সিজ করে নিবেন।
– ও
– আর পড়ালেখা না করলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবেন।
– বলেন কী? এক রাত না খেলেইতো ঘুমাতে পারবে না।
– ঘুমাতে না পারলে ক্লাসের বইতো পড়তে পারবে।
– কিন্তু আমার স্ত্রী সহ আত্নীয় স্বজন সবাইতো আমাকে ভুল বুঝবে!
– বুঝুক! সেটা হবে সাময়িক।
– কী করে সাময়িক?
– রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টার থেকে ফিরে এসে যখন আপনার ওই মাদকাশক্ত ছেলে যখন একদিন বি সি এস অফিসার হবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– তা অবশ্য ঠিক।
– বেকার যে চেলেটিকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন সেই ছেলেটির নিজের প্রতিষ্ঠানে যেদিন ২/৩ হাজার মানুষের কর্ম সংস্থান হবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– দারুণ বললেন তো!
– জেল খেটে আসার পর যেদিন সেই ছেলেটি আই জি প্রিজন হবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– কিন্তু……
– না, কিন্তু নেই, আপনি এখন স্রোতের বিপরীতে, কে কী বললো তা শোনার সময় নেই।
– আচ্ছা!
– যে দুটোকে দু রাত খেতে দেন নি সেই দু জন যখন গোল্ডেন এ পাবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– না, মানে বলছিলাম, এই যুগের চেলে মেয়েতো! যদি আমার উপর আক্রমণ করে বসে?
– এই বিষয়ে আপনি জানতে না চাইলেও আমি বলতাম।
– কী বলতেন?
– এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, কঠোর হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে।
– ভাই, আপনি যা বলছেন এমন কি এর আগে কেউ করেছে?
– হ্যাঁ, করেছে, তবে সেটা আরও বৃহৎ স্বার্থে করেছে।
– কী স্বার্থ?
– দেশ এবং জনগণের স্বার্থ।
– কে তিনি?
– মাহাথির মোহাম্মদ।
– ও
– উনি ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দশ বছর সে দেশের জনগণ উনাকে ভুল বুঝেছিলো।
– তাই নাকি?
– উনি যখন ক্ষমতায় এলেন তখন দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো টোটালি ক্যাওজ।
-ও
– তখন তিনি স্রোতের বিপরীতে চলার সিদ্ধান্ত নিলেন।
– সেটা কেমন?
– খুন, ধর্ষন, মিছিল লেগেই ছিলো।
– ও
– রাজনীতির নামে যারা আইন শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর হলেন।
– ও
– তখন হিউন্যান রাইট গ্রুপগুলো মাহাথিরকে প্রশ্ন করতে লাগলো, where is your freedom?
– তারপর?
– তিনি উত্তর দিতেন, free for whom? free for rogue speculators? free for anarchists?
– তাই নাকি?
– উনি আরও উত্তর দিতেন, free for whom those are watching to destroy weak countries in their crusade for open societies?
– আচ্ছা!
– এরই মধ্যে মাহাথিরে এর বিরুদ্ধে লেগে গেলো বিশ্ব মোড়লেরা, বললো, সে একজন ডিটেকটর, ওই দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণকেও ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করলো।
– কেন বিশ্ব মোড়লেরা এইগুলো করলো।
-শুনুন, তৃতীয় বিশ্বের কোনও দেশে টাকার অভাব থাকলে যত টাকাই লাগুক বিশ্ব মোড়লেরা তা লোন হিসেবে দেবে কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের কোনও দেশের উন্নয়ন হোক এটা বিশ্ব মোড়লেরা চায় না।
– তাই নাকি?
– কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ ভেঙে পড়েন নি, তাঁর লক্ষে অবিচল ছিলেন এবং লং টাইম প্ল্যান করে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করলেন।
– ও
– তখন ওই ফ্রিডম স্পিচার লোকদের খুঁজেও পাওয়া যায় নি।
-ও
– এবং দেশের জনগণেরও ভুল ভেঙে গেছে।
– কিন্তু ভাই আজ আপনাকে একটা কথা বলে যাই।
– কী কথা?
– আমার মনে হয় এই দেশেও একটা সুইসাইড স্কোয়াড তৈরি হচ্ছে।
– কী করে বুঝলেন? ওই যে একটি দল খোলস পাল্টাচ্ছে তাই?
– না, ওদের নিয়ে বেশি একটা ভাবছি না কারণ ওরা চাইলেও এখন পারবে না, দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সজাগ আছে, তাছাড়াও ওদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
– তাহলে কেন এমন মনে হলো আপনার?
– দিন দশেক আগে এক বিশ্ব মোড়ল বলেছিল, এই দেশের জন্য এখন সিকিউরিটি এলার্ট চলছে।
– বিশ্ব মোড়ল যেহেতু বলেছে তাহলে হয়তো হতে পারে কিন্তু এ দেশ যথেষ্ট সজাগ আছে।
– কী করে সজাগ আছে?
– শুনুন শুধু সরকার নয় এই দেশের কোনও জনগণ এটা হতে দেবে না।
– কী করে?
– জনগণ এখন সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা গড়ে তুলছে।
– কী করে?
– সন্তান যেনো বিপথে না যায় সেজন্য পিতামাতারা আদর স্নেহ সহ সন্তানদের বিপথ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় দূর্গ গড়ে তুলেছে।
– আর?
– প্রতিটি এলাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ধর্ম বর্ণ গোত্র ধনী গরিব নির্বিশেষে সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষ সোসাইটি গড়ে তুলছে।
– এইসব সোসাইটির কাজ কী?
– মাদক, সন্ত্রাস এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আমাদের সন্তানদের সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা।
loading...
loading...
সব সময় নয় তবে কিছু কিছু সময় স্রোতের বিপরীতে চলা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না।
loading...
কৃতজ্ঞতা প্রিয় বড় ভাই আন্তরিক মন্তব্যটির জন্য।
loading...
স্রোতের বিপরীতে চলাও কখনও কখনও কৌশল কবি ইলহাম ভাই।
loading...
যথার্থই বলেছেন কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
loading...
– এইসব সোসাইটির কাজ কী?
– মাদক, সন্ত্রাস এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আমাদের সন্তানদের সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা।
loading...
কৃতজ্ঞতা প্রিয় সুমন আহমেদ ভাই।
সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা ছাড়া এগুলো থেকে সমাজকে রক্ষা করা কঠিন বলেই মনে হয়েছে। শুভ কামনা রইলো।
loading...
কথোপকথনটি পড়লাম কবি ইলহাম দা। আপনার জন্য শুভকামনা।
loading...
শুভকামনা প্রিয়জন
loading...
পড়লাম ভাই।
loading...