কোড

কোড

এক লোক দৌড়াতে দৌড়াতে এসে থানায় ঢুকতেই গেটের সেন্ট্রি থামিয়ে জানতে চাইলো, কার কাছে যাবেন? লোকটি হাঁপাতে লাগলো কিন্তু মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। তখন সেন্ট্রি বললো, খাতায় এন্ট্রি করে যান। কিন্তু লোকটি এন্ট্রি না করেই ভেতরে ওসি সাহেব… ওসি সাহেব বলতে বলতে এক দৌড়ে ওসি সাহেবের রুমে ঢুকে গেল। তারপর আবার হাঁপাতে লাগলো। ওসি সাহেব উনাকে বসতে বললেন এবং জানতে চাইলেন, কী হয়েছে?

লোকটি হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক কষ্টে বললো, ওসি সাহেব, আমি গত ছয় মাস যাবত ঘুমাতে পারি না। ওসি সাহেব কলিং বেল চেপে এক কনষ্টেবলকে ডেকে একটা ওরাল স্যালাইন এনে পরিমাণ মতো পানিতে মিশিয়ে উনাকে দিতে বললেন। কনষ্টেবল ওরাল স্যালাইনের একটি গ্লাস দিয়ে চলে গেল। কিন্তু লোকটি আবারও বললো, ওসি সাহেব, বিশ্বাস করেন আমি ছয় মাস যাবত ঘুমাতে পারছি না।

ওসি সাহেব বললেন, আপনার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেছে আর এখন প্রচন্ড গরম পড়েছে, আগে স্যালাইনটা খান, ফ্যানের বাতাসে একটু স্বাভাবিক হোন তারপর শুনছি আপনার কি হয়েছে। লোকটি স্যালাইন টুকু ঢক ঢক করে গিলে ফ্যানের বাতাসে বসে আছে। ওসি সাহেব একটি পত্রিকা বের করে জানতে চাইলেন, এই পত্রিকার নাম কী? লোকটি নাম বলে দিলো।

এবার ওসি সাহেব অন্য একটি পত্রিকা বের করে সেটার নাম জানতে চাইলে লোকটি সেটার নামও বলে দিলো। এরপর ওসি সাহেব একটি ইংরেজি পত্রিকা বের করে সেটার নাম জানতে চাইলে তাও ওই লোকটি বলে দিলো। তারপর ওসি সাহেব বললেন, দেখুন, আপনার মেমোরি এবং সেন্স ঠিক আছে তবে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। লোকটি চিতকার করে বলে উঠলো, স্যার আমি ভুল জায়গায় আসি নি , বুঝে শুনেই এসেছি।

ওসি সাহেব বললেন, আপনি ছ মাস যাবত ঘুমাতে পারচেন না এজন্য ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যাবেন, থানায়তো ডাক্তার বসে না, এখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসারগণ বসেন। লোকটি বললো, এ জন্যইতো এখানে এসেছি। ওসি সাহেব কি যেন ভাবতে ভাবতে বললেন, বলেনতো আপনার কাহিনী কী?

লোকটি বললো, ওসি সাহেব আমাকে এরেষ্ট করুন। ওসি সাহেব বললেন, সাধারণত এরেষ্ট করতে হলে ওয়ারেন্ট লাগে আর ওয়ারেন্ট বের করতে গেলে মামলা করতে হয়।
– আপনি বাদী আর আমি বিবাদী, আপনি আমার এগেইনষ্টে মামলা করুন।
– কীসের মামলা করবো?
– ২৮টি খুনের মামলা।
– আপনি ২৮ টি খুন করেছেন?
– জ্বী করেছি।
– দেখুন, মামলা আমি করতে পারি কিন্তু তদন্তে যদি আপনার কোনও দোষ না পাওয়া যায়?
– আমি নিজেইতো স্বীকার করছি।
– আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে আর আপনি যে খুনি তার স্বাক্ষী প্রমাণ লাগবে।

লোকটি তার পকেট থেকে ২৮ টি ছবি বের করলো।
ওসি সাহেব একটি একটি করে সব ছবি দেখে বললো, আরে! এতো দেখছি সেই প্রফেশনাল কিলারের ছবি এনেছেন যাকে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আটক করার চেষ্টা করেছি। লোকটি বললো, স্যার আমিই সেই প্রফেশনাল কিলার। তারপর লোকটি পকেট থেকে বেশ কিছু পেপার কাটিং বের করে ওসি সাহেব এর কাছে দিলে ওসি সাহেব পেপার কাটিং এর দিকে আর লোকটির মুখের দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়ে বললেন, আপনার লম্বা লম্বা ঝাকড়া চুল কী করে এরকম টাক মাথা বানালেন?
– চুল চেছে ফেলেছি।
– মাথা টাক করলেও তাতে হাত দিলে এক আধটু হাতে বাধে কিন্তু আপনার মাথা দেখে মনে হচ্ছে দশ বছর আগেই আপনার মাথায় টাক পড়েছে, এটা কী করে সম্ভব?
– স্যার এগুলোতো আপনারা ভালোই জানেন, অযথা দেরি না করে আমাকে দ্রুত এরেষ্ট করুন।
– আপনার এই টাক মাথায় এতো তেলতেলে ভাব এলো কী করে? এগুলো মনে হয় স্পা সেন্টারের স্পেশাল ট্রিটমেন্ট, ঠিক না?
– জি ঠিক বলেছেন
– লম্বা লম্বা দাড়ি আর মোচ ক্লিন সেভ করেছেন তা বুঝলাম কিন্তু আপনিতো শ্যামলা টাইপের ছিলেন, এতো ফর্সা হলেন কী করে?
– গত ছয় মাস দিনে তিনবার করে ফেস ওয়াস করেছি এবং পর পরই একটি বিদেশি ক্রিম মেখেছি যার নাম চান্দনি।
– কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আপনি আপনার ভ্রু দুটোই ক্লিন সেভ করেছেন যা আমি এর আগে কখনো কোনও ক্রিমিনালকে করতে দেখি নি। যাইহোক আপনি ছয় মাস না ঘুমিয়ে স্বাভাবিক আছেন কী করে? আর ঘুমাতে পারেন নি বা কেন?
-স্যার, আমার বাসা ১৮ তলা, প্রতিটি তলার ঘরে ঢুকতে গেলে ৭ টি করে ১০ ইঞ্চি চওড়া স্টিলের দরজা ভাংতে হবে, এভাবে ১৮ তলা পর্যন্ত করা আছে আর প্রতি তলার প্রতিটি দরজায় দশজন করে অস্ত্রধারী আছে যারা আমার প্রটেকশনের জন্য আছে।
– তাই নাকি?
– কিন্তু স্যার এরপরও এতো নিরাপত্তার পরও ১৮ তলায় ঘুমাতে পারি না, ঘুম আসার ঠিক ২ মিনিটের মধ্যেই ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠি, চারিদিকে ভালো করে দেখি শত্রু আসলো কি না!
– আপনার শত্রু করা?
– আমার শত্রু দুটো, একটি পুলিশ আর অন্যটি আমার এন্ট্রি পার্টি, পুলিশ নিয়ে বেশি চিন্তা করি না কিন্তু আমার এন্ট্রি পার্টি খুব ডেঞ্জারাস।
– পুলিশ নিয়ে আপনার টেনশন নেই কেন?
– পুলিশ এলে আমার বাড়ির চারপাশ ঘেরাও করে রাখবে, মাইকিং করবে তারপর এক সময় দিয়ে ধরে নিয়ে যাবে কিন্তু এন্ট্রি পার্টি মুহুর্মুহু ডিনামাইট নিক্ষেপ করে আমার বাড়ি সহ আমাকে উড়িয়ে দিতে পারে, তাই যখনি ঘুম আসে ঠিক ২ মিনিট পরই ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠে দেখি এন্ট্রি পার্টি এলো কি না!
– কিন্তু আমরা তো আপনাকে আপনার বাড়িতে অনেক খুঁজেও পাই নি, এমন কি আমাদের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চও আপনাকে ট্র‍্যাক করতেই পারছে না, এর কারণ কী?
– স্যার গত এক বছর যাবত আমি কোনও স্থানে ২০ মিনিটের বেশি থাকি না।
– কেন?
– আমি কোনও একটি নতুন জায়গায় অবস্থান নিলে আপনাদের বর্তমান ট্র্যাকিং সিস্টেম দিয়ে আমাকে ট্র্যাক করতে ২২ মিনিট সময় লাগে তাই ২০ মিনিট পরই আমি অন্য স্থানে অবস্থান নেই এবং কোনও স্থানেই ২০ মিনিটের বেশি থাকি না।
– শুনুন, আপনি একজন টপ টেরর এবং প্রফেশনাল কিলার, আপনাকে আমরা ভালো করেই চিনি, আপনি যা ভাবছেন তা এখন আর সম্ভব নয়।
– আমি কী ভাবছি স্যার ?
– আপনি জেলখানায় যেতে চাচ্ছেন কারণ ওখানে আপনার এন্ট্রি পার্টির আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
– জি ঠিকই বলেছেন।
– কিন্তু আপনি জেলখানায় যাওয়ার জন্য মূল যে চিন্তা ভাবনা বা প্ল্যান করছেন তা এই বর্তমান সরকারের সময়ে সম্ভব নয়।
– আমি কী প্ল্যান করেছি? আর এখন কী সম্ভব নয়?
– কোড বুঝেন?
– হ্যাঁ বুঝি।
– কী বলুনতো?
– SWP, KFM
– এগুলো কী?
– SWP হচ্ছে “স্লিপ উইদাউট পিলো” মানে বালিশ ছাড়া ঘুম, KFM হচ্ছে “কিডন্যাপ ফর মানি”।
– আরে রাখেনতো আপনাদের সন্ত্রাসী কোড ফোড!
– তাহলে কোন কোড স্যার ?
– সম্প্রতি বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে আগুণ লাগার কারণে এখন অন্যান্য সব বিল্ডিং চেক করা হচ্ছে যে ওই সব বিল্ডিং গুলো বিল্ডিং কোড মেনে বানানো হয়েছে কি না তা আপনি জানেন?
– হ্যাঁ জানি কিন্তু বিল্ডিং কোড কী সেটা বুঝি না।
– ওটা আপনার বুঝার কথা নয়, আমারও বুঝার কথা নয় তবে ইদানীং পত্রিকায় এ বিষয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে তাই কিছুটা ধারণা হয়েছে।
– বিল্ডিং কোড সম্পর্কে কী পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে?
– এই ধরুন বিল্ডিং এ পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে, ওই মাটির ওপর বিল্ডিংটির ধারণ ক্ষমতা আছে কি না তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বিল্ডিং নির্মাণের নীতিমালা সহ অন্যান্য তথ্য উপাত্ত থাকে – এই আর কি!
– ও
– শুনুন, বিল্ডিং কোড এর মতো এখন সব জেলখানায়ও চেক করা হচ্ছে যে সেখানে জেইল কোড মেনে যাবতীয় কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে কি না।
– তাতে আমার কী?
– আপনি যে এখন জেলে বসে বসে আপনার অনুসারীদের খুন খারাবী, ক্রিমিনাল এক্টিভিটি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর নির্দেশনা দেয়ার প্ল্যান করছেন তা এখন আর সম্ভব নয়।
– আপনি আমার প্ল্যান বুঝলেন কী করে ওসি সাহেব?
– পুলিশদের অনেক কিছুই বুঝতে হয়, অনেক কিছুই জানতে হয় এবং এমন কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা ক্রিমিনাল এক্টিভিটি নেই যা পুলিশ দমন করতে পারে না।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. সুমন আহমেদ : ১৮-০৪-২০১৯ | ১৯:৫১ |

    সমকালীন এই বাস্তবতা। জন মানুষের নাভিশ্বাস। 

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ১৮-০৪-২০১৯ | ১৯:৫৯ |

    আলাপন। বাস্তব এই কথা সমগ্রই আপনার জন্য সুখবর বয়ে আনবে একদিন। নতুন সংস্করণের আলাপন ২ তৈরী হয়ে যেতে পারে। অগ্রিম অভিনন্দন মি. ইলহাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. শাকিলা তুবা : ১৮-০৪-২০১৯ | ২০:২৮ |

    এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা ক্রিমিনাল এক্টিভিটি নেই যা পুলিশ দমন করতে পারে না।

    GD Star Rating
    loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৮-০৪-২০১৯ | ২১:৪২ |

    ওহোহো এখানে তো ভালো নাটক মঞ্চায়িত হয়ে গেলো প্রিয় ইলহাম ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. রিয়া রিয়া : ১৮-০৪-২০১৯ | ২১:৫৮ |

    বর্ণনা সুন্দর হয়েছে প্রিয় কবি ইলহাম দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  6. ইলহাম : ২১-০৪-২০১৯ | ১৬:২৮ |

     আমি সবার কাছেই প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

    শব্দনীড়ে আমার প্রিয় কবি এবং লেখক-লেখিকাগ্ণের কবিতা  গল্পে তো মন্তব্য করতে পারিই না এমনকি আমার নিজের লেখায় যে গুণীজণরা মন্তব্য করে থাকেন তাঁদের মন্তব্যের প্রতি উত্তর দিতে পারি না।

    আসলে আমি বিগত ১ বছর যাবতই  অনলাইনে খুব কম আসছি। তার উপর ২১শে ফেব্রুয়ারী আমার পিতার মৃত্যুর পর বেশ খানিকটা স্তব্ধ হয়ে গেছি।

    হয়ত খুব দ্রুতই আবার সেই হাসি মুখ নিয়ে প্রিয় শব্দনীড়ের প্রিয় প্রাণের মানুষদের সাথে মেতে উঠব। 

    GD Star Rating
    loading...