আস্থা এবং অবিচল
– আপনি আবার কী মনে করে আসলেন?
– একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে।
– কী প্রশ্ন?
– মানুষ সৎ কাজ করতে গেলে বাঁধা আসে কেন?
– প্রতিটি শিশুই সৎ হয়ে জন্মায়, বড় হতে হতে অসৎ হওয়ার নানাবিধ কারণ থাকে।
– কারনটা কি ইবলিশ?
– না
– তাহলে কে?
– মানুষ
-মানুষ!
– হ্যাঁ, মানুষ সৎ হয় মানুষের কারণে আবার মানুষ অসৎও হয় মানুষের কারণে, ইবলিশ বা শয়তানের এখানে কোনও তেলেসমাতি নেই।
– কোন মানুষ এগুলো? যাদের কারণে মানুষের সততা এবং অসততা নির্ভর করে?
– কয়েকটি মানুষ মিলে একটি পরিবার, কয়েকটি পরিবার মিলে একটি সমাজ, কয়েকটি সমাজ মিলে একটি জনপদ আর কয়েকটি জনপদ মিলে জনগণ, অতঃপর একটি রাষ্ট্র।
– ও
– এই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিছু মনোনীত মানুষ থাকে যাদের রাষ্ট্র পরিচালক বলে।
– সেটাইতো জানতে চাইছি, সৎ কাজে বাঁধা আসে কেন?
– একটু ভেঙে বলেনতো কী জানতে চান?
– ওই যে বঙ্গপোসাগরের পাড়ে একটি দেশের বর্তমান পরিচালকগণ ওই দেশটি ঠিক করতে চাচ্ছে, অর্থাৎ সৎ কাজ করতে চাচ্ছে কিন্তু বাঁধা আসছে কেন?
– কেমন?
– ওই দেশটির বর্তমান পরিচালকগণ এখন বেশকিছু গঠনমূলক এবং পজিটিভ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
– কী পদক্ষেপ?
– এই ধরুন দেশটিতে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে চাইছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংস্কার করতে চাইছে।
– আর?
– দেশটিকে মাদক মুক্ত করতে চাইছে, জঙ্গি তৎপরতা দূর করতে চাইছে, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি দূর করতে চাইছে।
– আর?
– আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশটিকে একটি নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে চাইছে।
– তাহলে এগুলো ভালো কাজ করছে, দেশপ্রেমিক না হলে এগুলো করা সম্ভব নয়।
– কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এগুলো চাইছে না।
– কী করে বুঝলে যে ওই গোষ্ঠী দেশটির উন্নতি চাইছে না?
– কিছুদিন আগে একটি মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো।
– তো?
– কিন্তু ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণ এই অপরাধের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।
– গুড! এটাইতো হওয়া উচিৎ।
– এমন কি এই অপরাধের সাথে জড়িত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও আইনের আওতায় আনছে।
– তাহলেতো গুড সিম্পটমস!
– নিজেদের লোক অপরাধে জড়িত থাকলেও ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণ তাদেরও আইনের আওতায় আনছে।
– ওয়াও! ইটস রিয়ালি গুড ইনিশিয়েটিভ।
– ওই অপরাধের সাথে নিজেদের লোক যুক্ত থাকার কারণে ওই দেশের প্রাক্তন পরিচালক তাকে অলরেডি ক্রিমিন্যাল বলেছে এবং সম্ভবত বহিষ্কারও করতে পারে।
– তুমি যা বলছো এভাবে চলতে থাকলে ওই দেশ উন্নত হবে এটা নিশ্চিত।
– কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এতোদিন চুপচাপ ছিলো কিন্তু যখনই দেশটির বর্তমান পরিচালকগণ এইসব পজিটিভ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তখনি ওই গোষ্ঠী নড়েচড়ে উঠেছে।
– সেটা কেমন?
– ওই আগুণে পুড়িয়ে মারা মেয়েটির পেছনে যাদের হাত ছিলো যেমন গুন্ডা থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন কি নিজেদের লোকদেরও যখন ছাড় দিচ্ছে না তখন ঐ গোষ্ঠী এটাকে ভিন্ন ইস্যু বানাচ্ছে।
– কেমন?
– বলছে নিজেদের লোকইতো জড়িত, নিজেদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীইতো জড়িত, এসব বলে বর্তমান পরিচালকগণের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের সমর্থন এবং জনমত তৈরি করতে চাইছে।
– তাই নাকি?
– আর হঠাত করেই এখন আন্দোলন টাইপের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
– দিচ্ছে দিক!
– নিজেদের লোক এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের আওতায় আনা কি দেশের জন্য বর্তমান পরিচালকদের মহানুভাবতা নয়? এটা কি দেশ প্রেমের ইন্ডিকেশন নয়?
– ডেফিনিটলি এগুলো দেশপ্রেমিকদের কাজ এবং এদের দ্বারাই দেশ ঠিক হবে।
– কিন্তু ওই গোষ্ঠী বলছে এগুলো বর্তমান পরিচালকগণের দূর্বলতা এর পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে, বলছে আন্দোলন করবে।
– ব্লুক! বলতে দিন, দ্যাখেন জনগণ তাদের সাথে আসে কিনা?
– কিন্তু সাধারণ জনগন কি এই চাল বুঝবে?
– জনগনকে আপনি কী মনে করেন?
– আমার কাছে মনে হয় জনগণ সব বুঝলেও তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য যেদিকে ছাতা পাবে সেদিকেই যাবে।
– না, এটা ভুল। ছাতাতো অনেকই আছে। জনগণ ভালো ছাতা আর কালো ছাতা ভালোই চেনে।
– তাহলে সাধারণ জনগন কোন দিকে?
– শুনুন, আপনি ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণের যে সব কাজের কথা বললেন তা চলতে থাকলে জনগণের আস্থা বাড়তে থাকবে যা ওই গোষ্ঠীর সহ্য হচ্ছে না তাই হঠাত এসব হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
– আমারও তাই মনে হচ্ছে।
– আর জনগণ এগুলো ভালোই বুঝে।
– কিন্তু ভাই, সাধারণ জনগণতো এতো শিক্ষিত না।
– শুনুন, দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নতি হচ্ছে কিনা, আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কি না, দুর্নীতি মুক্ত হচ্ছে কি না, মাদক মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, জঙ্গি মুক্ত হচ্ছে কি না তা বুঝবার জন্য পি এইচ ডি করার প্রয়োজন নেই – এটা বুঝেন?
– কিন্তু ভাই, ওই দেশ কি দুর্নীতি মুক্ত হবে?
– কেন হবে না?
– তাহলে এতোদিন হয় নি কেন?
– আগের কথা তুলে কী লাভ? এখন যে গোষ্ঠী হুমকি ধামকি দিচ্ছে তারাওতো ওই দেশ ইতোপুর্বে পরিচালনা করেছে, তারাতো ওই দেশ দুর্নীতি মুক্ত করার কথা মুখেও আনেনি।
– তা ঠিক
– আর এতোগুলো কঠিন কাজ এতো দ্রুত করা কী সম্ভব?
– না
– তবে যেহেতু শুরু হয়ে গেছে তাই ৫ বছরে বেশ বড় ধরণের একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব।
– ও, কিন্তু বর্তমান পরিচালকগণের অধিকাংশইতো নতুন।
– ওটা কোনও সমস্যা না, পুরাতন পরিচালকগণের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ নতুনদের সাথেই আছে।
– আমারও তাই মনে হয়।
– যেহেতু এখন দেশ ঠিক হতে শুরু করেছে, নিজেদের লোককেও ছাড়ছে না তাহলে এ দেশ উন্নত হবেই – আপনি লিখে রাখুন।
-কিন্তু ভাই, ওই যে ওই গোষ্ঠী!
– শুনুন, জনগণ যদি একবার বুঝে যায় ওই গোষ্ঠী দেশের উন্নতি চায় না তাহলে ভবিষ্যতে এই জনগণই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
– তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।
– ওই গোষ্ঠীর উচিৎ বর্তমান পরিচালকদের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিয়ে ওই দেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়া।
-যদি তা না করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে?
– তাহলে ওই দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।
– হুমকি ধামকি দিলে?
– ওই গোষ্ঠী যতই হুমকি ধামকি দিক কাজ হবে না শুধু প্রয়োজন বর্তমান পরিচালকগণের দেশ গড়ার এই মহৎ কাজের প্রতি আস্থা এবং অবিচল।
– ও
– আপনার লেখা পড়ার সাবজেক্ট কী ছিলো?
– ইংরেজী
– আস্থা এর ইংলিশ কী?
– কনফিডেন্স
– গুড, আর অবিচল এর ইংলিশ কী?
– স্টিডি
– স্টিডি এর একটা সিনোনিম বলেন তো!
– ফিক্সড বা ফার্মনেস অর্থাৎ অনড়।
– গুড! আপনিতো তাহলে ছাত্র হিসেবে ভালোই ছিলেন।
– ভালো ছিলাম কিন্তু টিচারের সাথে তর্ক করতাম তাই নাম্বার কম দিতো।
– হা হা হা!
– হাসলেন যে!
– না এমনি হাসলাম, যা বলছিলাম যত বড় ঝড় তুফান আসুক ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণদের দেশ ঠিক করার এই মহৎ কাজের জন্য প্রয়োজন আস্থা এবং অবিচল।
– জি বুঝতে পেরেছি, কনফিডেন্স এন্ড স্টিডি, ভয় এবং লোভ উপেক্ষা করে অর্পিত দায়ীত্বে এবং কাজে শতভাগ আত্নবিশ্বাস এবং সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।
– গুড! এইতো সঠিক ধরেছেন।
loading...
loading...
এককথায় অনবদ্য আলাপন। অথবা কথোপকথন। শুভেচ্ছা জানবেন মি. ইলহাম।
loading...
আলাপন পড়লাম।
loading...
শব্দনীড়ে আপনার উপস্থিতি না থাকায় আলোচনা করা গেলো না।
loading...
সব ঠিক আছে ইলহাম ভাই। আপনি কই ?
loading...
পড়ে চলে গেলাম কবি ইলহাম দা।
loading...