আমার বাবা ছিলেন বর্গাদার
অন্যের জমি আদি নিয়ে ফসল ফলাতেন
আমার বয়স যখন তিন
ঠিক তখনি আমার মা এর মৃত্যু হলো
কিছু দিন পর বাবা বিয়ে করে আনলেন
এক নতুন মা
ভালোই চলেছিলো কিছু দিন
তারপরই শুরু হলো সৎ মায়ের নির্মম অত্যাচার!
শুরু হলো মারধোর আর বকাবকি!
একদিন সৎ মা আমার বাবাকে
বিড়বিড় করে কি যেনো বোঝালেন
পরদিন বাবা আমাকে মেরে পিটে
বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে দড়জা আটকে দিলেন
তখন প্রায় শেষ বিকেল
আমি দড়জায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
“বাবা দড়জা খোলো! আমাকে কেনো বের করে দিলে! আমার কি অপরাধ!”
কিন্তু কেউ দড়জা খুললো না!
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো
নিকটের জঙ্গল থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছিলো
আর আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম!
আমি ছোট্ট একটি মেয়ে
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না
ভোর হতেই আমার সৎ মা আমাকে ডেকে তুললেন
নিয়ে গেলেন বাজারের বাস স্ট্যান্ডে
তুলে দিলেন একটি বাসে
আর বললেন, তোমার নানার বাড়ী পাঠালাম, সেখানে ভালোই থাকবে।
অনেক রাতে বাসের লোকেরা আমাকে নামিয়ে দিলো একটি বড় শহরে
আর বলে গেলো, এই পৃথিবীতে কাজ করে খেতে হয়, তুমি কাজ করে খাও।
আমি ছোট্ট একটি মেয়ে খালি পায়ে হাটতে হাটতে আলো ঝলমলে একটি বাড়ী দেখলাম
ওখানে যেয়ে বারান্দায় আশ্রয় নিলাম
বসে থাকতে থাকতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
সকালে গৃহকত্রী এসে সব শুনে বললেন, আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে, এখানে খাবে, শুধু ঘর মুছবে আর কাপড় কাচবে।
উনারা প্রতিদিন মাছ মাংস দিয়ে ভাত খেতেন টেবিলে বসে
আর আমি ক্ষুদার্থ পেটে বসে থাকতাম রান্না ঘরে
উনাদের খাওয়া শেষ হলে,
গৃহকত্রী একটি প্লেটে একটু ভাত আর একটু শাক ভাজি দিয়ে বলে গেলেন, ঐ খানে লবণ আছে, জলদি খেয়ে কাপড় কাচতে যা।
একদিন সন্ধায় গৃহকত্রী ডেকে বললেন, বাথরুমের কাপড় গুলো ধুয়ে বেলকনির গ্রীলে ছড়িয়ে দিয়ে দে
আমি গিয়ে দেখি অনেক গুলো কাপড়!
আট দশটা জিন্সের প্যান্ট আর অনেক গুলো শার্ট
কাপড় কাচতে কাচতে কখন যে উঠে এসে ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না
সকালে এ অবস্থা দেখে গৃহকত্রী একটা কাঠের টুকরা নিয়ে আসলেন
দেখে মনে হলো কাঠের চেয়ারের একটা ভাঙ্গা পায়া
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ওটা দিয়ে স্বজোরে আমার পিঠে আঘাত করলেন
সাথে সাথেই আমার দম আটকে গেলো
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না!
চোখে শুধু অন্ধকার দেখছিলাম!
মুহুর্তেই তিনি তীব্র বেগে আবার আমার পিঠে আঘাত করলেন।
আমি মেঝেতে পড়ে গেলাম!
চিৎকার করতে করতে গৃহকত্রীর দু পা চেপে ধরে বললাম,
“আমাকে আর মারবেন না! আর মারলে আমি বাচবো না, আপনি আমার মায়ের মতো, আমি এক্ষুনি সব কাপড় কেচে দিচ্ছি!!!!!”
একদিন বাসায় অনেক বড় একটা ইলিশ মাছ এলো
এতো বড় ইলিশ মাছ আমি কখনো দেখিনি
উনারা চেয়ার টেবিলে বসে সেই মাছের তরকারী দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন,
আর আমি ক্ষুদার্থ পেটে রান্না ঘরে বসে সেই সুঘ্রাণ পাচ্ছিলাম
একটু পরে গৃহকত্রী আমাকে শুধু মিষ্টি কুমড়োর ভাজি দিয়ে ভাত দিয়ে গেলেন।
আমি ছোট ছিলাম
তাই না বুঝে সেই রাতে ফ্রিজ খুলে এক টুকরা মাছ খেয়েছিলাম
আমি ভূল করেছিলাম
সকালে গৃহকত্রী আমাকে রান্না ঘরে ডেকে নিলেন
বললেন, আমি রাতে গুনে রেখেছি এগার পিচ আর এখন দশ পিচ মাছ?
তারপর বললেন, জামা খোল
আমি জানতে চাইলাম, কেনো খালা আম্মা?
তিনি বললেন, যা বলছি কর হারামজাদী!
জামা খোলার পর বললেন, দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়া
তখনো আমি খেয়াল করিনি তার গ্যাসের চুলোয় একটি খুন্তি জ্বলতে জ্বলতে লালা হয়ে গেছে
মুহুর্তেই তিনি অগ্নি-লাল খুন্তিটি আমার পিঠে চেপে ধরলেন!
আমি অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে তার হাত থেকে ছুটতে চাইলাম!
কিন্তু তিনি তার পা দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরেছিলেন!
আমি দাপাদাপি করতে করতে ছূটে গিয়ে দৌড়ে পালাতে গেলাম
কিন্তু রান্না ঘরের দড়জার ছিটকিনি যে উপরেরটা লাগানো!
আমি ছোট তাই আমার হাত ওখানে পৌছুতে পারে নি!
তিনি আমাকে টেনে এনে আমার বুকে লাথি মাড়লেন!
আমি চিত হয়ে আবার মেঝেতে পড়ে গেলাম!
গৃহকত্রী আমার বুকে আবার লাল খুন্তি চেপে ধরে বললেন, বল আর কোনো দিন ফ্রিজ খুলে কিছু খাবি নাকি!
আমি চিৎকার করে বললাম, আমি আর ফ্রিজ খুলবো না! আপনারা যা দেবেন আমি তাই খাবো!
তিনি আমাকে মেঝেতে ফেলে রেখে চলে গেলেন
আমি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হলো কে যেনো সব কিছু দেখেছেন!
আমার দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝড়তে লাগলো!
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
হে আকাশের মালিক!
হে পৃথিবীর মালিক!
তুমি কি কিছুই দ্যাখোনা!
তুমি কি কিছুই শোন না!………… তুমি কি কিছুই দ্যাখোনা!
কবিতাটি শুনলে হয়তো কেঁদে ফেলবেন- তুমি কি কিছু্ই দ্যাখোনা। কবি ইলহামকবিতাটি শুনলে হয়তো কেঁদে ফেলবেন- তুমি কি কিছু্ই দ্যাখোনা। কবি ইলহাম
Posted by Voice Multimedia on Monday, May 28, 2018
loading...
loading...
পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলি … অসাধারণ আপনার এই আয়োজন মি. ইলহাম। নাতিদীর্ঘ লিখার সঙ্গে আবৃতি সংযোজন করাকে ইউনিক আইডিয়া মনে করি। অভিনন্দন।
loading...
কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় শ্রদ্ধাষ্পদেষু।
loading...
অপূর্ব লাগল আমার কাছে ইলহাম দা। কী ভরাট কণ্ঠের আবৃতি।
loading...
আমি অনুপ্রাণিত আপনার আন্তরিক মুল্যবান মন্তব্যের জন্য সুপ্রিয় কবি ও লেখিকা!
loading...
বাব্বাহ্ দারুণ তো !!
loading...
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় কবি ও লেখক মিঃ সৌমিত্র চক্রবর্তীকে

loading...
কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় কবি ও লেখক
loading...
চমৎকার কবিতা চমৎকার আবৃত্তি-
কবিকণ্ঠে কবিতা শোনার আবেদনই অন্যরকম।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় কবি ও লেখক মিঃ জাহিদ অনিকের জন্য


আসলে আবৃত্তিটি কবি কন্ঠে নয়।
loading...