আলাপন-১
এক ভদ্রলোক রাতে শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। সে সাধারণত একা একা রাতে ঘুমায় না। একা থাকলে রাতে ঘুম আসতে চায় না। অশরীরী কিছু একটা এসে কথা বলে। আজ একা থাকতে হচ্ছে কারণ তার পরিবার বাপের বাড়ি গিয়েছে। ভুত-পেত্নী সে বিশ্বাস করে না কিন্তু জ্বীন বিশ্বাস করে।
তার জ্বীন হাসিলের খুব ইচ্ছা ছিলো। অনেক হুজুরের কাছে গিয়েছে। একেক জন একেক রকম পরামর্শ দেয়। সে আমল করে কিন্তু জ্বীন আসে না। একবার দবির হুজুর বললো, এশার নামাজের পরে মসজিদে বসে সুরা জ্বীন চল্লিশ বার চল্লিশ দিন পড়লে একটা জিন এসে হাজির হবে। আসার আগ মুহুর্তে গাছ-পালা নড়তে শুরু করবে। একটু ঝড় হবে। কস্তুরী আতরের ঘ্রাণ আসবে। হয়তো দেখবেন যে মসজিদে বসে আপনি সূরা জ্বীন পড়ছেন সেখানেই হঠাত তাকিয়ে দেখবেন একজন বসে আছে কিন্তু মাথাটা ছাদের সাথে লেগে গেছে। কিন্তু সব সময় পাকসাফ থাকতে হবে। আর জ্বীন দেখে ভয় পাওয়া যাবে না।
সে চল্লিশ দিন চল্লিশ বার করে সুরা জ্বীন এশার নামাজের পর পড়লো কিন্তু জিন আসলো না।
কিন্তু তার মনে প্রশ্ন জাগে, এই যে রাতে একা থাকলে অশরীরী কিছু একটা এসে তার সাথে কথা বলে এটা কি জিনিস? এই জিনিসটা আসার আগে সে টের পায়।
সেদিন ঘুম আসবে না। এপাশ ওপাশ করতে করতে অনেক রাত হবে। তারপর খালি পায়ে হাটার শব্দ শোনা যাবে। শরীর নাই কিন্তু হাটার শব্দ করে। আশ্চর্য জিনিস!
খালি পায়ে হাটার শব্দটা যখন তার ঘরের দিকে আসে তখন সে বোঝে জিনিসটা এখন ঘরে ঢুকেছে। কিন্তু হাটার শব্দটা কোথায় এসে শেষ হয় এটা বোঝা যায় না।
ওটা কি মাথার দিকে এসে থামে নাকি পায়ের দিকে নাকি বিছানায় উঠে বসে কে জানে।
লাইট জ্বালানো থাকলে এই জিনিসটা আসে না। তাই একা থাকার প্রয়োজন হলে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়। আজ লাইট অফ করা আছে। এখন উঠে আর জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না। খুব ক্লান্ত লাগছে। হাতের কাছে একটা লোহার রড নিয়ে শুয়েছে। আজ ওটা আসলে আচ্ছা মতো সাইজ করা হবে।
ভদ্রলোকের ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছে। অনেক রাত হয়ে গেলো। হঠাৎ পায়ের শব্দ শোনা গেলো। ভদ্রলোকের মেজাজ খারাপ হয়ে গে্লো। ওটার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না। অহেতুক প্যাঁচাল পারে। লোহার রড টা ডান হাতে ধরে আছে।
একটা মোলায়েম কণ্ঠ ভেসে এলোঃ
কি ভাবছো হে মানুষ?
ভদ্র লোক কোনও কথা বললো না।
হটাৎ খাটটা নড়ে উঠলো।
এ তো দেখছি সমস্যা ! দেখাইতো যায় না। কোথায় রড দিয়ে মারবো?
ওটা কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়।
তার চেয়ে বরং কথা বলে একে বিদায় করাই ভাল।
আবার কণ্ঠটি ভেসে আসলোঃ
কণ্ঠ: আমার কাছে একটি গাছ আছে
ভদ্রলোক: থাকলে থাক, আমার কি আসে যায়
কণ্ঠ: সেই গাছটা অনেক বড়
ভদ্রলোক: হোক বড় তাতে আমার কি
কণ্ঠ: অনেক পাতা
ভদ্রলোক: গাছ নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমি গাছ টাছ লাগাই না। তুমি চুপ করতে পারো?
কণ্ঠ: তোমার বয়স চল্লিশ না?
ভদ্রলোক: এই, তুমি কে? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
কণ্ঠ: দেখতে পাবে
ভদ্রলোক: তোমার কথা শুনি অথচ দেখি না, সমস্যা না এটা?
কণ্ঠ: আমি দেখা দেবো সঠিক সময়ে
ভদ্রলোক: আমার বয়স জানো কীভাবে?
কণ্ঠ: সেটা পরে বলবো। আমার সেই গাছের প্রতিটি পাতায় নাম লেখা আছে
ভদ্রলোক: কিসের নাম?
কণ্ঠ: সবার নাম। যে পাতাটা হলুদ হয় আমার নজর সেটার দিকে
ভদ্রলোক: কেনো?
কণ্ঠ: পাতাটা যখন শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে যায়, আমি যাই তার কাছে
ভদ্রলোক: যেয়ে কি করো?
কণ্ঠ: তাকে নিয়ে আসি
ভদ্রলোক: কে তুমি?
কণ্ঠ: মুসলমানরা আমাকে আজরাইল নামে চেনে
ভদ্রলোক: হিন্দুরা তোমাকে কী নামে চেনে?
কণ্ঠ: যম
ভদ্রলোক: তোমার সাথে আমার কথা বলার দরকার নাই। তুমি এক্ষুনি চলে যাও
কণ্ঠ: তোমার নাম যে পাতায় লেখা আছে সেটা হলুদ হয়ে এসেছে
ভদ্রলোক: ভাই, ঐ টেবিলের জগে পানি আছে। আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে পারবেন? গলাটা মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে
কণ্ঠ: কাউকে পানি দেয়া আমার কাজ না। আমার কাজ একটাই
ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আচ্ছা! বুঝলাম। হলুদ না হলে কি তোমার ঐ গাছের কোনও পাতা ঝড়ে পড়ে?
কণ্ঠ: না, তবে অনেক পাতা বড় হওয়ার আগেই হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ে
ভদ্রলোক: তোমার ঐ গাছের কোনও পাতায় কি তোমার নিজের নাম লেখা আছে?
কণ্ঠ: আছে
ভদ্রলোক: ঐ পাতাটার রঙ কি?
কণ্ঠ: সবুজ
ভদ্রলোক: ওটা কি কখন হলুদ হবে?
কণ্ঠ: হবে হবে
ভদ্রলোক: কখন?
কণ্ঠ: ওটা সবার শেষে হলুদ হবে
ভদ্রলোক: ওটা কি ঝড়ে পড়বে?
কণ্ঠ: পড়বে
ভদ্রলোক: তখন ঐ পাতাটা কে আনতে যাবে?
কণ্ঠ: সেটা কি তোমার জানা খুব প্রয়োজন?
ভদ্রলোক: হ্যাঁ, আমি জানতে চাই। আমার হাতে কিন্তু লোহার রড আছে। তোমার মাথায় মেরে আগে তোমার নাম লেখা পাতাটা হলুদ করে দেবো।
কণ্ঠ: ভয় নামক জিনিস টা আমাকে দেয়া হয় নি। আমরা ভয় পাই না।
ভদ্রলোক: ঠিক আছে বুঝলাম। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তোমার নাম লেখা পাতাটা ঝড়ে পড়লে ওটা কে আনতে যাবে?
কণ্ঠ: ঐ পাতাটাও আমিই আনবো
ভদ্রলোক: অর্থাৎ তোমার জান তুমি নিজেই কবোজ করবে?
কণ্ঠ: হ্যাঁ, আমিই করবো
ভদ্রলোক: জান কবোজ করার সময় মানুষ কেমন কষ্ট পায় তুমি জানো?
কণ্ঠ: কষ্ট নামক জিনিস টা আমাকে দেয়া হয় নি। আমার কাজ একটাই
ভদ্রলোক: আচ্ছা বলতো, তুমি একসাথে কতোগুলো পাতা নিতে পারো?
কণ্ঠ: ইসরাফিল শিঙায় ফুঁক দেওয়ার সময় যতগুলো পাতা থাকবে ততগুলো
ভদ্রলোক: কতো হতে পারে?
কণ্ঠ: পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা য্তো
ভদ্রলোক: পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা কতো?
কণ্ঠ: উনিশ-শত কোটি
ভদ্রলোক: এখন পৃথিবীতে সাত শো কোটি মানুষ আছে। যে হারে মানুষ বাড়ছে তাতে আগামি একশো বছরের মদ্ধ্যে যদি উনিশ শো কোটি মানুষ হয় তাহলে আর মাত্র একশো বছর পর কিয়ামত হবে?
কণ্ঠ: হিসাব নিকাশ করার কাজ আমাকে দেয়া হয় নি। আমার কাজ একটাই
ভদ্রলোক: তুমি যাওতো এখন, অযথা বকবক করো নাতো! হুদাই প্যাঁচাল পারে!
কণ্ঠ: ঠিক সময়ে দেখা হবে। তোমার নাম লেখা পাতাটা ঝড়ে পড়লেই আমি তোমার কাছে চলে আসবো। তখন তোমাকে দেখা দেবো। খোদা হা-ফেজ!
ভদ্রলোক খেয়াল করলো মোলায়েম কণ্ঠটা এখন আর শোনা যাচ্ছে না। পায়ে হাটার শব্দটাও এখন নেই। খুব পিপাসা লেগেছে পানি খাওয়া দরকার। শরীরটা পুরোই ঘেমে গেছে। ফ্যানের সুইচটা অন করা দরকার। কিন্তু উঠে লাইট জ্বালাতে হবে।
আবার কি পায়ের শন্দ শোনা গেলো নাকি? পানি-ফ্যান কিছুই লাগবে না। শরীর ঘামে ঘামুক। কাথা দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে দিতে হবে। ফজরের আযান না শোনা পর্যন্ত আর চোখ খোলাই ঠিক হবে না।
loading...
loading...
অসাধারণ কথোপকথন। আলাপনের প্রথম খণ্ডাংশ পড়া হলো। আশা করবো ধারাবাহিকতা থাকবে। শুভেচ্ছা সহ স্বাগতম আপনাকে আপনারই শব্দনীড় এ। ধন্যবাদ।
loading...
অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় শ্রদ্ধাষ্পদেসু। জ্বী, ধারাবাহিক ভাবে পোষ্ট দেবো অবশ্যই। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!!!
loading...
আলাপন জারি থাক। আমার কাছে বেশ অদ্ভুত লেগেছে। শব্দনীড় এ স্বাগতম।
loading...
ভালো লেগেছে জেনে আমি অনুপ্রাণীত! আলাপন জারি থাকবে। কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
loading...