আমরা মুখোশধারী

1632911392166

যে ছেলেটি মদ্যপ এবং নেশা করে তাকে সমাজ বখে গিয়েছে বলে। পরিবার কুদৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু কেন?

আপনি তো ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। আপনি জানেন কি? মিথ্যা বলা, গীবত করা, পরনিন্দা, লোভ, অহংকার এবং মানুষ ঠকানো মদপানের চেয়ে জঘণ্য ও মহাপাপ। অথচ আপনি আমি উক্ত শব্দদ্বয়গুলির সাথে বসবাস করছি। মিথ্যা বলি, গীবত করি, গুজব রটাই ইত্যাদি প্রতিনিয়ত যারা করছে তাদের কেন মুসলমান সমাজে জায়গা হবে? যদি সেই মদ্যপ ছেলেটি খারাপ বলে পরিচিত হয় তাহলে তারা কেন ভদ্রতার আসনে বসে থাকবে?

আপনি নিজেকে মুসলমান দাবী করছেন। আপনি রোহিঙ্গা ও কাশ্মীরে হামলার প্রতিবাদ করেন কিন্তু বেলুচিস্তান ও ইয়ামেনের হামলার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেন না। কেন? আপনি ফেলানীর জন্য প্রতিবাদ করেন কিন্তু সৌদি থেকে হাজার হাজার নারী নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরছে তার প্রতিবাদ করেন না। কেন?

আপনি মুসলমান অথচ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য কাঁদেননি, কেঁদেছেন পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোর জন্য। যে আশ্রয় দিয়েছিল সেই কর্নেল তাহেরের জন্য কাঁদেননি, কেঁদেছেন জিয়াউর রহমানের জন্য। কেন ভাই? শেখ মুজিব আর কর্নেল তাহের কি মুসলমান ছিলেন না?

কারণ আপনাদের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্যতা নেই আছে ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আপনারা নিজ ধর্মের বিধিনিষেধ পালন করবেন না কিন্তু গুজব রটানোর জন্য ধর্মকে হাতিয়ার করে মায়া কান্না আর ভন্ডামি করতে ওস্তাদ। আপনারা শুধু সামাজিক যোগাযোগে নিজেকে মুসলামান দাবী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবেন কিন্তু গাম্বিয়ার মত আর্ন্তজাতিক আদালতে মামলা করার সাহস করবেন না। কারণ আপনাদের ঈমানী দুর্বলতা অধিক থেকে অধিকতর এবং আপনারা সুবিধাবাদী।

আপনারা সত্যিই সুবিধাবাদী। ৯০দশকেও এইদেশে টিভি দেখা হারাম ছিল। ছবি তোলা নাজায়েজ ছিল। এখন আপনাদের সুবিধার্থে ধর্মকে পরিবর্তন করে জায়েজ করে নিলেন। ইসলাম ধর্মে সকল ধরণের খেলা হারাম শুধু ঢাল-তলোয়ার খেলা ছাড়া অথচ আমরা বর্তমানের সকল ধরণের খেলাকে জায়েজ করে নিজেদের মগ্ন রাখি, আর বলি আমি মুসলমান।

আপনার ছেলে-মেয়ে পড়াশুনার নামে বাহিরে গিয়ে সবার অগোচরে প্রেম লীলায় মগ্ন অথবা আপনি অনলাইনে ফটকামী করে বেড়াচ্ছেন, যা ইসলামে পুরোপুরি নিষিদ্ধ আর সেই আপনারাই গলাবাজি করেন রোহিঙ্গা মারছে, কাশ্মীর মারছে, তসলিমাকে হঠাও। তসলিমা নাসরিনের সাথে আপনার পার্থক্য কোথায়? তসলিমা সরাসরি ধর্মকে অস্বীকার করছে আর আপনি ধর্মের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ধর্মকে পরোক্ষভাবে অস্বীকার করছেন।

আপনি নিজেকে মুসলমান দাবী করেন কিন্তু আল্লাহকেও অস্বীকার করেন। বিশ্বাস হচ্ছে না? ঠিক আছে, একজন সুন্দরী রমনীর সাথে আপনাকে এক সপ্তাহের জন্য একটা আবদ্ধ ঘরে থাকতে দিবো। তারপর আপনি নিজেই রাসলীলায় মেতে উঠবেন আর তখনই ভুলে যাবেন আপনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কথা।

এমন কোনো পুরুষ আছেন যারা একবারের বেশি দু’বার কোনো বেগানা নারীর দিকে দৃষ্টি দেন নাই? নাই ভাই, এমন কেউ নাই। একবারের বেশি দু’বার তাকাতে আল্লাহ আপনাকে নিষেধ করেছেন অথচ কোনো সুন্দরীকে দেখলে ধর্মের হুকুমকে উপেক্ষা করে দৃষ্টি দিয়ে চোখের যেনা করছেন। কেন? আপনি তো মুসলামান!

পিতা-মাতার হক কতজনই পালন করেন? যে ছেলেটি রাজপথে কাশ্মীরীদের জন্য স্লোগান তুলছেন সেই ছেলেটি কি তার পিতা-মাতা হোক জীবিত কি মৃত তাদের হক পালন করেছে কিংবা করে? ধর্মের নামে যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখন মানববন্ধন, প্রতিবাদ, কুশপুত্তলিকা পোড়ানোসহ কত কি করেন অথচ যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে বৃদ্ধাশ্রমে পিতা-মাতাকে ছুঁড়ে আসে তাদের বিরুদ্ধে কখনো রাজপথে নেমেছিলেন? নামেন নি। তাহলে আপনি কিভাবে মুসলমান দাবী করেন?

ইসলাম ধর্ম একমাত্র আল্লাহর ধর্ম যা মহানবী (সঃ)’র মাধ্যমে প্রেরিত। যদি তাই বিশ্বাস করেন তাহলে ধর্মকে যেমন ইচ্ছা তেমন না সাজিয়ে নিজেকে শুধরিয়ে ঈমানকে পাক্কা করুন। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার দেশের ৮৫% মানুষের ঈমান ঠিক নাই। অথচ নিজেকে ধার্মিক দাবী করে।

মাটিতে সিজদা দিলেই নামাজ কায়েম হয় না। মাটিতে সিজদা তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানরাও দেয়। যারা জুমার দিন নামাজে যান তারা কি আল্লাহকে ভয় করে জুমার নামাজ আদায় করেন? নারে ভাই। পারিবারিক অভ্যস্ততার কারণে শুক্রবারে মসজিদে যায়। যদি আল্লাহকে ভয় করতো তাহলে মিথ্যা, গীবত, পরশ্রীকাতরতা সহ ইসলাম বিরোধী সকল নিষেধ পরিহার করে ইসলামের হুকুম-আহকামের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করতো।

নামাজ কায়েম করতে হলে আগে নিজেকে বিশ্বাসী করে তুলুন, আল্লাহ ও তাঁর নবীর হুকুম আহকাম গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তারপর নিজেকে মুসলমান দাবী করে গলাবাজি করবেন। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না করে, ধর্মীয় শুদ্ধতা চর্চা করুন। তাহলে দেশ, জাতি ও আপনার মঙ্গল এবং আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
আমরা মুখোশধারী, 5.0 out of 5 based on 2 ratings
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০১-১০-২০২১ | ২১:০৬ |

    ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না করে, ধর্মীয় শুদ্ধতা চর্চা করুন। তাহলে দেশ, জাতি ও আপনার মঙ্গল এবং আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। ___ একমত। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. দাউদুল ইসলাম : ২৯-১০-২০২১ | ২১:০১ |

    পুরো লিখাটি পড়লাম।

    ভালো ও যুক্তি পূর্ণ লিখেছেন। 

     

    শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...