করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী ছেলের মা’কে চিঠি

17217

মা আপনি জানেন আপনার ছেলে বিদেশ থাকে কিন্তু কোন দেশে থাকে নামটা ঠিক উচ্চারণ করে বলতেও পারেন না।

আমার জন্য ইউরোপের দেশ গ্রিসে আসা এতো সহজ ছিলো না। পাকিস্তান হতে ইরান এবং তুরস্ক হয়ে আমি গ্রীস পৌছি। তাই সেই সময় এক বছর আপনাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। ওই সময় আমি মরণকে খুব কাছ হতে দেখেছি কিন্তু ভয় পাইনি। অথচ এখন কেনো জানি মরণকে খুব ভয় পাচ্ছি। একটা অনুরোধ করি আমার ছেলেদের দেখে শুনে রাখবেন। তারা যেন পড়াশোনা শেষ করে দেশেই ছোটোখাটো চাকরী কিংবা ব্যবসা করে মরণকে হাতে নিয়ে সাগর, পাহাড় পর্বত, ও বন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে ইউরোপ স্বপ্ন না দেখে। এই স্বপ্নের কারণে লৌহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশী তরুণের সলিল সমাধি হচ্ছে।

তুরস্ক হতে গ্রীস আসতে যে কষ্ট সহ্য করেছি তা বললে মা’গো আপনি কষ্ট পাবেন বলে বলা হয় নাই কোনো দিন। গ্রীসের পাশে তুরস্কের সীমান্ত এলাকায় এক সবজি বাগানে কৃষি কাজ করে খেয়ে পরে কোনো রকম বেঁচে ছিলাম আমি। তাই অনেক দিন টাকা দিতে পারিনি আপনি বৃদ্ধ মানুষ হয়েও আমার স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ পোষন করেছেন। ধারকর্জ করে এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পেতে জীবন ধারণ করছেন। আপনারা হয়তো ভেবে ছিলেন আমি মরে গিয়েছি কিন্তু যখন আমার চিঠি পেলেন তখন আপনাদের ঈদের আনন্দ হলো। সেই সময়তো আর এত আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো না। খামার হতেও বের হতে পারতাম না পুলিশের কাছে ধরা পড়বো বলে কারণ আমি তুরস্কের অবৈধ লোক।

গ্রীস এসেই দুই/তিন দিন পরই একটা কৃষি কাজ পেলাম স্ট্রবেরি চাষের। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাইনি পুরাতন লোকের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে চলি আপনাদের দোয়া সাথে করে। এই কৃষি কাজ করে আপনাদের জন্য টাকা পাঠিয়েছি। আপনারাও মিতব্যয়ী হয়ে প্রয়োজনের বেশী টাকা খরচ করেন নাই। টাকা সঠিকভাবে খরচ করে বাড়ি-ঘর জমি-জমা করেছেন। এতে আমি অনন্ত মরার আগেও নিশ্চিত থাকতে পারছি আমার সন্তানেরা আমার মত কামলার কাজ করে জীবন চালাতে হবে না। কৃষি কাজ ছেড়ে রাজধানী এথেন্স এসেই একটা ওয়াইন (মদ) কারখানায় কাজ করেছি। এখানে প্রচুর আঙ্গুর এবং স্ট্রবেরির চাষ হয়, দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করে আবার আঙ্গুর ওয়াইন তৈরি করে। মদের কারখানায় কাজ করে প্রচুর টাকা রোজগার করি যার কারণে মাদ্রাসা, এতিম খানায় এবং মসজিদেও সাহায্য করতে পেরেছি। আর পারছি না মা লিখতে। ক্ষমা করবেন আমাকে।

ইতি, আপনার ছেলে।
কুটি।

(শেষ কিস্তি)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২১-০৫-২০২১ | ০:০৪ |

    প্রবাস আমার একসময়ের সঙ্গী ছিলো। বর্ণনার অনেক কিছুই যেন নিজের অজান্তে নিজ জীবনের সাথে মিলে গেলো। ঠিক এমন একটা সময় আমিও পার করেছি। Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • ফয়জুল মহী : ২১-০৫-২০২১ | ১৪:০১ |

      Thank you dear brother for comment 

      GD Star Rating
      loading...
  2. ছন্দ হিন্দোল : ২১-০৫-২০২১ | ৯:৩১ |

    অনেকের মনের কথা উঠে এসেছে প্রথম দিকে কম বেশি এরকম জীবনের উপর হুমকি চলে আসে তার পরও পরিবারের কথা ভেবে সহ্য করে। শুভকামনা প্রবাসী ভাইদের অসমান্য ত্যাগের https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • ফয়জুল মহী : ২১-০৫-২০২১ | ১৪:০২ |

      Thank you dear for comment 

      GD Star Rating
      loading...
  3. আলমগীর সরকার লিটন : ২২-০৫-২০২১ | ১০:৩৪ |

    ভাল লেখেছেন মহী দা

    GD Star Rating
    loading...