সবাই বলে ভালবাসা নাকি স্বর্গ থেকে আসে, আবার স্বর্গে চলে যায়। সূর্যমুখী পৃথিবীর আলো বাতাস পানির মাধ্যমে জন্ম নিয়ে সুর্যের দিকে মুখ করে থাকে। এবং আকাশে চলে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা, শিশিরের জন্ম কিন্তু আকাশে। শিশির আকাশে না থাকে পৃথিবীতে চলে আসে। শীতের সকাল বেলায় ঘর থেকে বাহির হলে আপনি দেখবেন শিশিরটা ঘাসের উপর সূর্যের আলোয় মুক্তার দানার মত চিক চিক করে জ্বলছে। এক পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে আকাশে চলে যেতে চায়, আরেকটি আকাশে জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে এসে যায়। এই দুয়ের মাঝে আদান প্রধাণটা কি ভালবাসা নয়?
কোন এক শিশির ভেজা শীতের সকালে তাকে আমি যেন এই প্রথম দেখি, এ কি সে যেন সূর্যমুখী! তাহলে আমি কি শিশির? আমার খণ্ড খণ্ড, সিকি সিকি, সময়গুলো আজ যেন সূর্যমুখীর দখলে তাই মুহুরী নদীর নীল জলে তার মুখ দেখি, আমার বাড়ির পাশে মুহুরী ও ফেনী নদী। পানিতে পরিপূর্ণ নদীর পাশে বসে আমি কি তাকে ভাবি, না না আমিতো তাকে ভালবাসি বলিনি। তাহলে কেন তাকে অনুভব করি?
এক সময় এই নদীতে জোয়ার আসত, ভাটা হত শীতের সময় নদীতে পানি থাকত না ওই পাড়ের জেলেদের পরিবার পরিজন নিয়ে শীতের সময় কষ্ট করত। কারণ বর্ষায় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও শীতে তা সম্ভব হত না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ্যের পরিবর্তন অতি সহজে হলেও জেলেদের হওয়ার কথা না। শহীদ জিয়া ফেনী জেলার মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তিন নদীর মুখে বাঁধ দেওয়ার কথা বলেন…. শুকনা মৌসুমে নদীতে মিঠা পানি জমা করে, যাতে সেচের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষক ফসল ফেলতে পারে। কিন্তু ঘাতকেরা জিয়াকে বাঁচতে দেয়নি যদিও আমরা তিন নদীর মুখে বাধের মাধ্যমে পানি পেয়েছি, কৃষক মাট ভরে ফসল ফলাচ্ছে।
নদীর এই নীল পানিতে সূর্যমুখীর রুপ দেখতে ইচ্ছে করে আমার, বাঁশ পাতার মত লম্বা নাক, মায়াবী মুখ, হরিনী চোখ আমাকে যেন ভালবাসতে বলে। তাইতো বলে “নদীও নারীর মতো কথা কয়”, আজ কাল স্বচ্ছ এই নীল পানিতে কালো একটি প্রজাপতিও দেখা যায়, প্রজাপতির ডানায় লিখা জোছনা মনি। আমি পানিতে পাথর ছুড়ে মারি, আওয়াজ আসে পানি হতে জয় ভারতমাতা একি প্রজাপতি কথা বলতে পারে। আমি বিলীন হয়ে যাই আবারও পাথর ছুড়ে মারি, প্রজাপতিটাকে মারার জন্য এবারও সেই একই আওয়াজ জয় ভারতমাতা। এখন নদীর ধারে যেতে ইচ্ছে করে না পড়া লিখা, খাওয়া-দাওয়া কিছুই ভাল লাগে না এমনকি সূর্যমুখীকেও না।
লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় এদেশের জন্ম সাধারণ মানুষ যারা কৃষক শ্রমিক হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছে কোন প্রজাপতি মার্কা রাজনীতিক নেতাদের জন্য নয়। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সাধারণ মানুষ পবিত্র মনে করে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। আর সেই মাকেই আমরা কবর দিই বাংলাদেশের মাটিতে !
সূর্যমুখী ক্লাসে আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে অবশ্য স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে আজ তাকে আমারও খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, রক্ত গোলাপী কালো ঘর করা জামাটায় তাকে অপ্সরী মনে হচ্ছে। এ ভাবে শুধু ক্লাসেই, স্যারের চোখের আড়ালে চলে আমাদের দেখার লুকোচুরি। দিনে দিনে আমি তার প্রতি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি সে হাসলে আমিও হাসি, মাঝে মাঝে পড়াটাই ভুলে যাই। কিন্তু তাকে দেখার সময় হঠাৎ হঠাৎ এক অজানা ভয় এসে আমাকে আচ্ছন্ন করে।
আমি ভয় পাই আমার মার জন্য কারণ আমি মাকে খুব ভালবাসি। আমার মনে হয় সূর্যমুখী মায়ের ভালবাসায় ভাগ বসাবে সূর্যমুখীর জন্য মায়ের প্রতি ভালবাসা এক নম্বর হতে নিচে নেমে যাবে। এখনও তার দিকে তাকাতে যদিও খুব ইচ্ছে করে সূর্যমুখী ইশারায় জানতে চায় কি হয়েছে শিশির। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ভালবাসি-ভালবাসি মাকেই ভালবাসি। মাই আমার এক নম্বর ভালবাসা, মাই আমার রঙ্গিন পৃথিবী। মা না সূর্যমুখী এই দোলাচলের মাঝে সেকেন্ড সেকেন্ড, মিনিট মিনিট করে আমার যায় দিন। এমন আচরণে সূর্যমুখীও বিচলিত হয় কিন্তু কোন সুযোগ হচ্ছে না দুই জনে মিলে কথা বলার। ভয় এবং জড়তা দূর করতে চেষ্টা করি আমি জীবনটাই কি, যেন নাটক? সময়ের সাথে সাথে আমিও বুঝতে পারি মা ও সূর্যমুখীর ভালবাসার পার্থক্য। সূর্যমুখীর ভালবাসা অন্য রকম আস্তে আস্তে এই অন্য রকম ভালবাসাই আমাকে তার কাছে নিয়ে যায়। ভালবাসার পূর্বশর্ত একে অপরের সামাজিক মর্যাদা জেনে নেওয়া সেটাও আমার জানা হয় অতি তাড়াতাড়ি। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার পর দুই জনে কেমন করে যোগাযোগ করবো তাই ভেবে আমার মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়.. তাই পরীক্ষার হলে যতটুকু সম্ভব তার সাথে থাকার চেষ্টা করি। এ নিয়ে অন্য সহপাঠীদের বাকা নজরও কম সহ্য করতে হয় না।
সূর্যমুখীর সবুজ সতেজ কচি কচি ভালবাসায়, অন্যদের ঝাল মিষ্টি কথার ভিতর ভালই সময় কেটে যায়। তার দুঃখী চোখ যেমন বলে ভুলে যেও না, আমিও তাই পরীক্ষা পর অফুরন্ত সময়। ফল প্রকাশে তিন মাস লাগবে এখন যেন সময় ফেনী বিলোনীয়ার রেলগাড়ী যার সব কিছুই অদৃশ্য ইশারায় চলে.যাতে করে কোটি কোটি টাকার চোরাচালানী আসে ফেনী শহরে। অলস দুপুর,মনের আয়নায় অতীত স্মৃতি একের পর এক ভেসে উঠায় আমি আলোড়িত হই, আসলে প্রতিটি মানুষই বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু স্মৃতির প্রয়োজন হয় অতীত স্মৃতি যখন ধূসর বিবর্ণ হয়ে যায়, তখনি মানুষ ছুটে নতুন স্মৃতির খোঁজে, আর এই স্মৃতি মানুষকে বেঁচে থাকার হয়তো প্রেরণা যোগায়।
loading...
loading...
উপমা বা তুলনা এবং পরিশেষ … আপনার লিখাটিকে অনন্য একটি মাত্রায় নিয়ে গেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ মি. ফয়জুল মহী। শুভেচ্ছা রইলো। শুভ সকাল।
loading...
সূর্যমুখী ও সময়ের শেষ সংলাপ শিরোনামে এদেশের অতীত ও বর্তমান চিত্র তুলে ধরতে পেরেছেন, দাদা। সত্যি অসাধরণ লিখেছেন। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
loading...