স্যার আপনারা হিরো ছাত্রদের জীবনে স্মরণীয় স্মৃতি বরণীয় আজও

গোপাল স্যার আমার বাবার ক্লাসমেট এবং আমার শিক্ষক। উনি লেমুয়া বাজারের দিন অনেক লোকের সামনে আমাকে গালে চড় মেরে ছিলেন। আমি তখন (নব্বই দশকে) একটা ছাত্র সংগঠনের লেমুয়া ইউনিয়নের পদে ছিলাম। গোপাল স্যারকে এলাকায় অনেকে চিনে না কিছু লোক চিনে মরণ বাবুর ভাই হিসাবে। বাজারে রটে গেল মহীকে হিন্দু এক লোক মারছে। আমি চড় খেয়ে লজ্জায় হতবুদ্ধি হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছি। অনেক লোক জমা হয়ে যাওয়ায় স্যারও লজ্জা পেলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে চায়ের দোকানে ভিতরে নিয়ে গেলেন। পরে সবাই জানলো উনি আমার শিক্ষক। স্যার আরেক হিন্দু নিখিল বাবুর শশুরের কাছে বেশ কিছু টাকা পাবেন। এই টাকার জন্য লেমুয়া বাজারে অনেক বৈঠক হয়েছে। যারা বৈঠক করে সব দলের প্রভাবশালী মদখোর আর জুয়াচোর। এক বছরেও সমাধান না হওয়ায় আমি কিছু ছেলে নিয়ে গিয়ে পাওনাদারকে দমক দিয়ে আসি।

সেই পাওনাদার পরের দিনই গোপাল স্যারকে ধরলেন। এবং কি বলেছে আমার আজও জানা হয়নি। তবে স্যার আমাকে টাকা নিয়ে দিতে বলেনি। আমিই নিজে বলেছি সেই লোককে। চায়ের দোকানে আমি মাথা নিচু করে বসে থাকি। চা খেতে খেতে স্যার বললেন তুই আমার ছাত্র। তোকে দিয়ে টাকা আদায় করলে নিজের বিবেক মরে যাবে। স্কুলে আমি তোকে নিজের ছেলে পরিচয় দিতাম। বাবা হয়ে থাপ্পর মারলাম।

কর্ম জীবনের প্রথমেই এক লোকের মারফতে একটা সোনালী রংয়ের সিটিজেন ঘড়ি পাঠাই গোপাল স্যারের জন্য। কিছুদিন পর লোকটা ঘড়ি ফেরত দিয়ে বলে স্যার মারা গিয়েছেন। যে স্যার ক্লাস সিক্স হতে টেন পর্যন্ত প্রাইভেট পড়িয়ে একটা টাকাও নেন নাই সেই স্যার মরে গেল। কিন্তু ভালো লোক এত তাড়াতাড়ি, কেন মরবে আজও আমি বুঝি না। দুই / এক বার কিছু টাকা দিয়েছি মাত্র উনার ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য। আমার বাবা মরণ বাবুসহ গিয়ে (মরণবাবু ফালিজপুর কাদেরী হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক) যখন ম্যামকে টাকা দিতেন তখন নাকি ম্যামের মুখটা একটা স্বর্গ হয়ে যেত। আজ উনার সন্তানেরা বড় হয়েছে। কিন্তু একজন সৎ শিক্ষকের অকালে মরে গেলে পরিবারটা কত অসহায় হয় ভুক্তভোগী বুঝে। স্যার, বাবার যে চিঠি পড়ে আপনার মন খারাপ হয়ে ছিলো সেটা আমার কথার কারণে। আমি অংকে নাম্বার কম পেয়ে বাবাকে বলেছি স্যার পড়ায় না। আপনি কখনো কোন ছাত্রের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেনি। স্বর্গে আপনি ভালো আছেন বলে আমার প্রচণ্ড বিশ্বাস।

আমরা পরীক্ষার ভালো ফল চাই কিন্তু ভালো শিক্ষক চাই না। ঘুস নিয়ে মাস্টার বানাই। শিক্ষকদের নিশ্চিত জীবন চাই না। শিক্ষককে লাথি উষ্ঠা মারি। আরে ভাই আমি নেতা সালিশ করে, নদীর বালু বিক্রি করে, মাদকের দালালি করে, স্কুলের পরিচালক হয়ে টাকা পাই। সেই টাকায় সংসার চালাই। এইটা খেয়ে আমার পোলা কেমন করে জিপিএ পাঁচ পাবে। আমারতো নীতিই নেই আর আমি পোলারে বলি বেটা পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হইবি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এখন স্কুল কলেজের সভাপতি হয়। এরা এতই প্রভাব দেখায় এদের নজর এড়িয়ে ধুলাও নড়চড় হয় না। পুরা পরিচালনা কমিটি রাজনৈতিক লোক দিয়ে করার কারণে শিক্ষকগণ জ্বী জ্বী করে উনাদেরকে (এইসব পরিচালক একই শিক্ষালয়ের ও শিক্ষকের সাবেক ছাত্র)। অবাধ্য হলে নেমে আসে অপমান অপবাদ। যার কারণে গ্রামের স্কুলে পাশের হার অত্যন্ত খারাপ। জেলা শহরে কয়েকটা স্কুল কলেজে লেখাপড়ার মান খুবই ভালো। যেমন ফেনীতে সরকারি পাইলট হাই স্কুল, সরকারি গার্লস হাই স্কুল, ফেনী ক্যাডেট স্কুল এবং কলেজ ও শাহীন একাডেমি (জামাত পরিচালিত)।

মীর স্যার আপনি মেধা সততা দিয়ে স্কুলকে আকাশের চাঁদ বানিয়ে ছিলেন। আশি নব্বই দশকে ( আমাদের সময় ) করৈয়া হাই স্কুল ফেনী জেলায় পাশের হারে শহরের স্কুলকে পিছনে ফেলে দিতো আর আজ সেই স্কুল মৃতপ্রায় হাতি। দশম শ্রেনীতে উঠে রাস্তার ঐপারের একটা হলুদ পাখি (মেয়েটা কোথায় আছে কেমন আছে জানি না ) ধরতে গিয়ে আপনার হাতে মার খেয়ে জ্বর হয়ে ছিল। ভয়ে বলি নাই আপনি মেরেছেন। প্রধান শিক্ষক হিসাবে আপনার ব্যক্তিত্ব সুনাম করৈয়ার মাটি বয়ে বেড়াবে পৃথিবীর শেষ অবধি।

ছবিঃ ফেসবুকের স্কুল গ্রুপ হতে নেওয়া। (মীর স্যার সাবেক প্রধান শিক্ষক)।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৮-০৭-২০২০ | ১৮:৫৩ |

    স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আপনার প্রতিও রইলো আমাদের সম্মান। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ২৯-০৭-২০২০ | ১০:০৪ |

    অনেক শ্রদ্ধা জানাই মহী দা

    GD Star Rating
    loading...